৬৭৮৮। আবূ বকর ইবনুূু ইসহাক (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামতের মাঠে হৃষ্টপূষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত হবে, কিন্তু আল্লাহর কাছে তার ওযন মশার ডানার বরাবরও হবে না। তোমরা পড়ে নাও “কিয়ামতের দিন আমি ওদের জন্য কোন ওযন স্হাপন করব না। ”
৬৭৮৯। আহমদ ইবনুূু আবদুল্লাহ ইবনুূু ইউনূস (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনুূু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ইয়াহুদী আলিম নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এসে বললো, হে মুহাম্মাদ! অথবা (বললো) হে আবূল কাসেম কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা আকাশকে এক আঙ্গুলে, যমীনকে এক আঙ্গূলে, পর্বত ও বৃক্ষরাজি এক আঙ্গুলে; পানি ও মাটি এক আঙ্গুলে এবং সমস্ত সৃষ্টিকে এক আঙ্গূলে তুলে ধরবেন। তারপর এগুলো দুলিয়ে বলবেন, আমিই বাদশাহ, আমিই অধিপতি। ” পাদরীর কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিনয়ের সাথে তার সত্যায়ন স্বরুপ হাসলেন। এরপর তিনি পাঠ করলেনঃ “তারা আল্লাহর যথোচ্চিত সম্মাল করেনি। কিয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবী তার হাতের মুষ্টিতে এবং আকাশমণ্ডলী থাকবে তার ডান হাতের আয়ত্ত্বে। পবিত্র ও মহান তিনি, তারা যাকে শরীক করে- তিনি তার ঊর্ধ্বে। ”
৬৭৯০। উসমান ইবনুূু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনুূু ইবরাহীম (রহঃ) মানসুর (রহঃ) থেকে উক্ত সুত্রে বলেছেন যে, জনৈক ইয়াহুদী আলিম রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকট আসল, পরবর্তী অংশ ফূযায়েলের হাদীসের অনুরুপ। এগুলি দুলিয়েছেন কথাটির উল্লেখ করেননি। এতে এও রয়েছে যে, তার কথায় আশ্চার্যাম্বিত হয়ে তার সমর্থনে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে আমি এমনভাবে হাসতে দেখেছি যে, তাঁর মাড়ির মুবারক দাঁত প্রকাশ পায়। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তারা আল্লাহর যথোচিত সলান করেনি” আয়াত পাঠ করেন।
৬৭৯১। উমার ইবনুূু হাফস ইবনুূু গিয়াস (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। কিতাবী সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকট এসে বললো, হে আবূল কাসিম! আল্লাহ তাআলা আকাশমণ্ডলী এক আঙ্গূলে, ভূণ্ডল এক আঙ্গুলে, বৃক্ষরাজি ও এক আঙ্গূলে এবং সমস্ত সৃষ্টি এক আঙ্গুলে তুলে ধরবেন। তারপর তিনি বলবেন, আমিই বাদশাহ, আমিই অধিপতি। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমনভাবে হাসতে দেখি যে, তাঁর মাড়ির মুবারক দাঁতগুলো প্রকাশ পায়। এরপর বললেন, “তারা আল্লাহর যথোচিত সম্মান করেনি। ”
৬৭৯২। আবূ বকর ইবনুূু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ইসহাক ইবনুূু ইবরাহীম, আলী ইবনুূু খাশরাম ও উসমান ইবনুূু আবূ শায়বা (রহঃ) আমাশ (রহঃ)-এর সূত্রে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন। তবে তাদের সকলের বর্ণনায়ই রয়েছে যে, বৃক্ষরাজি এক আঙ্গুলে এবং সমস্ত সৃষ্টিকূল এক আঙ্গূলে-। তবে জারীরের হাদীসে “সমস্ত সৃষ্টিলো” আঙ্গূলের” কথাটি নেই। অবশ্য তাঁর হাদীসে পর্বতমালা এক আঙ্গুলে” কথাটি রয়েছে। জারীর (রাঃ)-এর হাদীসে রয়েছে যে, তার কথায় আশ্চর্যানিত হয়ে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে সমর্থন করেন।
৬৭৯৩। হারমালা ইবনুূু ইয়াহইয়া আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা সমস্ত পৃথিবী তাঁর হাতের মুষ্টিতে নিয়ে নিবেন এবং আকাশ মন্ডলী তাঁর ড়ান হস্তে শুটিয়ে নিবেন। অতঃপর তিনি বলবেন, আমিই বাদশাহ। পৃথিবীর বাদশাহগণ কোথায়?
৬৭৯৪। আবূ বকর ইবনুূু আবূ শায়বা আবদুল্লাহ ইবনুূু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা আকাশমণ্ডলী শুটিয়ে নিবেন। অতঃপর তিনি আকাশমণ্ডলীকে ডান হস্তে ধরে বলবেন, আমিই বাদশাহ। কোথায় জবরদস্ত লোকেরা, কোথায় অহংকারীরা? এরপর তিনি বাম হস্তে সমস্ত জমিন শুটিয়ে নিবেন এবং বলবেন, আমিই বাদশাহ। কোথায় জবরদস্ত লোকেরা, কোথায় অহংকারীরা।
৬৭৯৫। সাঈদ ইবনুূু মানসুর (রহঃ) উবায়সুল্লাহ ইবনুূু মিকসাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবদুল্লাহ ইবনুূু উমার (রাঃ) এর দিকে লক্ষ্য করেছেন, কিভাবে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর কথা বর্ণনা করছেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তায়ালা আকাশ মণ্ডলী ও সমস্ত সৃষ্টি তাঁর হস্তদ্বয়ে তুলে ধরবেন এবং বলবেন, আমিই আল্লাহ। এসময় তিনি তাঁর আঙ্গুলগুলো বন্ধ করবেন ও খুলবেন। (তারপর বলবেন) আমিই বাদশাহ। , আবদুল্লাহ ইবনুূু উমার (রাঃ) বলেন, এমনকি তখন আমি দেখতে পাচ্ছিলাম যে, মিম্বরের নিন্নাংশের কিছু দুলছিল। তখন আমি ভাবছিলাম, হয়তো মিম্বরটি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে নিয়ে পড়ে যাবে।
৬৭৯৬। সাঈদ ইবনুূু মানসুর (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনুূু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে মিম্বরের উপর দেখেছি। তিনি বলছিলেনঃ মহা পরাক্রমশালী সত্তা আকাশ ও সমস্ত সৃষ্টি স্বীয় হস্তদ্বয়ে তুলে ধরবেন। পরবর্তী অংশ ইয়াকুবের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৬৭৯৭। সূরায়জ ইবনুূু ইউনুস ও হারুন ইবনুূু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার হাত ধরে বললেন, আল্লাহ তাআলা শনিবার দিন মাটি সৃষ্টি করেন। রোববার দিন তিনি এতে পর্বত সৃষ্টি করেন। সোমবার দিন তিনি বৃক্ষরাজি সৃষ্টি করেন। মঙ্গলবার দিন তিনি আপদ বিপদ সৃষ্টি করেন। বুধবার দিন তিনি নূর সৃষ্টি করেন। বৃহস্পতিবার দিন তিনি পৃথিবীতে পশু-পাখি ছড়িয়ে দেন এবং জুমুআর দিন আসরের পর তিনি আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সৃষ্টি করেন। অর্থাৎ জুমুআর দিনের সময় সমূহের শেষ মুহুত্বে সর্বশেষ মাখলূক আসর থেকে রাত পর্যন্ত সময়ের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি সৃষ্টি করেছেন।
৬৭৯৮। আবূ বকর ইবনুূু আবূ শায়বা (রহঃ) সাহল ইবনুূু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন ময়দার রুটির ন্যায় (গোল) লালচে সাদা যমীনের উপরে লোকদের একত্রিত করা হবে। সেখানে কারো কোন বিশেষ নিদর্শন বিদ্যমান থাকবে না।
৬৭৯৯। আবূ বকর ইবনুূু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে আল্লাহর বানী যে দিন এ পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হয়ে যাবে এবং আকাশ মণ্ডলীও সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! তবে সে দিন লোকেরা কোথায় থাকবে? তিনি বললেন, সিরাতের উপর।
৬৮০০। আবদুল মালিক ইবনুূু শুআয়ব ইবনুূু লায়স (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ সমস্ত পৃথিবী কিয়ামতের দিন একটি রুটির ন্যায় হয়ে যাবে। আল্লাহ সেটি নিজ হাতে ওলট-পালট করবেন- যেমন তোমাদের মধ্যে কেউ সফরের সময় নিজ রুটি ওলট-পালট করে। এ দিয়ে হবে জান্নাতবাসীর জন্য মেহমানদারী। এ সময় এক ইয়াহুদী-ব্যক্তি এসে বললো, হে আবূ কাসিম! রহমান আপনার প্রতি বরকত দান করুন। কিয়ামতের দিন জান্নাতবাসীদের মেহমানদারী সম্পর্কে আপনাকে জানাবো কি! তিনি বললেন, হ্যা। ইয়াহুদী বললো, 'এ পৃথিবী একটি রুটিতে পরিণত হয়ে যাবে,- যেমন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমাদের দিকে তাকিয়ে এমনভাবে হেসে দিলেন যে, তাঁর মাড়ির মূবারক দাঁত প্রকাশিত হয়ে পড়েছিল। ইয়াহুদী বললো, তাদের তরকারী কি হাব তাকি আপনাকে বলব? তিনি বললেন, হ্যা। সে বলল, লাম এবং নূন। সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন, তা কি? সে বলল, ষাড় এবং মাছ যাদের কলিজার অংশ থেকে সত্তর হাজার লোক খেতে পারবে।
৬৮০১। ইয়াহইয়া ইবনুূু হাবীব আল হারিসী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ দশজন ইয়াহুদী যদি আমার অনুসরণ করতো তবে এ ভূ-পৃষ্ঠে কোন ইয়াহুদী মুসলমান হওয়া ব্যতীত অবশিষ্ট থাকত না।
৬৮০২। উমার ইবনুূু হাফস ইবনুূু গিয়াস (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সঙ্গে এক শস্যক্ষেত্রে চলচিলাম। সে সময় তিনি একটি খেজুর শাখার ছড়ির উপর ভর দিচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি কয়েকজন ইয়াহুদীর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। তখন তারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগলো, রুহ সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস কর। তাদের কেউ কেউ বললো, কি সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে তোমাদের যে, তোমরা তাকে জিজ্ঞানা করবে? তোমাদের যেন এমন কথার সম্মুর্খীন না হতে হয়, যা তোমরা পছন্দ কর না। এরপরও তারা বললো, তাকে অবশ্যই জিজ্ঞাসা করো। অবশেষে তাদের কেউ উঠে গিয়ে তাকে রুহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নীরব রইলেন। তার কোন জবাব দিলেন না। আমি বুঝতে পারলাম, তার উপর ওহী নাযিল হচ্ছে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি নিজের স্থানে দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর ওহী নাযিল শেষ হলে তিনি বললেন, “তোমাকে তারা রুহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে; বল, রুহ আমার প্রতিপালকের আদেশ ঘটিত এবং তোমাদের যে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে- তা অতি সামান্য। ”
৬৮০৩। আবূ বকর ইবনুূু আবূ শায়বা ও আবূ সাঈদ আশাজ্জ, ইসহাক ইবনুূু ইবরাহীম হানযালী এবং আলী ইবনুূু খাশরাম (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সাথে মদীনার একটি ক্ষেতে হাটছিলাম। এরপর তিনি হাফসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে ওয়াকীঁ-এর হাদীসে আছে ‘অমা য়্যুতিতুম’ আর খাশরামের সুত্রে বর্ণিত ঈসার হাদীসে রয়েছে ’অমা য়ুতিতুম ’।
৬৮০৪। আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোন এক খেজুর বাগানে খেজুর ডালের লাঠির উপর ভর দিয়ে চলছিলেন। তারপর তিনি আমাশ থেকে বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে তার বর্ণনার মধ্যে রয়েছে ‘অমা য়ুতিতুম’।
৬৮০৫। আবূ বকর ইবনুূু আবূ শায়বা ও আবদুল্লাহ ইবনুূু সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) খাব্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আস ইবনুূু ওয়ায়েলের নিকট আমার কিছু পাওনা ছিল। এর তাগাদায় আমি তার নিকট গেলাম। সে বলল যতক্ষন তুমি মুহাম্মাদকে অস্বীকার না করবে ততক্ষন তোমার পাওনা দিব না। এ কথা শুনে আমি তাকে বললাম, আমি কখনো মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে অস্বীকার করবো না, তুমি মরে গিয়ে পূনরায় জীবিত হয়ে এলেও। সে বলল আমি কি মৃত্যূর পর পূনরায় জীবিত হয়ে উঠবো? তাহলে তখনই আমি আমার মাল এবং সন্তানাদি লাভ করে তোমার পাওনা পরিশোধ করবো। তখন এ আয়াতটি নাযিল হয়, আপনি কি লক্ষ্য করেছেন তাকে যে আমার আয়াত সমুহ প্রত্যাখ্যান করে এবং বলে, আমাকে তো ধন-সস্পদ ও সন্তান-সন্ততি দেয়া হবে। এবং সে আমার নিকট আসবে একাকী। ”
৬৮০৬। আবূ কুরায়ব, ইবনুূু নুমায়র, ইসহাক ইবনুূু ইবরাহীম ও ইবনুূু আবূ উমার, আ’মাশ (রহঃ)-এর টি এ সনদে ওয়াকীরে হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে জারীরের হাদীসের মধ্যে আছে যে, খাব্বাব (রাঃ) বলেন, জাহেলী যুগে আমি কর্মকার ছিলাম। তখন আস ইবনুূু ওয়ায়েলকে আমি একটি কাজ করে দিয়েছিলাম। তারপর আমি তা তাগাদা করার জন্য তার নিকট গেলাম।
৬৮০৭। উবায়দুল্লাহ ইবনুূু মু’আয আবূ বারী (রহঃ) আনাস ইবনুূু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আবূ জাহল বলল, “হে আল্লাহ! এ যদি তোমার পক্ষ হতে সত্য হয়, তবে আমাদের উপর আকাশ থেকে প্রস্তর বর্ষণ কর কিংবা আমাদের মর্মস্তুদ শাস্তি দাও। ” তখন নাযিল হলঃ “আল্লাহ এমন নন যে, হে নাবী! আপনি তাদের মধ্যে থাকবেন অথচ তিনি তাদের শাস্তি দিবেন এবং আল্লাহ এমনও নন যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে অথচ তিনি তাদের শাস্তি দিবেন। এবং তাদের কি বা বলবার আছে যে, আল্লাহ তাদের শাস্তি-দিবেন না, অথচ তারা লোকদের মাসজিদুল হারাম থেকে নিবৃত্ত করে?” আয়াতের শেষ পর্যন্ত।
৬৮০৮। উবায়দুল্লাহ (রহঃ) এবং মুহাম্মদ ইবনুূু আবদুল আলা কায়সী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,আবূ জাহল বলেছিল, মুহাম্মাদ কি তার মুখমন্ডল যমীনের উপর রাখছে? লোকেরা বলল, হাঁ রাখছে। তখন সে বলল, আমি লাত এবং উযযার কসম করে বলছি, আমি যদি তাকে এমন করতে দেখি তবে অবশ্যই আমি তার ঘাড় পদদলিত করবো। অথবা তার মুখমন্ডল আমি মাটিতে মেখে দিব। (নাউযু বিল্লাহ) অতঃপর একদা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাত আদায়ে মগ্ন ছিলেন। এমতাবস্হায় আবূ জাহল রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর ঘাড়কে পদদলিত করার লক্ষ্যে তার নিকট আসল। হঠাৎ করে লোকেরা দেখতে পেল যে, সে একা একা-স্বীয় হস্তদ্বয়ের দ্বারা কোন কিছুকে প্রতিহত করা অবস্থায় পা পা করে পেছনের দিকে সরে আসছে। এ দেখে তাকে জিজ্ঞেস করা হল, তোমার কি হায়ছে? উত্তরে সে বলল, আমি দেখেছি যে, আমার এবং তাঁর মাঝে আশুণের একটি প্রকান্ড খাদক, ভয়াবহ অবস্হা এবং কতগুলো ডানা। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ সে যদি আমার নিকটে আসতো, তবে ফিরিশতাগণ তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ টুকরা টুকরা করে ছিঁড়ে নিয়ে যেতো। অতঃপর আল্লাহ তাআলা নাযিল করলেন, (বর্ণনাকারী বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর হাদীসের মধ্যে এ কথাটি আছে, না এ মর্মে তার নিকট সংবাদ পৌছেছে, এ বিষয়টি আমার জানা নেই!) “কখনো ঠিক নয়, মানুষ তো সীমালঙ্গন করেই থাকে, কারণ সে নিজেকে অভাবমূক্ত মনে করে। আপনার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যার্বতন সুনিশ্চিত। আপনি কি তাকে দেখেদেছেন, যে বাধা দেয় এক বান্দাকে যখন সে সালাত আদায় করে? আপনি লক্ষ্য করেছেন কি, যদি সে সৎপথে থাকে অথবা তাকওয়ার নির্দেশ দেয়, আপনি লক্ষ্য করেছেন কি, যদি সে মিথ্যা আরোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে সে কি জানেনা যে, আল্লাহ দেখেন? সাবধান, সে যদি বিরত না হয়, তবে আমি অবশ্যই তাকে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাব মস্তকের সম্মুখ ভাগের কেশগুচ্ছ ধরে, মিথ্যাচারী পাপিন্ঠের কেশগুচ্ছ অতএব সে তার নাদিয়াহ অর্থাৎ তার সম্প্রদায়কে আহবান করুক। ”
৬৮০৯। ইসহাক ইবনুূু ইবরাহীম (রহঃ) মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আবদুল্লাহ ইবনুূু মাসউদ (রাঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম। এ সময় তিনি আমাদের মাঝে কাত হয়ে হয়েছিলেন। এমতাবস্হায় তার নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আবূ আবদুর রহমান! কিনদা দ্বার প্রান্তে এক ওয়ায়েয বলছেনঃ কুরআনে বর্ণিত ধোঁয়ার ঘটনাটি ভবিষ্যতে সংঘটিত হবো তা প্রবাহিত হয়ে কাফিরদের শ্বাস রুদ্ধ করে দিবে এবং এতে মূমনিদের সর্দির মত অবস্হা হবে। এ কথা শুনে তিনি রাগান্বিত হয়ে বসলেন এবং বললেনঃ হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। তোমাদের কেউ কোন কথা জানলে সে যেন তা-ই বলে। আর যে না জানে সে যেন বলে-আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত। কেননা প্রকৃত জ্ঞানের কথা হচ্ছে এই যে, যে বিষয়ে তোমাদের জ্ঞান নেই সে বিষয়ে বলবে, আল্লাহই ভাল জানেন। কেননা আল্লাহ তাআলা তাঁর নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে বলেছেনঃ “বল, আমি এর জন্য তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চাইনা এবং আমি মিথ্যা দাবীদারদের অন্তভুক্ত নই। ” প্রকৃত অবস্হা তো এই যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন লোকদের মধ্যে দীনবিমূখ! দেখলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, হে আল্লাহ! ইউসুফ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সময়ের মত দুর্ভিক্ষের সাতটি বছর তাদের উপর চাপিয়ে দাও। অতঃপর তাদের উপর দুর্ভিক্ষ এমনভাবে আপতিত হল যে, উহা সব কিছুকে শেষ করে দিল। ফলে ক্ষুধার জ্বালায় তারা চামড়া ও মৃত দেহ খেতে শুর করল। এমনকি তাদের কোন ব্যক্তি আকাশের দিকে তাকালে শুধূ ধোঁয়ার ন্যায়ই দেখতে পেতো। অতঃপর আবূ সুফিয়ান রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকট এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আপনি তো আল্লাহর আনুগত্য করেন এবং আত্নীয়তার হক আদায় করার নির্দেশ দিয়ে আসছেন- অথচ আপনার কাওম তো ধ্বংস হয়ে- যাচ্ছে আপনি তাদের জন্য আল্লাহর নিকট দুআ করুন। (এ প্রসঙ্গে) আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “অতএব আপনি অপেক্ষা করুন সে দিনের, যেদিন স্পষ্ট ধুম্রাচ্ছন্ন হবে আকাশ এবং উহা আবৃত করে ফেলবে মানব জাতিকে। এ হবে মর্মস্তুদ শাস্তি। তোমরা তো তোমাদের পূর্বাবস্হায় ফিরে যাবে। ” -পর্যন্ত। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আখিরাতের আযাব কি লাঘব করা হবে? (আল্লাহ তা”আলা আরো বলেছেন) , যেদিন আমি তোমাদের প্রবলভাবে পাকড়াও করব, সে দিন আমি অবশ্যই তোমাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করব। ” বাতশার- দ্বারা বদরের যুদ্ধ উদ্দেশ্য করা হয়েছে। ধোয়ার নিদর্শন, পাকড়াও, শাস্তি ও রোমের ঘটনা তো অতীত হয়ে গিয়েছে।
৬৮১০। আবূ বাকর ইবনুূু আবূ শায়বা,আবূ সাঈদ আশাজ্জ, উসমান ইবনুূু আবূ শায়বা, ইয়াহইয়া ইবনুূু ইয়াহইয়া ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) মাসরুক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল, আমি মসজিদে এক ব্যক্তিকে দেখে এসেছি, সে কুরআনের মনগড়া তাফসীর করছে! সে ‘ইয়াওমা তায়তি’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলছে যে, কিয়ামতের দিন ধোয়া এসে লোকদের আচ্ছন্ন করে ফেঁলবে, তাদের শ্বাসরুদ্ধ করে ফেলবে, এমনকি এতে লোকদের সর্দির মত অবস্থা হয়ে যাবে। একথা শুনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে জানে সে তা বর্ণনা করবে। আর যে না জানে তার বলা উচিত, আল্লাহই ভাল জানেন। কারণ, অজানা বিষয় সম্পর্কে আল্লাহই ভাল জানেন, একথা বলাই মানুষের বুদ্ধিমত্তার লক্ষণ। কেননা এ বিষয়টি তখনই সংঘটিত হয়েছিল, যখন কুরায়শরা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নাফরমানী করেছিল। তখন তিনি তাদের বিরুদ্ধে দুআ করেন যেন ইউনূফ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সময়ের সাত বছরের মত দুর্ভিক্ষ তাদের উপর আপতিত হয়। তারপর তাদের উপর দুর্ভিক্ষ এবং “ক্ষুধার কষ্ট এমনভাবে আপতিত হলো যে, কেউ আসমানের দিকে তাকালে সে শোয়ার মত দেখত, এমনকি তারা হাড়ই খাওয়া শুরু করল। তখন এক ব্যক্তি এসে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে বলল, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! মূযার গোত্রের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তারা হয়তো ধ্বংস হয়ে গেল। তিনি মুযার গোত্রের লোকটিকে বললেন, তুমি তো বড় সাহসী। রাবী বলেন, এরপর নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের জন্য আল্লাহর নিকট দুআ করলেন। তখন আল্লাহ তাআলা নাযিল! করলেন, “আমি তোমাদের শাস্তি কিছু কালের জন্য লাঘব করছি। তোমরা তো তোমাদের পৃর্বাবস্থায়ই ফিরে যাবে। ” বর্ণনাকারী বলেন, তাদের উপর খুব বৃষ্টি হলো। অতঃপর তাদের যখন স্বচ্ছলতা ফিরে এল তখন তারা আবার পূর্বের অবস্হায় ফিরে গেল। তখন আল্লাহ তাআলা নাযিল করলেন, “অতএব আপনি অপেক্ষা করুন সেদিনের, যে দিন ধূম্রাচ্ছন্ন হবে আকাশ এবং উহা আবৃত করে ফেলবে মানব জাতিকে। এ হরে মর্মন্তুদ শাস্তি। আমি তোমাদের শাস্তি কিছু কালের জন্য লাঘব করব, তোমরা তো পর্রোবস্হায় ফিরে যাবে। যেদিন আমি তোমাদের প্রবলভাবে পাকড়াও করব, সে দিন আমি তোমাদেরকে শাস্তি দিবই। ” বর্ণনাকারী বলেন অর্থাৎ বদরের দিন।
৬৮১১। কুতায়বা ইবনুূু সাঈদ (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পাঁচটি বিষয় অতীত হয়ে গিয়েছেঃ ধোয়া, শাস্তি, রোম এর পরাজয়, পাকড়াও এবং চন্দ্রের নিদর্শন।
৬৮১২। আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।
৬৮১৩। মুহাম্মাদ ইবনুূু মূসান্না, মুহাম্মাদ ইবনুূু বাশশার ও আবূ বকর ইবনুূু আবূ শায়বা (রহঃ) উবাই ইবনুূু কা”ব (রাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহর বানী শাস্তির পূর্বে তাদের আমি অবশ্যই লঘু শাস্তি অস্যাদন করাব” এর উদ্দেশ্য হল পার্থিব বালা-মূসীবত, রোমের পরাজয়, পাকড়াও অথবা ধোয়া। পাকড়াও না ধোঁয়া এ বিষয়ে শুবা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
৬৮১৪। আমর নাকিদ ও যুহায়র ইবনুূু হারব (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সময় চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হয়েছে। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমরা সাক্ষী থাক।
৬৮১৫। আবূ বকর ইবনুূু আবূ শায়বা,আবূ কুরায়ব ইসহাক ইবনুূু ইবরাহীম, উমার ইবনুূু হাফস ইবনুূু গিয়াস, ও মিসজাব ইবনুূু তামিমী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনুূু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মিনায় আমরা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম। এমতাবস্হায় হঠাৎ করে চন্দ্র বিদীর্ন হয়ে দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল। এক খন্ড পাহাড়ের এ পাশে পড়ল এবং অপর খন্ড পড়ল পাহাড়ের ওপাশে। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমরা সাক্ষী থাক।
৬৮১৬। উবায়দুল্লাহ ইবনুূু মু’আয আনবারী (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সময় চন্দ্র হয়ে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। এর এক খন্ড পাহাড় ঢেকে ফেলল এবং অপর এক খন্ড পাহাড়ের উপর গিয়ে পড়ল। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাকো।
৬৮১৭। উবায়দুল্লাহ ইবনুূু মুআয (রহঃ) ইবনুূু উমার (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। বিশর ইবনুূু খালিদ ও মুহাম্মদ ইবনুূু বাশশার (রহঃ) শুবা (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে ইবনুূু আবূ আদী (রহঃ)-এর হাদীসের মধ্যে আছে যে, তারপর তিনি বললেনঃ তোমরা সাক্ষী থাক, তোমরা সাক্ষী থাক।
৬৮১৮। যুহায়র ইবনুূু হারব ও আবদ ইবনুূু হুমায়দ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কাবাসী লোকেরা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকট তাদের একটি নিদর্শন দেখানোর দাবী করল। তিনি তাদের দু-বার চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হওয়ার নিদর্শন দেখালেন। মুহাম্মাদ ইবনুূু রাফি আনাস (রাঃ) থেকে শায়বানের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৬৮১৯। মুহাম্মদ ইবনুূু মূসান্না ও ইবনুূু বাশশার (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছে। তবে আবূ দাঊদ (রহঃ)-এর হাদীসে রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সময় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছে।
৬৮২০। মূসা ইবনুূু কুরায়শ তামিমী (রহঃ) ইবনুূু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সময় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছে।
৬৮২১। আবূ বকর ইবনুূু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ কষ্টদায়ক কোন কথা শ্রবণ করার পর আল্লাহ তা’আলা থেকে অধিক ধৈর্যশীল আর কোন সত্তা নেই। মানুষ আল্লাহর সঙ্গে শরীক করে এবং তাঁর জন্য সন্তান সাব্যস্ত করে এর পরও তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন এবং তাদের জীবিকার ব্যবস্হা করেন।
৬৮২২। মুহাম্মদ ইবনুূু আবদুল্লাহ ইবনুূু নুমায়র ও আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে ‘আও ইয়ায আলুহুল অলাদু’ কথাটি এ হাদীসের মধ্যে উল্লেখ নেই।
৬৮২৩। উবায়দুল্লাহ ইবনুূু সাঈদ (রহঃ)আবদুল্লাহ ইবনুূু কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ কষ্টদায়ক কোন কথা শ্রবণ করার পর আল্লাহর তুলনায় অধিক ধৈর্যশীল আর কেউ নেই। কেননা মানুষ আল্লাহর সাথে শরীক নির্ধারণ করে এবং তাঁর জন্য সন্তান সাব্যস্ত করে, এতদুসত্বেও তিনি তাদের জীবনোপকরণ দান করেন, তাদেরকে ক্ষমা করেন এবং তাদেরকে প্রয়োজনীয় সব কিছু দান করেন।
৬৮২৪। উবায়দুল্লাহ ইবনুূু মু’আয আনবারী (রহঃ) আনাস ইবনুূু মলিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জাহান্নামীদের মধ্যে যার শাস্তি সর্বাধিক লঘু হবে, আল্লাহ তাআলা তাকে বলবেন, পৃথিবী এবং পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু আছে সব কিছু যদি তোমার হয়ে যায়, তবে কি তুমি এ সব কিছু মুক্তিপণ স্বরুপ দান করে নিজেকে আযাব থেকে রক্ষা করবে? সে বলবে, হাঁ, অবশ্যই। তখন তিনি বলবেন, তুমি আদমের পৃষ্ঠে থাকা অবস্হায় আমি তো তোমার নিকট এর থেকেও সহজ জিনিস কামনা করেছিলাম। তা হল, তুমি শিরক করবে না। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয়, তিনি বলেছেনঃ তাহলে আমি তোমাকে জাহান্নামে দাখিল করবো না। কিন্তু তুমি তা না মেনে শিরকে লিপ্ত হয়েছ।
৬৮২৫। মুহাম্মাদ ইবনুূু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনুূু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে ”অলা উদ খিলুল” কথাটি উল্লেখ নেই।
৬৮২৬। উবায়দুল্লাহ ইবনুূু কাওয়ারিরী, ইসহাক ইবনুূু ইবরাহীম, মুহাম্মদ ইবনুূু মূসান্না ও ইবনুূু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনুূু মলিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, কিয়ামতের দিন কাফিরদেরকে বলা হবে, তুমি কি বল, যদি তুমি পৃথিবী ভরা স্বর্নের মালিক হও, তাহলে মুক্তিপণ স্বরুপ উহা দান করে তুমি কি নিজেকে আযাব থেকে রক্ষা করবে? সে বলবে, হ্যা। তখন তাকে বলা হবে, তোমা থেকে তো এর থেকে সহজ জিনিস চাওয়া হয়েছিল।
৬৮২৭। আবদ ইবনুূু হুমায়দ ও আমর ইবনুূু যারারা (রহঃ) আনাস (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে রয়েছে যে, তাকে বলা হবে, তুমি মিথ্যা বলেছ। তোমার নিকট তো এর থেকে সহজবস্তু কাম্য ছিল।
৬৮২৮। যুহায়র ইবনুূু হারব ও আবদ ইবনুূু হুমায়দ (রহঃ) আনাস ইবনুূু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! কিয়ামতের দিন কাফিরদেরকে অধোমূখী করে কিভাবে উঠানো হবে? তিনি বললেনঃ যিনি দুনিয়াতে উভয় পায়ের উপর ভর করে চালিয়েছিল, তিনি কি কিয়ামতের দিন তাদেরকে মুখের উপর ভর করে চালাতে সক্ষম হবেন না? এ হাদীস শুনে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমার প্রতিপালকের ইজ্জতের কসম! নিশ্চয়ই তিনি সক্ষম হবেন।
৬৮২৯। আমর নাকিদ (রহঃ) আনাস ইবনুূু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ জাহান্নামের উপযোগী-দুনিয়ায় সর্বাধিক সাচ্ছন্দ্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন আনা হবে। তারপর তাকে জাহান্নামের আগুনে একবার অবগাহন করিয়ে বলা হবে, হে আদম সন্তান! দুনিয়াতে আরাম-আযেশ কখনো তুমি দেখেছো কি, কখনো তুমি সাচ্ছন্দ অবস্থায় দিনাতিপাত করেছেন কি? সে বলবে, আল্লাহর কসম! হে আমার প্রতিপালক! না, কখনো দেখিনি। তারপর জান্নাতের উপযোগী দুনিয়ায় সর্বাধিক খারাপ অবস্হা সম্পন্ন ব্যক্তিকে আলা হবে। তারপর তাকে জান্নাতে একবার অবগাহন করিয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে, হে আদম সন্তান! কখনো তুমি কষ্ট দেখেছো কি, কঠিন এবং ভয়াবহ অবস্হায় দিনাতিপাত করেছেন কি! সে বলবে, আল্লাহর কসম, হে আমার প্রতিপালক! কখনো আমি কষ্টের সাথে দিনাতিপাত করিনি এবং দুঃখ কখনো দেখিনি।
৬৮৩০। আবূ বকর ইবনুূু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনুূু হারব (রহঃ) আনাস ইবনুূু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ একটি নেকীর ক্ষেত্রেও আল্লাহ তাআলা কোন মুমিন বান্দার প্রতি যুলুম করবেন না। বরং তিনি এর বিনিময় দুনিয়াতে প্রদান করবেন এবং আখিরাতেও প্রদান করবেন। আর কাফির ব্যক্তি পার্থিব জগতে আল্লাহর উদ্দেশ্যে যে নেক আমল করে এর বিনিময়ে তিনি তাকে জীবণৌপকরণ প্রদান করেন। অবশেষে আখিরাতে প্রতিদান দেয়ার মত তার নিকট কোন নেকীই থাকবে না।
৬৮৩১। আসিম ইবনুূু নযর তামিমী (রহঃ)আনাস ইবনুূু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, কাফির যদি পৃথিবীতে কোন নেক আমল করে তবে এর বিনিময়ে পৃথিবীতেই তাকে জীবিকা প্রদান করা হয়ে থাকে। আর মুমিনদের নেকী আল্লাহ তা’আলা আখিরাতের সঞ্চয় হিসাবে রেখে দেন এবং আনুগত্যের বিনিময়ে আল্লাহ তায়াআলা তাদেরকে দুনিয়াতেও জীবনোপকরণ প্রদান করে থাকেন।
৬৮৩২। মুহাম্মাদ ইবনুূু আবদুল্লাহ রাযী (রহঃ) আনাস (রাঃ) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৬৮৩৩। আবূ বকর ইবনুূু আবূ শয়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ মুমিনের উপমা শস্যক্ষেত্রের ন্যায়। বাতাস সর্বদা উহাকে আন্দোলিত করে। অনুরুপভাবে মু-মিনের উপরও সর্বদা বিপদ-আপদ আসতে থাকো কিন্তু মুনাফিকের উপমা দেবদারু বৃক্ষের ন্যায়। মূল কেটে যায়; কিন্তু উহা আন্দোলিত হয় না।
৬৮৩৪। মুহাম্মাদ ইবনুূু রাফি ও আবদ ইবনুূু হুমায়দ (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে আবদুর রাযযাকের হাদীসের মধ্যে ‘তামিলুহু’ এর স্হলে ‘তুফিয়ুহু’ বিদ্যমান রয়েছে।
৬৮৩৫। আবূ বকর ইবনুূু আবূ শায়বা (রহঃ) কা’ব ইবনুূু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ মুমিনের উপমা নরম চারাগাছের ন্যায়। বাতাস উহাকে আন্দোলিত করে কখনো উহাকে নূইয়ে ফেলে আবার কখনো একেবারে সোজা করে ফেলে। এমনিভাবে অবশেষে উহা শুকিয়ে যায়। আর কাফিরের উপমা হচ্ছে স্বীয় কাণ্ডে দণ্ডায়মান দেবদারু বৃক্ষের ন্যায়। কোন কিছু উহাকে আন্দোলিত করতে পারে না। কিন্তু ইহা একেবারেই মুলোৎপাটিত হয়ে যায়।
৬৮৩৬। যুহায়র ইবনুূু হারব (রহঃ) কাঁব ইবনুূু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ মুমিন ব্যক্তির উপমা নরম চারা গাছের ন্যায়। বাতাস উহাকে আন্দোলিত করে। বাতাস কখনো উহাকে শুয়ে দেয়, আবার কখনো একেবারে সোজা দাঁড় করিয়ে দেয়। এমনি করে তার মৃত্যু কাল এসে উপাস্থিত হয়। আর মুনাফিকের উপমা দণ্ডায়মাল দেবদারু বৃক্ষের ন্যায়, কোন কিছুই উহাকে নত করতে পারে না। ফলে উহাকে একেবারেই ম্যূলচ্ছেদ করে দেয়। মুহাম্মদ ইবনুূু হাতিম ও মাহমূদ ইবনুূু গায়লান (রহঃ) কাব ইবনুূু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। তবে মাহমূদের রেওয়ায়েতে বিশরের সুত্রে বর্ণিত আছে যে, কাফিরের উপমা দেবদারু বৃক্ষের ন্যায়। এবং ইবনুূু হাতিম (রাঃ) যুহায়র (রাঃ)-এর মত ‘মাসালু কাফিরু’ এর পরিবর্তে ‘মাসালু মুনাফিকি’ অর্থাৎ মুনাফিকের উপমার কথাটি উল্লেখ করেছেন।
৬৮৩৭। মুহাম্মাদ ইবনুূু বাশশার ও আবদুল্লাহ ইবনুূু হাশিম (রহঃ) কাব ইবনুূু মালিক (রাঃ) -এর সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে তাদের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তারা উভয়ই ইয়াহইয়া (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, কাফিরের উপমা দেবদারু বৃক্ষের ন্যয়।
৬৮৩৮। ইয়াহইয়া ইবনুূু আইউব, কুতায়বা ইবনুূু সাঈদ ও আলী ইবনুূু হুজর (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনুূু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, গাছপালার মধ্যে এমন একটি গাছ আছে, যার পাতা ঝরে পড়ে না। এবং তা হল মুমিনের দৃষ্টান্ত। তোমরা আমাকে বলতে পার, সেটা কোন গাছ? অতঃপর লোকজনের খেয়াল জঙ্গলের গাছ পালার প্রতি গেল। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমার মনে হতে লাগল যে, তা হল খেজুর গাছ। কিন্ত্বু আমি লজ্জাবোধ করলাম। সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনিই আমাদের তা বলে দিন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তা হল খেজুর গাছ। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, তারপর আমি আমার পিতাকে আমার মনে যা এসেছিল তা বললাম। তিনি বললেন, তুমি যদি তখন তা বলে দিতে যে, উহা হল খেজুর গাছ, তবে আমি অমুক অমূক জিনিস লাভ করার চাইতেও বেশী খূশী হতাম।
৬৮৩৯। মুহাম্মাদ ইবনুূু উবায়দুল্লাহ আনবারী (রহঃ) ইবনুূু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার সাহাবীগণকে বললেন, এমন একটি গাছ আছে, যার দৃষ্টান্ত মুনিনের ন্যায়, এ গাছটি কি গাছ? তোমরা কি আমাকে বলতে পার? তখন লোকেরা জংগলের গাছসমূহের থেকে একটি গাছের কথা উল্লেখ করল। ইবনুূু উমার (রাঃ) বলেন, আমার মনে হতে লাগল, তা হল খেজুর গাছা তখন আমি বলার ইচ্ছা করলাম। কিন্তু তথায় যেহেতু সমাজের বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিগণও ছিলেন, তাই আমি কথা বলতে ভয় পাচ্ছিলাম। লোকজন চুপ হলে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তা হল খেজুর গাছ।
৬৮৪০। আবূ বকর ইবনুূু আবূ শায়বা ও ইবনুূু আবূ উমার (রহঃ) মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মদীনার ইবনুূু উমার (রাঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। একটি হাদীস ব্যতীত রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে কোন হাদীস বর্ণনা করতে তাকে আমি শুনিনি। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সঙ্গে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন তার নিকট খেজুর গাছের মাথি আনা হল। অতঃপর তিনি পূর্বোক্ত হাদীস দুটোর ন্যায় এ হাদীসটি বর্ণনা করলেন।
৬৮৪১। ইবনুূু নুমায়র (রহঃ) মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনুূু উমার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট খেজুরগাছের মাথি আনা হল। অতঃপর পূর্বোক্তদের অনুরুপ হাদীস বর্ননা করেছেন।
৬৮৪২। আবূ বকর ইবনুূু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনুূু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট বসা ছিলাম। এ সময় তিনি বললেনঃ এমন একটি গাছ আছে যা মুসলমান ব্যক্তির অনুরুপ, যার পাতা কখনো ঝরে পড়েনা, গাছটি কি গাছ তোমরা কি আমাকে বলতে পার? ইবরাহীম ইবনুূু সুফিয়ান (রহঃ) বলেন,সম্ভবতঃ ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেছেন, ‘অ তুয়তি উকুলাহা ’ যা প্রত্যেক মওসুমে ফল দান করে। তবে আমি ব্যতীত অন্যানাদের বর্ননায় আমি পেয়েছি যেঃ অলা তুতি উকুলাহা” ব্যতীত। ইবনুূু উমার (রাঃ) বলেন, আমার মনে হতে লাগল, তা হল খেজুর গাছ। কিন্তু তখন আমি দেখলাম যে, আবূ বাকর ও উমার (রাঃ) কিছুই বলছেন না। তাই কোন কথা বা কিছু বলা আমি পছন্দ করলাম না। কিন্তু উমার (রাঃ) এ কথা শুনে বললেন, যদি তুমি বলে দিতে তবে অমুক অমুক জিনিস লাভ করা হতেও আমি অধিক খূশী হতাম।
৬৮৪৩। উসমান ইবনুূু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনুূু ইবরাহীম (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে শুনেছি, তিনি বলেন, আরব ভূখণ্ডে মুসল্লীগণ শয়তানের উপাসনা করবে, এ বিষয়ে শয়তান নিরাশ হয়ে পড়েছে। তবে তাদের এক জনকে অন্যের বিরুদ্ধে উসকিয়ে দেয়ার ব্যাপারে নিরাশ হয়নি।
৬৮৪৪। আবূ বকর ইবনুূু আবূ শায়বা (অন্য সনদে) আবূ কুরায়ব (রাঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৬৮৪৫। উসমান ইবনুূু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনুূু ইবরাহীম (রহঃ) জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে শুনেছি, তিনি বলেনঃ নিশ্চয়ই ইবলীসের আরশ সমুদ্রের উপর প্রতিষ্ঠিত। সে লোকদেরকে ফিতনায় লিপ্ত করার জন্য তার বাহিনী প্রেরণ করে। শয়তানের নিকট সর্বাধিক বড় সেই, যে সর্বাধিক ফিতনা সৃষ্টিকারী।
৬৮৪৬। আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুূুল আলা ও ইসহাক ইবনুূু ইবরাহীম (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ ইবলীস পানির উপর তার আরশ স্হাপন করতঃ তার বাহিনী প্রেরণ করে। তাদের মধ্যে তার সর্বাধিক নৈকট্য প্রাপ্ত সেই যে সর্বাধিক ফিতনা সৃষ্টিকারী। তাদের একজন এসে বলে, আমি অমুক অমুক কাজ করেছি। সে বলে, তুমি কিছুই করনি। অতঃপর অন্যজন এসে বলে, অমুকের সাথে আমি সকল প্রকার ধোঁকার আচরণই করেছি। এমনকি তার থেকে তার স্ত্রীকে তালাক করে দিয়েছি। অতঃপর শয়তান তাকে তার নিকটবর্তী করে নেয় এবং বলে হাঁ, তুমি একটি বড় কাজ করেছ। বর্ণনাকারী আমাশ বলেন, আমার মনে হয়, তিনি বলেছেনঃ অতঃপর শয়তান তাকে তার বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।
৬৮৪৭। সালামা ইবনুূু শারীব (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ শয়তান তার সৈন্য বাহিনীকে প্রেরণ করতঃ লোকদেরকে ফিতনায় লিপ্ত করে। তাদের মধ্যে সে-ই তার নিকট সর্বাধিক মর্যাদার অধিকারী যে অধিক ফিতনা সৃষ্টিকারী।
৬৮৪৮। উসমান ইবনুূু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনুূু ইবরাহীম (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনুূু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির সাথেই একটি শয়তান নির্ধারিত আছে। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনার সাথেও কি? তিনি বললেন, হ্যা, আমার সাথেও। কিন্তু তার মুকাবিলায় আল্লাহ আমাকে সহযোগিতা করেছেন। এখন আমি তার ব্যাপারে সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ। এখন সে আমাকে ভাল- কাজ ব্যতিরেকে কখনো অন্য কিছুর নির্দেশ দেয় না।
৬৮৪৯। ইবনুূু মূসান্না, ইবনুূু বাশশার (রহঃ) ও আবূ বকর ইবনুূু শায়বা (রহঃ) মানসূর (রহঃ) থেকে জারীরের সূত্রে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে সুফিয়ান (রহঃ)-এর হাদীসের মধ্যে আছে যে, প্রত্যেক মানুষের সাথে একটি শয়তান সঙ্গী এবং একজন ফিরিশতা সঙ্গী নিয়োজিত রয়েছে।
৬৮৫০। হারুন ইবনুূু সাঈদ আয়লী (রহঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর স্ত্রী আয়িশা সিদ্দীকা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক রাতে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার নিকট থেকে বের হলেন। তিনি বলেন, এতে আমার মনে কিছুটা ঈর্ষা জাগল। অতঃপর তিনি এসে আমার অবস্হা দেখে বললেন, হে আয়িশা! তোমার কি হয়েছে? তুমি কি ঈর্ষা পোষণ করছ? উত্তরে আমি বললাম, আমার মত মহিলা আপনার মত স্বামীর প্রতি কে ঈর্ষা করবে না। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমার শয়তান কি তোমার নিকট এসে উপস্থিত হয়েছে? তখন তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার সাথেও কি শয়তান রয়েছে? তিনি বললেন, হ্যা নিশ্চয়ই। অতঃপর আমি বললাম, প্রত্যেক মানুষের সাথেই কি শয়তান রয়েছে? তিনি বললেন, হ্যা। অতঃপর আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনার সাথেও কি রয়েছে? তিনি বললেন, হ্যা, আমার সাথেও। তবে আল্লাহ তা’আলা তার মূকাবিলায় আমাকে সহযোগিতা করেছেন। এখন তার ব্যাপারে আমি সস্পূর্ণ নিরাপদ।
৬৮৫১। কুতায়বা ইবনুূু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তির আমলই তাকে নাজাত দিতে পারবেনা। এ কথা শুনে জনৈক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনিও কি নন? তিনি বললেন, হ্যা, আমিও নই। তবে যদি আল্লাহ তাআলা তাঁর রহমত দ্বারা আমাকে আবৃত করে নেন। তোমরা অবশ্য মধ্যম পন্হা অবলম্বন করবে। ইবনুূু আবদুল আলা আস সাদাফী (রহঃ) বুকায়র ইবনুূু আশাজ্জ (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে ‘বি রাহমাতিন মিনহু’ এর সাথে ‘অ ফাদলিন’ শব্দটিও বিদ্যমান আছে। কিন্তু এতে ‘অলা কিন সা’দ্দিদু’ কথাটি উল্লেখ নেই।
৬৮৫২। কুতায়বা ইবনুূু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তি নেই, যার আমল তাকে জান্নাতে দাখিল করতে পারে। অতঃপর তাকে প্রশ্ন করা হল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনিও কি নন? তিনি বললেন, হাঁ আমিও নই। তবে আল্লাহ যদি তার অনুগ্রহের দ্বারা আমাকে আবৃত করে নেন।
৬৮৫৩। মুহাম্মাদ ইবনুূু মূসান্না (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তি নেই, যার আমল তাকে নাজাত দিতে পারে। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনিও কি নন? উত্তরে তিনি বললেনঃ আমিও নই। তবে যদি আল্লাহ তাঁআলা আমাকে তার ক্ষমা ও রহমতের দ্বারা আবৃত করে নেন। বর্ণনাকারী ইবনুূু আউন (রহঃ) স্বীয় হস্ত দ্বারা নিজ মাথার দিকে ইশারা করে বললেন, আমিও না। হাঁ, যদি আল্লাহ তা’আলা তাঁর ক্ষমা ও রহমত দ্বারা আমাকে আবৃত করে নেন।
৬৮৫৪। যুহারয়র ইবনুূু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ এমন কোন ব্যক্তি নেই, যার আমল তাকে নাজাত দিতে পারে। তারা বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনিও কি নন? তিনি বলেন, আমিও নই। হ্যা, যদি আল্লাহ তায়াআলা আমাকে তাঁর রহমত দ্বারা অভিষিক্ত করেন।
৬৮৫৫। মুহাম্মদ ইবনুূু হাতিম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কারো আমল তাকে জান্নাতে দাখিল করতে পারবে না। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনিও কি নন? তিনি বললেনঃ আমিও নই। তবে যদি আল্লাহ তা’আলা আমাকে তার অনুগ্রহ ও রহমত দ্বারা ডেকে নেন।
৬৮৫৬। মুহাম্মদ ইবনুূু আবদুল্লাহ ইবনুূু নুমায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তোমরা মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর এবং এর নিকটবর্তী তরীকা ইখতিয়ার কর। তোমরা জেনে রাখ, তোমাদের কেউ আমলের দ্বারা নাজাত লাভ করতে পারবে না। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনিও নন? তিনি বললেন,হ্যা, আমিও নই। তবে আল্লাহ তাআলা যদি স্বীয় রহমত ও অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে আবৃত করে নেন।
৬৮৫৭। ইবনুূু নুমায়র (রহঃ) জাবির (রাঃ) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৬৮৫৮। ইসহাক ইবনুূু ইবরাহীম (রহঃ) আমাশ (রহঃ)-এর সুত্রে ইবনুূু নুমায়র (রহঃ)-এর অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৬৮৫৯। আবূ বকর ইবনুূু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন, তবে এতে অতিরিক্ত রয়েছে” অর্থাৎ তোমরা খোশ-খবরী গ্রহণ কর।
৬৮৬০। সালামা ইবনুূু শাবীব (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের কোন ব্যক্তিকে তার আমল জান্নাতে দাখিল করতে পারবে না। এবং জাহান্নাম হতে পানাহ দিতে পারবে না। আমিও নই। তবে যদি আল্লাহর রহমত শামিলে হাল থাকে।
৬৮৬১। ইসহাক ইবনুূু ইবরাহীম (অন্য সনদে) মুহাম্মাদ ইবনুূু হাতিম (রহঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ মধ্যম পস্হ্য অবলম্বন কর, এর নিকটবর্তীপন্হা ধারণ কর এবং শুভ সংবাদ গ্রহণ কর, কারো আমলই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারবে না। সাহাবীগন প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনিও কি নন? তিনি বললেনঃ আমিও নই। তবে যদি আল্লাহ তাআলা আমাকে তার রহমত দ্বারা আবৃত করে নেন। তোমরা জেনে রাখ, সার্বক্ষণিক আমলই আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল, যদিও তা পরিমাণে কম হয় না কেন।
৬৮৬২। হাসান হুলওয়ানী (রহঃ) মূসা ইবনুূু উকবা (রাঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে তারা ‘অ আবশিরু’ কথাটি উল্লেখ করেননি।
৬৮৬৩। কুতায়বা ইবনুূু সাঈদ (রহঃ) মুগীরা ইবনুূু শুবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমনভাবে সালাত আদায় করেছেন যে, তার উভয় পদযুগল ফুলে গেছে। এ দেখে তাকে বলা হল, আপনি এত কষ্ট করছেন কেন? আপনার তো পূর্বাপর সমুদয় বিচ্যুতি ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। এ কথা শুনেবললেনঃ আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না
৬৮৬৪। আবূ বকর ইবনুূু আবূ শায়বা ও ইবনুূু নুমায়র মুগীরা ইবনুূু শুবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাতে এমনভাবে কিয়াম করতেন যে, এতে তাঁর পদযুগল ফূলে যেতো। এ দেখে সাহাবীগণ বললেন, আল্লাহ তো আপনার পূর্বাপর সমুদয় গুনা ক্ষমা করে দিয়েছেন। এ কথা শুনে বললেন, আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না?
৬৮৬৫। হারুন ইবনুূু মারুফ ও হারূন ইবনুূু সাঈদ আল-আয়লী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন সালাত আদায় করতেন তখন এমনভাবে কিয়াম করতেন যে, এতে তার উভয় পদযুগল ফেটে যেতো। এ দেখে আয়িশা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এরুপ করছেন কেন? অথচ পূর্বাপর আপনার সমুদয় বিচ্যুতি ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। এ কথা শুনে তিনি বললেন, হে আয়িশা, আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না।
৬৮৬৬। আবূ বকর ইবনুূু আবূ শায়বা (অন্য সনদে) ইবনুূু নুমায়র (রহঃ) শাকীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর অপেক্ষায় আমরা তাঁর (বাড়ীর) দারপ্রাস্তে উপবিষ্ট ছিলাম। এ সময় ইয়াযীদ ইবনুূু মুআবিয়া নাসঈ (রহঃ) আমাদের নিকট দিয়ে যেতে লাগলেন। আমরা তাকে বললাম, আপনি তাকে আমাদের অবস্থানের খবরটি দিন। তিনি ভেতরে তাঁর নিকট গেলেন। অমনি বিলম্ব না করে আবদুল্লাহ (রাঃ) আমাদের সামনে বেরিয়ে এলেন। অতঃপর তিনি বললেন, তোমাদের অবস্থানের সংবাদ আমাকে পৌছান হয়েছে। তবে তোমাদের নিকট আসতে এ আমাকে বারণ করেছে যে- আমি যেন তোমাদেরকে উত্যক্ত না করে ফেলি। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের অবস্হার প্রতি লক্ষ্য রেখে তিনি দিনে ওয়ায-নসীহত করতেন, আমরা যাতে বিরক্ত না হই।
৬৮৬৭। আবূ সাঈদ আশাজ্জ (অন্য সনদে) মিনজাব ইবনুূুল হারিস আত তামিমী (অন্য সনদে) ইসহাক ইবনুূু ইবরাহীম ও আলী ইবনুূু খাশরাম (রহঃ) (অন্য সনদে) ইবনুূু আবূ উমার (রহঃ) আ’মাশ (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৬৮৬৮। ইসহাক ইবনুূু ইবরাহীম (অন্য সনদে) ইবনুূু আবূ উমার (রহঃ) ওয়ায়েলের পিতা শাকীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) প্রত্যেক বৃহস্পতিবার দিন আমাদেরকে নসীহত করতেন। জনৈক ব্যক্তি তাকে বললেন, হে আবদূর রহমানের পিতা! আমরা আপনার থেকে হাদীস শুনতে পছন্দ করি এবং আগ্রহ পোষণ করি। আমরা চাই, আপনি আমাদের নিকট প্রত্যহ হাদীস বর্ণনা করেন। এ কথা শুনে তিনি বললেন, এ কাজ থেকে আমাকে যা বিরত রাখে তা হল, আমি তোমাদেরকে বিরক্ত করা পছন্দ করি না, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের অবস্হার প্রতি লক্ষ্য রেখে তিনি ওয়ায-নসীহত করতেন, আমরা যাতে বিরক্ত না হই।
৬৮৬৯। আব্দুরল্লাহ ইবনুূু মাসলামা ইবনুূু কানাব (রহঃ) আনাস ইবনুূু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ জান্নাতকে বেষ্টন করে রাখা হয়েছে অপছন্দনীয় বস্তু দ্বারা এবং জাহান্নামকে বেষ্টন করে রাখা হয়েছে লৌভনীয় বস্তু দ্বারা।
৬৮৭০। যুহায়র ইবনুূু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৬৮৭১। সাঈদ ইবনুূু আমর আশ আশী ও যুহায়র ইবনুূু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন সব জিনিস প্রস্তুত রেখেছি যা কখনো কোন চক্ষু দেখেনি, কোন কান শুনেনি এবং কোন অন্তঃকরণ কখনো কল্পনাও করেনিা হুবহু এ কথাটি আন-কুরআনেও বিদ্যমান রয়েছে-”কেউ জানে না তাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর কী লুকায়িত রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরুপ। ” (সূরা সাজদা:১৭)
৬৮৭২। হারুন ইবনুূু সাঈদ আল আয়লী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন জিনিস প্রস্তুত রেখেছি যা কোন চক্ষু কখনো দেখেনি, কোন কান কখনো শুনেনি এবং কোন অন্তকরণ যা কখনো কল্পনাও করেনি। এসব নিয়ামত আমি সঞ্চিত রেখে দিয়েছি। আল্লাহ তোমাদেরকে যা জানিয়েছেন তা রাখ।
৬৮৭৩। আবূ বকর ইবনুূু আবী শায়বা ও আবূ কুরায়ব (অন্য সনদে) ইবনুূু নুমায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেঁছেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন সব জিনিস তৈরী করে রেখেছি, যা কোন চক্ষু কখনো দেখেনি, কোন কান কখনো শুনেনি এবং যা কোন অন্তকরণ কখনো কল্পনাও করেনি। এগুলো আমি তোমদের জন্য জমা করে রেখে দিয়েছি। এসব ছাড়া আল্লাহ তোমাদেরকে যা কিছু দেখিয়েছেন এর কোন মূল্য নেই। অতঃপর তিনি পাঠ করলেন, “কেউই জানেনা তাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর কী লূকায়িত রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পূরুস্কার স্বরুপ। ” (সূরা সাজদাঃ ১৭)।
৬৮৭৪। হারুন ইবনুূু মারুফ ও হারুন ইবনুূু সাঈদ আল আয়লী (রহঃ) সা’দ ইবনুূু সা’দ আল সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর এক মজলিসে উপস্থিত ছিলাম। তিনি বর্ননাতীতভাবে জান্নাতের প্রশংসা করে শেষ পর্যায়ে বললেন, এতে এমন সব নিয়ামত রয়েছে যা কোন চক্ষু কখনো দেখেনি, কোন কান কখনো শুনেনি এবং কোন অন্তকরণ কখনো কল্পনাও করেনি। অতঃপর তিনি পাঠ করলেন- তারা শয্যা ত্যাগ করত তাদের প্রতিপালককে ডাকে, আশায় ও আশংকায় এবং তাদেরকে যে রিযক দান করেছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। কেউই জানেনা তাদের জন্য নয়ন প্রীতিকরণ কী লুকায়িত রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরুপ। ”
৬৮৭৫। কুতায়বা ইবনুূু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সুত্রে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জান্নাতে এমন একটি বৃক্ষ আছে, যার ছায়ায় একজন আরোহী একশ বছর পর্যন্ত সফর করতে পারবে।
৬৮৭৬। কুতায়বা ইবনুূু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে রয়েছে যে- এতেও সে সফর শেষ করতে পারবে না।
৬৮৭৭। ইসহাক ইবনুূু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) সাহুল ইবনুূু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ জান্নাতের মধ্যে এমন একটি বৃক্ষ রয়েছে, যার ছায়ায় একজন আরোহী একশ বছর সফর করেও তা শেষ করতে পারবে না। বর্ণনাকারী আবূ হাযিম (রহঃ) বলেন, নূ”মান ইবনুূু আবূ আয়্যাশ যুরাকীর নিকট এ হাদীস আমি বর্ণনা করার পর তিনি বললেন, আমাকে আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) বলেছেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ জান্নাতের মাঝে এমন একটি বৃক্ষ আছে, যা স্ফুর্তিবাজ দ্রুতগামী অশ্বের আরোহী একশ- বছর পর্যন্ত সফর করেও অতিক্রম করতে পারবে না।
৬৮৭৮। মুহাম্মাদ ইবনুূু আবারে রহমান ইবনুূু সাহল (অন্য সনদে) হারুন ইবনুূু সাঈদ আল আয়লী (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ জান্নাতী লোকদেরকে লক্ষ্য করে আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে জান্নাতীগণ! তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার দরবারে উপড়ী আছি। সমস্ত কল্যাণ আপনারই হাতে। অতঃপর বলবেন, তোমরা কি সন্তুষ্ট? তারা উত্তর দেবে, হে আমাদের প্রতিপালক! কেন আমরা সন্তুষ্ট হবো না? অথচ আপনি আমাদেরকে এমন জিনিস দান করেছিল যা আপনার সৃষ্টি জগতের অন্য কাউকে দান করেননি। তিনি বলবেন আমি কি তোমাদেরকে এর থেকে উত্তম জিনিস দান করব না? তারা বলবে, হে রব! এর চাইতে উত্তম বস্তু আর কি হতে পারে? অতঃপর আল্লাহ বলবেনঃ আমি তোমাদের উপর আমার সন্তুষ্টি নাযিল করব। এরপর তোমাদের উপর আমি আর কখনো অসন্তুষ্ট হবো না।
৬৮৭৯। কুতায়বা ইবনুূু সাঈদ (রহঃ) সাহল ইবনুূু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ জান্নাতী লোকেরা জান্নাতের সুউচ্চ বালাখালাসমূহ দেখতে পাবে, তোমরা যেমন আকাশের তারকারাজি দেখে থাকা বর্ণনাকারী বলেন, নুঁমান ইবনুূু আবূ আয়্যাশের নিকট এ হাদীসটি আমি বর্ণনা করার পর তিনি বললেন, আমি আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)-এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেছেন, যেমনিভাবে তোমরা পূর্ব বা পশ্চিম দিগন্তের তারকারাজি দেখে থাক।
৬৮৮০। ইসহাক ইবনুূু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ হাযিম (রহঃ) থেকে এর সনদে ইয়াকুবের হাদীসে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
0 বিস্তারিত আরও দেখুন:
Post a Comment