Friday 7 August 2015

Filled Under:

দোয়া

প্রাত্যহিক দোয়াসমূহ
ঘুমাতে যাওয়ার সময় দোয়া
ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺑﺴﻤﻚ ﺃﻣﻮﺕ ﻭﺃﺣﻴﺎ )
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমূতু ওয়া-আহ'ইয়া
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমারই নামে মৃত্যুবরন করি,আবার তোমারই
নামে জীবন ধারন করি।
ঘুম থেকে উঠার পরের দোয়া


ﺍَﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟﻠﻪِ ﺍﻟَّﺬِﻯْ ﺍَﺣْﻰَ ﻧَﻔْﺴِﻰْ ﺑَﻌْﺪَ ﻣَﺎﺍَﻣَﺎﺗَﻬَﺎ ﻭَ ﺍِﻟَﻴْﻪِ ﺍﻟﻨُّﺸُﻮْﺭُ
উচ্চারণঃ আলহামদুলিল্লাহিল লাজি আহইয়া নাফছি বা'দা মা আমাতাহা
ওয়া ইলাইহিন নুশুর।
ফজিলতঃ রাসূল (সঃ) ঘুম থেকে উঠেই এই দোয়া পড়তেন। এই দোয়া পড়লে
সারাদিন ভালো কাটবে। (তিরমিজী শরীফ, খন্ড-২ পৃষ্ঠা-১৭৮)
ঘর থেকে বের হওয়ার সময়ের দোয়া
উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি তাওয়াক'কালতু আলাল্লাহি ওয়ালা হাওলা ওয়ালা
কু'ওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ
ফজিলতঃ রাসূল (সঃ) বলেছেন যে ব্যাক্তি এই দোয়া পড়ে ঘর থেকে
বেরোবে সকল বিপদ থেকে সে নিরাপদে থাকবে ও ইবলিশ শয়তান তার
কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। (তিরমিজী শরীফ, খন্ড-২ পৃষ্ঠা-১৮০)
টয়লেটে যাওয়ার আগে দোয়া
ﺍَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍِ ﻧِّﻰْ ﺍَﻋُﻮْﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺨُﺒْﺚِ ﻭَﺍﻟْﺨَﺒَﺎﺋِﺚِ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল খুবথি ওয়াল খাবায়ি'থ
উচ্চারণঃ এই দোয়া পড়ে রাসূল (সঃ) টয়লেটে ঢুকতেন। টয়লেটে ঢুকার আগে
এই দোয়া পড়তে বলেছেন। (বুখারী শরীফ, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৯৩৬)।
টয়লেট থেকে বের হওয়ার
আলহামদুলিল্লাহিল্লাযী আযহাবা আল্লীল আযা ওয়াআ-ফানী।
অর্থঃ সেই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেছি, যিনি আমার কাছ থেকে
কষ্টদায়ক জিনিস দূর করে দিলেন এবং প্রশান্তি দান করেছেন (ইবনে
মাজা)।
মসজিদে প্রবেশ ও বাহিরে হওয়ার সময়ের দোয়া
মসজিদে প্রবেশ করার দোয়াঃ আল্লা-হুম্মাফ তাহ্লী আবওয়াবা
রাহমাতিকা
মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়াঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নি আছআলুকা-মিন
ফাদলিকা
স্ত্রী সহবাসের দোয়া
বিছমিল্লা-হি আল্লা-হুম্মা জান্নিব-নাশ শাইত্বানা ওয়া জান্নিবিশ
শাইত্বানা মা রাজাকতানা।
কাপড় পরিধানের দোয়া
আল্হামদু লিল্লাহিল্লাজী কাছানী মা উয়ারী বিহী আওরাতী অ
আতাজাম্মাল্লু বিহী ফী হায়া-তী
খাবার শুরু ও শেষ করার দোয়া
খাবারের শুরুতেঃ বিসমিল্লাহে অ-আলা বারকাতিল্লাহে
খাবারের পরঃ আলহামদু-লিল্লা হিল্লাজী আত্ব আমানা অ- ছাক্কানা অ-
জা আলানা মিনাল মুছলেমীন
ঘর হইতে বাহির হওয়ার দোয়া
বিছমিল্লাহে তাওয়াক কালতু আলাল্লাহে
দাওয়াত বা অন্যের ঘরে খাওয়ার পর দোয়া
আল্লাহুম্মা আত্বয়েম মান আত্বআমানী ওয়াছ্ক্কে মান ছাক্কানী।
সকাল-সন্ধ্যায় পড়ার দোয়া
ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺬﻯ ﻻ ﻳﻀﺮ ﻣﻊ ﺍﺳﻤﻪ ﺷﻴﺊ ﻓﻰ ﺍﻻﺭﺽ ﻭﻻ ﻓﻰ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﻭﻫﻮ ﺍﻟﺴﻤﻴﻊ ﺍﻟﻌﻠﻴﻢ
‏( তিন বার পাঠ করা ‏)
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহিল্লাজী লা ইয়াদুররু মাআসমিহী শাইয়ুন ফিল আরদি
ওলা ফিস সামাই ওয়াহুয়াস সামিউল আলীম।
অর্থ : আমি সকালে বা সন্ধ্যায় উপনীত হয়েছি এমন আল্লাহর নামে যার
নামের বরকতে আসমান ও যমীনের কোন কিছুই ক্ষতি করতে পারে না।
ফজিলত : যে ব্যক্তি প্রত্যহ সকাল ও সন্ধ্যায় এই দোয়া তিন বার করে পাঠ
করবে, কোন কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না।
অন্যান্য দোয়াসমূহ
রোগ থেকে দ্রুত আরোগ্য প্রাপ্তির দোয়া
ﺍَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺭَﺏَّ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻣُﺬْﻫِﺐَ ﺍﻟْﺒَﺎﺱِ ﺍِﺷْﻒِ ﺍَ ﻧْﺖَ ﺍﻟﺸَّﺎﻓِﻰْ ﻻَ ﺷَﺎﻓِﻰْ ﺍِﻻَّ ﺍَ ﻧْﺖَ ﺷِﻔَﺎﺀً ﻻَﻳُﻐَﺎﺩِﺭُ ﺳُﻘْﻤًﺎ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা রাব্বান নাছি মুযহিবাল বাছি - ইশফি আনতা শাফি
- লা শাফি ইল্লা আনতা শিফা'ন লা ইয়োগাদিরু সুকমা।
ফজিলতঃ আনাস (রাঃ) বলেছেন, রাসূল (সাঃ) অসুস্থ ব্যাক্তিদের উপর এই
দোয়া পড়ে ফু দিতেন। অসুস্থ ব্যাক্তি দ্রুত আরোগ্য লাভ করতো। (বুখারী
শরীফ খন্ড-২ পৃষ্ঠা-৮৫৫)
ব্যাথা উপশমের দোয়া
উচ্চারণঃ সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহী সুবহানাল্লাহীল আজীমি ওয়া
বিহামদিহী আস্তাগফিরুল্লাহ
ফজিলতঃ হুজুর সাঃ বলেন, এই দোয়া প্রত্যহ ফজর নামাজের পূর্বে বা পরে
১০০ বার করে পড়, সংসার দুনিয়া আপনা আপনি তোমার দিকে ফিরবে
অর্থাত দুনিয়া তোমাকে হেয় ও লাঞ্ছিত অবস্থায় ধরা দিবে এবং এতদ্ভিন্ন
আল্লাহতায়ালা এর একেকটি শব্দ হতে এক একেক জন ফেরেশতা তৈরী করে
কেয়ামত দিবস পর্যন্ত তসবীহ পাঠে নিযুক্ত করে দিবেন উহার সমুদয় সোয়াব
তুমি পাবে
এর মুল বক্তব্য হচ্ছে এস্তেগফার। বলাবাহুল্য গুনাহের কারনেই মানুষের
রিজিকের সঙ্কীর্নতা এবং সকল প্রকার দুঃখ কষ্ট ও পেরেশানী ঘটে থাকে।
এই আমল নিয়মিত করার মাধ্যমে সংসারে কোন অভাব অনটন থাকতেই পারে
না।
প্রত্যেক নামাযের পরের দোয়া
সুবহানাল্লাহ্ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ্ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবার ৩৩ বার
এবং একবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহিদা্হু লা-শারীকালাহু, লাহুল মুলক্
ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শা্য়্যিন ক্বাদীর।
ফযীলতঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেক সালাতের পর উক্তরূপে তসবীহ্ পাঠ করে তার
সকল গুনাহ্ মার্জিত হয়ে যায় যদিও তা সমুদ্রের ফেণরাশির মত অফুরন্ত হয়।
যে প্রত্যহ ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহি ও বিহামদিহী’ পাঠ করে তার
পাপরাশি সমুদ্রের ফণরাশির ন্যায় অপরিসীম হলেও তা ক্ষমা করা হয়।
মাতা-পিতার জন্য সন্তানের দোয়া
উচ্চারণঃ রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ঈয়ানী সাগিরা। (সূরা বণী
ইসরাইল, আয়াতঃ ২৩-২৫)
অর্থঃ হে আল্লাহ্ আমার মাতা-পিতার প্রতি আপনি সেই ভাবে সদয় হউন,
তাঁরা শৈশবে আমাকে যেমন স্নেহ-মমতা দিয়ে লালন-পালন করেছেন।
ঈমানের সাথে মৃত্যু বরণ করার দোয়া
উচ্চারণঃ রাব্বানা লা’তুযিগ কুলুবানা বা’দা ইয হাদাইতানা ওয়া হাবলানা
মিল্লাদুনকা রাহমাতান, ইন্নাকা আনতাল ওয়াহাব। (সুরা আল ইমরান,
আয়াতঃ ০৮)
অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা, সরলপথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের
অন্তরকে বক্র করে দিওনা এবং তুমি আমাদের প্রতি করুনা কর, তুমিই মহান
দাতা।
ভুল করে ফেললে ক্ষমা চাওয়ার দোয়া
উচ্চারণঃ রাব্বাবা যালামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফির্লানা ওয়াতার
হামনা লানা কুনান্না মিনাল খা’সিরিন।
অর্থঃ হে আল্লাহ্, আমি আমার নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি। এখন তুমি
যদি ক্ষমা ও রহম না কর, তাহলে আমি ধ্বংস হয়ে যাব।
গুনাহ্ মাফের দোয়া
উচ্চারণঃ রাব্বানা ফাগফিরলানা যুনুবানা ওয়া কাফফির আন্না
সাইয়্যিআতিনা ওয়া তাওয়াফ্ফানা মায়াল আবরার। (সূরা আল ইমরান,
আয়াতঃ ১৯৩)
অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের গুনাহসমূহ মাফ করে দাও,
আমাদের থেকে সকল মন্দ দূর করে দাও এবং আমাদের নেক লোকদের
সাহচার্য দান কর।
ক্ষমা ও রহমতের দোয়া
উচ্চারণঃ রাব্বিগ ফির ওয়ারহাম ওয়া আনতা খাইরুর রাহিমীন।
অর্থঃ হে আল্লাহ্, আমাকে ক্ষমা করে দাও, আর আমার প্রতি রহম কর,
তুমিই তো উত্তম দয়ালু।
ঈমান ঠিক রাখার দোয়া
উচ্চারণঃ ইয়া মুক্বাল্লিবাল কুলুবি ছাব্বিত ক্বালবি আলা দ্বীনিকা।
অর্থঃ হে মনের গতি পরিবর্তনকারী, আমার মনকে সত্য দ্বীনের উপর স্থিত
কর।
অস্থিরতায় পাঠ করার দোয়া
উচ্চারণঃ আল্লাহু ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুমু বিরাহমাতিকা আসতাগীছু।
অর্থঃ হে চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী আল্লাহ্ তোমার রহমত দ্বারা আমাকে
সাহায্য কর।
এবং
উচ্চারণঃ সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী, সুবহানান্নাহিল আযীম।
অর্থঃ মহান আল্লাহ বড়ই পবিত্র, আল্লাহ বড়ই পবিত্র ও মহান।
বিপদে আল্লাহর সাহায্য লাভের জন্য দোয়া
b> উচ্চারণঃ হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকীল, নি’মাল মাওলা ওয়া
নি’মাল নাসির।
অর্থঃ মহান আল্লাহর সাহায্যই আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনিই উত্তম
জামিনদার। তিনি কতইনা উত্তম প্রভু এবং উত্তম সাহায্যকারী।
সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আন্তা খালাক্বতানী
ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা আলা আহ্দিকা, ওয়া ওয়া’দিকা
মাছত্বোয়াতাতু, আউযুবিকা মিন শাররি মা ছানা’তু, আবুউ লাকা
বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা, ওয়া আবুউ লাকা বিজাম্বি, ফাগফিরলী। ফা
ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লাহ আন্তা।(যাদুল মাআদ)।
অর্থঃ হে আল্লাহ্ তুমি আমার প্রতিপালক। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই।
আমাকে সৃষ্টি করেছ এবং আমি তোমার বান্দা। আর আমি সাধ্যমত তোমার
অঙ্গিকার ও প্রতিশ্রুতির উপর কায়েম আছি। আমি মন্দ যা করেছি তা থেকে
তোমার আশ্রয় চাই। আমার উপর তোমার প্রদত্ত নেয়ামতের স্বীকৃতি দিচ্ছি।
আর আমার গুনাহ্গুলো স্বীকার করছি। অতএব আমাকে ক্ষমা কর। কারণ তুমি
ছাড়া গুনাহ্ ক্ষমা করার আর কেউ নেই।
ফজিলতঃ রাসুল সা. বলেছেন, তোমাদের কেউ এ কথাগুলো সন্ধ্যা বেলায়
বললে, অতপর সকাল হওয়ার আগেই তার মৃত্যু হলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব
হয়ে যায়। অনুরূপভাবে তোমাদের কেউ তা সকাল বেলায় বললে, অতপর
সন্ধ্যার আগেই তার মৃত্যু হলে তার জন্যও জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।
(বুখারী, তিরমিযী) ।
অত্যাচারের ভয় থেকে মুক্তির দোয়া
উচ্চারণঃ আল্লাহুকফিনাহু বিমা শিতা আল্লাহুম্মা ইন্না নাজআলুকা ফী ন্
হহুরিহিম ওয়া নাউজু বিকা মিন শুররিহিম |
জ্ঞান বৃদ্ধির দোয়া
উচ্চারণঃ রব্বি জীদনী ঈলমা
অর্থঃ হে আল্লাহ্ আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দাও
বিশ লক্ষ নেকীর দোয়া
উচ্চারনঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াদাহু লা শারিকালাহু আহাদান
ছামাদান লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউ লাদ ওয়া লাম ইয়া কুল্লাহু কুফুওয়ান
আহাদ।
ফজিলতঃ যে ব্যাক্তি এই দোয়া একবার পাঠ ক রবে তার আম ল নামায় বিশ
লক্ষ নেকী লেখা হবে।
এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নেকীর দোয়া
যে ব্যাক্তি দৈনিক ১০০ বার "সুবহানাল্লাহী ওয়া বিহামদিহী" পড়বে তা
আমল নামায় এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নেকী লেখা হবে।
দোয়া কবুলের সময়
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা দোয়া করার জন্য এমন অসংখ্য সময় ও সুযোগ
আমাদের জন্য দিয়ে রেখেছেন, তা সত্যিই অবাক করার মতো বিষয়। আসুন
সহীহ হাদীস থেকে আমরা দেখে নেই দোয়া কবুল হবার সময়গুলো সম্পর্কে।
রাতের শেষ তৃতীয়াংশ
এই সময় দোয়া কবুল হবার ব্যাপারে সহীহ হাদীসে অত্যন্ত জোরালো
রেফেরেন্স আছে। এটা প্রতিটি রাতের জন্যই প্রযোজ্য, শুধুমাত্র শবে বরাত,
শবে মিরাজ বা কদর রাতে নয়।
আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “প্রত্যেকদিন
রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের রব (আল্লাহ) সবচেয়ে নীচের আকাশে
নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কে আমাকে ডাকছো, আমি তোমার ডাকে সাড়া
দেবো। কে আমার কাছে চাইছো, আমি তাকে তা দেবো। কে আছো আমার
কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী, যে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো?” (সহীহ
বুখারী)
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “আল্লাহর কাছে তাঁর একজন উপাস্য সবচেয়ে
নিকটতম যে সময়টাতে আসতে পারে তা হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশ।
সুতরাং তোমরা যদি পারো তাহলে তোমরা তাদের একজন হও যারা সে সময়
আল্লাহর স্মরণ করে”। (তিরমিজি, নাসায়ী, আল হাকিম-সহীহ)
শেষ রাতের যে কোন একটি সময়
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “রাতে এমন একটি সময় আছে যে সময়টাতে কোন
মুসলিমের এমনটা হয়না যে সে এই পৃথিবী কিংবা পরকালের জোবনের জন্য
আল্লাহর কাছে কিছু চাইলো আর তাকে তা দেয়া হলো না। আর এটা
প্রতিটি রাতেই ঘটে”। (মুসলিম-৭৫৭)
আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তি সময়
মক্কা কিংবা মদীনার নামাজের জামায়াত শুরু হবার মাঝখানে অনেক
মুসলিমকে দেখা যায় নামাজ শুরুর আগে হাত তুলে দোয়া করতে। এ সময়টা
দোয়া কবুল হবার গুরুত্বপূর্ণ সময়।
আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “আযান ও ইকামাতের
মধ্যবর্তি সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয়না”। (আবু দাউদ-৫২১,
তিরমিজি-২১২)
জুম্মার দিন যে কোন একটি সময়ে
জুম্মার দিনে এমন অসাধারণ একটি নিয়ামাতের সময় আছে যে সময়টাতে
দোয়া কবুল হবার বিশুদ্ধ বর্ণনা রাসুল সাঃ থেকে এসেছে।
আবু হুরাইরাহ রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ সাঃ আমাদের
একদিন শুক্রবার নিয়ে আলোচনা করলেন এবং বললেন, ‘জুম্মার দিনে একটি
সময় আছে যে সময়টা কোন মুসলিম সালাত আদায়রত অবস্থায় পায় এবং
আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ অবশ্যই তার সে চাহিদা মেটাবেন’,
এবং তিনি (রাসুল সাঃ) তাঁর হাত দিয়ে ইশারা করে সে সময়টা
সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন”। (সহীহ বুখারী)।
কোন কোন স্কলার সে সময়টার ব্যপারে বলেছেন, তা হলো-ইমাম যখন
মসজিদে প্রবেশ করেন সে সময় থেকে সালাত শেষ হবার সময় পর্যন্ত, কেউ
বলেছেন দুই খুতবার মাঝখানে, কেউ আবার জোর দিয়ে বলেছেন তা হলো
আসর থেকে মাঘরিব পর্যন্ত সময়টা।
জমজমের পানি পান করার সময়
জাবির রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “জমজম পানি হলো
তার জন্য, যার জন্য এটি পান করা হয়”। (ইবন মাজাহ ৩০৬২, আহমাদ
৩/৩৫৭)।
অর্থাৎ, জমজমের পানি খাবার সময় আল্লাহর কাছে যা চাওয়া হয়, তা
পাবার সম্ভাবনা আছে।
সিজদাহর সময়ে
আবু হুরাইরাহ রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
“যে সমটাতে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটতম অবস্থায় থাকে তা হলো
সিজদাহর সময়। সুতরাং তোমরা সে সময় আল্লাহর কাছে বেশী বেশী চাও”।
(মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ)
রাতের বেলা ঘুম থেকে জেগে উঠলে
উবাদা ইবনুস সামিত রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “যে
কেউ রাতের বেলা ঘুম থেকে জাগে আর বলে-‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু
ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হা’মদু ওয়াহুয়া আ’লা
কিল্লি শায়্যিন কা’দির, আলহামদুলিল্লাহি ওয়া সুবহানাল্লাহি ওয়া লা
ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা
ইল্লা বিল্লাহ’ এবং এরপর বলে ‘আল্লাহুম মাগফিরলি (আল্লাহ আমাকে
ক্ষমা করুন) এবং আল্লাহর কাছে চায়, তাহলে তার ডাকে সাড়া দেয়া হবে
এবং সে যদি অজু করে সালাত আদায় করা, তাহলে তার সালাত কবুল করা
হবে”। (সহীহ বুখারী)
ফরজ সালাতের পরের সময়টাতে
আবু উমামাহ রাঃ বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ কে জুজ্ঞেস করা হলো, “ইয়া
রাসুলুল্লাহ, কো সময়ের ডাক শোনা হয়?” তিনি বললেন, “রাতের শেষ সময়ে
এবং ফরজ সালাতের পরে”। (তিরমিজি)।
অনেক স্কলারগন বলেছেন, এ সময়টা হলো সালাম ফেরানোর আগের সময়
(আত্তাহিয়াতুর পর)।
কদরের রাতে
নিঃসন্দেহে লাইলাতুল কদর হলো একটি বছরে কোন মানব সন্তানের পাওয়া
শ্রেষ্ঠ রাত। আল্লাহ বলেছেন,
“আমরা এটিকে (আল-কুরআন) কদরের রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি। তুমি কি
জানো কদরের রাত্রি কি? কদরের রাত্রি হাজার মাসের চেয়েও অধিক
উত্তম”।
বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত একাধিক বিশুদ্ধ হাদীসে এ রাতের সকল ইবাদত ও
আল্লাহর কাছে চাহিদা পূরণের কথা বলা হয়েছে।
বৃষ্টি হবার সময়
সাহল ইবন সা’দ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “দুই সময়ের
দোয়া ফেরানো হয়না। আযানের সময়ের দোয়া আর বৃষ্টি পড়ার সময়কার
দোয়া”। (আবু দাউদ ২৫৪০)
আযানের সময়
পূর্ববর্তি হাদীসের রেফারেন্স অনুযায়ী আযানের সময় দোয়া কবুল হবার
ভালো সময়।
মজলুম ও নির্যাতিত ব্যক্তি
মজলুমের দোয়া এবং বদ দোয়া দুটোই আল্লাহর কাছে কবুল হবার সম্ভাবনা
শতভাগ। রাসুলুল্লাহ সাঃ মুয়াজকে বলেছেন, “মজলুমের দোয়া থেকে সবসময়
সতর্ক থেকো, কেননা মজলুমের দোয়া ও আল্লাহর মধ্যে কোন পর্দা বা
আশ্রয় থাকে না”। (সহীহ বুখারী)
মুসাফিরের দোয়া
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “তিনটি দোয়া (আল্লাহর দ্বারা) ফিরিয়ে দেয়া
হয়না। সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়া, রোজাদার ব্যক্তির দোয়া,
মুসাফিরের দোয়া”। (বায়হাকি, তিরমিজি)
সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়া
পূর্ববর্র্তি হাদীসের রেফারেন্স অনুযায়ী।
রোজাদার ব্যক্তির দোয়া
পূর্ববর্র্তি হাদীসের রেফারেন্স অনুযায়ী। এছাড়া সমস্ত রমজান মাসই হলো
আল্লাহর কাছে চাইবার শ্রেষ্ঠ সময়। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “রমজান
মাসে করুণার দরজা খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া
হয়”। (সহীহ বুখারী ১৮৯৯)
অনুপস্থিত মুসলিম ভাই বা বোনের জন্য অন্তর থেকে উৎসরিত দোয়া
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “এমন কোন বিশ্বাসী বান্দা নেই, যে তার
অনুপস্থিত কোন ভাইয়ের জন্য দোয়া করে আর ফেরেশতারা বলে না
‘তোমার জন্যও তা হোক’”। (মুসলিম)
আরাফাতের দিনের দোয়া
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “দোয়ার ভেতর শ্রেষ্ঠ হলো আরাফাতের দিনের
দোয়া”। (তিরমিজি, মুয়াত্তা মালিক)
জিহাদের মাঠে শত্রুর মুখোমুখি হলে
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “দুটি দোয়া কক্ষনো ফিরিয়ে দেয়া হয়না অথবা
খুবই কম ফিরিয়ে দেয়া হয়। আযানের সমকার দোয়া আর সেই ভয়ংকর সময়কার
দোয়া যখন দু’টি বাহিনী পরস্পর মুখোমুখি হয়”। (আবু দাউদ ২৫৪০, ইবন
মাজাহ)
জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ দিন
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশদিন ছাড়া আর এমন
কোন দিন নেই, যে সময়ের সৎকাজ আল্লাহর কাছে তার চেয়ে বেশী প্রিয়”।
(সহীহ বুখারী ৯৬৯)
রোজদার ব্যক্তির ইফতারের সময়কার দোয়া
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “তিন ব্যক্তির দোয়া কখনও আল্লাহর দ্বারা
ফিরিয়ে দেয়া হয়না। যখন রোজাদার ব্যক্তি ইফতার করে (অন্য বর্ণনায়
এসেছে, রোজাদার ব্যক্তি যতক্ষণ ইফতার না করে), ন্যায়পরায়ণ শাসক,
নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া”। (আহমাদ, তিরমিজি)
অসুস্থ্য ব্যক্তিকে দেখতে যাবার পর সেই ব্যক্তির দোয়া
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “যখন তোমরা কোন অসুস্থ্য ব্যক্তিকে দেখতে
যাও, তখন ভালো কথা বলো (ভালো কিছু চাও), কেননা তোমরা তখন যাই
বলো, তার সাথে সাথে ফেরেশতারা ‘আমিন’ বলে”। (মুসলিম)
এছাড়াও জামাতের সুরা ফাতিহা পড়ার পর আমিন বলার সময়, মসজিদুল
হারামের ভেতর কাবার সামনে, পিতামাতার জন্য সন্তানের দোয়া,
হজ্জ্বের সময় কংকর নিক্ষেপের সময় এওম্ন আরো অনেক সময়ই দোয়া কবুলের
জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে সহীহ হাদীসে এসেছে।
দোয়ার গুরুত্ব ও তাৎপর্য
মহাপবিত্র আল কোরান সমগ্র মানব জাতির পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান রুপে মহান
আল্লাহ তায়ালা সর্বশেষ আসমানী গ্রন্থরূপে নাযিল করেছেন। মানব
জীবনের ইহকালীন ও পরলৌকিক যাবতীয় কল্যাণ এতে বিধৃত হয়েছে।
দৈনন্দিন আমলের মধ্যে দোয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কোরানে ইরশাদ
হচ্ছে -
ﻭﻗﺎﻝ ﺭﺑﻜﻢ ﺍﺩﻋﻮﻧﻰ ﺍﺳﺘﺠﺐ ﻟﻜﻢ ﺍﻥ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻳﺴﺘﻜﺒﺮﻭﻥ ﻋﻦ ﻋﺒﺎﺩﺗﻰ ﺳﻴﺪﺧﻠﻮﻥ ﺟﻬﻨﻢ ﺩﺍﺧﺮﻳﻦ - (আল মুমিন-৬০)
অর্থ : তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের
ডাকে সারা দিব। যারা অহংকারে আমার উপাসনা বিমুখ, ওরা লাঞ্চিত
হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে মাআরেফুল কোরানে বলা হয়েছে, দোয়ার
শাব্দিক অর্থ ডাকা, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশেষ কোন প্রয়োজনে ডাকার
অর্থে ব্যবহৃত হয়। কখনও যিকিরকেও দোয়া বলা হয়। উম্মতে মোহাম্মাদীয়ার
বিশেষ সম্মানের কারণে এই আয়াতে তাদেরকে দোয়া করার আদেশ করা
হয়েছে এবং তা কবুল করার ওয়াদা করা হয়েছে। যারা দোয়া করে না,
তাদের জন্য শাস্তিবানী উচ্চারণ করা হয়েছে।
কাবে আহবার (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, পূর্ব যুগে কেবল নবিগণকেই বলা
হত, দোয়া করুন; আমি কবুল করব। এখন এই আদেশ সকলের জন্য ব্যাপক করে
দেয়া হয়েছে এবং উম্মতে মোহাম্মাদিরই বৈশিষ্টি।
আলোচ্য আয়াতে দোয়া অর্থে ইবাদত বর্জনকারীকে জাহান্নামের শাস্তি
বানী শোনানো হয়েছে। যদি সে অহংকার বশতঃ বর্জন করে। কেননা
অহংকার বশতঃ দোয়া বর্জন করা কুফরের লক্ষন। তাই সে জাহান্নামারে
যোগ্য হয়ে যায়। নতুবা সাধারণ দোয়া ফরজ বা ওয়াজিব নয়। দোয়া না করলে
গোনাহ হয় না। তবে দোয়া করা সমস্ত আলেমের মতে মোস্তাহাব ও উত্তম।
এবং হাদীস অনুযায়ী বরকত লাভের কারণ।(সংক্ষিপ্ত তাফসিরে মাআরেফুল
কোরান; পৃ: ১১৯৩)
সকাল সন্ধ্যায় জিকির প্রসংঙ্গে পবিত্র কোরানে ইরশাদ হয়েছে,
ﻳﺎ ﺍﻳﻬﺎ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﺁﻣﻨﻮﺍ ﺍﻛﺮﻭﺍ ﺍﻟﻠﻪ ﺫﻛﺮﺍ ﻛﺜﻴﺮﺍ ، ﻭﺳﺒﺤﻮﻩ ﺑﻜﺮﺓ ﻭﺍﺻﻴﻼ . ‏( ﺍﺣﺰﺍﺏ
অর্থ : হে মুমিনগণ ! তোমরা আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর এবং সকাল-সন্ধ্যায়
আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর। (আহযাব-৪১ ‏)
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা জিকির ব্যতীত এমন
কোন ফরজই আরোপ করেননি যার পরিসীমা ও পরিমাণ নির্দিষ্ট নেই।
নামাজ দিনে পাঁচবার এবং প্রত্যেক নামাজের রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট।
রমজানের রোজা নির্দিষ্টকালের জন্য। হজ্বও বিশেষ স্থানে বিশেষ
অনুষ্ঠানাদি ও সুনির্দিষ্ট কর্ম-ক্রিয়ার নাম। যাকাতও বছরে একবারই ফরজ হয়।
পক্ষান্তরে আল্লাহর জিকির এমন এবাদত, যার কোন সীমা বা সংখ্যা
নির্ধারিত নেই। বিশেষ সময়কালও নির্ধারিত নেই অথবা এর জন্য দাঁড়ানো
বা বসার কোন বিশেষ অবস্থাও নির্ধারিত নেই। এমনকি পবিত্র এবং অযু সহ
থাকারও কোন শর্ত আরোপ করা হয়নি। সফরে থাকুক বা বাড়ীতে অবস্থান
করুক, সুস্থ থাকুক বা অসুস্থ, স্থলভাগ হোক বা জলভাগ, রাত হোক বা দিন
সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকিরের হুকুম রয়েছে। (মাআরেফুল কোরান)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,
ﻓﺎﺻﺒﺮ ﺍﻥ ﻭﻋﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺣﻖ ﻭ ﺍﺳﺘﻐﻔﺮ ﻟﺬﻧﺒﻚ ﻭ ﺳﺒﺢ ﺑﺤﻤﺪ ﺭﺑﻚ ﺑﺎﻟﻌﺸﻰ ﻭ ﺍﻻﺑﻜﺎﺭ . ‏( ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ
অর্থ : অতএব, আপনি সবর করুন। নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। আপনি আপনার
গোনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থণা করুন এবং সকাল-সন্ধ্যায় আপনার পালনকর্তার
প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করুন। (মুমিন-৫৫ ‏)
আরো ইরশাদ হয়েছে,
ﻳﺴﺒﺤﻮﻥ ﺍﻟﻠﻴﻞ ﻭ ﺍﻟﻨﻬﺎﺭ ﻭﻻ ﻳﻔﺘﺮﻭﻥ . ‏( ﺍﻻﻧﺒﻴﺎﺀ
অর্থ : তারা (ফেরেশতারা) রাতদিন তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা
করে, তারা শৈথিল্য করে না। (আম্বিয়া-২০ ‏)
অন্যত্র মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
ﻓﺎﺻﺒﺮ ﻋﻠﻰ ﻣﺎ ﻳﻘﻮﻟﻮﻥ ﻭ ﺳﺒﺢ ﺑﺤﻤﺪ ﺭﺑﻚ ﻗﺒﻞ ﻃﻠﻮﻉ ﺍﻟﺸﻤﺲ ﻭﻗﺒﻞ ﻏﺮﻭﺑﻬﺎ ﻭﻣﻦ ﺁﻧﺎﺀ ﺍﻟﻠﻴﻞ ﻓﺴﺒﺢ ﻭ ﺍﻃﺮﺍﻑ ﺍﻟﻨﻬﺎﺭ ﻟﻌﻠﻚ
ﺗﺮﺿﻰ . ‏(ﻃﻪ ) অর্থ : সুতরাং এরা যা বলে সে বিষয়ে ধৈর্যধারণ করুন। এবং
আপনার পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করুন সূর্যোদয়ের
পূর্বে, সূর্যাস্তের পূর্বে এবং তাসবীহ পাঠ করুন রাতের কিছু অংশে এবং
দিবা ভাগে; সম্ভবত তাতে আপনি সন্তুষ্ট হবেন।
হাদিসের আলোকে জিকির দোয়ার গুরুত্ব : হজরত জাবির ইবনে সামুরাহ
(রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন ,
ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﺫﺍ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻔﺠﺮ ﻗﻌﺪ ﻓﻰ ﻣﺼﻼﻩ ﺣﺘﻰ ﺗﻄﻠﻊ ﺍﻟﺸﻤﺲ . ﻣﺴﻠﻢ
অর্থ : নবি (সা.) ফজরের সালাত আদায়ের পর সূর্য উঠা পর্যন্ত নিজের
সালাতের জায়গায় বসে থাকতেন (এবং তাসবিহ- জিকিরে রত থাকতেন)।
(মুসলিম ‏)
অন্য এক হাদিসে এসেছে
ﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﻣﻮﺳﻰ ﺍﻻﺷﻌﺮﻯ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﻣﺜﻞ ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ ﺍﻟﺬﻯ ﻳﺬﻛﺮ ﺭﺑﻪ
ﻭﺍﻟﺬﻯ ﻻ ﻳﺬﻛﺮ ﺭﺑﻪ ﻣﺜﺎﻝ ﺍﻟﺤﻲ ﻭﺍﻟﻤﻴﺖ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻯ ﻭ ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ، ﻓﻘﺎﻝ : ﻣﺜﻞ ﺍﻟﺒﻴﺖ ﺍﻟﺬﻯ ﻳﺬﻛﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻴﻪ ﻭﺍﻟﺒﻴﺖ
ﺍﻟﺬﻯ ﻻ ﻳﺬﻛﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻴﻪ ﻣﺜﻞ ﺍﻟﺤﻲ ﻭﺍﻟﻤﻴﺖ .
অর্থ : হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি
(সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তার রবের জিকির করে আর যে ব্যক্তি
তার রবের জিকির করে না তাদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে জীবিত ও মৃতের ন্যায়।
(বুখারি ‏)
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, অতপর তিনি বলেছেন, যে ঘরে আল্লাহর
জিকির হয় আর যে ঘরে আল্লাহর জিকির হয় না তাদের দৃষ্টান্ত হলো
জীবিত ও মৃতের সমতুল্য।(মুসলিম)
রাসুল (সা.) আরো ইরশাদ করেন, ﺍﻥ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﻫﻮ ﺍﻟﻌﺒﺎﺩﺓ
হাদিসবিশারদগণ বলেণ, ﺍﻥ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﻫﻮ ﺍﻟﻌﺒﺎﺩﺓ বাক্যের অর্থ এরুপ হতে পারে যে,
প্রত্যেক ইবাদাতই দুআ। এখানে অর্থ এই যে, শাব্দিক অর্থের দিক দিয়ে
দোয়া ও ইবাদাত যতিও পৃথক পৃথক। কিন্তু উভয়ের ভাবর্থ এক। অথাৎ প্রত্যেক
দোয়াই এবাদত এবং প্রত্যেক ইবাদতই দোয়া। কারণ এই যে, দোয়া বলা হয়
কারো সামনে চুড়ান্ত দীনতা অবলম্বন করাকে। বলা বাহুল্য, নিজেকে কারও
মুখাপেক্ষী মনে করে তার সামনে সওয়ালের হাত প্রসারিত করা বড় দীনতা,
যা এবাদাতের অর্থ । এমনি ভাবে প্রত্যেক এবাদাতের সারমর্মও আল্লাহর
কাছে মাগফেরাত ও জান্নাত তলব করা এবং ইহকাল ও পরকালের নিবাপত্তা
প্রার্থনা করা।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহর কাছে দোয়া অপেক্ষা অধিক সম্মানিত
কোন কিছুই নাই। (তিরমিজি)
তিনি আরও বলেন,
ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﻣﺦ ﺍﻟﻌﺒﺎﺩﺓ
অর্থ : দোয়া এবাদতের মগজ। (তিরমিজি ‏)
আরও বর্ণিত হয়েছে,
ﻣﻦ ﻟﻢ ﻳﺴﺌﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﻐﻀﺐ ﻋﻠﻴﻪ ‏( ﺗﺮﻣﺬﻯ )
অর্থ : যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে চায় না (দোয়া করে না) আল্লাহ
তায়ালা তার উপর রাগান্বিত হন।
আরও বর্ণিত হয়েছে,
ﻣﻦ ﺳﺮﻩ ﺍﻥ ﻳﺴﺘﺠﻴﺐ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻪ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﺸﺪﺍﺋﺪ ﻭ ﺍﻟﻜﺮﺏ ﻓﻠﻴﻜﺜﺮ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﻓﻰ ﺍﻟﺮﺧﺎﺀ . ﺗﺮﻣﺬﻯ
অর্থ : যে ব্যক্তি চায় যে, বিপদের সময় তার দোয়া কবুল হোক, তাহলে সে
যেন সুখে দুখে সর্বাবস্থায় বেশি বেশি দোয়া করে। (তিরমিজি ‏)
অসংখ্য আয়াত ও হাদিসে দোয়া ও জিকিরের গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত
হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সর্বাবস্থায় দোয়া করে পূর্ন
বহমত ও বরকত অর্জণ করার তৌফিক দান করুন।
কার্টেসীঃ মুফতি মনিরুল ইসলাম, শিক্ষা সচিব
দোয়া কবুল না হওয়ার কারন
কোনো কোনো সময় দোয়া কবুল হয় না। কেননা দোয়াকারী এমন কিছু চান
যা তার জন্যে আদৌ কল্যাণকর নয়। অনেক সময় দোয়াকারী নিজেই অনুধাবন
করেন যে, তিনি দোয়ার মাধ্যমে যা প্রার্থনা করেছিলেন তা ভুল ছিল।
'যেমন: কোনো অসুস্থ ব্যক্তি অথবা ছোট শিশু এমন কোনো খাদ্যের আবেদন
করে যা তার জন্যে ক্ষতিকর, অথচ সে তা বোঝে না।' সুতরাং এমন অবস্থায়
আল্লাহ তাআলা দোয়া কবুল করেন না। নিম্নে দোয়া কবুল না হওয়ার কিছু
কারণ উল্লেখ করা হল:
দোয়া কবুলে কল্যাণ না থাকা
যেসব দোয়ায় বান্দার কল্যাণ থাকেনা সেসব দোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল
করেন না। ইমাম বাকের (আঃ) বলেন: আল্লাহ তাআলা তাঁর মনোনীত ও
অমনোনীত উভয় বান্দাদের পার্থিব কল্যাণ দান করেন। কিন্তু আখেরাতের
কল্যাণ শুধুমাত্র মনোনীত বান্দাদের দান করেন। মোমিন ব্যক্তি স্বীয়
অজান্তে পার্থিব জীবনে এমন কিছু চেয়ে থাকেন যা তার জন্যে
অকল্যাণকর। সুতরাং আল্লাহ তাআলা তাকে তা দেন না। অপরপক্ষে
পারলৌকিক জীবনের জন্যে যা চান তাই দেন। আর কাফেরদেরকে পার্থিব
জীবনে যা চায় তা চাওয়ার পূর্বেই দিয়ে থাকেন, কিন্তু বেহেস্তে
তাদেরকে কিছুই দেবেন না। (বিহারুল আনওয়ার, খঃ ৬৯, পৃঃ ৫২)
আল্লাহর নির্ধারিত নিয়ম-কানুনের বাইরে চাওয়া
দোয়ার মাধ্যমে এমন কিছু চাওয়া ঠিক নয় যা আল্লাহর নির্ধারিত নিয়মের
বহির্ভূত। 'যেমন, গাছ রোপণ না করেই ফলের জন্যে দোয়া করা।' এ ধরনের
দোয়া প্রাকৃতিক নিয়মের বহির্ভূত। কাজেই তা কবুল হওয়ার আশা রাখা
আদৌ যুক্তিসংগত নয়।
নিষ্ঠুরতা ও নির্দয়তা
কঠোর, নির্মম, নির্দয় ও নিষ্ঠুরদের দোয়া আল্লাহর নিকট কবুল হয় না। এ
প্রকৃতির মানুষ অহংকারী হয়ে থাকে। ইখলাসের সহিত আল্লাহকে ডাকে না।
নির্দয় মানুষের মনকে আল্লাহ তাআলা পাথর কিংবা তার চেয়েও শক্ত বলে
ঘোষণা করেছেন:
ﺛُﻢَّ ﻗَﺴَﺖْ ﻗُﻠُﻮﺑُﻜُﻢْ ﻣِﻦْ ﺑَﻌْﺪِ ﺫﻟِﻚَ ﻓَﻬِﻲَ ﻛَﺎﻟْﺤِﺠﺎﺭَﺓِ ﺃَﻭْ ﺃَﺷَﺪُّ ﻗَﺴْﻮَﺓً ﻭَ ﺇِﻥَّ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺤِﺠﺎﺭَﺓِ ﻟَﻤﺎ ﻳَﺘَﻔَﺠَّﺮُ ﻣِﻨْﻪُ ﺍﻟْﺄَﻧْﻬﺎﺭُ ﻭَ ﺇِﻥَّ ﻣِﻨْﻬﺎ ﻟَﻤﺎ
ﻳَﺸَّﻘَّﻖُ ﻓَﻴَﺨْﺮُﺝُ ﻣِﻨْﻪُ ﺍﻟْﻤﺎﺀُ ﻭَ ﺇِﻥَّ ﻣِﻨْﻬﺎ ﻟَﻤﺎ ﻳَﻬْﺒِﻂُ ﻣِﻦْ ﺧَﺸْﻴَﺔِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَ ﻣَﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻐﺎﻓِﻞٍ ﻋَﻤَّﺎ ﺗَﻌْﻤَﻠُﻮﻥ
এর (ঘটনার) পরও তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেল, তা পাথর অথবা
তদপেক্ষা কঠিন! পাথরের মধ্যে কতক এমনও আছে যা থেকে নদী-নালা
প্রবাহিত হয়। আর কতক এমনও আছে যা বিদীর্ণ হওয়ার পর তা থেকে পানি
নির্গত হয়। আবার কতক এমনও আছে যা আল্লাহর ভয়ে ধ্বসে পড়ে! আর
আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে বেখবর নন। (সুরা: আল্ বাকারা, ৭৪। ‏)
ইমাম সাদিক (আঃ) বলেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা নিষ্ঠুর ও নির্দয়
মানুষের দোয়া কবুল করেন না। (এদ্দাতুদ্ দায়ি, অধ্যায়, ৩।)
হারাম অর্থ দ্বারা জীবনধারণ করা
দোয়া একপ্রকার এবাদত। এবাদত কবুল হওয়ার শর্ত হচ্ছে হারাম থেকে দূরে
থাকা। অনুরূপভাবে দোয়া কবুলের জন্যেও শর্ত হচ্ছে হারাম ভক্ষণ না করা।
আল্লাহ তাআলা হাদিসে কুদসিতে বলেন: তোমার দায়িত্ব হলো দোয়া
করা। আর আমার দায়িত্ব হলো কবুল করা। হারাম ভক্ষণকারীর দোয়া ব্যতীত
অপর কোনো দোয়াই পর্দার আড়ালে থাকে না। (এদ্দাতুদ্ দায়ি, অধ্যায়,
৩।)
অন্যের প্রতি অত্যাচার করা
অন্যের হক পয়মাল করা এবং অন্যের প্রতি জুলুম-অত্যাচার করা, দোয়া কবুল
না হওয়ার একটি অন্যতম কারণ। আল্লাহ তাআলা অত্যাচারীদের সাহায্য
করেন না।
ﻭَ ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻤُﻮﻥَ ﻣﺎ ﻟَﻬُﻢْ ﻣِﻦْ ﻭَﻟِﻲٍّ ﻭَ ﻻ ﻧَﺼﻴﺮ
জালিমদের কোনো অভিভাবক ও সাহায্যকারী নেই।(সুরা: আশ শুরা, ৮। ‏)
আমিরুল মোমেনিন হজরত আলী (আঃ) বলেন: আল্লাহ তাআলা হজরত ইসার
(আঃ) প্রতি এমর্মে ওহি নাজিল করেন যে, হে ইসা! বনিইসরাইলকে বলেন,
"যতক্ষণ পর্যন্ত তারা আমার কোনো একটি প্রাণীর প্রতিও জুলুম করবে,
ততক্ষণ পর্যন্ত আমিও তাদের কোনো দোয়া কবুল করব না!"(এদ্দাতুদ্ দায়ি,
অধ্যায়, ৩।)
গোনাহে লিপ্ত হওয়া
ইমাম সাদিক (আঃ) বলেন: আল্লাহর নিকট বান্দা এমন কিছু চেয়ে দোয়া
করে যে, যদি তাকে সেটা দেওয়া হয় তাহলে পরবর্তীতে সে উক্ত বস্তুর
মাধ্যমে গোনাহে লিপ্ত হবে। এ কারণে আল্লাহ তাআলা ফেরেস্তাদের
বলেন: 'তার চাহিদা পূরণ করো না! কেননা সে গুনাহের দিকে অগ্রসর
হবে।' এ কারণে আমার পক্ষ থেকে দোয়া গ্রহণ হতে বঞ্চিত করা হয়েছে।
(বিহারুল আনওয়ার, খঃ ৬৯, পৃঃ ৫২।)

0 বিস্তারিত আরও দেখুন:

Post a Comment

Copyright @ 2013 নবীদের কাহিনী.