রোযাবস্থায় বীর্যপাত এবং স্বপ্নদোষের বিধান
আলহামদুলিল্লাহ্ ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু
আলা রাসূলিল্লাহ, আম্মাবাদঃ
রামাযান মাসে সাউম পালনকারী ভাইদের পক্ষ
থেকে উপরোক্ত বিষয়ে প্রায় প্রায় প্রশ্ন করা হয়।
এ সম্পর্কে শরীয়ার সঠিক বিধান না জানা থাকার
কারণে অনেকে অনেক রকমের ধারণা করে। কেউ
মনে করে তার রোযা নষ্ট হয়ে গেছে, কেউ বলে
রোযা মাকরূহ হয়ে গেছে, কেউ ভাবে তার দ্বারা
গুনাহ হয়ে গেছে আর কেউ সংশয়ে থাকে। তাই
সংক্ষিপ্তাকারে বিষয়টির শারঈ সমাধান উল্লেখ
করার নিয়ত করেছি। আল্লাহই তাওফীকদাতা।
প্রথমতঃ আমাদের মনে রাখা উচিৎ যে, রোযা/
সাউম হচ্ছে, আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে ফজর
হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার ও
যৌনসঙ্গম হতে বিরত থাকা। [ফাতহুল বারী, ৪/১৩২]
তাই যৌন সঙ্গম হচ্ছে রোযা ভংগের একটি অন্যতম
কারণ।
অতঃপর জানা উচিৎ যে, রোযাবস্থায় বীর্যপাতের
দুটি অবস্থা রয়েছে। যথা:
(ক) রোযাদার স্বেচ্ছায় স্বয়ং তার বীর্যপাত
ঘটায়। অর্থাৎ তার নিজের এখতিয়ারে বীর্যপাত
করা হয়।
(খ) সে স্বেচ্ছায় বীর্যপাত ঘটায় না। অর্থাৎ তার
এখতিয়ারে তা ঘটানো হয় না।
প্রথম অবস্থা আবার কয়েক শেণীতে বিভক্তঃ
১-রোযাবস্থায় স্ত্রী সঙ্গম করা:
স্ত্রী-সঙ্গম বলতে স্ত্রীর যোনীতে লিঙ্গের
অগ্রভাগ (মাথা) প্রবেশ করা বুঝায়, তাতে
বীর্যপাত হোক বা নাই হোক। স্ত্রীর পায়ু পথে
লিঙ্গাগ্র প্রবেশ করানোও এরই অন্তর্ভুক্ত। এটা
রোযাদারের এখতিয়ারভুক্ত কাজ। এমন হলে সেই
ব্যক্তির রোযা তো নষ্ট হবেই হবে কিন্তু তার
সাথে সাথে তার উপর কয়েকটি বিধান অর্পিত
হবে। যথা:
(ক) তাকে এই পাপ থেকে তাওবা করতে হবে।
(খ) এই কাজ ঘটার পর দিনের বাকী সময়
রোযাবস্থায় থাকতে হবে
(গ) রামাযান পর তাকে সেই রোযা কাযা করতে
হবে
(ঘ) কাফ্ফারা দিতে হবে।
এই অপরাধের কাফ্ফারা হচ্ছে যথাক্রমেঃ
(১) একটি দাস স্বাধীন করা।
(২) সম্ভব না হলে একটানা ধারাবাহিক দুই মাস
রোযা রাখা।
(৩) এটিও সম্ভব না হলে ৬০ জন মিসকীনকে খাদ্য
দান করা।
আবু হুরাইরা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
একদা আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর নিকট বসে ছিলাম। এমন সময় তাঁর নিকট
এক ব্যক্তি এসে বলল, আল্লাহর রাসূল আমি ধ্বংস
হয়ে গেছি। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেন, তোমাকে কিসে ধ্বংস করে
ফেলল? সে বলল, রোযাবস্থায় আমি আমার স্ত্রীর
সাথে সহবাস করে ফেলেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কোনো দাস আছে
যাকে তুমি স্বাধীন করে দিবে? সে বলল, না।
তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বললেন, দুই মাস ধারাবাহিক রোযা রাখতে
পারবে? সে বলল, না। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ৬০ জন মিসকীনকে
খাদ্য খাওয়াতে পারবে? সে বলল, না। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটু অপেক্ষা
করলেন অতঃপর এক পাত্রে খেজুর নিয়ে এসে বলেন,
প্রশ্নকারী কোথায়? সে বলল, আমি (এখানে)। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এটা
নাও এবং তা সাদাকা করে দাও। সে বলল, আমার
থেকে বেশী দরিদ্র কি আর আছে, আল্লাহর রাসূল?
আল্লাহর কসম এই দুই পাহাড়ের মাঝে আমার চেয়ে
অধিক দরিদ্র বাড়ি আর নেই। (ইহা শুনে) নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হেসে দিলেন
এমনকি তাঁর চোয়ালের দাঁত প্রকাশ পেল। তারপর
বললেন, তোমার পরিবারকে খাইয়ে দিও। [বুখারী,
সাউম অধ্যায়, নং ১৯৩৬/মুসলিম, সিয়াম অধ্যায় নং
১১১১]
• এই খাদ্য সোয়া কেজি বা দেড় কেজি পরিমাণ
হবে এবং প্রত্যক সমাজে যে খাদ্য প্রচলিত রয়েছে
সে খাদ্যের মধ্যম মানের খাদ্য বিবেচ্য হবে।
[মুগনী,৪/৩৮২]
• রোযাবস্থায় স্বেচ্ছায় স্ত্রীর সাথে
সহবাসকারী যদি হাদীসে বর্ণিত সাহাবীর ন্যায়
দরিদ্র ব্যক্তি হয়, তাহলে তার উপর কাফ্ফারা
নেই। [মুগনী,৪/৩৮৫]
• যদি সঙ্গমে স্ত্রী সম্মত ছিল, তাহলে তার প্রতিও
উক্ত কাফ্ফারা জরুরি হবে। তবে যদি স্ত্রীকে
স্বামী বাধ্য করেছিল কিংবা স্ত্রী এই বিধান
জনতো না কিংবা সে রোযায় আছে তা ভুলে
গিয়েছিল, তাহলে তার উপর শুধু কাযা জরুরি হবে
কাফ্ফারা জরুরি হবে না। [শারহুল মুমতি, ইবনু
উসায়মীন,৬/৪০১]
উল্লেখ্য যে, রোযার মাসে রাতে (ইফতারির পর
থেকে ফজর পর্যন্ত) স্ত্রী সহবাস বৈধ। আল্লাহ
তাআলা বলেন,
ﺃُﻫِﻞَّ ﻟﻜﻢ ﻟﻴﻠﺔَ ﺍﻟﺼﻴﺎﻡِ ﺍﻟﺮَّﻓَﺚُ ﺇﻟﻰ ﻧﺴﺎﺋِﻜﻢ … ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ 187/
“রোযার রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী-সম্ভোগ
হালাল করা হয়েছে।” [বাক্বারাহ/১৮৭]
রাতে স্ত্রী-সহবাসের পর ফজর হয়ে গেলে, তার
রোযার কোনো ক্ষতি হয় না। ফজর পর্যন্ত সে গোসল
বিলম্ব করতে পারে। অতঃপর গোসল করে নামায
আদায় করবে ও রোযা রাখবে। আয়েশা ও উম্মু
সালামাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত,
তারা উভয়ে বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম স্ত্রী সহবাসের পর জুনুবী (নাপাক)
অবস্থায় ফজর করতেন, তারপর গোসল করতেন ও সাউম
পালন করতেন। [বুখারী, সাউম অধ্যায়, নং
১৯২৫-১৯২৬]
২-স্ত্রী-সঙ্গম ব্যতীত অন্য পদ্ধতিতে যৌন-স্বাধের
সহিত বীর্যপাত করাঃ
যেমন যৌন-স্বাধের সহিত স্ত্রীর সাথে
কোলাকুলি, আলিঙ্গন, চুম্বন ইত্যাদি করার সময়
বীর্যপাত হওয়া। এই ভাবে সকাম হস্তমৈথুন করতঃ
বীর্যপাত করা কিংবা যৌনচাহিদার সাথে যৌন
(পর্ণ) ছবি সহ ইত্যাদি দেখার ফলে বীর্যপাত করা
কিংবা আরো অন্য পদ্ধতিতে স্বেচ্ছায়
কামভাবের সাথে বীর্যপাত করা। এসবই রোযা
ভঙ্গের কারণ। কেউ এমন করলে তার রোযা নষ্ট হয়ে
যাবে, তার উপর তাওবা সহ রোযা কাযা করা জরুরি
হবে। কিন্তু তার উপর কাফ্ফারা নেই; কাফ্ফারা
কেবল স্ত্রী সহবাসে জরুরি হয়।
হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত হয়েছে,
“সে আমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিজের পানাহার
ও যৌনাচার পরিহার করে”। [বুখারী, সাউম অধ্যায়,
নং ১৮৯৪, মুসলিম, সিয়াম অধ্যায়, ১১৫১]
তাই রোযার জন্য যেমন পানাহার বর্জন করা জরুরি
তেমন যৌনাচার পরিহার করাও জরুরি। আর যে
ব্যক্তি যৌনস্বাধের সাথে উক্ত কাজগুলি করে সে,
যৌনাচার পরিহার করে না ফলে তার রোযা হয়
না।
উপরোক্ত ক্ষেত্রে বীর্যপাত না হয়ে যদি কেবল
মযী বের হয়। অর্থাৎ উত্তেজনার সাথে বীর্যস্খলন
না হয়ে কেবল যৌনাঙ্গে আঠা জাতীয় পানি বের
হয়, যাকে শরীয়ার ভাষায় মযী বলে। তাহলে সঠিক
মতানুযায়ী তার রোযা নষ্ট হবে না কিন্তু এর ফলে
তার অযু নষ্ট হবে এবং যেই স্থানে তা লাগবে, তা
ধৌত করতে হবে। [শারহুল মুমতি, ইবনে
উসাইমীন,৬/৩৭৬]
বীর্য এবং মযী এর মধ্যে পার্থক্য হলঃ
বীর্য যৌনস্বাধের সাথে বের হয়, বের হওয়ার পর
শরীরে অলসতা ও দুর্বলতা অনুভোব হয়, বীর্যের রং
সাদা তবে হলুদ বর্ণ হয়, গাঢ় হয়, পরিমাণে বেশী হয়
এবং বেগে ছিটকে দফায় দফায় বের হয়। আর মযী
পাতলা পরিষ্কার হয়, চটচটে হয়, কোনো বিশেষ
রঙ্গের হয় না, কোলাকুলি কিংবা সহবাসের পূর্বে
কিংবা সহবাস করার সম্পর্কে চিন্তা করার সময়
বের হয়, পরিমাণে সামান্য হয় এবং অনেক সময় বের
হওয়ার অনুভূতিও হয় না। [মোট কথা মযী বের হলে
রোযা নষ্ট হবে না বরং তার কাপড় ও শরীরের যেই
স্থানে তা লাগবে তা ধৌত করা জরুরি হবে এবং
অযুবস্থায় থাকলে অযু ভেঙ্গে যাবে।]
রোযাবস্থায় স্ত্রীর সাথে হাসি-রহস্য করা,
আলিঙ্গন করা, চুমু খাওয়া, ইত্যদিতে যদি কেউ
নিজের ভারসাম্য রক্ষা করতে সক্ষম হয়, এর ফলে
বীর্য কিংবা মযী বের না হয় আর না সহবাসে
লিপ্ত হওয়ার আশংকা থাকে, তাহলে তার জন্য
উক্ত কাজ বৈধ হবে। আয়েশা (রাযিঃ) বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
রোযাবস্থায়, চুমু খেতেন এবং আলিঙ্গন করতেন।
আর তিনি তোমাদের মধ্যে নিজের প্রবৃত্তিকে
সবচেয়ে বেশী নিয়ন্ত্রনকারী ছিলেন। [বুখারী,
সাউম অধ্যায়, নং ১৯২৭]
আর যে ব্যক্তির আশংকা রয়েছে যে, এমন করলে
তার বীর্য বা মযী বের হবে কিংবা সহবাসে
লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাহলে তার জন্য
রোযাবস্থায় উপরোক্ত কাজগুলি বৈধ হবে না।
[ফতহুল বারী,৪/১৯৩, সহীহ আবুদাঊ নং ২০৬৫] বিশেষ
করে নবদাম্পত্যকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিৎ।
দ্বিতীয় অবস্থাঃ রোযাদার স্বেচ্ছায় বীর্যপাত
ঘটায় নি; অর্থাৎ তার এখতিয়ারে তা ঘটেনি
যেমন, অসুস্থতা কিংবা স্বপ্নদোষের কারণে
বীর্যপাত হওয়া। এমন হলে তার রোযার কোনো
ক্ষতি হয় না। কারণ এটা তার এখতিয়ার বহির্ভূত
কাজ এবং তাতে তার ইচ্ছার কোনো প্রকার দখল
থাকে না।
স্বপ্নদোষ হচ্ছে, ঘুমের অবস্থায় বীর্যপাত হওয়া।
আর ঘুমন্ত ব্যক্তি থেকে আল্লাহ কলম তুলে
নিয়েছেন। অর্থাৎ আল্লাহর নিকট তাদের এই
অবস্থার কোনো পাকড়াও করা হবে না। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“তিন শ্রেণীর লোক হতে কলম তুলে নেওয়া
হয়েছেঃ শিশু, যতক্ষণ না সে বালেগ (প্রাপ্ত
বয়স্ক) হয়। ঘুমন্ত ব্যক্তি, যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়।
পাগল, যতক্ষণ না সে জ্ঞান ফিরে পায়।” [স্বহীহুল
জামে নং ৩৫১৩]
মহিলাদের স্বপ্নদোষঃ
মহিলাদেরও স্বপ্নদোষ হয়।
একদা আবু তালহার স্ত্রী উম্মু সুলাইম নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট
উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসা করেঃ আল্লাহর রাসূল!
আল্লাহ তাআলা সত্য বিষয়ে লজ্জা করেন না,
মহিলার স্বপ্নদোষ হলে তার উপর গোসল আছে কি?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
হ্যাঁ, যদি সে পানি দেখতে পায়। [বুখারী, নং ২৮২]
তাই কোনো মহিলা যদি ঘুমন্ত অবস্থায় কারো
সাথে যৌনকাজ করতে দেখে এবং তারপর পানীয়
কিছু বের হয়, তাহলে সেটা তার বীর্যপাত ধরা
হবে। এমন হলে যেমন পুরুষের উপর গোসল জরুরি হয়,
তেমন তার উপরও গোসল জরুরি হবে।
ওয়া স্বল্লাল্লাহু আলা নাবিয়্যানা মুহাম্মাদ
তাসলীমান মাযীদা।
লেখক: শাইখ আব্দুর রাকীব মাদানী
লিসান্স, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়
দাঈ, খাফজী দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার,
সউদী আরব।
আলহামদুলিল্লাহ্ ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু
আলা রাসূলিল্লাহ, আম্মাবাদঃ
রামাযান মাসে সাউম পালনকারী ভাইদের পক্ষ
থেকে উপরোক্ত বিষয়ে প্রায় প্রায় প্রশ্ন করা হয়।
এ সম্পর্কে শরীয়ার সঠিক বিধান না জানা থাকার
কারণে অনেকে অনেক রকমের ধারণা করে। কেউ
মনে করে তার রোযা নষ্ট হয়ে গেছে, কেউ বলে
রোযা মাকরূহ হয়ে গেছে, কেউ ভাবে তার দ্বারা
গুনাহ হয়ে গেছে আর কেউ সংশয়ে থাকে। তাই
সংক্ষিপ্তাকারে বিষয়টির শারঈ সমাধান উল্লেখ
করার নিয়ত করেছি। আল্লাহই তাওফীকদাতা।
প্রথমতঃ আমাদের মনে রাখা উচিৎ যে, রোযা/
সাউম হচ্ছে, আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে ফজর
হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার ও
যৌনসঙ্গম হতে বিরত থাকা। [ফাতহুল বারী, ৪/১৩২]
তাই যৌন সঙ্গম হচ্ছে রোযা ভংগের একটি অন্যতম
কারণ।
অতঃপর জানা উচিৎ যে, রোযাবস্থায় বীর্যপাতের
দুটি অবস্থা রয়েছে। যথা:
(ক) রোযাদার স্বেচ্ছায় স্বয়ং তার বীর্যপাত
ঘটায়। অর্থাৎ তার নিজের এখতিয়ারে বীর্যপাত
করা হয়।
(খ) সে স্বেচ্ছায় বীর্যপাত ঘটায় না। অর্থাৎ তার
এখতিয়ারে তা ঘটানো হয় না।
প্রথম অবস্থা আবার কয়েক শেণীতে বিভক্তঃ
১-রোযাবস্থায় স্ত্রী সঙ্গম করা:
স্ত্রী-সঙ্গম বলতে স্ত্রীর যোনীতে লিঙ্গের
অগ্রভাগ (মাথা) প্রবেশ করা বুঝায়, তাতে
বীর্যপাত হোক বা নাই হোক। স্ত্রীর পায়ু পথে
লিঙ্গাগ্র প্রবেশ করানোও এরই অন্তর্ভুক্ত। এটা
রোযাদারের এখতিয়ারভুক্ত কাজ। এমন হলে সেই
ব্যক্তির রোযা তো নষ্ট হবেই হবে কিন্তু তার
সাথে সাথে তার উপর কয়েকটি বিধান অর্পিত
হবে। যথা:
(ক) তাকে এই পাপ থেকে তাওবা করতে হবে।
(খ) এই কাজ ঘটার পর দিনের বাকী সময়
রোযাবস্থায় থাকতে হবে
(গ) রামাযান পর তাকে সেই রোযা কাযা করতে
হবে
(ঘ) কাফ্ফারা দিতে হবে।
এই অপরাধের কাফ্ফারা হচ্ছে যথাক্রমেঃ
(১) একটি দাস স্বাধীন করা।
(২) সম্ভব না হলে একটানা ধারাবাহিক দুই মাস
রোযা রাখা।
(৩) এটিও সম্ভব না হলে ৬০ জন মিসকীনকে খাদ্য
দান করা।
আবু হুরাইরা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
একদা আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর নিকট বসে ছিলাম। এমন সময় তাঁর নিকট
এক ব্যক্তি এসে বলল, আল্লাহর রাসূল আমি ধ্বংস
হয়ে গেছি। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেন, তোমাকে কিসে ধ্বংস করে
ফেলল? সে বলল, রোযাবস্থায় আমি আমার স্ত্রীর
সাথে সহবাস করে ফেলেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কোনো দাস আছে
যাকে তুমি স্বাধীন করে দিবে? সে বলল, না।
তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বললেন, দুই মাস ধারাবাহিক রোযা রাখতে
পারবে? সে বলল, না। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ৬০ জন মিসকীনকে
খাদ্য খাওয়াতে পারবে? সে বলল, না। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটু অপেক্ষা
করলেন অতঃপর এক পাত্রে খেজুর নিয়ে এসে বলেন,
প্রশ্নকারী কোথায়? সে বলল, আমি (এখানে)। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এটা
নাও এবং তা সাদাকা করে দাও। সে বলল, আমার
থেকে বেশী দরিদ্র কি আর আছে, আল্লাহর রাসূল?
আল্লাহর কসম এই দুই পাহাড়ের মাঝে আমার চেয়ে
অধিক দরিদ্র বাড়ি আর নেই। (ইহা শুনে) নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হেসে দিলেন
এমনকি তাঁর চোয়ালের দাঁত প্রকাশ পেল। তারপর
বললেন, তোমার পরিবারকে খাইয়ে দিও। [বুখারী,
সাউম অধ্যায়, নং ১৯৩৬/মুসলিম, সিয়াম অধ্যায় নং
১১১১]
• এই খাদ্য সোয়া কেজি বা দেড় কেজি পরিমাণ
হবে এবং প্রত্যক সমাজে যে খাদ্য প্রচলিত রয়েছে
সে খাদ্যের মধ্যম মানের খাদ্য বিবেচ্য হবে।
[মুগনী,৪/৩৮২]
• রোযাবস্থায় স্বেচ্ছায় স্ত্রীর সাথে
সহবাসকারী যদি হাদীসে বর্ণিত সাহাবীর ন্যায়
দরিদ্র ব্যক্তি হয়, তাহলে তার উপর কাফ্ফারা
নেই। [মুগনী,৪/৩৮৫]
• যদি সঙ্গমে স্ত্রী সম্মত ছিল, তাহলে তার প্রতিও
উক্ত কাফ্ফারা জরুরি হবে। তবে যদি স্ত্রীকে
স্বামী বাধ্য করেছিল কিংবা স্ত্রী এই বিধান
জনতো না কিংবা সে রোযায় আছে তা ভুলে
গিয়েছিল, তাহলে তার উপর শুধু কাযা জরুরি হবে
কাফ্ফারা জরুরি হবে না। [শারহুল মুমতি, ইবনু
উসায়মীন,৬/৪০১]
উল্লেখ্য যে, রোযার মাসে রাতে (ইফতারির পর
থেকে ফজর পর্যন্ত) স্ত্রী সহবাস বৈধ। আল্লাহ
তাআলা বলেন,
ﺃُﻫِﻞَّ ﻟﻜﻢ ﻟﻴﻠﺔَ ﺍﻟﺼﻴﺎﻡِ ﺍﻟﺮَّﻓَﺚُ ﺇﻟﻰ ﻧﺴﺎﺋِﻜﻢ … ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ 187/
“রোযার রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী-সম্ভোগ
হালাল করা হয়েছে।” [বাক্বারাহ/১৮৭]
রাতে স্ত্রী-সহবাসের পর ফজর হয়ে গেলে, তার
রোযার কোনো ক্ষতি হয় না। ফজর পর্যন্ত সে গোসল
বিলম্ব করতে পারে। অতঃপর গোসল করে নামায
আদায় করবে ও রোযা রাখবে। আয়েশা ও উম্মু
সালামাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত,
তারা উভয়ে বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম স্ত্রী সহবাসের পর জুনুবী (নাপাক)
অবস্থায় ফজর করতেন, তারপর গোসল করতেন ও সাউম
পালন করতেন। [বুখারী, সাউম অধ্যায়, নং
১৯২৫-১৯২৬]
২-স্ত্রী-সঙ্গম ব্যতীত অন্য পদ্ধতিতে যৌন-স্বাধের
সহিত বীর্যপাত করাঃ
যেমন যৌন-স্বাধের সহিত স্ত্রীর সাথে
কোলাকুলি, আলিঙ্গন, চুম্বন ইত্যাদি করার সময়
বীর্যপাত হওয়া। এই ভাবে সকাম হস্তমৈথুন করতঃ
বীর্যপাত করা কিংবা যৌনচাহিদার সাথে যৌন
(পর্ণ) ছবি সহ ইত্যাদি দেখার ফলে বীর্যপাত করা
কিংবা আরো অন্য পদ্ধতিতে স্বেচ্ছায়
কামভাবের সাথে বীর্যপাত করা। এসবই রোযা
ভঙ্গের কারণ। কেউ এমন করলে তার রোযা নষ্ট হয়ে
যাবে, তার উপর তাওবা সহ রোযা কাযা করা জরুরি
হবে। কিন্তু তার উপর কাফ্ফারা নেই; কাফ্ফারা
কেবল স্ত্রী সহবাসে জরুরি হয়।
হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত হয়েছে,
“সে আমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিজের পানাহার
ও যৌনাচার পরিহার করে”। [বুখারী, সাউম অধ্যায়,
নং ১৮৯৪, মুসলিম, সিয়াম অধ্যায়, ১১৫১]
তাই রোযার জন্য যেমন পানাহার বর্জন করা জরুরি
তেমন যৌনাচার পরিহার করাও জরুরি। আর যে
ব্যক্তি যৌনস্বাধের সাথে উক্ত কাজগুলি করে সে,
যৌনাচার পরিহার করে না ফলে তার রোযা হয়
না।
উপরোক্ত ক্ষেত্রে বীর্যপাত না হয়ে যদি কেবল
মযী বের হয়। অর্থাৎ উত্তেজনার সাথে বীর্যস্খলন
না হয়ে কেবল যৌনাঙ্গে আঠা জাতীয় পানি বের
হয়, যাকে শরীয়ার ভাষায় মযী বলে। তাহলে সঠিক
মতানুযায়ী তার রোযা নষ্ট হবে না কিন্তু এর ফলে
তার অযু নষ্ট হবে এবং যেই স্থানে তা লাগবে, তা
ধৌত করতে হবে। [শারহুল মুমতি, ইবনে
উসাইমীন,৬/৩৭৬]
বীর্য এবং মযী এর মধ্যে পার্থক্য হলঃ
বীর্য যৌনস্বাধের সাথে বের হয়, বের হওয়ার পর
শরীরে অলসতা ও দুর্বলতা অনুভোব হয়, বীর্যের রং
সাদা তবে হলুদ বর্ণ হয়, গাঢ় হয়, পরিমাণে বেশী হয়
এবং বেগে ছিটকে দফায় দফায় বের হয়। আর মযী
পাতলা পরিষ্কার হয়, চটচটে হয়, কোনো বিশেষ
রঙ্গের হয় না, কোলাকুলি কিংবা সহবাসের পূর্বে
কিংবা সহবাস করার সম্পর্কে চিন্তা করার সময়
বের হয়, পরিমাণে সামান্য হয় এবং অনেক সময় বের
হওয়ার অনুভূতিও হয় না। [মোট কথা মযী বের হলে
রোযা নষ্ট হবে না বরং তার কাপড় ও শরীরের যেই
স্থানে তা লাগবে তা ধৌত করা জরুরি হবে এবং
অযুবস্থায় থাকলে অযু ভেঙ্গে যাবে।]
রোযাবস্থায় স্ত্রীর সাথে হাসি-রহস্য করা,
আলিঙ্গন করা, চুমু খাওয়া, ইত্যদিতে যদি কেউ
নিজের ভারসাম্য রক্ষা করতে সক্ষম হয়, এর ফলে
বীর্য কিংবা মযী বের না হয় আর না সহবাসে
লিপ্ত হওয়ার আশংকা থাকে, তাহলে তার জন্য
উক্ত কাজ বৈধ হবে। আয়েশা (রাযিঃ) বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
রোযাবস্থায়, চুমু খেতেন এবং আলিঙ্গন করতেন।
আর তিনি তোমাদের মধ্যে নিজের প্রবৃত্তিকে
সবচেয়ে বেশী নিয়ন্ত্রনকারী ছিলেন। [বুখারী,
সাউম অধ্যায়, নং ১৯২৭]
আর যে ব্যক্তির আশংকা রয়েছে যে, এমন করলে
তার বীর্য বা মযী বের হবে কিংবা সহবাসে
লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাহলে তার জন্য
রোযাবস্থায় উপরোক্ত কাজগুলি বৈধ হবে না।
[ফতহুল বারী,৪/১৯৩, সহীহ আবুদাঊ নং ২০৬৫] বিশেষ
করে নবদাম্পত্যকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিৎ।
দ্বিতীয় অবস্থাঃ রোযাদার স্বেচ্ছায় বীর্যপাত
ঘটায় নি; অর্থাৎ তার এখতিয়ারে তা ঘটেনি
যেমন, অসুস্থতা কিংবা স্বপ্নদোষের কারণে
বীর্যপাত হওয়া। এমন হলে তার রোযার কোনো
ক্ষতি হয় না। কারণ এটা তার এখতিয়ার বহির্ভূত
কাজ এবং তাতে তার ইচ্ছার কোনো প্রকার দখল
থাকে না।
স্বপ্নদোষ হচ্ছে, ঘুমের অবস্থায় বীর্যপাত হওয়া।
আর ঘুমন্ত ব্যক্তি থেকে আল্লাহ কলম তুলে
নিয়েছেন। অর্থাৎ আল্লাহর নিকট তাদের এই
অবস্থার কোনো পাকড়াও করা হবে না। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“তিন শ্রেণীর লোক হতে কলম তুলে নেওয়া
হয়েছেঃ শিশু, যতক্ষণ না সে বালেগ (প্রাপ্ত
বয়স্ক) হয়। ঘুমন্ত ব্যক্তি, যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়।
পাগল, যতক্ষণ না সে জ্ঞান ফিরে পায়।” [স্বহীহুল
জামে নং ৩৫১৩]
মহিলাদের স্বপ্নদোষঃ
মহিলাদেরও স্বপ্নদোষ হয়।
একদা আবু তালহার স্ত্রী উম্মু সুলাইম নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট
উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসা করেঃ আল্লাহর রাসূল!
আল্লাহ তাআলা সত্য বিষয়ে লজ্জা করেন না,
মহিলার স্বপ্নদোষ হলে তার উপর গোসল আছে কি?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
হ্যাঁ, যদি সে পানি দেখতে পায়। [বুখারী, নং ২৮২]
তাই কোনো মহিলা যদি ঘুমন্ত অবস্থায় কারো
সাথে যৌনকাজ করতে দেখে এবং তারপর পানীয়
কিছু বের হয়, তাহলে সেটা তার বীর্যপাত ধরা
হবে। এমন হলে যেমন পুরুষের উপর গোসল জরুরি হয়,
তেমন তার উপরও গোসল জরুরি হবে।
ওয়া স্বল্লাল্লাহু আলা নাবিয়্যানা মুহাম্মাদ
তাসলীমান মাযীদা।
লেখক: শাইখ আব্দুর রাকীব মাদানী
লিসান্স, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়
দাঈ, খাফজী দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার,
সউদী আরব।
Posted via Sharif
0 বিস্তারিত আরও দেখুন:
Post a Comment