Sunday 8 November 2015

Filled Under:

যে সকল হরামকে মানুষ তুচ্ছ মনে করে ২য় পব

৩১. সুদ খাওয়া
আল্লাহ তা‘আলা সূদখোর ব্যতীত আর কারো বিরুদ্ধে স্বয়ং যুদ্ধের ঘোষণা দেননি। তিনি বলেন,
﴿ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﭐﺗَّﻘُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺫَﺭُﻭﺍْ ﻣَﺎ ﺑَﻘِﻲَ ﻣِﻦَ ﭐﻟﺮِّﺑَﻮٰٓﺍْ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢ ﻣُّﺆۡﻣِﻨِﻴﻦَ ٢٧٨ ﻓَﺈِﻥ ﻟَّﻢۡ ﺗَﻔۡﻌَﻠُﻮﺍْ ﻓَﺄۡﺫَﻧُﻮﺍْ ﺑِﺤَﺮۡﺏٖ ﻣِّﻦَ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟِﻪِۦۖ ﻭَﺇِﻥ ﺗُﺒۡﺘُﻢۡ ﻓَﻠَﻜُﻢۡ ﺭُﺀُﻭﺱُ ﺃَﻣۡﻮَٰﻟِﻜُﻢۡ ﻟَﺎ ﺗَﻈۡﻠِﻤُﻮﻥَ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﻈۡﻠَﻤُﻮﻥَ ٢٧٩﴾ ‏[ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ٢٧٨،
٢٧٩ ‏]
“হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর তাকাওয়া অবলম্বন কর এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ কর যদি তোমরা
ঈমানদার হও। আর যদি তোমরা তা না কর, তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শোন” [সূরা আল-
বাকারা, আয়াত: ২৭৮-২৭৯]
আল্লাহর নিকট সূদ খাওয়া যে কত মারাত্মক অপরাধ তা অনুধাবনের জন্য উক্ত আয়াতদ্বয়ই যথেষ্ট। সূদবৃত্তি দারিদ্র্য, মন্দা ঋণ
পরিশোধে অক্ষমতা, অর্থনৈতিক স্থবিরতা, বেকারত্ব বৃদ্ধি, বহু কোম্পানী ও প্রতিষ্ঠানের দেউলিয়াত্ব ইত্যাদির ন্যায় কত
যে জঘন্য ক্ষতি ও ধ্বংসের দিকে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে ঠেলে দিচ্ছে তা পর্যবেক্ষক মাত্রই অনুধাবন করতে সক্ষম।
প্রতিদিনের ঘাম ঝরানো শ্রমের বিনিময়ে যা অর্জিত হয়, সূদের অতলগহ্বর পূরণেই তা নিঃশেষ হয়ে যায়। সূদের ফলে
সমাজে একটি বিশেষ শ্রেণির উদ্ভব হয়। মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে ব্যাপক সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়ে পড়ে। সম্ভবতঃ এসব
কারণেই আল্লাহ তা‘আলা সূদীকারবারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
সূদী কারবারে মূল দু’পক্ষ, মধ্যস্থতাকারী, সহযোগিতাকারী ইত্যাকার যারাই এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তারা সবাই মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যবানীতে অভিশপ্ত। জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
‏« ﻟَﻌَﻦَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺁﻛِﻞَ ﺍﻟﺮِّﺑَﺎ، ﻭَﻣُﻮﻛِﻠَﻪ ،ُ ﻭَﺷَﺎﻫِﺪَﻳْﻪِ، ﻭَﻛَﺎﺗِﺒَﻪُ، ﻭﻗﺎﻝ : ﻫﻢ ﺳﻮﺍﺀ ‏»
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূদ গ্রহীতা, সূদ দাতা, সূদের লেখক এবং তার সাক্ষীদ্বয়কে অভিসম্পাত




করেছেন। তিনি বলেছেন, তারা সবাই সমান অপরাধী’’। [72]
এ কারণেই সূদ লিপিবদ্ধ করা, এর আদান-প্রদানে সহায়তা করা, সূদী দ্রব্য গচ্ছিত রাখা ও এর পাহারাদারীর কাজে নিযুক্ত
হওয়া জায়েয নেই। মোটকথা, সূদের সূদের কাজে অংশগ্রহণ ও যে কোনোভাবে এর সাহায্য-সহযোগিতা করা হারাম।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মহাঅপরাধের কদর্যতা ফুটিয়ে তুলতে বড়ই আগ্রহী ছিলেন। আব্দুল্লাহ ইবন
মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏«ﺍﻟﺮِّﺑَﺎ ﺛَﻠَﺎﺛَﺔٌ ﻭَﺳَﺒْﻌُﻮﻥَ ﺑَﺎﺑًﺎ، ﺃَﻳْﺴَﺮُﻫَﺎ ﻣِﺜْﻞُ ﺃَﻥْ ﻳَﻨْﻜِﺢَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﺃُﻣَّﻪ ،ُ ﻭَﺇِﻥَّ ﺃَﺭْﺑَﻰ ﺍﻟﺮِّﺑَﺎ ﻋِﺮْﺽُ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞِ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢِ ‏»
“সূদের ৭৩টি দ্বার বা স্তর রয়েছে। তন্মধ্যে সহজতর স্তর হলো, নিজ মায়ের সাথে ব্যভিচারের সমতুল্য। আর সবচেয়ে কঠিনতম
স্তর হলো, মুসলিম ব্যক্তির মানহানি”। [73]
আব্দুল্লাহ ইবন হানযালা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏«ﺩﺭﻫﻢ ﺭﺑﺎ ﻳﺄﻛﻠﻪ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻭﻫﻮ ﻳﻌﻠﻢ ﺃﺷﺪ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﺳﺘﺔ ﻭﺛﻼﺛﻴﻦ ﺯﻧﻴﺔ ‏»
“জেনেশুনে কোনো লোকের সূদের এক টাকা ভক্ষণ করা ৩৬ বার ব্যভিচার করা থেকেও কঠিন”। [74]
সূদ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জন্য সর্বদা হারাম। সবাইকে তা পরিহার করতে হবে। কত ধনিক-বণিক যে এ সূদের কারণে
দেউলিয়া হয়ে গেছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। সূদের সর্বনিম্ন ক্ষতি হলো, মালের বরকত উঠে যাবে, পরিমাণে তা যতই
স্ফীত হউক না কেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﺍﻟﺮِّﺑَﺎ ﻭَﺇِﻥْ ﻛَﺜُﺮَ ﻓَﺈِﻥَّ ﻋَﺎﻗِﺒَﺘَﻪُ ﺗَﺼِﻴﺮُ ﺇِﻟَﻰ ﻗَﻞّ ‏»
“সূদের দ্বারা সম্পদ যতই বৃদ্ধি পাক না কেন তার শেষ পরিণতি হলো নিঃস্বতা”। [75]
সূদের হার কমই হোক আর চড়াই হোক সবই হারাম। যেমন করে শয়তান দুনিয়াতে তার স্পর্শে কাউকে পাগল করে দেয়, তেমনি
সূদখোর পাগল হয়ে হাশরের ময়দানে উত্থিত হবে [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৫] যদিও সূদের লেনদেন গুরুতর অন্যায় তবুও
মহান রাব্বুল আলামীন দয়াপরবশ হয়ে বান্দাকে তা থেকে তওবার উপায় বলে দিয়েছেন। তিনি বলেন,
﴿ﻭَﺇِﻥ ﺗُﺒۡﺘُﻢۡ ﻓَﻠَﻜُﻢۡ ﺭُﺀُﻭﺱُ ﺃَﻣۡﻮَٰﻟِﻜُﻢۡ ﻟَﺎ ﺗَﻈۡﻠِﻤُﻮﻥَ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﻈۡﻠَﻤُﻮﻥَ ٢٧٩﴾ ‏[ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ٢٧٩‏]
“যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমরা তোমাদের মূলধন ফিরে পাবে। তোমরা না অত্যাচার করবে, আর না অত্যাচারিত হবে”।
[সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৯]
মুমিনের অন্তরে সূদের প্রতি ঘৃণা এবং তার খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে তীব্র অনুভূতি থাকা একান্ত আবশ্যক। এমনকি যারা
টাকা-পয়সা ও মূল্যবান সম্পদ চুরি হয়ে যাওয়া কিংবা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ভয়ে সূদী ব্যাংকে জমা রাখে, তাদের মধ্যেও
নিতান্ত দায়েপড়া ব্যক্তির ন্যায় অনুভূতি থাকতে হবে, যেন তারা মৃত জীব ভক্ষণ কিংবা তার থেকেও কঠিন পরিস্থিতির
সম্মুখীন হয়েছে। তাই তারা সব সময় আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং সূদী ব্যাংকের বিকল্প সূদহীন ভালো
কোনো উপায় অবলম্বনের চেষ্টা করবে। তাদের আমানতের বিপরীতে সূদী ব্যাংকের নিকট সূদ দাবী করা জায়েয নেই। বরং
যে কোনো উপায়ে তার থেকে নিষ্কৃতি লাভের চেষ্টা করবে, তা (ছওয়াবের নিয়তে] দান করবে না। কেননা আল্লাহ পবিত্র।
পবিত্র বস্তু ছাড়া তিনি দানের স্বীকৃতি দেন না। নিজের কোনো কাজে সূদের অর্থ ব্যয় করা যাবে না। না পানাহারে, না
পরিধেয়ে, না সওয়ারীতে, না বাড়ী-ঘর তৈরীতে, না পুত্র-পরিজন, স্বামী-স্ত্রী, মাতা-পিতার ভরণ-পোষণে, না যাকাত
আদায়ে, না ট্যাক্স পরিশোধে, না নিজের ওপর অন্যায়ভাবে আরোপিত অর্থ পরিশোধে। সূদের অর্থ কেবল আল্লাহর শাস্তির
ভয়ে দায় মুক্তির জন্য এমনিতেই কাউকে দিয়ে দিতে হবে।
৩২. বিক্রিত পণ্যের দোষ গোপন করা
একবার রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাজারের মধ্যে এক খাদ্যস্তূপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি
স্তূপের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিলে আঙ্গুলে আর্দ্রতা ধরা পড়ল। তিনি বিক্রেতাকে বললেন, ‘হে খাদ্য বিক্রেতা! ব্যাপার কি?
সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এতে বৃষ্টির পানি লেগেছে’। তিনি বললেন,
‏« ﺃَﻓَﻠَﺎ ﺟَﻌَﻠْﺘَﻪُ ﻓَﻮْﻕَ ﺍﻟﻄَّﻌَﺎﻡِ ﻛَﻲْ ﻳَﺮَﺍﻩُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ، ﻣَﻦْ ﻏَﺶَّ ﻓَﻠَﻴْﺲَ ﻣِﻨِّﻲ‏»
“তুমি এগুলো স্তূপের উপরিভাগে রাখলে না কেন? তাহলে লোকে দেখতে পেত। মনে রেখো যে প্রতারণা করে, সে আমাদের
অন্তর্ভুক্ত নয়”। [76]
আজকাল আল্লাহর প্রতি ভয়ভীতি শূণ্য অনেক বিক্রেতাই ভালো পণ্যের সঙ্গে ত্রুটিযুক্ত কিংবা নিম্নমানের পণ্য মিশিয়ে
বিক্রয় করে থাকে। কেউ কেউ ত্রুটিযুক্ত পণ্যগুলোতে আঠা লাগিয়ে ঢেকে দেয়, কেউ কেউ গাইট কিংবা কন্টেইনারের নিচে
রাখে। অনেকে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে নিম্নমানের দ্রব্যকে বাহ্যদৃষ্টিতে উন্নতমানের ও আকর্ষণীয় করে তোলে।
কেউ কেউ গাড়ীর ইঞ্জীনের শব্দ গোপন করে বিক্রি করে পরে যখন সেটা নিয়ে যায় তখন তা তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়।
আবার কেউ কেউ পণ্য ব্যবহারের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পর তা পরিবর্তন করে নতুন মেয়াদকালের ছাপ মেরে দেয়।
কোনো কোনো বিক্রেতা ক্রেতাকে পণ্য নিরীক্ষণ ও যাচাই-বাছাই করতে দেয় না। মোটরগাড়ী, মেশিনারী যন্ত্রপাতি
বিক্রেতাদেরও অনেকে রয়েছে, যারা ক্রেতাদের সামনে সেগুলোর ত্রুটি ও অসুবিধা তুলে ধরে না।
উল্লিখিত পদ্ধতির সকল কেনা-বেচাই হারাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢُ ﺃَﺧُﻮ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢ ،ِ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺤِﻞُّ ﻟِﻤُﺴْﻠِﻢٍ ﺑَﺎﻉَ ﻣِﻦْ ﺃَﺧِﻴﻪِ ﺑَﻴْﻌًﺎ ﻓِﻴﻪِ ﻋَﻴْﺐٌ ﺇِﻟَّﺎ ﺑَﻴَّﻨَﻪُ ﻟَﻪُ ‏»
“এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই। একজন মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের নিকট কোনো ত্রুটিপূর্ণ পণ্য বিক্রয়ের সময় পণ্যের ত্রুটি
বর্ণনা না করা পর্যন্ত তা বিক্রয় করা বৈধ নয়”। [77]
অনেকে প্রকাশ্য নিলামে দ্রব্য বিক্রয়কালে ‘এটা অমুক জিনিস’ এটা অমুক জিনিস’ এতটুকু বলেই অব্যাহতি পেতে চায়!
দৃষ্টান্তস্বরূপ লোহার রড বিক্রেতা বলে ‘এটা লোহার গাদা’....‘এটা লোহার গাদা’ ইত্যাদি। কিন্তু গাদার মধ্যে যে ত্রুটি
আছে তা বলে না। তার এ বিক্রয় বরকতশূণ্য হয়ে পড়বে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏«ﺍﻟﺒَﻴِّﻌَﺎﻥِ ﺑِﺎﻟﺨِﻴَﺎﺭِ ﻣَﺎ ﻟَﻢْ ﻳَﺘَﻔَﺮَّﻗَﺎ، - ﺃَﻭْ ﻗَﺎﻝَ : ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺘَﻔَﺮَّﻗَﺎ ﻓَﺈِﻥْ ﺻَﺪَﻗَﺎ ﻭَﺑَﻴَّﻨَﺎ ﺑُﻮﺭِﻙَ ﻟَﻬُﻤَﺎ ﻓِﻲ ﺑَﻴْﻌِﻬِﻤَﺎ، ﻭَﺇِﻥْ ﻛَﺘَﻤَﺎ ﻭَﻛَﺬَﺑَﺎ ﻣُﺤِﻘَﺖْ ﺑَﺮَﻛَﺔُ ﺑَﻴْﻌِﻬِﻤَﺎ‏»
“দৈহিকভাবে পৃথক হওয়া কিংবা বিক্রয় প্রস্তাবও গ্রহণে মতান্তর না হওয়া পর্যন্ত ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই বিক্রয়
কর্যকর করার কিংবা বাতিল করার অধিকার থাকে। যদি তারা সত্য বলে ও দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করে, তবে তাদের কেনা-
বেচায় বরকত হয়। আর যদি দু’জনে মিথ্যা বলে ও পণ্য বা মুদ্রার দোষ গোপন করে, তবে তাদের কেনা-বেচার বরকত নিশ্চিহ্ন
হয়ে যায়”। [78]
৩৩. দালালী করা
এমন অনেক লোক আছে যাদের পণ্য কেনার মোটেও ইচ্ছা নেই। কিন্তু অন্য লোকে যাতে ঐ পণ্য বেশি দামে কিনতে উদ্বুদ্ধ হয়
সেজন্য পণ্যের পাশে ঘুরাঘুরি করে ও বাড়িয়ে বাড়িয়ে দাম বলতে থাকে। এটাই প্রতারণামূলক দালালী।
রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﻻَ ﺗَﻨَﺎﺟَﺸُﻮﺍ ‏»
“ক্রেতার ভান করে তোমরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিও না”। [79]
এটা নিঃসন্দেহে এক শ্রেণির প্রতারণা। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
‏«ﺍﻟْﻤَﻜْﺮُ ﻭَﺍﻟْﺨَﺪِﻳﻌَﺔُ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ‏»
‘চালবাজী ও ধোঁকাবাজী জাহান্নামে নিয়ে যায়”। [80]
পশু বিক্রয়, নিলামে বিক্রয় ও গাড়ী প্রদর্শনীতে অনেক দালালকে দেখতে পাওয়া যায় যাদের আয়-রোযগার সবই হারাম।
কেননা এ উপার্জনের সাথে নানা রকম অবৈধ উপায় জড়িয়ে আছে। যেমন, প্রতারণামূলক দাম বৃদ্ধি বা মিথ্যা দালালী,
ক্রেতার সাথে প্রতারণা, বিক্রেতাকে ধোঁকায় ফেলে পথিমধ্যেই তার পণ্য অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে খরিদ করা ইত্যাদি।
আর যদি পণ্যটি তার বা তাদের কারও হয়, তখন ঠিক উল্টোটি তারা করে থাকে, বিক্রেতারা একে অপরের জন্য দালাল সাজে
কিংবা দালাল নিয়োগ করে। তার ক্রেতার বেশে খরিদ্দারদের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং পণ্যের দাম ক্রমাগত বাড়িয়ে দেয়।
এভাবে তারা আল্লাহর বান্দাদেরকে ধোঁকা দেয় ও তাদেরকে কষ্টের মধ্যে নিক্ষেপ করে।
৩৪. জুমু‘আর সালাতের আযানের পরে কেনা-বেচা করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮٓﺍْ ﺇِﺫَﺍ ﻧُﻮﺩِﻱَ ﻟِﻠﺼَّﻠَﻮٰﺓِ ﻣِﻦ ﻳَﻮۡﻡِ ﭐﻟۡﺠُﻤُﻌَﺔِ ﻓَﭑﺳۡﻌَﻮۡﺍْ ﺇِﻟَﻰٰ ﺫِﻛۡﺮِ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺫَﺭُﻭﺍْ ﭐﻟۡﺒَﻴۡﻊَۚ ﺫَٰﻟِﻜُﻢۡ ﺧَﻴۡﺮٞ ﻟَّﻜُﻢۡ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢۡ ﺗَﻌۡﻠَﻤُﻮﻥَ ٩﴾ ‏[ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ : ٩ ‏]
“হে ঈমানদারগণ! জুমু‘আ দিবসে যখন সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও এবং
বেচা-কেনা ছেড়ে দাও। এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর যদি তোমরা জ্ঞান রাখ”। [সূরা আল-জুমু‘আ, আয়াত ৯]
অত্র আয়াতদৃষ্টে আলিমগণ আযান থেকে শুরু করে ফরয সালাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেনা বেচা ও অন্যান্য সকল কাজকর্ম
হারাম বলে উল্লেখ করেছেন। অনেক দোকানদারকে দেখা যায় তারা আযানের সময়ও নিজেদের দোকানে কিংবা
মসজিদের সামনে কেনা বেচা চালিয়ে যেতে থাকে। যারা এ সময় কেনা-কাটায় অংশ নেয়, তারাও তাদের সাথে পাপে
শরীক হয়। এমনকি তুচ্ছ একটি মিসওয়াক কেনা-বেচা করলেও ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই তাতে গোনাহগার হবে। আলেমগণের
জোরালো মতানুসারে এ সময়ের কেনা-বেচা বাতিল বলে গণ্য হবে। অনেক হোটেল, বেকারী, ফ্যাক্টরী, কলকারখানা
ইত্যাদির লোকেরা জুমু‘আর সালাতের সময় তাদের শ্রমিকদের কাজ চালিয়ে যেতে বাধ্য করে। তাতে বাহ্যত: তাদের কিছু
লাভ দেখা গেলেও প্রকৃত প্রস্তাবে ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে শ্রমিকদের রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর নিম্নোক্ত উক্তি মোতাবেক আমল করা কর্তব্য-
‏«ﻻَ ﻃَﺎﻋَﺔَ ﻟِﺒَﺸَﺮٍ ﻓِﻲ ﻣَﻌْﺼِﻴَﺔِ ﺍﻟﻠّﻪ ‏»
“আল্লাহর অবাধ্যতায় কোনো মানুষের আনুগত্য করা যাবে না”। [81]
৩৫. জুয়া
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮٓﺍْ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﭐﻟۡﺨَﻤۡﺮُ ﻭَﭐﻟۡﻤَﻴۡﺴِﺮُ ﻭَﭐﻟۡﺄَﻧﺼَﺎﺏُ ﻭَﭐﻟۡﺄَﺯۡﻟَٰﻢُ ﺭِﺟۡﺲٞ ﻣِّﻦۡ ﻋَﻤَﻞِ ﭐﻟﺸَّﻴۡﻄَٰﻦِ ﻓَﭑﺟۡﺘَﻨِﺒُﻮﻩُ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗُﻔۡﻠِﺤُﻮﻥَ ٩٠﴾ ‏[ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ٩٠ ‏]
“নিশ্চয় মদ, জুয়া, বেদী, ভাগ্য নির্ণয়ক তীর অপবিত্র শয়তানী কাজ। সুতরাং তোমরা তা থেকে বিরত থাক। তাতে তোমরা
সফলকাম হবে”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৯০]
জাহেলী যুগের লোকেরা জুয়া খেলায় ভীষণ অভ্যস্ত ছিল। জুয়ার যে পদ্ধতি তাদের মধ্যে প্রসিদ্ধ ছিল তা হল, তারা দশ জনে
সমান অংক দিয়ে একটা উট ক্রয় করত, সেই উটের গোশত ভাগ-বাঁটোয়ারার জন্য জুয়ার তীর ব্যবহার করা হতো। এটা এক প্রকার
লটারী। ১০টি তীরের ৭টিতে কম-বেশী করে বিভিন্ন অংশ লেখা থাকত এবং অন্য সাত জন তাদের প্রচলিত নিয়মে কম-
বেশি অংশ পেত। এভাবে তারা দশ জনের টাকায় কেনা উট সাত জনে ভাগ করে নিত।
বর্তমানে জুয়ার নানা পদ্ধতি বের হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ:
লটারী: লটারী খুবই প্রসিদ্ধ জুয়া। লটারী নানা রকম আছে। তন্মধ্যে ব্যাপকতর হচ্ছে, নির্দিষ্ট অংকের টাকা কিংবা দ্রব্য
পুরস্করের নামে প্রদানের বিনিময়ে নির্দিষ্ট নম্বরের কুপন ক্রয়-বিক্রয়। নির্দিষ্ট তারিখে বিক্রিত কুপনগুলোর ড্র অনুষ্ঠিত
হয়। প্রথম যে নম্বরের কুপনটি ওঠে সে প্রথম পুরস্কার পায়। এভাবে ক্রমানুযায়ী উদ্দিষ্ট সংখ্যক পুরস্কার দেওয়া হয়।
পুরস্কারের অংকগুলোতে প্রায়শ তারতম্য থাকে। এ লটারী হারাম, যদিও আয়োজকরা একে ‘কল্যাণকর’ মনে করে।
পণ্যের মধ্যে অজ্ঞাত সংকেত: কোনো কোনো পণ্যের মধ্যে অজ্ঞাত নম্বর কিংবা সংকেত দেওয়া থাকে। ক্রেতারা ঐসব
পণ্য খরিদের পর সেই বস্তু বা নম্বরের লটারী করে থাকে। অনেক সময় কোনো কোনো উৎপাদক কোম্পানী তাদের উৎপাদিত
পণ্যের বহুল প্রসারের জন্য হাজার হাজার পণ্যের কোনো একটিতে পুরস্কারের সংকেত রেখে দেয়। সেই সংকেতটি পাওয়ার
আশায় বহু মানুষ তা কেনায় মেতে উঠে। পরে দেখা যায় দু’একজনের বেশি কেউ পায় না। এরূপ বিক্রয়ে ক্রেতারা প্রতারিত
হয় এবং সেই সাথে প্রতিযোগী কোম্পানীসমূহের ব্যবসায়ে ক্ষতি করা হয়।
বীমা: বর্তমানে বাজারে নানারকম বীমা বা ইনস্যুরেন্স চালু আছে। যেমন, জীবন বীমা, যানবাহন বীমা, পণ্য বীমা, অগ্নি
বীমা ইত্যাদি। এমনকি অনেক গায়ক তাদের কণ্ঠস্বর পর্যন্ত বীমা করে থাকে। নানান ঝুঁকি হতে নিরাপত্তা জন্য এ ব্যবসা
এখন জমজমাটভাবে চলছে।
উল্লিখিত জুয়া ছাড়াও যত প্রকার জুয়া আছে সবই কুরআনে বর্ণিত ‘মাইসির’-এর অন্তর্ভুক্ত হবে। বর্তমানে জুয়ার মত বড়
গুনাহের জন্য বিশেষভাবে অনেক আসর বসে, যা কোথাও ‘হাউজি’ কোথাও ‘সবুজ টেবিল’ নামে পরিচিত। অনুরূপভাবে ঘোড়-
দৌড়, ফুটবল ও অন্যান্য খেলাধূলার প্রতিযোগিতায় যে বাজী ধরা হয় তাও জুয়ার অন্তর্গত। আবার খেলাধূলার এমন অনেক
দোকান ও বিনোদন কেন্দ্র আছে যেখানে জুয়ার চিন্তাধারায় গড়ে উঠে নানারকম খেলনা সামগ্রী রয়েছে। যেমন, ফ্লাস,
পাশা ইত্যাদি।
আর মানুষ যেসব প্রতিযোগিতা করে থাকে তাতেও কিছু জুয়া রয়েছে। যেমন সেসব প্রতিযোগিতা যেখানে পুরষ্কার
প্রতিযোগীদের কোনো এক বা একাধিক পক্ষ থেকে প্রদান করতে হয়। আলেমগণ সেটা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।[82]
৩৬. চুরি করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ﻭَﭐﻟﺴَّﺎﺭِﻕُ ﻭَﭐﻟﺴَّﺎﺭِﻗَﺔُ ﻓَﭑﻗۡﻄَﻌُﻮٓﺍْ ﺃَﻳۡﺪِﻳَﻬُﻤَﺎ ﺟَﺰَﺍٓﺀَۢ ﺑِﻤَﺎ ﻛَﺴَﺒَﺎ ﻧَﻜَٰﻠٗﺎ ﻣِّﻦَ ﭐﻟﻠَّﻪِۗ ﻭَﭐﻟﻠَّﻪُ ﻋَﺰِﻳﺰٌ ﺣَﻜِﻴﻢٞ ٣٨﴾ ‏[ ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ٣٨‏]
“পুরুষ ও নারী চোর চুরি করলে তোমরা তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও। এটা তাদের কৃতকর্মের ফল এবং আল্লাহ কর্তৃক
নির্ধারিত আদর্শদণ্ড। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৩৮]
চুরির মধ্যে মহাচুরি হলো, হজ ও ওমরার উদ্দেশ্যে বায়তুল্লাহ শরীফে আগমনকারীদের দ্রব্যাদি চুরি করা। পৃথিবীর
সর্বোত্তম স্থানে চুরি করা আল্লাহর বিধানের প্রতি চরমভাবে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শণ। এতে আল্লাহর বিধানকে থোড়াই
কেয়ার করা হয়। এজন্য মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য গ্রহণের সালাতের ঘটনায় বলেছিলেন,
‏«ﻟَﻘَﺪْ ﺟِﻲﺀَ ﺑِﺎﻟﻨَّﺎﺭِ، ﻭَﺫَﻟِﻜُﻢْ ﺣِﻴﻦَ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻤُﻮﻧِﻲ ﺗَﺄَﺧَّﺮْﺕُ، ﻣَﺨَﺎﻓَﺔَ ﺃَﻥْ ﻳُﺼِﻴﺒَﻨِﻲ ﻣِﻦْ ﻟَﻔْﺤِﻬَﺎ، ﻭَﺣَﺘَّﻰ ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺻَﺎﺣِﺐَ ﺍﻟْﻤِﺤْﺠَﻦِ ﻳَﺠُﺮُّ ﻗُﺼْﺒَﻪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ، ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺴْﺮِﻕُ ﺍﻟْﺤَﺎﺝَّ ﺑِﻤِﺤْﺠَﻨِﻪِ، ﻓَﺈِﻥْ ﻓُﻄِﻦَ ﻟَﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺗَﻌَﻠَّﻖَ ﺑِﻤِﺤْﺠَﻨِﻲ، ﻭَﺇِﻥْ
ﻏُﻔِﻞَ ﻋَﻨْﻪُ ﺫَﻫَﺐَ ﺑِﻪِ ‏»
“আমার সামনে জাহান্নামকে হাযির করা হয়। এটা সেই সময়ে হয়েছিল যখন তোমরা আমাকে পিছু হটতে দেখছিলে, আমি
সেটার লেলিহান শিখায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে পিছিয়ে আসছিলাম। এমনি সময় আমি সেটার মধ্যে একজন বাঁকা মাথা
বিশিষ্ট লাঠিওয়ালাকে দেখতে পেলাম, যে আগুনের মধ্যে তার পেট ধরে টানছে। সে বাঁকা মাথাবিশিষ্ট লাঠি দিয়ে
হাজীদের জিনিসপত্র চুরি করত। ধরা পড়লে বলত, আমার লাঠির সাথে চলে এসেছিল বলে এমন হয়েছে। আর না ধরা পড়লে তা
নিয়ে কেটে পড়ত”। [83]
সরকারী সম্পদ চুরি করাও বড় আকারের চুরির অন্তর্ভুক্ত। কিছু লোক এ জাতীয় চুরিতে অভ্যস্ত। তারা বলে থাকে, অন্যরা চুরি
করে তাই আমরাও করি। অথচ তারা জানে না, এতে সকল মুসলিম বা জনগণের সম্পদ চুরি করা হচ্ছে। আর যারা আল্লাহকে ভয়
করে না তাদের কাজ কোনো দলীল হতে পারে না; তাদের অনুকরণও করা যাবে না।
কেউ কেউ কাফিরদের সম্পদ এ যুক্তিতে চুরি করে যে, লোকটা কাফির, তার সম্পদ মুসলিমের জন্য মুবাহ, অথচ তাদের ধারণা
ভ্রান্তিপূর্ণ। কেননা যে সকল কাফির মুসলিমদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত কেবল তাদের সম্পদ মুসলিমদের জন্য বৈধ। কাফিরদের
সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এর অন্তর্ভুক্ত নয়।
অন্য লোকের পকেট থেকে কিছু তুলে নেওয়া বা পকেটমারাও চুরি। অনেকেই কারো সঙ্গে দেখা করতে তার বাড়ীতে যায়
এবং চুরি করে আসে। অনেকে মেহমানদের ব্যাগ হাতড়িয়ে টাকা-পয়সা নিয়ে নেয়। আবার অনেক চোর
বিপণীবিতানগুলোতে প্রবেশ করে পকেট কিংবা থলিতে দু’একটা দ্রব্য তুলে নেয়। অনেক মহিলা আছে, যারা তাদের
পরিধেয়ের মধ্যে অনেক কিছুই লুকিয়ে নিয়ে যায়। কেউ কেউ সামান্য কিংবা সস্তা কোনো কিছু চুরি করাকে অপরাধ মনে
করেন না। অথচ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻟَﻌَﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟﺴَّﺎﺭِﻕَ، ﻳَﺴْﺮِﻕُ ﺍﻟﺒَﻴْﻀَﺔَ ﻓَﺘُﻘْﻄَﻊُ ﻳَﺪُﻩُ، ﻭَﻳَﺴْﺮِﻕُ ﺍﻟﺤَﺒْﻞَ ﻓَﺘُﻘْﻄَﻊُ ﻳَﺪُﻩُ‏»
“সে চোরের ওপর আল্লাহর লা‘নত, যে একটি ডিম চুরি করার ফলে তার হাত কাটা হয় এবং যে এক গাছি রশি চুরি করার ফলে
তার হাত কাটা যায়”। [84]
যে যাই চুরি করুক না কেন আল্লাহর নিকটে তওবা করার সাথে সাথে তাকে ঐ চুরির দ্রব্য মালিকের নিকটে ফিরিয়ে দেওয়া
ওয়াজিব। চাই প্রকাশ্যে হউক কিংবা গোপনে হউক, সরাসরি হউক কিংবা কারো মাধ্যমে হউক। কিন্তু অনেক চেষ্টার পরও
যদি মালিক কিংবা তার ওয়ারিসদের খুঁজে না পাওয়া যায় তাহলে চুরির মাল মালিকের নামে দান করে দিতে হবে।
৩৭. ঘুষ আদান-প্রদান
কারো হক বিনষ্ট করা কিংবা কোনো অন্যায়কে কার্যকর করার জন্য বিচারক কিংবা শাসককে ঘুষ দেওয়া মারাত্মক
অপরাধ। কেননা ঘুষের ফলে বিচারক প্রভাবিত হয়, হকদারের প্রতি অবিচার করা হয়, বিচার ও প্রশাসন ব্যবস্থায় ধস নেমে
আসে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺄۡﻛُﻠُﻮٓﺍْ ﺃَﻣۡﻮَٰﻟَﻜُﻢ ﺑَﻴۡﻨَﻜُﻢ ﺑِﭑﻟۡﺒَٰﻄِﻞِ ﻭَﺗُﺪۡﻟُﻮﺍْ ﺑِﻬَﺎٓ ﺇِﻟَﻰ ﭐﻟۡﺤُﻜَّﺎﻡِ ﻟِﺘَﺄۡﻛُﻠُﻮﺍْ ﻓَﺮِﻳﻘٗﺎ ﻣِّﻦۡ ﺃَﻣۡﻮَٰﻝِ ﭐﻟﻨَّﺎﺱِ ﺑِﭑﻟۡﺈِﺛۡﻢِ ﻭَﺃَﻧﺘُﻢۡ ﺗَﻌۡﻠَﻤُﻮﻥَ ١٨٨﴾ ‏[ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ١٨٨ ‏]
“তোমরা অন্যায়ভাবে পরস্পরের সম্পদ ভক্ষণ করো না এবং জেনে-বুঝে মানুষের সম্পদ থেকে ভক্ষণের জন্য বিচারকদের
দরবারে উহার আরযী পেশ করো না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৮]
অনুরূপভাবে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,
‏« ﻟَﻌَﻦَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺍﻟﺮَّﺍﺷِﻲَ ﻭَﺍﻟْﻤُﺮْﺗَﺸِﻲَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺤُﻜْﻢِ‏»
“বিচার-ফায়সালায় ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহীতা উভয়ের উপরে আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত করেছেন”। [85]
তবে যদি ঘুষ প্রদান ব্যতীত নিজের পাওনা বা অধিকার আদায় সম্ভব না হয় কিংবা ঘুষ না দিলে যুলুম-অত্যাচারের শিকার
হতে হয় তবে ঐ অধিকার আদায় ও যুলুম নিরোধ কল্পে ঘুষ দিলে ঘুষদাতা উক্ত শাস্তির আওতায় পড়বে না।
বর্তমানে ঘুষের বিস্তার রীতিমত উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এমনকি অনেক চাকুরের নিকট মূল বেতনের চেয়ে তা
রীতিমত আয়ের এক বড় উৎস। অনেক অফিস ও কোম্পানী নানা নামে-উপনামের ছদ্মাবরণে ঘুষকে আয়ের বাহানা বানিয়ে
নিয়েছে। অনেক কাজই এখন ঘুষ ছাড়া শুরু ও শেষ হয় না। এতে গরীব ও অসহায়রা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক চুক্তি ও
প্রতিশ্রুতি ঘুষের কারণে ভঙ্গ হয়ে যায়। ঘুষ না দিলে ভালো সার্ভিসের আশা করা বাতুলতা মাত্র। যে ঘুষ দিতে পারে না
তার জন্য নিকৃষ্ট মানের সার্ভিস অপেক্ষা করে। হয়ত তাকে বারবার ঘুরানো হয়, নয়ত তার দরখাস্ত বা ফাইল একেবারে
গায়েব করে দেওয়া হয়। আর যে ঘুষ দিতে পারে সে পরে এসেও ঘুষ দিতে অক্ষম ব্যক্তির নাকের ডগার উপর দিয়ে বহু আগেই
কাজ সমাধা করে চলে যায়। অথচ ঘুষের কারণে যে অর্থ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পাওয়ার কথা ছিল
তা তাদের হাতে না পৌঁছে বরং ঘুষখোর কর্মকর্তা-কর্মচারীর পকেটস্থ হয়।
এসব নানাবিধ কারণে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সবার বিরুদ্ধে
বদ দো‘আ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা
করেন,
‏« ﻟَﻌْﻨَﺔُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺮَّﺍﺷِﻲ ﻭَﺍﻟْﻤُﺮْﺗَﺸِﻲ ‏»
“ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়ের ওপর আল্লাহর লা‘নত”। [86]
৩৮. জমি আত্মসাৎ করা
যখন মানুষের মন থেকে আল্লাহভীতি উঠে যায় তখন তার শক্তি, বুদ্ধি সবই তার জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়। সে এগুলোকে
নির্বিচারে যুলুম-নিপীড়নে ব্যবহার করে। যেমন শক্তির বলে অন্যের সম্পদ কুক্ষিগত করা। ভূমি জবরদখল এরই একটি অংশ। এর
পরিণাম খুবই মারাত্মক। আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏« ﻣَﻦْ ﺃَﺧَﺬَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﺣَﻘِّﻪِ ﺧُﺴِﻒَ ﺑِﻪِ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺇِﻟَﻰ ﺳَﺒْﻊِ ﺃَﺭَﺿِﻴﻦَ ‏»
‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো জমির কিয়দংশ জবরদখল করবে, কিয়ামত দিবসে এজন্য তাকে সপ্ত যমীন পর্যন্ত পূঁতে দেওয়া
হবে”। [87]
ইয়া‘লা ইবন মুররাহ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﺃَﻳُّﻤَﺎ ﺭَﺟُﻞٍ ﻇَﻠَﻢَ ﺷِﺒْﺮًﺍ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ،ﻛَﻠَّﻔَﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻥْ ﻳَﺤْﻔِﺮَﻩُ ‏( ﻭﻓﻲ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ : ﻳﺤﻀﺮﻩ ‏) ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺒْﻠُﻎَ ﺳَﺒْﻊَ ﺃَﺭَﺿِﻴﻦَ، ﺛُﻢَّ ﻳُﻄَﻮَّﻗُﻪُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻔْﺼِﻞَ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﻨﺎﺱ ‏»
‘যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ জমি জবরদখল করবে আল্লাহ তাকে যমীনের সপ্ত স্তর পর্যন্ত তা খনন করতে বাধ্য করবেন।
(ত্বাবরানীর বর্ণনায়, ‘তা উপস্থিত করতে বাধ্য করবেন’ বলা হয়েছে) অতঃপর কিয়ামত দিবসে তা তার গলায় বেড়ী করে
রাখা হবে, যে পর্যন্ত না মানুষের মাঝে বিচারকার্য শেষ হয়”। [88]
জমির সীমানা বা আইল পরিবর্তন করাও এ হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে। এ সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
‏« ﻟَﻌَﻦَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻣَﻦْ ﻏَﻴَّﺮَ ﻣَﻨَﺎﺭَ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ‏»
‘যে ব্যক্তি জমির নিশানা বা আইল পরিবর্তন করে আল্লাহ তার ওপর অভিসম্পাত করন”। [89]
৩৯. সুপারিশের বিনিময়ে উপহার গ্রহণ
মানুষের মান-মর্যাদা ও পদাধিকার বান্দার ওপর আল্লাহর অনুগ্রহরাজির অন্যতম। এ অনুগ্রহের শুকরিয়া আদায় করা কর্তব্য।
মুসলিমদের উপকারে তাদের পদ ও মর্যাদাকে কাজে লাগানো উক্ত শুকরিয়ারই অংশ বিশেষ। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏« ﻣَﻦِ ﺍﺳْﺘَﻄَﺎﻉَ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﺃَﻥْ ﻳَﻨْﻔَﻊَ ﺃَﺧَﺎﻩُ ﻓَﻠْﻴَﻔْﻌَﻞْ ‏»
“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের উপকার করতে সক্ষম, সে যেন তা করে”। [90]
যে ব্যক্তি তার পদের মাধ্যমে কোনো মুসলিম ভাইকে যুলুম থেকে রক্ষা করে কিংবা তার কোনো কল্যাণ সাধন করে এবং
তা করতে গিয়ে কোনো হারাম উপায় অবলম্বন করে না বা কারো অধিকার ক্ষুন্ন করে না, সে ব্যক্তির নিয়ত বিশুদ্ধ হলে
আল্লাহর নিকট সে পারিতোষিক পাওয়ার যোগ্য। যেমন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﺍﺷْﻔَﻌُﻮﺍ ﺗُﺆْﺟَﺮُﻭﺍ ‏»
“তোমরা সুপারিশ কর, বিনিময়ে তোমরা সাওয়াব পাবে”। [91]
এ সুপারিশ ও মধ্যস্থতার জন্য কোনো বিনিময়ে গ্রহণ করা জায়েয নয়। আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏« ﻣَﻦْ ﺷَﻔَﻊَ ﻟِﺄَﺧِﻴﻪِ ﺑِﺸَﻔَﺎﻋَﺔٍ، ﻓَﺄَﻫْﺪَﻯ ﻟَﻪُ ﻫَﺪِﻳَّﺔً ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﻓَﻘَﺒِﻠَﻬَﺎ، ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﺗَﻰ ﺑَﺎﺑًﺎ ﻋَﻈِﻴﻤًﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏِ ﺍﻟﺮِّﺑَﺎ ‏»
“সুপারিশ করার দরুন যে ব্যক্তি সুপারিশকারীকে উপহার দেয় এবং (তার থেকে) সে ঐ উপহার গ্রহণ করে তাহলে সে ব্যক্তি
সূদের দ্বারদেশগুলোর মধ্য থেকে একটি বৃহৎ দ্বারে উপনীত হয়’’। [92]
এক শ্রেণির মানুষ আর্থিক স্বার্থের বিনিময়ে তাদের পদমর্যাদাকে কাজে লাগাতে চায় বা মধ্যস্থতা করতে সম্মত হয়।
যেমন, কোনো একজন লোককে চাকরি দেওয়া অথবা কাউকে কোনো প্রতিষ্ঠান বা এলাকা থেকে অন্য প্রতিষ্ঠান বা
এলাকায় বদলি করে দেওয়া কিংবা কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে চিকিৎসা করে দেওয়া ইত্যাদির জন্য অর্থলাভের শর্ত আরোপ
করে। কিন্তু এরূপ স্বার্থের জন্য শর্তারোপ ও তার সুযোগ গ্রহণ করা হারাম। উপরোক্ত হাদীছই তার জ্বলন্ত প্রমাণ; বরং যে
কোনো কিছু গ্রহণ করাই এ হাদীসের বাহ্যিক দিকের আওতায় পড়ে, চাই পূর্বে কোনো কিছুর শর্ত আরোপ না করা হোক।
[শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ. এর জবানী থেকে] আসলে ভালো কাজের কর্মীর জন্য আল্লাহর পারিতোষিকই যথেষ্ট, যা
সে কিয়ামত দিবসে পাবে।
জনৈক ব্যক্তি কোনো এক প্রয়োজনে হাসান ইবন সাহলের নিকট এসে তাঁর সুপারিশ প্রার্থনা করে। তিনি তার প্রয়োজন পূরণ
করে দেন। ফলে লোকটি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে লাগল। তখন হাসান ইবন সাহল তাকে বললেন, ‘কি জন্য তুমি
আমাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছ? আমরা তো মনে করি পদেরও যাকাত আছে, যেমন অর্থ-সম্পদের যাকাত আছে”। [93]
এখানে এ পার্থক্যের দিকে ইঙ্গিত করা যথার্থ হবে যে, কোনো কার্য সম্পাদনের জন্য ব্যক্তি বিশেষকে পারিশ্রমিক দিয়ে
নিযুক্ত করা এবং শর্ত সাপেক্ষে বৈধ মজুরী প্রদান জায়েয শ্রেণিভুক্ত হবে। পক্ষান্তরে আর্থিক সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে
নিজ পদমর্যাদা ও মধ্যস্থতাকে কাজে লাগিয়ে সুপারিশের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এটা নিষিদ্ধ। উভয় প্রক্রিয়া এক নয়।
৪০. শ্রমিক থেকে ষোলআনা শ্রম আদায় করে পুরো মজুরী না দেওয়া
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শ্রমিকের পাওনা দ্রুত পরিশোধে জোর তাকীদ দিয়েছেন। তিনি বলেন,
‏« ﺃَﻋْﻄُﻮﺍ ﺍﻟْﺄَﺟِﻴﺮَ ﺃَﺟْﺮَﻩُ، ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳَﺠِﻒَّ ﻋَﺮَﻗُﻪ «ُ
“তোমরা শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার পূর্বেই তার পাওনা পরিশোধ কর”। [94]
শ্রমিক, কর্মচারী, দিনমজুর যেই হোক না কেন তার থেকে শ্রম আদায়ের পর যথারীতি তার পাওনা পরিশোধ না করা মহা
যুলম। এ যুলুম এখন হর-হামেশাই হচ্ছে। শ্রমিকদের প্রতি যুলুমের বিচিত্র রূপ রয়েছে। যেমন,
১. শ্রমিক স্বীয় কাজের স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ পেশ করতে না পারায় তার পাওনাকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা। এক্ষেত্রে
দুনিয়াতে তার হক নষ্ট হলেও কিয়ামতে তা বৃথা যাবে না। কিয়ামতের দিন যালিমের পূণ্য থেকে মাযলূমের পাওনা
পরিমাণ পূন্য প্রদান করা হবে। যদি তার পূণ্য নিঃশেষ হয়ে যায় তাহলে মাযলুমের পাপ যালিমের ঘাড়ে চাপানো হবে,
তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।[95]
২. যে পরিমাণ অংক মজুরী দেওয়ার জন্য চুক্তি হয়েছে তার থেকে কম দেওয়া। এ বিষয়ের সমূহ ক্ষতি প্রসঙ্গে আল্লাহ
তা‘আলা হুঁশিয়ারী বাণী উচ্চারণ করে বলেছেন,
﴿ﻭَﻳۡﻞٞ ﻟِّﻠۡﻤُﻄَﻔِّﻔِﻴﻦَ ١﴾ ‏[ﺍﻟﻤﻄﻔﻔﻴﻦ : ١‏]
“যারা ওযনে কম দেয় তাদের জন্য দুর্ভোগ রয়েছে”। [সূরা আল-মুতাফফিফীন, আয়াত: ১]
অনেক নিয়োগকর্তা দেশ-বিদেশ থেকে নির্দিষ্ট বেতন বা মজুরীর চুক্তিতে শ্রমিক নিয়োগ করে থাকে। তারপর তারা যখন
কাজে যোগদান করে তখন সে একতরফাভাবে চুক্তিপত্র পরিবর্তন করে বেতন বা মজুরীর পরিমাণ অনেক কমিয়ে দেয়।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঐসব শ্রমিক তখন কাজ করতে বাধ্য হয়। অনেক সময় শ্রমিকরা তাদের অধিকারের সপক্ষে প্রমাণ পেশ করতে
পারে না। তখন কেবল আল্লাহর নিকট অভিযোগ দায়ের করা ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় থাকে না। এক্ষেত্রে যদি
নিয়োগকর্তা মুসলিম ও নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি কাফির হয় তবে বেতন মজুরী হ্রাসে ঐ শ্রমিকের ইসলাম গ্রহণে বাধা সৃষ্টি
হয়। ফলশ্রুতিতে কিয়ামত দিবসে ঐ কাফিরের পাপ তাকে বহন করতে হবে।
৩. বেতন বা মজুরী বৃদ্ধি না করে কেবল কাজের পরিমাণ কিংবা সময় বৃদ্ধি করা। এতে শ্রমিককে তার অতিরিক্ত কাজের
পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত করা হয়।
৪. বেতন বা মজুরী পরিশোধে গড়িমসি করা। অনেক চেষ্টা-প্রচেষ্টা, তদবীর তাগাদা, অভিযোগ-অনুযোগ ও মামলা-
মোকদ্দমার পর তবেই প্রাপ্য অর্থ আদায় সম্ভব হয়। অনেক সময় নিয়োগকারী শ্রমিককে ত্যক্ত-বিরক্ত করার উদ্দেশ্যে টাল-
বাহানা করে, যেন সে পাওনা ছেড়ে দেয় এবং কোনো দাবী না তুলে চলে যায়। আবার কখনো তাদের টাকা খাটিয়ে
মালিকের তহবিল স্ফীত করার কুমতলব থাকে। অনেকে তা সূদী কারবারেও খাটায়। অথচ সেই শ্রমিক না নিজে খেতে পাচ্ছে
না নিজের পুত্র-পরিজনদের জন্য কিছু পাঠাতে পারছে। যদিও তাদের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দেওয়ার জন্যই সে এ দূর দেশে
পড়ে আছে। এজন্যই এ সকল যালিমের জন্য এক কঠিন দিনের শাস্তি অপেক্ষা করছে।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
‏«ﺛَﻼَﺛَﺔٌ ﺃَﻧَﺎ ﺧَﺼْﻤُﻬُﻢْ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ : ﺭَﺟُﻞٌ ﺃَﻋْﻄَﻰ ﺑِﻲ ﺛُﻢَّ ﻏَﺪَﺭَ، ﻭَﺭَﺟُﻞٌ ﺑَﺎﻉَ ﺣُﺮًّﺍ ﻓَﺄَﻛَﻞَ ﺛَﻤَﻨَﻪُ، ﻭَﺭَﺟُﻞٌ ﺍﺳْﺘَﺄْﺟَﺮَ ﺃَﺟِﻴﺮًﺍ ﻓَﺎﺳْﺘَﻮْﻓَﻰ ﻣِﻨْﻪُ ﻭَﻟَﻢْ ﻳُﻌْﻂِ ﺃَﺟْﺮَﻩُ‏»
“কিয়ামত দিবসে আমি তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হব। ১. যে ব্যক্তি আমার নামে শপথ করে কিছু দেওয়ার কথা বলে তারপর
তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। ২. যে ব্যক্তি কোনো স্বাধীন বা মুক্ত লোককে ধরে বিক্রয় করে তার মূল্য ভোগ করে। ৩.
যে ব্যক্তি কোনো মজুরকে নিয়োগের পর তার থেকে পুরো কাজ আদায় করেও তার পাওনা পরিশোধ করে না”। [96]
৪১. সন্তানদের উপহার প্রদানে সমতা রক্ষা না করা
আমাদের সমাজে এমন অনেক মাতা-পিতা আছেন, যারা এক সন্তানকে ‘হেবা’ বা উপহার দিলে অন্যান্য সন্তানকে দেন না।
নিয়ম হলো, সন্তানদের সবাইকে বিশেষ কোনো উপহার সমান হারে দিতে হবে; আর না হলে কাউকে দেওয়া যাবে না। নিয়ম
লঙ্ঘন করে সন্তানবিশেষকে দেওয়া ও অন্যদের বঞ্চিত করা ঠিক নয়। শর‘ঈ কারণ ব্যতীত এরূপ দান করলে তা হারাম বলে গণ্য
হবে। শর‘ঈ কারণ বলতে সন্তানদের একজনের এমন প্রয়োজন দেখা দিয়েছেন, যা অন্যদের নেই। যেমন, সে অসুস্থ কিংবা
বেকার অথবা ছাত্র কিংবা সংসারে তার সদস্য সংখ্যা অনেক তথা সে পোষ্য ভারাক্রান্ত অথবা সে কুরআন মুখস্থ করেছে
তাই উৎসাহ ধরে রাখতে কিছু দেওয়া ইত্যাদি। পিতা এরূপ শর‘ঈ কারণবশতঃ কোনো সন্তানকে কিছু দেওয়ার সময় নিয়ত করবে
যে, অন্য কোনো সন্তানের যদি এরূপ প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে তাকেও তিনি তার প্রয়োজন মত দিবেন। এ কথার সাধারণ
দলীল আল্লাহর বাণী:
﴿ﭐﻋۡﺪِﻟُﻮﺍْ ﻫُﻮَ ﺃَﻗۡﺮَﺏُ ﻟِﻠﺘَّﻘۡﻮَﻯٰۖ ﻭَﭐﺗَّﻘُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَۚ﴾ ‏[ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ٨‏]
“তোমরা সুবিচার কর। ইহা আল্লাহভীতির অধিকতর নিকটবর্তী। আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর”। [সূরা আল-
মায়েদাহ, আয়াত: ৮]
আর বিশেষ দলীল হলো, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস। একদা নু‘মান ইবন বাশীর রাদিয়াল্লাহু
আনহু-এর পিতা তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে নিয়ে গিয়ে বললেন, ‘আমি আমার এ পুত্রকে
একটা দাস দান করেছি’। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথা শুনে বললেন, ‘তোমার সকল সন্তানকে কি
তার মত করে দান করেছ? পিতা বললেন, ‘না’। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তাহলে উক্ত দান
ফেরত নাও’। অন্য বর্ণনায় আছে, ‘তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং তোমাদের সন্তানদের মধ্যে সুবিচার কর’।
বর্ণনাকারী বলেন, তিনি বাড়ী ফিরে এসে ঐ দাস ফেরত নেন। অপর এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏«ﻻَ ﺗُﺸْﻬِﺪْﻧِﻲ ﻋَﻠَﻰ ﺟَﻮْﺭٍ‏»
“তাহলে তুমি আমাকে সাক্ষী করো না। কেননা যুলুমের সাক্ষী আমি হতে পারি না”। [97]
কোনো কোনো পিতাদের দেখা যায় যে, তারা সন্তান বিশেষকে অহেতুক অগ্রাধিকার দানে আল্লাহকে ভয় করেন না। এর
ফলে সন্তানদের মধ্যে মন কষাকষির সৃষ্টি হয়। তারা একে অপরের প্রতি শত্রু ও বিদ্বেষ ভাবাপন্ন হয়ে ওঠে। কখনো কোনো
সন্তানকে পিতৃকুলের আকৃতি পাওয়ার জন্য দেওয়া হয়, অন্য সন্তানকে মাতৃকুলের আকৃতি পাওয়ার জন্য বঞ্চিত করা হয়। এক
স্ত্রীর সন্তানকে দেওয়া হয়, অন্য স্ত্রীর সন্তানদের দেওয়া হয় না। আবার অনেক সময় তাদের একজনের সন্তানদেরকে বিশেষ
ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হয়, কিন্তু অন্যজনের সন্তানদের ক্ষেত্রে অনুরূপ ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এর কুফল
অচিরেই ঐসব মাতা-পিতাকে ভোগ করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই ঐসব বঞ্চিত সন্তান ভবিষ্যতে তাদের পিতার সঙ্গে সদাচরণ
করে না।
সন্তানদের মধ্যে দান-দক্ষিনায় কাউকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া ব্যক্তি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﻓَﻠَﺎ ﺃَﺷْﻬَﺪُ ﻋَﻠَﻰ ﺷَﻲْﺀٍ، ﺃَﻟَﻴْﺲَ ﻳَﺴُﺮُّﻙَ ﺃَﻥْ ﻳَﻜُﻮﻧُﻮﺍ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺒِﺮِّ ﺳَﻮَﺍﺀ؟ً‏»
“তোমার সন্তানেরা তোমার সাথে সমান সদাচরণ করুক তা কি তোমাকে আনন্দিত করবে না”? [98]
সুতরাং সন্তানদের প্রতি দান-দক্ষিণায় সমতা রক্ষা করা অপরিহার্য।
৪২. ভিক্ষা বৃত্তি
সাহল ইবন হানযালিয়াহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻣَﻦْ ﺳَﺄَﻝَ ﻭَﻋِﻨْﺪَﻩُ ﻣَﺎ ﻳُﻐْﻨِﻴﻪِ، ﻓَﺈِﻧَّﻤَﺎ ﻳَﺴْﺘَﻜْﺜِﺮُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ‏» ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻨُّﻔَﻴْﻠِﻲُّ ﻓِﻲ ﻣَﻮْﺿِﻊٍ ﺁﺧَﺮَ : ﻣِﻦْ ﺟَﻤْﺮِ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ - ﻓَﻘَﺎﻟُﻮﺍ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻭَﻣَﺎ ﻳُﻐْﻨِﻴﻪِ؟ ... ﺃﻭ ﻭَﻣَﺎ ﺍﻟْﻐِﻨَﻰ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻟَﺎ ﺗَﻨْﺒَﻐِﻲ ﻣَﻌَﻪُ ﺍﻟْﻤَﺴْﺄَﻟَﺔُ؟ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﻗَﺪْﺭُ ﻣَﺎ ﻳُﻐَﺪِّﻳﻪِ
ﻭَﻳُﻌَﺸِّﻴﻪِ ‏» ... ‏« ﺃَﻥْ ﻳَﻜُﻮﻥَ ﻟَﻪُ ﺷِﺒْﻊُ ﻳَﻮْﻡٍ ﻭَﻟَﻴْﻠَﺔٍ، ﺃَﻭْ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻭَﻳَﻮْﻡٍ‏»
“যার নিকট অভাব মোচনের মত সামগ্রী আছে অথচ সে ভিক্ষা করে, সে জাহান্নামের অঙ্গারকেই কেবল বর্ধিত করে।
সাহাবীগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কতটুকু সম্পদ থাকলে ভিক্ষা করা উচিৎ নয়?
উত্তরে তিনি বললেন, সকাল-সন্ধ্যায় খাওয়া চলে এমন পরিমাণ সম্পদ”। অপর বর্ণনায়, তার একদিন একরাত্রির পেটপুরে খাবার
পরিমাণ”। [99]
ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻣَﻦْ ﺳَﺄَﻝَ ﻭَﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﻳُﻐْﻨِﻴﻪِ، ﺟَﺎﺀَﺕْ ﻣَﺴْﺄَﻟَﺘُﻪُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺧُﺪُﻭﺷًﺎ ﺃَﻭْ ﻛُﺪُﻭﺣًﺎ ﻓِﻲ ﻭَﺟْﻬِﻪِ ‏»
“অভাবমুক্ত হয়েও যে ব্যক্তি ভিক্ষা করে, কিয়ামত দিবসে সেটা মুখে গোশতশূণ্য হয়ে উঠবে”। [100]
অনেক ভিক্ষুক মসজিদে আল্লাহর বান্দাদের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের অভাব-অভিযোগের ফিরিস্তি আওড়াতে থাকে। এতে
মুসল্লীদের তাসবীহ-তাহলীলে ছেদ পড়ে। অনেকে মিথ্যা বলে এবং ভূয়া কার্ড ও কাগজপত্র দেখায়। অনেকে আবার মনগড়া
কাহিনী বলে ভিক্ষা করে। কোনো কোনো ভিক্ষুক স্বীয় পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন মসজিদ ও জনসমাগম স্থলে ভাগ করে
দেয়। দিন শেষে তারা একস্থানে একত্রিত হয়ে নিজেদের আয় গুণে দেখে। এভাবে তারা যে কত ধনী হয়েছে তা আল্লাহ
ছাড়া আর কেউ জানে না। যখন তারা মারা যায়, তখন জানা যায় কী পরিমাণ সম্পদ তারা রেখে গেছে।
পক্ষান্তরে একদল প্রকৃতই অভাবী রয়েছে। যাদের সংযম দেখে তাদের অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে ধনী বলেই
মনে করে। তারা কাকুতি-মিনতি করে লোকদের নিকটে চায় না। ফলে তাদের অবস্থা যেমন জানার বাইরে থেকে যায়,
তেমনি তাদের কিছু দেওয়াও হয় না।
৪৩. ঋণ পরিশোধে অনীহা প্রকাশ করা
মহান রাব্বুল আলামীনের নিকটে বান্দার হক অতীব গুরুত্ববহ। আল্লাহর হক নষ্ট করলে তাওবার মাধ্যমে ক্ষমা পাওয়া যায়।
কিন্তু বান্দার হক নষ্ট করলে সংশ্লিষ্ট বান্দার নিকট থেকে ক্ষমা না পেলে ক্ষমা লাভের কোনো উপায় নেই। যেকোনো
মূল্যে তার হক আদায় করতে হবে ঐদিন আসার পূর্বে যেদিন টাকা-পয়সার কোনো কারবার হবে না। সেদিন হকদারের পাপ হক
আত্মসাৎকারীকে দেওয়া হবে এবং হক আত্মসাৎকারীর নেকী হকদারকে দেওয়া হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻳَﺄۡﻣُﺮُﻛُﻢۡ ﺃَﻥ ﺗُﺆَﺩُّﻭﺍْ ﭐﻟۡﺄَﻣَٰﻨَٰﺖِ ﺇِﻟَﻰٰٓ ﺃَﻫۡﻠِﻬَﺎ﴾ ‏[ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٥٨‏]
“নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে এ মর্মে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা আমানতকে তার প্রাপকের নিকটে অর্পন করবে”। [সূরা
আন-নিসা, আয়াত: ৫৯]
বর্তমান সমাজে ঋণ গ্রহণ একটি মামুলী ও গুরুত্বহীন বিষয় বলে বিবেচিত। অনেকে অভাবের জন্য নয়; বরং প্রাচুর্য সৃষ্টি ও
অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে নতুন নতুন বাড়ী, গাড়ী, আসবাবপত্র ইত্যাদি ক্রয়ের জন্য ঋণ নিয়ে থাকে। অনেক
সময় এরা কিস্তিতে বেচা-কেনা করে থাকে, যার অনেকাংশই সন্দেহপূর্ণ বা হারাম।
ঋণ পরিশোধকে লঘু বা সাধারণভাবে নিলে প্রায়শই সেখানে টালবাহানা ও গড়িমসি সৃষ্টি হয়। ক্ষেত্রবিশেষ তাতে
অপরের সম্পদ বিনষ্ট করা হয়। এর শোচনীয় পরিণতি বর্ণনা করতে গিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻣَﻦْ ﺃَﺧَﺬَ ﺃَﻣْﻮَﺍﻝَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺃَﺩَﺍﺀَﻫَﺎ ﺃَﺩَّﻯ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ، ﻭَﻣَﻦْ ﺃَﺧَﺬَ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺇِﺗْﻼَﻓَﻬَﺎ ﺃَﺗْﻠَﻔَﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ‏»
“যে ব্যক্তি পরিশোধের নিয়তে মানুষের সম্পদ গ্রহণ করে, আল্লাহ তা‘আলা তার পক্ষ থেকে তা পরিশোধ করে দেন। আর যে
তা বিনষ্ট করার নিয়তে গ্রহণ করে থাকে, আল্লাহ তাকে বিনষ্ট করে দেন”। [101]
মানুষ ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে বড় উদাসীন। তারা এটাকে খুবই তুচ্ছ মনে করে। অথচ আল্লাহর নিকট তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি
আল্লাহর রাস্তায় শহীদ ব্যক্তি এতসব মর্যাদা ও অগণিত ছওয়াবের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধের দায় থেকে সে
অব্যাহতি পায় নি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻣَﺎﺫَﺍ ﻧُﺰِّﻝَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺘَّﺸْﺪِﻳﺪِ ‏» ﻓَﺴَﻜَﺘْﻨَﺎ ﻭَﻓَﺰِﻋْﻨَﺎ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻐَﺪِ، ﺳَﺄَﻟْﺘُﻪُ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻣَﺎ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟﺘَّﺸْﺪِﻳﺪُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻧُﺰِّﻝَ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ‏« ﻭَﺍﻟَّﺬِﻱ ﻧَﻔْﺴِﻲ ﺑِﻴَﺪِﻩِ، ﻟَﻮْ ﺃَﻥَّ ﺭَﺟُﻠًﺎ ﻗُﺘِﻞَ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺛُﻢَّ ﺃُﺣْﻴِﻲَ، ﺛُﻢَّ ﻗُﺘِﻞَ
ﺛُﻢَّ ﺃُﺣْﻴِﻲَ، ﺛُﻢَّ ﻗُﺘِﻞَ ﻭَﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺩَﻳْﻦٌ، ﻣَﺎ ﺩَﺧَﻞَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﻘْﻀَﻰ ﻋَﻨْﻪُ ﺩَﻳْﻨُﻪُ‏»
‘সুবহানাল্লাহ! ঋণ প্রসঙ্গে কী কঠোর বাণীই না আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করেছেন। ফলে আমরা চুপ হয়ে গেলাম এবং ভীত
হলাম, অতঃপর যখন পরের দিন আসলো, আমরা তাঁকে প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, কী কঠোর বাণী নাযিল হয়েছে? তখন
তিনি বললেন, যার হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ, ঋণগ্রস্ত অবস্থায় কেউ যদি আল্লাহর পথে শহীদ হয় তারপর জীবিত হয়,
তারপর শহীদ হয়, তারপর জীবিত হয়, তারপর আবার শহীদ হয় তবুও ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত সে জান্নাতে প্রবেশ করতে
পারবে না”। [102]
এরপরও কি ঋণ পরিশোধে টালবাহানাকারী মতলববাজদের হুঁশ ফিরবে না?
৪৪. হারাম ভক্ষণ
যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে না সে কোথা থেকে অর্থ উপার্জন করল এবং কোথায় ব্যয় করল তার কোনো পরোয়া করে না।
তার একটাই ইচ্ছা সম্পদ বৃদ্ধি করা। চাই তা হারাম, অবৈধ যে পথেই হোক। এজন্য সে ঘুষ, চুরি ডাকাতি, ছিনতাই, আত্মসাৎ,
হারাম দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়, সুদ, ইয়াতীমের মাল ভক্ষণ, জ্যোতিষগিরী, বেশ্যাবৃত্তি, গান-বাজনা ইত্যাদি হারাম কাজের
মাধ্যমে অর্থ উপার্জন, এমনকি মুসলিমদের সরকারী কোষাগার কিংবা জনগণের সম্পদ কুক্ষিগত করা, মানুষকে সংকটে ফেলে
তার সম্পদ বাগিয়ে নেওয়া, ভিক্ষাবৃত্তি ইত্যাদি যে কোনো উপায়ে অর্থ উপার্জন করে। অতঃপর সে ঐ অর্থ থেকে খায়,
পরিধান করে, গাড়িতে চড়ে, বাড়ী-ঘর তৈরি করে কিংবা বাড়ী ভাড়া নিয়ে দামী আসবাবপত্র দিয়ে সাজায়। এভাবে
হারাম দিয়ে তার উদর পূর্তি করে। অথচ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﻭَﻛُﻞُّ ﻟَﺤْﻢٍ ﻧَﺒَﺖَ ﻣِﻦْ ﺳُﺤْﺖٍ ﻓَﺎﻟﻨَّﺎﺭُ ﺃَﻭْﻟَﻰ ﺑِﻪ«ِ
“শরীরের যতটুকু গোশত হারাম থেকে উৎপন্ন হয়েছে, তা জাহান্নামের জন্যই সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত”। [103]
আর কিয়ামতের দিনেও তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কোথা থেকে সে ধন-উপার্জন করেছে এবং কোথায় ব্যয় করেছে। [104]
সুতরাং এ শ্রেণির লোকদের জন্য শুধু ধ্বংসই অপেক্ষা করছে। অতএব যার কাছে হারাম সম্পদ রয়ে গেছে তার উচিত তা থেকে
নিজেকে মুক্ত করে; যদি মানুষের হক হয় তবে যেন তার কাছে তা ফেরত দেওয়ার সাথে সাথে তার কাছ থেকে ক্ষমাও চেয়ে
নেয়, সে দিন আসার পূর্বে যেদিন মানুষ কোনো টাকা-পয়সা নিয়ে আসবে না, আসবে শুধু নেক আমল ও বদ আমল নিয়ে।
৪৫. মদ্যপান
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮٓﺍْ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﭐﻟۡﺨَﻤۡﺮُ ﻭَﭐﻟۡﻤَﻴۡﺴِﺮُ ﻭَﭐﻟۡﺄَﻧﺼَﺎﺏُ ﻭَﭐﻟۡﺄَﺯۡﻟَٰﻢُ ﺭِﺟۡﺲٞ ﻣِّﻦۡ ﻋَﻤَﻞِ ﭐﻟﺸَّﻴۡﻄَٰﻦِ ﻓَﭑﺟۡﺘَﻨِﺒُﻮﻩُ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗُﻔۡﻠِﺤُﻮﻥَ ٩٠﴾ ‏[ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ٩٠ ‏]
“নিশ্চয় মদ, জুয়া, মূর্তি ও ভাগ্য নির্ণয়কারী তীর বা লটারী অপবিত্র শয়তানী কাজ ছাড়া আর কিছু নয়। সুতরাং তোমরা
এগুলো থেকে বিরত থাক। আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৯০]
মদ্যপান থেকে বিরত থাকার আদেশ প্রদান তা হারাম হওয়ার অন্যতম শক্তিশালী দলীল। আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াতে
মদের সঙ্গে মূর্তির কথা উল্লেখ করেছেন। মূর্তি কাফেরদের উপাস্য ও দেব-দেবীর সাধারণ নাম। মূর্তিপূজা হারাম হেতু
মদ্যপানও হারাম। তাই উক্ত আয়াতে আল্লাহ উল্লিখিত জিনিসগুলো হারাম করেন নি; বরং বিরত থাকতে বলেছেন বলে
এত্থেকে গা বাঁচানোর কোনো উপায় নেই।
মদ্যপান সম্পর্কে হাদীসেও কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﺇِﻥَّ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠﻪِ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﻋَﻬْﺪًﺍ ﻟِﻤَﻦْ ﻳَﺸْﺮَﺏُ ﺍﻟْﻤُﺴْﻜِﺮَ ﺃَﻥْ ﻳَﺴْﻘِﻴَﻪُ ﻣِﻦْ ﻃِﻴﻨَﺔِ ﺍﻟْﺨَﺒَﺎﻝ «ِ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﻭَﻣَﺎ ﻃِﻴﻨَﺔُ ﺍﻟْﺨَﺒَﺎﻝ؟ِ ﻗَﺎﻝَ : ‏«ﻋَﺮَﻕُ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ‏» ﺃَﻭْ ‏« ﻋُﺼَﺎﺭَﺓُ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ‏»
“যে ব্যক্তি মদ্যপান করে তার জন্য আল্লাহর অঙ্গীকার হলো, তিনি তাকে ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ পান করাবেন। সাহাবীগণ
জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ কী? তিনি বললেন,
জাহান্নামীদের ঘাম অথবা পুঁজ-রক্ত”। [105]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻣَﻦْ ﻟَﻘِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻣُﺪْﻣِﻦَ ﺧَﻤْﺮٍ ﻟَﻘِﻴَﻪُ ﻙَ ﻋَﺎﺑِﺪِ ﻭَﺛَﻦ «ٍ
“শরাবপানে অভ্যস্তরূপে যে মারা যাবে, (কিয়ামতে) সে একজন মূর্তিপূজকের ন্যায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে”। [106]
আমাদের যুগে হরেক রকম মদ ও নেশা জাতীয় দ্রব্যাদি বেরিয়েছে। তাদের নামও আরবী, আজমী বিভিন্ন প্রকার রয়েছে।
যেমন-বিয়ার, হুইস্কি, চুয়ানি, তাড়ি ভদকা, শ্যাম্পেন, কোডিন, মরফিন, প্যাথেড্রিন, হেরোইন, ড্রাগ ইত্যাদি। অনুরূপভাবে
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছেন,
‏«ﻟَﻴَﺸْﺮَﺑَﻦَّ ﻧَﺎﺱٌ ﻣِﻦْ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﺍﻟْﺨَﻤْﺮَ ﻳُﺴَﻤُّﻮﻧَﻬَﺎ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﺍﺳْﻤِﻬَﺎ ‏»
‘নিশ্চয় আমার উম্মতের কিছু লোক মদ পান করবে, তারা সেটার ভিন্ন নামকরণ করে নেবে”। [107] রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী উক্ত নাম পাল্টিয়ে মদ পানকারী মুসলিমও বর্তমান যামানায় প্রকাশ
পেয়েছে। তারা উহার নাম দিয়েছে ‘রূহানী টনিক’ বা ‘জীবনী সুধা’। অথচ এটা নিছক মিথ্যার ওপর প্রলেপ প্রদান ও
প্রতারণা মাত্র। এ সমস্ত প্রতারকদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
﴿ ﻳُﺨَٰﺪِﻋُﻮﻥَ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻭَﻣَﺎ ﻳَﺨۡﺪَﻋُﻮﻥَ ﺇِﻟَّﺎٓ ﺃَﻧﻔُﺴَﻬُﻢۡ ﻭَﻣَﺎ ﻳَﺸۡﻌُﺮُﻭﻥَ ٩﴾ ‏[ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ٩‏]
“তারা আল্লাহ ও ঈমানদারদের সাথে প্রতারণা করে অথচ তারা যে নিজেদের সাথেই প্রতারণা করছে তা তারা অনুধাবন
করতে পারছে না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৯]
মদ কী এবং তার বিধান কী হবে শরী‘আতে তার পরিপূর্ণ নীতিমালা তুলে ধরা হয়েছে, যাতে ফিৎনা ও দ্বন্দ্বের মূলোৎপাটন
করা যায়। এ নীতিমালা হলো-
‏«ﻛُﻞُّ ﻣُﺴْﻜِﺮٍ ﺧَﻤْﺮ ،ٌ ﻭَﻛُﻞُّ ﻣُﺴْﻜِﺮٍ ﺣَﺮَﺍﻡٌ‏»
“প্রত্যেক নেশার দ্রব্যই ‘খামর’ বা মদ এবং প্রত্যেক নেশার দ্রব্যই হারাম”। [108]
সুতরাং যা কিছু মস্তিষ্কের সঙ্গে মিশে জ্ঞান-বুদ্ধিকে নেশাগ্রস্ত করে তোলে তাই হারাম। চাই তা কম হোক বা বেশি
হোক [109] ; তরল পদার্থ হোক কিংবা কঠিন পদার্থ হোক। এসব নেশার দ্রব্যের নাম যাই হোক মূলতঃ এগুলো সবই এক এবং
এসবের বিধানও এক।
পরিশেষে মদ্যপায়িদের উদ্দেশ্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি নসীহত তুলে ধরা হলো। তিনি বলেছেন,
‏« ﻣَﻦْ ﺷَﺮِﺏَ ﺍﻟْﺨَﻤْﺮَ ﻭَﺳَﻜِﺮَ، ﻟَﻢْ ﺗُﻘْﺒَﻞْ ﻟَﻪُ ﺻَﻠَﺎﺓٌ ﺃَﺭْﺑَﻌِﻴﻦَ ﺻَﺒَﺎﺣًﺎ، ﻭَﺇِﻥْ ﻣَﺎﺕَ ﺩَﺧَﻞَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭَ، ﻓَﺈِﻥْ ﺗَﺎﺏَ ﺗَﺎﺏَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ، ﻭَﺇِﻥْ ﻋَﺎﺩَ، ﻓَﺸَﺮِﺏَ، ﻓَﺴَﻜِﺮَ، ﻟَﻢْ ﺗُﻘْﺒَﻞْ ﻟَﻪُ ﺻَﻠَﺎﺓٌ ﺃَﺭْﺑَﻌِﻴﻦَ ﺻَﺒَﺎﺣًﺎ، ﻓَﺈِﻥْ ﻣَﺎﺕَ ﺩَﺧَﻞَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭَ، ﻓَﺈِﻥْ ﺗَﺎﺏَ، ﺗَﺎﺏَ ﺍﻟﻠَّﻪُ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ، ﻭَﺇِﻥْ ﻋَﺎﺩَ، ﻓَﺸَﺮِﺏَ، ﻓَﺴَﻜِﺮَ، ﻟَﻢْ ﺗُﻘْﺒَﻞْ ﻟَﻪُ ﺻَﻠَﺎﺓٌ ﺃَﺭْﺑَﻌِﻴﻦَ ﺻَﺒَﺎﺣًﺎ، ﻓَﺈِﻥْ ﻣَﺎﺕَ ﺩَﺧَﻞَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭَ، ﻓَﺈِﻥْ ﺗَﺎﺏَ ﺗَﺎﺏَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ، ﻭَﺇِﻥْ ﻋَﺎﺩَ، ﻛَﺎﻥَ ﺣَﻘًّﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﺃَﻥْ ﻳَﺴْﻘِﻴَﻪُ ﻣِﻦْ ﺭَﺩَﻏَﺔِ ﺍﻟْﺨَﺒَﺎﻝِ، ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ‏» ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ
ﻭَﻣَﺎ ﺭَﺩَﻏَﺔُ ﺍﻟْﺨَﺒَﺎﻝِ؟ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﻋُﺼَﺎﺭَﺓُ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ‏»
“যে ব্যক্তি মদ পান করে ও নেশাগ্রস্ত হয় তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল হবে না। যদি সে ঐ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তাহলে
জাহান্নামে যাবে। আর যদি তওবা করে তবে আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন। পুনরায় যদি সে মদ পান করে ও নেশাগ্রস্থ হয়
তবে তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল হবে না। যদি সে ঐ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তাহলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। পুনরায়
সে যদি মদ পান করে ও নেশাগ্রস্ত হয় তবে তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল হবে না। যদি সে ঐ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে
তাহলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। পুনরায় যদি সে মদ পান করে তবে তাকে কিয়ামত দিবসে রাদগাতুল খাবাল’ পান
করানো আল্লাহর জন্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়াবে। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!
রাদগাতুল খাবল কী? তিনি বললেন, জাহান্নামীদের দেহ নিঃসৃত পূঁজ-রক্ত”। [110]
৪৬. সোনা-রূপার পাত্র ব্যবহার ও তাতে পানাহার করা
আধুনিক কালে গার্হস্থ্য জিনিসপত্রের এমন কোনো দোকান পাওয়া যাবে না, যেখানে সোনা-রূপার পাত্র অথবা সোনা-
রূপার প্রলেপযুক্ত পাত্রাদি নেই। ধনীদের গৃহে এমনকি অনেক হোটেলেও এসব পাত্র পরিবেশন করা হয়। এ জাতীয় পাত্র
বিভিন্ন অনু্ষ্ঠানে প্রদত্ত মূল্যবান উপঢোকনে পরিণত হয়েছে। অনেকে নিজ বাড়িতে সোনা-রূপার পাত্র রাখে না বটে
কিন্তু অন্যের বাড়ীতে ‘ওয়ালীমা’ ইত্যাদি অনুষ্ঠানে পরিবেশিত সোনা-রূপার পাত্র ব্যবহারে কুণ্ঠাবোধ করে না। অথচ
নিজ বাড়ীতে হোক কিংবা অন্যের বাড়ীতে হোক, শরী‘আতে এসব পাত্র ব্যবহার হারাম ঘোষিত হয়েছে। এ জাতীয় পাত্র
ব্যবহার কঠোর শাস্তির কথা হাদীসে এসেছে। উম্মু সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳَﺄْﻛُﻞُ ﺃَﻭْ ﻳَﺸْﺮَﺏُ ﻓِﻲ ﺁﻧِﻴَﺔِ ﺍﻟْﻔِﻀَّﺔِ ﻭَﺍﻟﺬَّﻫَﺐِ، ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻳُﺠَﺮْﺟِﺮُ ﻓِﻲ ﺑَﻄْﻨِﻪِ ﻧَﺎﺭَ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ‏»
“যে ব্যক্তি রূপা ও সোনার পাত্রে খাবে কিংবা পান করবে সে যেন তার পেটে জাহান্নামের আগুন ঢক ঢক করে ঢুকিয়ে
দিচ্ছে”। [111]
এ বিধান খাবারের পাত্র সহ যেকোনো ধরনের সোনা-রূপার পাত্রের জন্য প্রযোজ্য। যেমন-প্লেট, ডিস, কাঁটা চামচ, চামচ,
ছুরি, মেহমানদারীর জন্য প্রস্তুত খাদ্য প্রদানের পাত্র, বিবাহ ইত্যাদিতে মিষ্টি প্রভৃতি পরিবেশনের ডালা বা বারকোশ
ইত্যাদি।
কিছু লোক শোকেসের মধ্যে সোনা-রূপার পাত্র রেখে বলে, এগুলো আমরা ব্যবহার করি না, কেবল সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রেখে
দিয়েছি। হারামের পথ রুদ্ধ করার জন্য তাদের উক্ত কাজও অনুমোদনযোগ্য নয়। [শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বাযের জবানী থেকে
সরাসরি প্রাপ্ত]
৪৭. মিথ্যা সাক্ষ্যদান
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ﻓَﭑﺟۡﺘَﻨِﺒُﻮﺍْ ﭐﻟﺮِّﺟۡﺲَ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﺄَﻭۡﺛَٰﻦِ ﻭَﭐﺟۡﺘَﻨِﺒُﻮﺍْ ﻗَﻮۡﻝَ ﭐﻟﺰُّﻭﺭِ ٣٠ ﺣُﻨَﻔَﺎٓﺀَ ﻟِﻠَّﻪِ ﻏَﻴۡﺮَ ﻣُﺸۡﺮِﻛِﻴﻦَ ﺑِﻪِۦۚ ﴾ ‏[ﺍﻟﺤﺞ : ٣٠، ٣١‏]
“সুতরাং তোমরা পূতিগন্ধ অর্থাৎ মূর্তি, প্রতিমা থেকে দূরে থাক এবং মিথ্যা কথন থেকে ধূরে থাক, আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ
হয়ে ও তাঁর সঙ্গে শির্ক না করে”। [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৩০-৩১]
হাদীসে এসেছে,
‏« ﺃَﻻَ ﺃُﻧَﺒِّﺌُﻜُﻢْ ﺑِﺄَﻛْﺒَﺮِ ﺍﻟﻜَﺒَﺎﺋِﺮِ؟‏» ﺛَﻼَﺛًﺎ، ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﺑَﻠَﻰ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﺍﻹِﺷْﺮَﺍﻙُ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ، ﻭَﻋُﻘُﻮﻕُ ﺍﻟﻮَﺍﻟِﺪَﻳْﻦِ - ﻭَﺟَﻠَﺲَ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻣُﺘَّﻜِﺌًﺎ ﻓَﻘَﺎﻝَ - ﺃَﻻَ ﻭَﻗَﻮْﻝُ ﺍﻟﺰُّﻭﺭِ ‏»، ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﻤَﺎ ﺯَﺍﻝَ ﻳُﻜَﺮِّﺭُﻫَﺎ ﺣَﺘَّﻰ ﻗُﻠْﻨَﺎ : ﻟَﻴْﺘَﻪُ ﺳَﻜَﺖَ‏»
“আবু বাকরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মজলিসে ছিলাম। এমন
সময় তিনি আমাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে বৃহত্তম কবীরা গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না? কথাটি
তিনি তিনবার বললেন। সাহাবীগণ বললেন, অবশ্যই বলবেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! (উত্তরে
তিনি বললেন) আল্লাহর সঙ্গে শির্ক করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া। তিনি হেলান দেওয়া অবস্থায় কথাগুলো বলছিলেন।
অতঃপর সোজা হয়ে বসে বললেন, শুনে রাখ! আর মিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। এ কথাটি তিনি এতবার বলতে
থাকলেন যে আমরা শেষ পর্যন্ত বলে ফেললাম, যদি তিনি এবার ক্ষান্ত হতেন”। [112]
আলোচ্য হাদীসে মিথ্যা সাক্ষ্যের ভয়াবহতা বুঝাতে পুনঃপুনঃ কথাটি বলা হয়েছে। কেননা মানুষ এ বিষয়টিকে
হালকাভাবে নিয়ে থাকে। মিথ্যা সাক্ষ্য নিষিদ্ধ হওয়ার পেছনে অনেক কারণও রয়েছে। যেমন শত্রুতা, হিংসা ইত্যাদি।
মিথ্যা সাক্ষ্যের ফলে ক্ষয়-ক্ষতিও হয় প্রচুর। মিথ্যা সাক্ষ্যের ফলে কত হক্ব যে বিনষ্ট হয়ে গেছে, কত নির্দোষ লোক যুলুম-
নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, কত লোক যে জিনিসের উপর তাদের কোনো অধিকার নেই তাতে অধিকার প্রতিষ্ঠা করছে, কতজন
যে বংশের মানুষ নয় সে বংশের সন্তান গণ্য হচ্ছে-তার কোনো ইয়াত্তা নেই।
কিছু লোক বিচার-ফায়সালার জন্য অন্য লোককে এ বলে সপক্ষে টেনে আনে যে, তুমি আমার পক্ষে অমুক বিষয়ে আদালতে
সাক্ষ্য দিবে, তোমার প্রয়োজনে আমিও তোমার পক্ষে সাক্ষ্য দিব। সাক্ষ্য দিতে হলে যেখানে ঘটনা প্রত্যক্ষ করা
অপরিহার্য সেখানে হয়ত এ লোকটির সঙ্গে তার কোর্টের বারান্দায় কিংবা দহলিজে মাত্র দেখা হয়েছে। মূল ঘটনার সময়
হয়ত সে আদৌ উপস্থিত ছিল না। তা সত্ত্বেও সে তার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করে। তার এ মিথ্যা সাক্ষ্যের ফলে কোনো ভুমি
কিংবা বাড়ীর মালিকানা প্রকৃত মালিকের হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। কিংবা কোনো দোষী ব্যক্তি বেকসুর খালাস
পেয়ে যেতে পারে, এসব সাক্ষ্য ডাহা মিথ্যা। সুতরাং না দেখে না জেনে কোনো প্রকারেই সাক্ষ্য দেওয়া যাবে না।
যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ﻭَﻣَﺎ ﺷَﻬِﺪۡﻧَﺎٓ ﺇِﻟَّﺎ ﺑِﻤَﺎ ﻋَﻠِﻤۡﻨَﺎ﴾ ‏[ ﻳﻮﺳﻒ : ٨١ ‏]
“আমরা যা জানি তার বাইরে সাক্ষ্য দিতে পারি না”। [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৮১]
৪৮. বাদ্যযন্ত্র ও গান
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ﻭَﻣِﻦَ ﭐﻟﻨَّﺎﺱِ ﻣَﻦ ﻳَﺸۡﺘَﺮِﻱ ﻟَﻬۡﻮَ ﭐﻟۡﺤَﺪِﻳﺚِ ﻟِﻴُﻀِﻞَّ ﻋَﻦ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﭐﻟﻠَّﻪِ﴾ ‏[ ﻟﻘﻤﺎﻥ : ٦ ‏]
“মানুষের মাঝে কেউ কেউ এমন আছে যে আল্লাহর রাস্তা (ইসলাম) থেকে বিচ্যুত করার জন্য অসার কথা খরিদ করে” [সূরা
লুক্বমান, আয়াত: ৬]
ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আল্লাহর কসম করে বলেছেন, উক্ত আয়াতে ‘অসার কথা’ বলতে গানকে বুঝানো হয়েছে। [113]
আবু আমির ও আবু মালিক আল-আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﻟَﻴَﻜُﻮﻧَﻦَّ ﻣِﻦْ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﺃَﻗْﻮَﺍﻡٌ، ﻳَﺴْﺘَﺤِﻠُّﻮﻥَ ﺍﻟﺤِﺮَ ﻭَﺍﻟﺤَﺮِﻳﺮَ، ﻭَﺍﻟﺨَﻤْﺮَ ﻭَﺍﻟﻤَﻌَﺎﺯِﻑَ ‏»
“অবশ্যই আমার উম্মতের মধ্যে এমন অনেক গোষ্ঠী হবে, যারা ব্যভিচার, রেশম ব্যবহার, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল গণ্য করবে”।
[114]
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﻓِﻲ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻷُﻣَّﺔِ ﺧَﺴْﻒٌ ﻭَﻣَﺴْﺦٌ ﻭَﻗَﺬْﻑٌ‏» ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺟُﻞٌ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻭَﻣَﺘَﻰ ﺫَﺍﻙَ؟ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﺇِﺫَﺍ ﻇَﻬَﺮَﺕِ ﺍﻟﻘَﻴْﻨَﺎﺕُ ﻭَﺍﻟﻤَﻌَﺎﺯِﻑُ ﻭَﺷُﺮِﺑَﺖِ ﺍﻟﺨُﻤُﻮﺭُ‏»
“অবশ্যই এ উম্মতের মধ্যে ভূমিধ্বস, আসমান থেকে নিক্ষিপ্ত গযব ও দৈহিক রূপান্তরের শাস্তির প্রাদুর্ভাব দেখা দিবে। এসব
তখনই ঘটবে যখন তারা মদ্যপান শুরু করবে, গায়িকা রাখবে ও বাদ্যযন্ত্র বাজাবে”। [115]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঢোল-তবলা বাজাতে নিষেধ করেছেন [116] এবং বাঁশিকে দুষ্ট লোক ও
বোকার কণ্ঠস্বর নামে আখ্যায়িত করেছেন। [117]
পূর্বসূরি আলেমগণ যেমন ইমাম আহমাদ রহ. প্রমুখ পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, অসার ক্রীড়া-কৌতুক, গান-বাজনা এবং তাতে
ব্যবহৃত যন্ত্রাদি হারাম। যেমন সারেঙ্গী, তানপুরা, রাবাব, মন্দিরা, বাঁশি, ফ্লুট বাঁশি, তবলা ইত্যাদি।
আধুনিক বাদ্যযন্ত্রসমূহ নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিষেধ বাণীর আওতায় পড়ে। যেমন,
বেহালা, একতারা, দোতারা, তার্প, পিয়ানো, গিটার, ম্যান্ডেলিন ইত্যাদি। এ যন্ত্রগুলো বরং হাদীসে নিষিদ্ধ তৎকালীন
অনেক যন্ত্র থেকে অনেক বেশি মোহ ও তন্ময়তা সৃষ্টি করে। এমনকি বাদ্যযন্ত্রের নেশা মদের নেশা থেকেও অনেক বড় হয়ে
দাঁড়ায়। যেমনটি ইবনুল কাইয়্যেম ও অন্যান্যরা বলেছেন।
আর যদি বাদ্যযন্ত্রের সাথে গান ও সুর সংযোজিত হয় তাহলে পাপের পরিধি বেড়ে যাবে, হারামও কঠিন হবে। সেই সাথে
গানের কথাগুলো যদি প্রেম-ভালোবাসা, রূপচর্চা, যৌন উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী ইত্যাদি বিষয়ে হয় তাহলে তো মুসীবতের
কোনো শেষ নেই।
এ কারণেই আলেমগণ বলেছেন, গান ব্যভিচারের বার্তাবাহক এবং অন্তরে কপটতা সৃষ্টিকারী। মোটকথা, বর্তমান কালে
গানের কথা, সুর ও বাদ্য এক বিরাট ফিতনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিউজিকের এ সর্বগ্রাসী থাবা এখন শুধু গানেই সীমাবদ্ধ নেই;
বরং তা ঘড়ি, ঘন্টা, ভেঁপু, শিশুখেলনা, কম্পিউটার ও টেলিফোন ও মোবাইলের মাঝেও বিস্তৃত হয়েছে। মনের দৃঢ় সংকল্প না
থাকলে এসব থেকে বাঁচা বড়ই দুষ্কর। ‘আল্লাহই সাহায্যস্থল’।
৪৯. গীবত বা পরনিন্দা
মুসলিমদের গীবত ও তাদের মান-ইজ্জতে অহেতুক নাক গলানো এখন একটি জনপ্রিয় বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অথচ গীবত করতে
আল্লাহ তা‘আলা কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। মানুষ যাতে গীবতকে ঘৃণা করে এবং তাতে নিরুৎসাহ হয় সেজন্য আল্লাহ
তা‘আলা প্রত্যাদেশ করেছেন। সর্বোপরি তিনি গীবতকে এমন ঘৃণ্যভাবে চিত্রিত করেছেন, যে কোনো মনই তার প্রতি
বিতৃষ্ণ হবে। তিনি বলেছেন,
﴿ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻐۡﺘَﺐ ﺑَّﻌۡﻀُﻜُﻢ ﺑَﻌۡﻀًﺎۚ ﺃَﻳُﺤِﺐُّ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢۡ ﺃَﻥ ﻳَﺄۡﻛُﻞَ ﻟَﺤۡﻢَ ﺃَﺧِﻴﻪِ ﻣَﻴۡﺘٗﺎ ﻓَﻜَﺮِﻫۡﺘُﻤُﻮﻩُۚ﴾ ‏[ﺍﻟﺤﺠﺮﺍﺕ : ١٢ ‏]
“তোমরা একে অপরের যেন গীবত না কর। তোমাদের কেউ কি স্বীয় মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ পছন্দ করে? অনন্তর তোমরা তা
অপছন্দ কর”। [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১২]
‘গীবত’-এর পরিচয় প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে লক্ষ্য করে বলেছেন,
‏«ﺃَﺗَﺪْﺭُﻭﻥَ ﻣَﺎ ﺍﻟْﻐِﻴﺒَﺔُ؟ ‏» ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﺍﻟﻠﻪُ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟُﻪُ ﺃَﻋْﻠَﻢُ، ﻗَﺎﻝَ : ‏«ﺫِﻛْﺮُﻙَ ﺃَﺧَﺎﻙَ ﺑِﻤَﺎ ﻳَﻜْﺮَﻩُ ‏» ﻗِﻴﻞَ ﺃَﻓَﺮَﺃَﻳْﺖَ ﺇِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﺃَﺧِﻲ ﻣَﺎ ﺃَﻗُﻮﻝُ؟ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﺇِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻴﻪِ ﻣَﺎ ﺗَﻘُﻮﻝُ، ﻓَﻘَﺪِ ﺍﻏْﺘَﺒْﺘَﻪُ، ﻭَﺇِﻥْ ﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦْ ﻓِﻴﻪِ ﻓَﻘَﺪْ ﺑَﻬَﺘَّﻪُ ‏»
“তোমরা কি জান ‘গীবত’ কী? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি বললেন, তোমার ভাই যে কথা
অপছন্দ করে তার সম্পর্কে সে কথা বলার নাম গীবত। জিজ্ঞেস করা হলো, আমি যা বলছি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে
থাকে? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যা বলছ তা যদি তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে তবেই তুমি
তার ‘গীবত’ করলে। আর যদি না থাকে তাহলে তুমি তাকে অপবাদ দিলে”। [118]
সুতরাং মানুষের মধ্যে যে দোষ আছে এবং যার চর্চা সে অপছন্দ করে তা আলোচনা করাই গীবত। চাই সে দোষ তার শরীর
সংক্রান্ত হোক কিংবা দীন ও চরিত্র বিষয়ক হোক কিংবা আকার-আকৃতি বিষয়ক হোক। গীবত করার আঙ্গিক বা ধরণও নানা
রকম রয়েছে। যেমন, ব্যক্তির দোষ আলোচনা করা, বিদ্রূপাত্মক ভঙ্গিতে তার কর্মকাণ্ড তুলে ধরা ইত্যাদি।
আল্লাহ পাকের নিকটে গীবত বড়ই কদর্য ও খারাপ কাজ হওয়া সত্ত্বেও মানুষ গীবতের ব্যাপারে খুবই উদাসীনতা দেখিয়ে
থাকে। এজন্য গীবতের ভয়াবহতা প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﺍﻝ ﺭِّﺑَﺎ ﺛَﻠَﺎﺛَﺔٌ ﻭَ ﺳَﺒْﻊ َﻥﻭُ ﺑَﺎﺑًﺎ ، ﺃَﻳْﺴَﺮُﻫَﺎ ﻣِﺜْﻞُ ﺃَﻥْ ﻳَﻨْﻜِﺢَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﺃُﻣَّﻪُ، ﻭَﺇِﻥَّ ﺃَﺭْﺑَﻰ ﺍﻝ ﺭِّﺑَﺎ ﻋِﺮْﺽُ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞِ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢِ ‏»
“সূদের (পাপের) ৭৩টি দরজা বা স্তর রয়েছে। তন্মধ্যে নিম্নতম স্তর হচ্ছে স্বীয় মায়ের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া তুল্য
পাপ এবং ঊর্ধ্বতম স্তর হলো কোনো ব্যক্তি কর্তৃক তার এক ভাইয়ের মান-সম্ভ্রমের হানি ঘটানোতুল্য পাপ”। [119]
যে মজলিসে কারও গীবত করা হয় সেখানে যে ব্যক্তিই উপস্থিত থাকুক তাকে তা নিষেধ করা ওয়াজিব। যে ভাইয়ের গীবত
করা হয় তার পক্ষ নিয়ে সাধ্যমত তাকে সহযোগিতা করাও আবশ্যক। সম্ভব হলে ঐ মজলিসেই গীবতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে
তুলতে হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻣَﻦْ ﺭَﺩَّ ﻋَﻦْ ﻋِﺮْﺽِ ﺃَﺧِﻴﻪِ ﺭَﺩَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻦْ ﻭَﺟْﻬِﻪِ ﺍﻟﻨَّﺎﺭَ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟﻘِﻴَﺎﻣَﺔ «ِ
“যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের মান-সম্ভ্রমের বিরুদ্ধে কৃত হামলাকে প্রতিহত করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তার
থেকে জাহান্নামের আগুনকে প্রতিহত করবেন”। [120]
৫০. চোগলখুরী করা
মানুষের মাঝে ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি ও সম্পর্কের অবনতি ঘটানোর মানসে একজনের কথা অন্য জনের নিকটে লাগানোকে
চোগলখুরী বলে। চোগলখুরীর ফলে মানুষের সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং তাদের মাঝে হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতার বহ্নিশিখা
জ্বলে ওঠে। চোগলখুরীর নিন্দায় আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ﻭَﻟَﺎ ﺗُﻄِﻊۡ ﻛُﻞَّ ﺣَﻠَّﺎﻑٖ ﻣَّﻬِﻴﻦٍ ١٠ ﻫَﻤَّﺎﺯٖ ﻣَّﺸَّﺎٓﺀِۢ ﺑِﻨَﻤِﻴﻢٖ ١١﴾ ‏[ ﺍﻟﻘﻠﻢ : ١٠، ١١‏]
“যে অধিক শপথ করে, যে লাঞ্ছিত, যে পশ্চাতে নিন্দা করে, একের কথা অন্যের নিকটে লাগায় আপনি তার আনুগত্য করবেন
না”। [সূরা আল-ক্বালাম, আয়াত: ১০-১১]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻟَﺎ ﻳَﺪْﺧُﻞُ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔَ ﻗَﺘَّﺎﺕٌ ‏»
“চোগলখোর ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না”। [121]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা মদীনার একটি খেজুর
বাগান দিয়ে যাচ্ছিলেন, তথায় তিনি দু’জন লোকের আহাজারী শুনতে পেলেন। তখন তাদেরকে কবরে শাস্তি দেওয়া
হচ্ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
‏«ﺇِﻧَّﻬُﻤَﺎ ﻟَﻴُﻌَﺬَّﺑَﺎﻥِ، ﻭَﻣَﺎ ﻳُﻌَﺬَّﺑَﺎﻥِ ﻓِﻲ ﻛَﺒِﻴﺮٍ، ﺃَﻣَّﺎ ﺃَﺣَﺪُﻫُﻤَﺎ ﻓَﻜَﺎﻥَ ﻻَ ﻳَﺴْﺘَﺘِﺮُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺒَﻮْﻝِ، ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﺍﻵﺧَﺮُ ﻓَﻜَﺎﻥَ ﻳَﻤْﺸِﻲ ﺑِﺎﻟﻨَّﻤِﻴﻤَﺔِ ‏»
“এ দু’জনকে ‘আযাব দেওয়া হচ্ছে। তবে বড় কোনো কারণে নয়। অবশ্য এগুলো কবীরা গুনাহ। তাদের একজন পেশাব থেকে
পবিত্রতা অর্জন করত না। অন্যজন চোগলখুরী করে বেড়াত”। [122]
চোগলখুরীর একটি নিকৃষ্ট প্রক্রিয়া হলো, স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে এবং স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীকে ক্ষেপিয়ে তুলে তাদের
সম্পর্কে ফাটল ধরানো। অনুরূপভাবে অনেক কর্মজীবি অফিসের বস কিংবা দায়িত্বশীলের নিকট অন্য কোনো কর্মজীবির
কথা তুলে ধরে। এতে তার উদ্দেশ্য উক্ত কর্মজীবির ক্ষতি সাধন করা এবং নিজেকে উক্ত দায়িত্বশীলের শুভার্থী বা
খয়েরখাঁ হিসাবে তুলে ধরা। এসব কাজ চোগলখুরী হিসাবে গণ্য এবং তা হারাম।
৫১. অনুমতি ব্যতীত অন্যের বাড়ীতে উঁকি দেওয়া ও প্রবেশ করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻟَﺎ ﺗَﺪۡﺧُﻠُﻮﺍْ ﺑُﻴُﻮﺗًﺎ ﻏَﻴۡﺮَ ﺑُﻴُﻮﺗِﻜُﻢۡ ﺣَﺘَّﻰٰ ﺗَﺴۡﺘَﺄۡﻧِﺴُﻮﺍْ ﻭَﺗُﺴَﻠِّﻤُﻮﺍْ ﻋَﻠَﻰٰٓ ﺃَﻫۡﻠِﻬَﺎۚ﴾ ‏[ ﺍﻟﻨﻮﺭ : ٢٧ ‏]
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজ গৃহ ব্যতীত অন্য গৃহে তার মালিকের অনুমতি ও সালাম প্রদান ব্যতীত প্রবেশ করো না”। [সূরা
আন-নূর, আয়াত: ২৭]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব স্পষ্ট করে বলেছেন,
‏«ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺟُﻌِﻞَ ﺍﻟِﺎﺳْﺘِﺌْﺬَﺍﻥُ ﻣِﻦْ ﺃَﺟْﻞِ ﺍﻟﺒَﺼَﺮِ‏»
“দৃষ্টিপাতের কারণেই কেবল অনুমতির ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে”। [123]
আধুনিক কালের বাড়ীগুলো পাশাপাশি গড়ে উঠেছে। তাদের বিল্ডিং বা ঘরগুলো একটা অপরটার সাথে লাগিয়ে, দরজা-
জানালাও সামনা-সামনি তৈরি। এমতাবস্থায় এক প্রতিবেশীর সামনে অন্য প্রতিবেশীর সতর প্রকাশিত হয়ে পড়ার সমূহ
সম্ভাবনা রয়েছে। কুরআনে মুমিন নর-নারীর চক্ষু সংযত করে রাখার নির্দেশ থাকলেও অনেকে তা মেনে চলে না। অনেকে
উপর তলার জানালা কিংবা ছাদ থেকে নীচের অধিবাসীদের সতর ইচ্ছে করে দেখে। নিঃসন্দেহে এটা খিয়ানত,
প্রতিবেশীর সম্মানে আঘাত এবং হারাম পথের মাধ্যম। এর ফলে অনেক রকম বিপদাপদ ও ফিৎনা দেখা দেয়। এরূপ
গোয়েন্দাগিরী যে কত ভয়াবহ তার প্রমাণ হলো, শরী‘আত ঐ ব্যক্তির চোখ ফূঁড়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻣَﻦِ ﺍﻃَّﻠَﻊَ ﻓِﻲ ﺑَﻴْﺖِ ﻗَﻮْﻡٍ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﺇِﺫْﻧِﻬِﻢْ، ﻓَﻘَﺪْ ﺣَﻞَّ ﻟَﻬُﻢْ ﺃَﻥْ ﻳَﻔْﻘَﺌُﻮﺍ ﻋَﻴْﻨَﻪُ‏»
“যে ব্যক্তি কারো বাড়ীতে তাদের অনুমতি ব্যতীত উঁকি দেয় তাদের জন্য তার চোখ ফুঁড়ে দেওয়া বৈধ হয়ে যাবে”। [124]
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
‏« ﻣَﻦِ ﺍﻃَّﻠَﻊَ ﻓِﻲ ﺑَﻴْﺖِ ﻗَﻮْﻡٍ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﺇِﺫْﻧِﻬِﻢْ ﻓَﻔَﻘَﺌُﻮﺍ ﻋَﻴْﻨَﻪُ، ﻓَﻠَﺎ ﺩِﻳَﺔَ ﻟَﻪُ، ﻭَﻟَﺎ ﻗِﺼَﺎﺹَ‏»
“যে ব্যক্তি কারো বাড়ীতে তাদের অনুমতি ব্যতীত উঁকি দেয়, আর যদি তারা তার চোখ ফুঁড়ে দেয় তাহলে সেজন্য কোনো
দিয়াত বা রক্তমূল্য ও কিসাস দিতে হবে না”। [125]
৫২. তৃতীয় জনকে বাদ দিয়ে দু’জনে শলা-পরামর্শ করা
আমাদের সভা-সমিতিগুলোর জন্য একটা বড় বিপদ হলো ব্যক্তি বিশেষকে বাদ দিয়ে অন্য দু’একজন নিয়ে শলাপরামর্শ করা।
এতে শয়তানের পদাংক অনুসরণ করা হয়। কেননা এ জাতীয় কাজের ফলে মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয় এবং একের প্রতি
অন্যের মন বিষিয়ে ওঠে। এরূপ শলাপরামর্শের অবৈধতার বিধান ও কারণ দর্শাতে গিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﺇِﺫَﺍ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﺛَﻼَﺛَﺔ،ً ﻓَﻼَ ﻳَﺘَﻨَﺎﺟَﻰ ﺭَﺟُﻼَﻥِ ﺩُﻭﻥَ ﺍﻵﺧَﺮِ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﺨْﺘَﻠِﻄُﻮﺍ ﺑِﺎﻟﻨَّﺎﺱِ، ﺃَﺟْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳُﺤْﺰِﻧَﻪُ ‏»
“যখন তোমরা তিনজন হবে তখন যেন দু’জন লোক অন্য একজনকে বাদ রেখে গোপনে কথা না বলে। তবে তোমরা অনেক মানুষের
সাথে একাকার হয়ে গেলে ভিন্ন কথা। কারণ তৃতীয় জনকে বাদ দিয়ে কৃত গোপন পরামর্শ ঐ ব্যক্তিকে ব্যথিত করবে”। [126]
এভাবে চারজনের মধ্যে একজনকে বাদ রেখে তিন জনে পরামর্শ করাও নিষিদ্ধ। অনুরূপভাবে তৃতীয় জন বোঝে না এমন ভাষায়
দু’জনের শলা-পরামর্শ করাও বৈধ নয়। কারণ এক্ষেত্রে তৃতীয় জনকে বাদ দেওয়ায় তার প্রতি এক প্রকার তাচ্ছিল্য ভাব
দেখানো হয়। কিংবা তারা দু’জনে যে তার প্রসঙ্গে কোনো খারাপ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এরূপ ধারণা তার মনে বদ্ধমূল হতে
পারে। ইত্যাদি
৫৩. টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা
মানুষ যেসব কাজকে লঘু মনে করে অথচ আল্লাহর নিকটে সেগুলো খুবই গুরুতর, তন্মধ্যে টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা একটি।
অনেকের কাপড় এত লম্বা যে, তা মাটি স্পর্শ করে। কেউবা আবার পরিধেয় বস্ত্র পিছন থেকে মাটিতে টেনে বেড়ায়। টাখনুর
নিচে এভাবে কাপড় ঝুলিয়ে পরা হারাম। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﺛَﻠَﺎﺛَﺔٌ ﻟَﺎ ﻳُﻜَﻠِّﻤُﻬُﻢُ ﺍﻟﻠﻪُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ، ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻨْﻈُﺮُ ﺇِﻟَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﺰَﻛِّﻴﻬِﻢْ ﻭَﻟَﻬُﻢْ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﺃَﻟِﻴﻢٌ ‏» ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﻘَﺮَﺃَﻫَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺛَﻠَﺎﺙَ ﻣِﺮَﺍﺭًﺍ، ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﺫَﺭٍّ : ﺧَﺎﺑُﻮﺍ ﻭَﺧَﺴِﺮُﻭﺍ، ﻣَﻦْ ﻫُﻢْ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ؟ ﻗَﺎﻝَ :
‏« ﺍﻟْﻤُﺴْﺒِﻞُ، ﻭَﺍﻟْﻤَﻨَّﺎﻥُ، ﻭَﺍﻟْﻤُﻨَﻔِّﻖُ ﺳِﻠْﻌَﺘَﻪُ ﺑِﺎﻟْﺤَﻠِﻒِ ﺍﻟْﻜَﺎﺫِﺏِ ‏»
“তিন প্রকার লোকের সাথে আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং
তাদেরকে পবিত্র করবেন না; বরং তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। তারা হলো-টাখনুর নিচে কাপড় (অন্য বর্ণনায়
লুঙ্গী) পরিধানকারী, খোঁটাদানকারী (অন্য বর্ণনায় এসেছে, যে খোঁটা না দিয়ে কোনো কিছু দান করে না) ও মিথ্যা
কসমের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয়কারী”। [127]
যে বলে, ‘আমার টাখনুর নিচে কাপড় পরা অহংকারের প্রেক্ষিতে নয়’ তার এ সাফাই গাওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। টাখনুর নিচে
কাপড় পরিধান করা অহংকার বশেই হোক আর এমনিতেই হোক, শাস্তির ধমকি তাতে রয়েছেই। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻣَﺎ ﺃَﺳْﻔَﻞَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻜَﻌْﺒَﻴْﻦِ ﻣِﻦَ ﺍﻹِﺯَﺍﺭِ ﻓَﻔِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ‏»
“টাখনুর নিচে কাপড়ের যেটুকু থাকবে তা জাহান্নামে যাবে”। [128]
এ হাদীসে অহংকার ও নিরহংকারের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হয় নি। আর জাহান্নামে গেলে শরীরের কোনো
অংশবিশেষ যাবে না; বরং সমগ্র দেহই যাবে। অবশ্য অহংকার বশে যে টাখনুর নিচে কাপড় পরবে তার শাস্তি
তুলনামূলকভাবে কঠোর ও বেশি হবে। এ কথাই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীতে এসেছে,
‏« ﻣَﻦْ ﺟَﺮَّ ﺛَﻮْﺑَﻪُ ﺧُﻴَﻼَﺀَ، ﻟَﻢْ ﻳَﻨْﻈُﺮِ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ‏»
“যে ব্যক্তি অহংকার বশে তার লুঙ্গি মাটির সাথে টেনে নিয়ে বেড়াবে, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি
দৃষ্টি দিবেন না”। [129] বেশি শাস্তি এ জন্য হবে যে, সে এক সঙ্গে দু’টি হারাম কাজ করছে। [এক. টাখনুর নিচে কাপড় পরা।
দুই. অহংকার প্রদর্শন।]
বস্তুত পরিমিত পরিমাণ থেকে নিচে ঝুলিয়ে যেকোনো বস্ত্র পরিধান করাই ‘ইসবালের আওতাভুক্ত এবং তা হারাম। ইবন
উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﺍﻟْﺈِﺳْﺒَﺎﻝُ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺈِﺯَﺍﺭِ، ﻭَﺍﻟْﻘَﻤِﻴﺺِ، ﻭَﺍﻟْﻌِﻤَﺎﻣَﺔِ، ﻣَﻦْ ﺟَﺮَّ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﺧُﻴَﻠَﺎﺀَ، ﻟَﻢْ ﻳَﻨْﻈُﺮِ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ‏»
‘লুঙ্গি, জামা ও পাগড়ীতে ইসবাল (ঝুলিয়ে পরা) রয়েছে। এগুলো থেকে যেকোনো একটিকে কোনো ব্যক্তি অহংকার বশে
টেনে-ছেঁচড়ে নিয়ে বেড়ালে কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তার প্রতি সদয় দৃষ্টি দিবেন না”। [130]
স্ত্রীলোকদের জন্য পায়ের সতরের সুবিধার্থে এক বিঘত কিংবা এক হাত পরিমাণ ঝুলিয়ে দেবার অবকাশ আছে; কেননা
বাতাস বা অন্য কোনো কারণে সতর খোলার ভয় থাকলে অতিরিক্ত কাপড়ে তা বহুলাংশে রোধ হবে। তবে সীমালংঘন করা
তাদের জন্যও বৈধ হবে না। যেমন বিয়ে-শাদীতে পরিহিত বস্ত্রের ক্ষেত্রে মেয়েদের সীমালংঘন করতে দেখা যায়।
সেগুলো পরিমিত পরিমাণ থেকে কয়েক বিঘত এমনকি কয়েক মিটার লম্বা হয়। অনেক সময় পেছন থেকে তা বয়ে নিয়ে যেতেও
দেখা যায়।
৫৪. পুরুষদের স্বর্ণালংকার ব্যবহার করা
আবু মুসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন,
‏« ﺃُﺣِﻞَّ ﺍﻟﺬَّﻫَﺐُ ﻭَﺍﻟْﺤَﺮِﻳﺮُ ﻟِﺈِﻧَﺎﺙِ ﺃُﻣَّﺘِﻲ، ﻭَﺣُﺮِّﻡَ ﻋَﻠَﻰ ﺫُﻛُﻮﺭِﻫَﺎ ‏»
“আল্লাহ তা‘আলা আমার উম্মতের নারীদের জন্য রেশম ও স্বর্ণ হালাল করেছেন এবং পুরুষদের জন্য হারাম করেছেন”। [131]
আজকাল বাজারে পুরুষদের জন্য স্বর্ণের তৈরি নানা ডিজাইনের ঘড়ি, চশমা, বোতাম, কলম, চেইন, মেডেল ইত্যাদি পাওয়া
যায়। এগুলোর কতক সম্পূর্ণ স্বর্ণের তৈরি আবার কতক স্বর্ণের প্রলেপযুক্ত। অনেক প্রতিযোগিতায় পুরস্কার হিসেবে পুরুষদের
স্বর্ণের বিভিন্ন বস্তু দেওয়া হয়। বস্তুত তা ঘোরতর অন্যায়।
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার এক ব্যক্তির হাতে
সোনার আংটি দেখতে পেয়ে তা খুলে নেন এবং ছুঁড়ে ফেলে দেন। অতঃপর বলেন,
‏«ﻳَﻌْﻤِﺪُ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺟَﻤْﺮَﺓٍ ﻣِﻦْ ﻧَﺎﺭٍ ﻓَﻴَﺠْﻌَﻠُﻬَﺎ ﻓِﻲ ﻳَﺪِﻩِ‏» ، ﻓَﻘِﻴﻞَ ﻟِﻠﺮَّﺟُﻞِ ﺑَﻌْﺪَ ﻣَﺎ ﺫَﻫَﺐَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﺧُﺬْ ﺧَﺎﺗِﻤَﻚَ ﺍﻧْﺘَﻔِﻊْ ﺑِﻪِ، ﻗَﺎﻝَ : ﻟَﺎ ﻭَﺍﻟﻠﻪِ، ﻟَﺎ ﺁﺧُﺬُﻩُ ﺃَﺑَﺪًﺍ ﻭَﻗَﺪْ ﻃَﺮَﺣَﻪُ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ
ﻭَﺳَﻠَّﻢَ‏»
“তোমাদের কেউ কি ইচ্ছে করে আগুনের অঙ্গার তুলে নিয়ে স্বহস্তে রাখতে পারে? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সেখান থেকে চলে যাওয়ার পর জনৈক ব্যক্তি লোকটিকে বলল, তোমার আংটিটা তুলে নাও এবং তা (অন্য)
কাজে লাগাও। লোকটি বলল, ‘আল্লাহর কসম, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন আমি
তা কখনই গ্রহণ করব না”। [132]
৫৫. মহিলাদের খাটো, পাতলা ও আঁটসাঁট পোষাক পরিধান করা
বর্তমানে যেসব জিনিস দ্বারা আমাদের শত্রুরা আমাদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে তন্মধ্যে একটি
হলো, তাদের উদ্ভাবিত নানা ডিজাইনের পোশাক-পরিচ্ছদের সাহায্যে তারা মুসলিমদের চরিত্র ধ্বংসের কঠিন অপপ্রয়াস
চালাচ্ছে। পোশাকগুলোর কতক খুবই খাট মাপের, কতক আঁটসাঁট করে তৈরি, আবার কতক এত পাতলা যে তা দিয়ে শরীরের সব
অঙ্গ দেখা যায়। ফলে পোশাক পরার আসল লক্ষ্য সতর ঢাকা হয় না। এসব পোশাকের অনেক ডিজাইন পরিধান করা মোটেও
বৈধ নয়। এমনকি মহিলাদের মাঝে এবং মাহরাম পুরুষদের মাঝেও নয়।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﺻِﻨْﻔَﺎﻥِ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻟَﻢْ ﺃَﺭَﻫُﻤَﺎ، ﻗَﻮْﻡٌ ﻣَﻌَﻬُﻢْ ﺳِﻴَﺎﻁٌ ﻛَﺄَﺫْﻧَﺎﺏِ ﺍﻟْﺒَﻘَﺮِ ﻳَﻀْﺮِﺑُﻮﻥَ ﺑِﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ، ﻭَﻧِﺴَﺎﺀٌ ﻛَﺎﺳِﻴَﺎﺕٌ ﻋَﺎﺭِﻳَﺎﺕٌ ﻣُﻤِﻴﻠَﺎﺕٌ ﻣَﺎﺋِﻠَﺎﺕٌ، ﺭُﺀُﻭﺳُﻬُﻦَّ ﻛَﺄَﺳْﻨِﻤَﺔِ ﺍﻟْﺒُﺨْﺖِ ﺍﻟْﻤَﺎﺋِﻠَﺔِ، ﻟَﺎ ﻳَﺪْﺧُﻠْﻦَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ، ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺠِﺪْﻥَ ﺭِﻳﺤَﻬَﺎ، ﻭَﺇِﻥَّ ﺭِﻳﺤَﻬَﺎ
ﻟَﻴُﻮﺟَﺪُ ﻣِﻦْ ﻣَﺴِﻴﺮَﺓِ ﻛَﺬَﺍ ﻭَﻛَﺬَﺍ ‏»
“দু’শ্রেণির জাহান্নামীকে আমি দেখি নি। প্রথম শ্রেণি যাদের হাতে থাকবে গরুর লেজের ন্যায় ছড়ি, তা দ্বারা তারা
লোকদেরকে প্রহার করবে। দ্বিতীয় শ্রেণি ঐ সকল নারী, যারা বস্ত্র পরিহিতা অথচ উলঙ্গ, পুরুষদেরকে নিজেদের প্রতি
আকৃষ্টকারিণী এবং নিজেরাও পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট। তাদের মাথা হবে লম্বা গ্রীবা বিশিষ্ট উটের চুঁটির ন্যায়। তারা
জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার সুগন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধি এত এত দূরত্ব থেকেও পাওয়া যাবে”। [133]
হাদীসে উল্লেখিত ‘বুখত’ বলতে বুঝায় লম্বা ঘাড়বিশিষ্ট উটকে।
যে সকল মহিলা নিচের দিকে বা অন্যান্য দিকে দীর্ঘ ফাঁড়া পোশাক পরিধান করে তারাও উক্ত হাদীসের বিধানভুক্ত হবে।
এগুলো পরে বসলে তাদের সতরের অংশবিশেষ প্রকাশ হয়ে পড়ে। এতে সতর প্রকাশের পাশাপাশি কাফিরদের সাথে সাদৃশ্য,
তাদের কৃষ্টি-কালচারের অন্ধ অনুকরণ ও তাদের উদ্ভাবিত অশালীন পোশাকের অনুসরণ করা হয়।
কোনো কোনো পোশাকে আবার অশালীন ছবিও অঙ্কিত থাকে। যেমন, গায়কদের ছবি, বাদক দলের ছবি, মদপাত্রের ছবি,
প্রাণীর ছবি, ক্রুশের ছবি, অবৈধ সংস্থা ও ক্লাবের ছবি ইত্যাদি। অনেক পোশাকে মান-ইজ্জত বিনষ্টকারী কথাও লিখা
থাকে। বিদেশী ভাষাতেও এসব লিখা থাকে। এ জাতীয় পোশাক পরিহার করা আবশ্যক।
৫৬. পরচুলা ব্যবহার করা
আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন,
‏«ﺟَﺎﺀَﺕِ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٌ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺇِﻥَّ ﻟِﻲ ﺍﺑْﻨَﺔً ﻋُﺮَﻳِّﺴًﺎ ﺃَﺻَﺎﺑَﺘْﻬَﺎ ﺣَﺼْﺒَﺔٌ ﻓَﺘَﻤَﺮَّﻕَ ﺷَﻌْﺮُﻫَﺎ ﺃَﻓَﺄَﺻِﻠُﻪُ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ‏« ﻟَﻌَﻦَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺍﻟْﻮَﺍﺻِﻠَﺔَ ﻭَﺍﻟْﻤُﺴْﺘَﻮْﺻِﻠَﺔَ ‏»
“জনৈকা মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার একটি সদ্য
বিবাহিতা কন্যা আছে। হাম হওয়ার কারণে তার মাথার চুল পড়ে গেছে। আমি কি তাকে পরচুলা লাগিয়ে দেব? তিনি
বললেন, ‘যে পরচুলা লাগিয়ে দেয় এবং যে লাগাতে চায় আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন”। [134]
জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
‏«ﺯَﺟَﺮَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﻥْ ﺗَﺼِﻞَ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓُ ﺑِﺮَﺃْﺳِﻬَﺎ ﺷَﻴْﺌًﺎ ‏»
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের মাথার চুলে কোনো কিছু সংযোজন করার ব্যাপারে ধমক দিয়েছেন”।
[135]
৫৭. পোশাক-পরিচ্ছদ ও কথা-বার্তায় নারী-পুরুষ পরস্পরের বেশ ধারণ
পুরুষকে আল্লাহ তা‘আলা যে পুরুষালী স্বভাবে সৃষ্টি করছেন তাকে তা বজায় রাখা এবং নারীকে যে নারীত্ব দিয়ে সৃষ্টি
করেছেন তাকে তা ধরে রাখাই আল্লাহর বিধান। এটা এমনি এক ব্যবস্থা, যা না হলে মানব জীবন ঠিকঠাক চলবে না। পুরুষের
নারীর বেশ ধারণ এবং নারীর পুরুষের বেশ ধারণ স্বভাববিরুদ্ধ কাজ। এর ফলে অশান্তির দুয়ার খুলে যায় এবং সমাজে
উচ্ছৃংখলতা ও বেলেল্লাপনা ছড়িয়ে পড়ে। শরী‘আতে এ জাতীয় কাজকে হারাম গণ্য করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তিকে যে
আমল করার দরুন শর‘ঈ দলীলে অভিশাপ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে সেই দলীলেই প্রমাণ করে যে উক্ত কাজ হারাম ও কবীরা
গুনাহ। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত,
‏« ﻟَﻌَﻦَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺍﻟﻤُﺘَﺸَﺒِّﻬِﻴﻦَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮِّﺟَﺎﻝِ ﺑِﺎﻟﻨِّﺴَﺎﺀِ، ﻭَﺍﻟﻤُﺘَﺸَﺒِّﻬَﺎﺕِ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀِ ﺑِﺎﻟﺮِّﺟَﺎﻝِ‏»
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষদের মধ্যে নারীর বেশ ধারণকারীদের এবং নারীদের মধ্যে পুরুষের বেশ
ধারণকারিণীদের অভিশাপ দিয়েছেন”। [136]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরও বর্ণিত আছে,
ﻟَﻌَﻦَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺍﻟﻤُﺨَﻨَّﺜِﻴﻦَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮِّﺟَﺎﻝِ، ﻭَﺍﻟﻤُﺘَﺮَﺟِّﻼَﺕِ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀِ «ْ
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীবেশী পুরুষদেরকে এবং পুরুষবেশী নারীদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন”।
[137]
এ অনুকরণ উঠাবসা, চলাফেরা, কথাবার্তা ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। যেমন, দৈহিকভাবে মেয়েলী বেশ ধারণ
করা, কথাবার্তা ও চলাফেরায় মেয়েলীপনা অবলম্বন করা কিংবা পুরুষের বেশ ধারণ করা ইত্যাদি।
পোশাক ও অলংকার পরিধানেও অনুকরণ রয়েছে। সুতরাং পুরুষের জন্য গলার হার, হাতের চুড়ি, পায়ের মল, কানের দুল পরা
চলবে না। অনুরূপভাবে মহিলারাও পুরুষদের জামা, পাজামা, প্যান্ট, শার্ট, পাঞ্জাবী পরতে পারবে না। নারীদের
পোশাকের ডিজাইন পুরুষদের থেকে ভিন্নতর হবে। হাদীসে এসেছে,
‏« ﻟَﻌَﻦَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞَ ﻳَﻠْﺒَﺲُ ﻟِﺒْﺴَﺔَ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓ،ِ ﻭَﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓَ ﺗَﻠْﺒَﺲُ ﻟِﺒْﺴَﺔَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞِ ‏»
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা‘নত করেছেন সেই পুরুষের ওপর যে মেয়েলী পোশাক পরিধান করে এবং
সেই নারীর ওপর, যে পুরুষের পোশাক পরিধান করে”। [138]
সুতরাং উভয়ের কারো জন্যই স্ব স্ব বেশভূষা বদল করা জায়েয হবে না।
৫৮.সাদা চুলে কালো খেযাব ব্যবহার করা
সাদা চুলকে কালো রঙ্গে রঞ্জিত করা হারাম। হাদীসে কালো খেযাব সম্পর্কে যে হুশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে তাতে
একথাই প্রমাণিত হয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏« ﻳَﻜُﻮﻥُ ﻗَﻮْﻡٌ ﻳَﺨْﻀِﺒُﻮﻥَ ﻓِﻲ ﺁﺧِﺮِ ﺍﻟﺰَّﻣَﺎﻥِ ﺑِﺎﻟﺴَّﻮَﺍﺩِ، ﻛَﺤَﻮَﺍﺻِﻞِ ﺍﻟْﺤَﻤَﺎﻡ،ِ ﻟَﺎ ﻳَﺮِﻳﺤُﻮﻥَ ﺭَﺍﺋِﺤَﺔَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ‏»
“শেষ যমানায় একদল লোক কবুতরের বুকের ন্যায় কাল খেযাব ব্যবহার করবে। তারা জান্নাতের কোনো সুগন্ধি পাবে না”। [139]
অনেক চুল পাকা ব্যক্তিকে এ কাজ করতে দেখা যায়। তারা কাল রং দ্বারা সাদা চুল রাঙ্গিয়ে নিজেদেরকে যুবক কিংবা
অপেক্ষাকৃত কম বয়সী বলে প্রকাশ করে। এতে প্রতারণা, আল্লাহর সৃষ্টিকে গোপন করা ও মিথ্যা আত্মতৃপ্তি ব্যতীত আর কিছু
হয় না। এর ফলে ব্যক্তিগত চালচলনের ওপর নিঃসন্দেহে এক প্রকার কুপ্রভাব পড়ে। অন্য মানুষ তাতে প্রতারিত হয়। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাকা চুল খেযাব করেছেন মেহেদি বা অনুরূপ কোনো জিনিস দ্বারা। যাতে হুলুদ, লাল
ইত্যাদি মৌলিক রং ফুটে ওঠে। তবে কালো রং দিয়ে কখনোই নয়।
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর পিতা আবু কুহাফা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে মক্কা বিজয়ের দিন যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে হাযির করা হয় তখন তার চুল-দাড়ি এত সাদা হয়ে গিয়েছিল যে, তা ‘ছাগামা” (কাশ)
ফুলের ন্যায় ধবধবে দেখাচ্ছিল। তিনি তাকে দেখে বললেন,
‏«ﻏَﻴِّﺮُﻭﺍ ﻫَﺬَﺍ ﺑِﺸَﻲْﺀٍ، ﻭَﺍﺟْﺘَﻨِﺒُﻮﺍ ﺍﻟﺴَّﻮَﺍﺩ«َ
“তোমরা কোনো কিছু দ্বারা এটা পরিবর্তন করে দাও। তবে কালো রং থেকে দূরে থাকো”। [140]
নারীদের বিধান পুরুষদের অনুরূপ। তারাও পাকা চুল কালো রঙ্গে রাঙাতে পারবে না।
৫৯. ক্যানভাস, প্রাচীর গাত্র, কাগজ ইত্যাদিতে প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা
আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﺇِﻥَّ ﺃَﺷَﺪَّ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻋَﺬَﺍﺑًﺎ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺍﻟﻤُﺼَﻮِّﺭُﻭﻥ «َ
“কিয়াতের বিচারে কঠোর শাস্তি প্রাপ্তরা হবে ছবি নির্মাতাগণ”। [141]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা‘আলা
বলেছেন,
‏« ﻭَﻣَﻦْ ﺃَﻇْﻠَﻢُ ﻣِﻤَّﻦْ ﺫَﻫَﺐَ ﻳَﺨْﻠُﻖُ ﻛَﺨَﻠْﻘِﻲ، ﻓَﻠْﻴَﺨْﻠُﻘُﻮﺍ ﺣَﺒَّﺔً، ﻭَﻝْ ﻳَﺨْﻠُﻘُﻮﺍ ﺫَﺭَّﺓ«ً
“যারা আমার সৃষ্টির ন্যায় সৃষ্টি করতে তৎপর হয় তাদের থেকে বড় যালিম আর কে আছে? এতই যদি পারে তো তারা একটা
শস্য দানা সৃষ্টি করুক কিংবা অণু সৃষ্টি করুক”। [142]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﻛُﻞُّ ﻣُﺼَﻮِّﺭٍ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺭ،ِ ﻳَﺠْﻌَﻞُ ﻟَﻪُ، ﺑِﻜُﻞِّ ﺻُﻮﺭَﺓٍ ﺻَﻮَّﺭَﻫَﺎ، ﻧَﻔْﺴًﺎ ﻓَﺘُﻌَﺬِّﺑُﻪُ ﻓِﻲ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ‏» ﻭﻗَﺎﻝَ : ‏« ﺇِﻥْ ﻛُﻨْﺖَ ﻟَﺎ ﺑُﺪَّ ﻓَﺎﻋِﻠًﺎ، ﻓَﺎﺻْﻨَﻊِ ﺍﻟﺸَّﺠَﺮَ ﻭَﻣَﺎ ﻟَﺎ ﻧَﻔْﺲَ ﻟَﻪُ ‏»
“প্রত্যেক ছবি নির্মাতা জাহান্নামে যাবে। সে যত ছবি অঙ্কন করেছে তার প্রত্যেকটির বিনিময়ে তার জন্য একটি করে
প্রাণী তৈরি করা হবে। সে জাহান্নামে (তাকে) শাস্তি দেবে। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, “তোমাদেরকে
যদি ছবি আঁকতেই হয় তাহলে বৃক্ষ ও যার রূহ নেই তার ছবি আঁক”। [143]
এ সকল হাদীস থেকে প্রমাণ মেলে যে, মানুষ, পশু ইত্যাকার যে কোনো প্রাণীর ছবি আঁকা হারাম। চাই তার ছায়া থাকুক বা
না থাকুক, তা ছাপা হোক, কিংবা খোদাইকৃত হোক, কিংবা অঙ্কিত হোক বা ভাষ্কর্য হোক কিংবা ছাঁচে ঢালাই করা
হোক। কেননা ছবি হারাম সংক্রান্ত হাদীসের আওতায় এ সবই পড়ে।
আর যে ব্যক্তি মুসলিম সে তো শরী‘আতের কথা অকুণ্ঠচিত্তে মেনে নিবে। সে এ বিতর্ক করতে যাবে না যে, আমি তো এটার
পূজা করি না বা এটাকে সাজদাহ করি না। একজন জ্ঞানী লোক যদি অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে আমাদের যুগে ব্যাপক বিস্তার
লাভকারী ছবির মধ্যে নিহিত একটি ক্ষতির কথাও চিন্তা করেন তাহলে শরী‘আতে ছবি হারামের তাৎপর্য তিনি অনুধাবন
করতে পারবেন। বর্তমানে এমন অনেক ছবি আছে যার কারণে কুপ্রবৃত্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠে, কামনার জোয়ার সৃষ্টি হয়।
এমনকি ছবির জন্য যিনায় লিপ্ত হওয়াও বিচিত্র নয়।
এছাড়া মুসলিমরা নিজেদের ঘরে প্রাণীর ছবি রাখবে না। কেননা প্রাণীর ছবি থাকলে গৃহে ফিরিশতা প্রবেশ করে না।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﻻَ ﺗَﺪْﺧُﻞُ ﺍﻟﻤَﻼَﺋِﻜَﺔُ ﺑَﻴْﺘًﺎ ﻓِﻴﻪِ ﻛَﻠْﺐٌ ﻭَﻻَ ﺗَﺼَﺎﻭِﻳﺮ «ُ
“যে বাড়ীতে কুকুর ও ছবি থাকে সেই বাড়ীতে ফিরিশতা প্রবেশ করে না”। [144]
কোনো কোনো বাড়ীতে কাফিরদের দেব-দেবীর ছবি দেখতে পাওয়া যায়। বলা হয় যে, এগুলো আমরা হাদীয়া হিসেবে বা
সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রেখেছি। অন্যান্য ছবির তুলনায় এগুলো আরও কঠোর হারাম। অনুরূপভাবে প্রাচীর গাত্রে টাঙ্গানো
ছবিও বেশি ক্ষতিকারক। এসব ছবি কত যে সম্মান পায়, কত যে দুঃখ জাগরুক করে, কত যে গর্ব বয়ে আনে তার কোনো ইয়াত্তা
নেই।
ছবিকে কখনো স্মৃতি বলা যায় না। কেননা, মুসলিম আত্মীয় ও প্রিয়জনের স্মৃতি তো অন্তরে বিরাজ করে। একজন মুসলিম
তাদের জন্য রাব্বুল আলামীনের নিকটে রহমত ও মাগফেরাত কামনা করবে। তাতেই তাদের স্মৃতি জাগরুক থাকবে।
সুতরাং সর্বপ্রকার প্রাণীর ছবি বাড়ী থেকে সরিয়ে দেওয়া ও নিশ্চিহ্ন করে ফেলা আবশ্যক। হ্যাঁ, যেগুলো নিশ্চিহ্ন করা
দুষ্কর ও আয়াসসাধ্য সেগুলো ব্যতিক্রম বলে গণ্য হবে। যেমন, সাধারণ্যে প্রচলিত কৌটাবদ্ধ খাদ্যদ্রব্য বা টিনজাত খাদ্য
সমগ্রী ও অন্যান্য নানা ধরনের বস্তুতে অঙ্কিত ছবি, অভিধান, রেফারেন্স বুক ও অন্যান্য পাঠ্য বাইয়ের ছবি ইত্যাদি। তবে
যথাসম্ভব সেগুলো অপসারিত করা গেলে করবে। বিশেষ করে মন্দ ছবি রাখবে না। পরিচয়পত্রে ব্যবহৃত ছবি হারামের
আওতাভুক্ত হবে না। কেননা সফরে সেটার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এছাড়া কোনো কোনো বিদ্বানের মতে, যে সব ছবির
কদর নেই; বরং তা পদদলিত করার ন্যায় গণ্য, সে সব ছবির ব্যাপারে তারা ছাড় দিয়েছেন। আর আল্লাহ বলেছেন,
﴿ﻓَﭑﺗَّﻘُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻣَﺎ ﭐﺳۡﺘَﻄَﻌۡﺘُﻢۡ﴾ ‏[ ﺍﻟﺘﻐﺎﺑﻦ : ١٦‏]
“তোমরা সাধ্যমত আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর”। [সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ১৬]
৬০.মিথ্যা স্বপ্ন বলা
মানুষের মাঝে মর্যাদার আসন লাভ, আলোচনার পাত্র হওয়া, আর্থিক সুবিধা লাভ কিংবা শত্রুকে ভীতচকিত করার মানসে
মিথ্যা স্বপ্ন বলার অভ্যাস কিছু মানুষের আছে। জনসাধারণের অনেকেই স্বপ্নে বিশ্বাসী। স্বপ্নের সাথে তাদের সম্পর্কে
খুবই নিবিড়। তারা একে বাস্তাব মনে করে ও এ মিথ্যা স্বপ্ন দ্বারা প্রতারিত হয়। ফলে এসব মিথ্যা স্বপ্ন যে বলে বেড়ায়
তার জন্য কঠোর শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﺇِﻥَّ ﻣِﻦْ ﺃَﻋْﻈَﻢِ ﺍﻟﻔِﺮَﻯ ﺃَﻥْ ﻳَﺪَّﻋِﻲَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﺇِﻟَﻰ ﻏَﻴْﺮِ ﺃَﺑِﻴﻪِ، ﺃَﻭْ ﻳُﺮِﻱَ ﻋَﻴْﻨَﻪُ ﻣَﺎ ﻟَﻢْ ﺗَﺮَ، ﺃَﻭْ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻣَﺎ ﻟَﻢْ ﻳَﻘُﻞْ‏»
“সবচেয়ে বড় মনগড়া বা মিথ্যার মধ্যে রয়েছে ঐ ব্যক্তি, যে নিজেকে স্বীয় পিতা ব্যতীত অন্যের সন্তান হিসেবে
আখ্যায়িত করে, যে স্বপ্ন সে দেখেনি তা দেখার দাবী করে এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেন
নি তাঁর নামে তা বলে’। [145]
তিনি আরো বলেছেন,
‏« ﻣَﻦْ ﺗَﺤَﻠَّﻢَ ﺑِﺤُﻠْﻢٍ ﻟَﻢْ ﻳَﺮَﻩُ ﻛُﻠِّﻒَ ﺃَﻥْ ﻳَﻌْﻘِﺪَ ﺑَﻴْﻦَ ﺷَﻌِﻴﺮَﺗَﻴْﻦِ، ﻭَﻟَﻦْ ﻳَﻔْﻌَﻞَ‏»
“যে ব্যক্তি স্বপ্নে দেখে নি অথচ তা দেখার ভান বা দাবী করে তাকে দু’টি চুলে গিরা দিতে বাধ্য করা হবে; কিন্ত সে তা
কখনই করতে পারবে না’। [146]
দু’টি চুলে গিরা দেওয়া একটি অসাধ্য কাজ। সুতরাং কাজ যেমন হবে তার ফলও তেমন হবে।
৬১. কবরের ওপর বসা, কবর পদদলিত করা ও কবরস্থানে মল-মূত্র ত্যাগ করা
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﻟَﺄَﻥْ ﻳَﺠْﻠِﺲَ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺟَﻤْﺮَﺓٍ ﻓَﺘُﺤْﺮِﻕَ ﺛِﻴَﺎﺑَﻪُ، ﻓَﺘَﺨْﻠُﺺَ ﺇِﻟَﻰ ﺟِﻠْﺪِﻩِ، ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻪُ ﻣِﻦْ ﺃَﻥْ ﻳَﺠْﻠِﺲَ ﻋَﻠَﻰ ﻗَﺒْﺮٍ ‏»
“যদি তোমাদের কারো অঙ্গারের উপর বসার দরুন তার কাপড় পুড়ে দেহের চামড়া পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তবুও তা তার জন্য কবরের
উপর বসা থেকে উত্তম”। [147]
কবর পা দিয়ে মাড়ানোর কাজ অনেকেই করে থাকে। তারা যখন নিজেদের কাউকে কবরস্থানে দাফন করতে নিয়ে আসে, তখন
দেখা যায় পার্শ্ববর্তী কবরগুলো মাড়াচ্ছে, কখনও আবার জুতা পায়ে মাড়াচ্ছে, কোনো পরোয়াই করছে না। অন্যান্য মৃতদের
প্রতি যেন তাদের সম্মানবোধই নেই। অথচ এ সকল মৃত ব্যক্তির সম্মানে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
‏«ﻟَﺄَﻥْ ﺃَﻣْﺸِﻲَ ﻋَﻠَﻰ ﺟَﻤْﺮَﺓ،ٍ ﺃَﻭْ ﺳَﻴْﻒٍ، ﺃَﻭْ ﺃَﺧْﺼِﻒَ ﻧَﻌْﻠِﻲ ﺑِﺮِﺟْﻠِﻲ، ﺃَﺣَﺐُّ ﺇِﻟَﻲَّ ﻣِﻦْ ﺃَﻥْ ﺃَﻣْﺸِﻲَ ﻋَﻠَﻰ ﻗَﺒْﺮِ ﻣُﺴْﻠِﻢ ‏»
“আগুনের অঙ্গার কিংবা তরবারির উপর দিয়ে আমার হেঁটে যাওয়া কিংবা আমার পায়ের চামড়া দ্বারা আমার চটি তৈরি
করা একজন মুসলিমের কবরের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া থেকে আমার নিকট অধিক প্রিয়”। [148]
সুতরাং যে ব্যক্তি কোনো কবরস্থানের মালিক হয়ে সেখানে ব্যবসা কেন্দ্র কিংবা বাড়ী ঘর গড়ে তোলে তার অবস্থা কী
দাঁড়াবে? কিছু লোকের কবরস্থানে পেশাব-পায়খানা করার অভ্যাস আছে। তাদের যখন পেশাব-পায়খানার প্রয়োজন দেখা
দেয় তখন তারা কবর স্থানের প্রাচীর টপকিয়ে কিংবা খোলাস্থান দিয়ে ঢুকে পড়ে এবং মল-মূত্রের নাপাকী ও গন্ধ দ্বারা
মৃতদের কষ্ট দেয়। কবরের উপর পেশাব-পায়খানা করা প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻭَﻣَﺎ ﺃُﺑَﺎﻟِﻲ ﺃَﻭَﺳْﻂَ ﺍﻟْﻘُﺒُﻮﺭِ ﻗَﻀَﻴْﺖُ ﺣَﺎﺟَﺘِﻲ، ﺃَﻭْ ﻭَﺳْﻂَ ﺍﻟﺴُّﻮﻕِ‏»
‘কবরস্থানের মাঝে মল-মূত্র ত্যাগ করতে পারলে বাজারের মধ্যস্থলে মল-মূত্র ত্যাগের কোনো পরোয়া করি না”। [149]
অর্থাৎ কবরস্থানে মল-মূত্র ত্যাগের কদর্যতা আর বাজারের মধ্যে জনগণের সামনে সতর খোলা ও মল-মূত্র ত্যাগের কদর্যতা
একই সমান। সুতরাং কবরস্থানে মল-মূত্র ত্যাগ গুনাহ তো বটেই এমনকি তা লোকালয়ে মল-মূত্র ত্যাগের ন্যায় লজ্জাকরও বটে।
আর যারা ইচ্ছে করে কবরস্থানে ময়লা-আবর্জনা ইত্যাকার জিনিস ফেলে তারাও এ ভৎর্সনায় শামিল হবে।
এছাড়া কবর যিয়ারতকালে কবরসমূহের মাঝ দিয়ে যাতায়াতের সময় জুতা খুলে রাখাই আদবের পরিচয়।
৬২. পেশাবের পর পবিত্র না হওয়া
মানব প্রকৃতিকে পরিশুদ্ধ করার যত উপায়-উপকরণ আছে ইসলামী শরী‘আত তার সবই উপস্থাপন করেছে। এটি ইসলামের একটি
বড় সৌন্দর্য। নাপাকী দূর করা এসব উপায়ের একটি। এ কারণেই ‘ইসতিনজা’ বা শৌচকার্য বিধিবদ্ধ করা হয়েছে এবং
কীভাবে পাক-পবিত্রতা অর্জিত হবে তার নিয়ম বাতলে দেওয়া হয়েছে।
অনেকে নাপাকী দূরীকরণে অলসতা করে থাকে। যার ফলে তাদের কাপড় ও দেহ অপবিত্র হয়ে যায় এবং ফলশ্রুতিতে তাদের
সালাত হয় না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটাকে কবর ‘আযাবের অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছেন।
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার একটি খেজুর বাগানের
মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেখানে তিনি দু’জন (মৃত) ব্যক্তির কণ্ঠস্বর শুনতে পান। কবরে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছিল। তা
শুনে তিনি বললেন, এ দু’টো লোককে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বড় কোনো কারণে নয়। অবশ্য গুনাহ হিসেবে এগুলো কবীরা।
তাদের একজন পেশাব শেষে পবিত্র হত না। আর অন্যজন চোগলখুরী করে বেড়াত”। [150]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বরং এতদূর বলেছেন যে,
‏«ﺃَﻛْﺜَﺮُ ﻋَﺬَﺍﺏِ ﺍﻟْﻘَﺒْﺮِ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺒَﻮْﻝِ ‏»
“বেশিরভাগ কবরের ‘আযাব পেশাবের কারণে হয়”। [151]
পেশাবের ফোঁটা বন্ধ না হতেই যে দ্রুত পেশাব থেকে উঠে পড়ে কিংবা এমন কায়দায় বা স্থানে পেশাব করে যেখান থেকে
পেশাবের ছিঁটা এসে গায়ে বা কাপড়ে লাগে সেও এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হবে।
কাফেরদের দেখাদেখি আমাদের মধ্যে অনেকস্থানেই দেওয়ালের সঙ্গে সেঁটে টয়লেট তৈরি করা হয়। এগুলো খোলামেলাও
হয়। মানুষ কোনো লজ্জা-শরম না করেই চলাচলকারী মানুষের সামনে সেখানে দাঁড়িয়ে পেশাব করতে শুরু করে। তারপর
পেশাবের নাপাকী সমেতই কাপড় পরে নেয়। এতে দু’টি বিশ্রী হারাম একত্রিত হয়।
এক. সে তার লজ্জাস্থানকে মানুষের দৃষ্টি থেকে হিফাযত করে না।
দুই. সে পেশাব থেকে পবিত্রতা অর্জন করে না।
৬৩. লোকদের অনীহা সত্ত্বেও গোপনে তাদের আলাপ শ্রবণ করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ﻭَ ﻟَﺎ ﺗَﺠَﺴَّﺴُﻮﺍْ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺤﺠﺮﺍﺕ : ١٢‏]
“তোমরা গোয়েন্দাগিরি করো না”। [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১২]
অনুরূপ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻣَﻦِ ﺍﺳْﺘَﻤَﻊَ ﺇِﻟَﻰ ﺣَﺪِﻳﺚِ ﻗَﻮْﻡ،ٍ ﻭَﻫُﻢْ ﻟَﻪُ ﻛَﺎﺭِﻫُﻮﻥَ، ﺃَﻭْ ﻳَﻔِﺮُّﻭﻥَ ﻣِﻨْﻪُ، ﺻُﺐَّ ﻓِﻲ ﺃُﺫُﻧِﻪِ ﺍﻵﻧُﻚُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ‏»
“যে ব্যক্তি লোকদের অনীহা বা তার কাছ থেকে পালানো সত্ত্বেও তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনে ক্বিয়ামতের দিন
তার দু’কানে গলিত সীসা ঢেলে দেওয়া হবে”। [152]
আর যদি ক্ষতি করার মানসে তাদের থেকে শোনা কথা তাদের অগোচরে মানুষের নিকট বলে বড়োয়, তাহলে গোয়েন্দাগিরি
পাপের সাথে কুটনামির পাপও জড়িত হবে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻟَﺎ ﻳَﺪْﺧُﻞُ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔَ ﻗَﺘَّﺎﺕ «ٌ
“ক্বাত্তাত বা চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না”। [153]
৬৪. প্রতিবেশীর সাথে অসদাচরণ করা
প্রতিবেশীদের সাথে সদ্ব্যবহারের প্রতি জোর তাকীদ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ﻭَﭐﻋۡﺒُﺪُﻭﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﺸۡﺮِﻛُﻮﺍْ ﺑِﻪِۦ ﺷَﻴۡٔٗﺎۖ ﻭَﺑِﭑﻟۡﻮَٰﻟِﺪَﻳۡﻦِ ﺇِﺣۡﺴَٰﻨٗﺎ ﻭَﺑِﺬِﻱ ﭐﻟۡﻘُﺮۡﺑَﻰٰ ﻭَﭐﻟۡﻴَﺘَٰﻤَﻰٰ ﻭَﭐﻟۡﻤَﺴَٰﻜِﻴﻦِ ﻭَﭐﻟۡﺠَﺎﺭِ ﺫِﻱ ﭐﻟۡﻘُﺮۡﺑَﻰٰ ﻭَﭐﻟۡﺠَﺎﺭِ ﭐﻟۡﺠُﻨُﺐِ ﻭَﭐﻟﺼَّﺎﺣِﺐِ ﺑِﭑﻟۡﺠَﻨۢﺐِ ﻭَﭐﺑۡﻦِ ﭐﻟﺴَّﺒِﻴﻞِ ﻭَﻣَﺎ ﻣَﻠَﻜَﺖۡ ﺃَﻳۡﻤَٰﻨُﻜُﻢۡۗ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻟَﺎ ﻳُﺤِﺐُّ ﻣَﻦ ﻛَﺎﻥَ ﻣُﺨۡﺘَﺎﻟٗﺎ ﻓَﺨُﻮﺭًﺍ
٣٦﴾ ‏[ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٣٦‏]
“তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তার সঙ্গে কাউকে শরীক করো না এবং মাতা-পিতার সঙ্গে সদাচরণ কর। আর সদাচরণ কর
নিকটাত্মীয়, অনাথ, নিঃস্ব, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, পার্শ্বস্থিত সঙ্গী, পথিক ও তোমাদের অধিকারভূক্ত দাস-
দাসীদের সঙ্গে। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাদের ভালোবাসেন না যারা গর্বে স্ফীত অহংকারী”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত:
৩৬]
প্রতিবেশীর হক অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিধায় তাকে কষ্ট দেওয়া হারাম। আবু শুরাইহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, একদা
রাসুলু্ল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏«ﻭﺍﻟﻠﻪِ ﻻ ﻳُﺆْﻣِﻦُ، ﻭﺍﻟﻠﻪِ ﻻ ﻳُﺆْﻣِﻦُ، ﻭَﺍﻟﻠﻪِ ﻻ ﻳُﺆْﻣِﻦُ ."ﻗﻴﻞَ : ﻭَﻣَﻦْ ﻳﺎ ﺭَﺳﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ؟ ﻗﺎﻝَ : " ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻻ ﻳﺄْﻣَﻦُ ﺟﺎﺭُﻩُ ﺑَﻮﺍﺋِﻘَﻪُ ‏».
“আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়, আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়, আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়। জিজ্ঞেস করা হল, কে সে জন ইয়া
রাসুলুল্লাহ? তিনি বললেন, যার প্রতিবেশী তার অত্যাচার থেকে নিরাপদে থাকতে পারে না”। [154]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএক প্রতিবেশী কর্তৃক অন্য প্রতিবেশীর প্রশংসা ও নিন্দা করাকে ভালো ও মন্দ
আচরণের মাপকাঠি গণ্য করেছেন। এ প্রসঙ্গে ইবন মাস’উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি ভালো আচরণ করলাম না মন্দ আচরণ করলাম -তা কী করে
বুঝব? তিনি বললেন,
‏« ﺇِﺫَﺍ ﺳَﻤِﻌْﺖَ ﺟِﻴﺮَﺍﻧَﻚَ ﻳَﻘُﻮﻟُﻮﻥ :َ ﺃَﻥْ ﻗَﺪْ ﺃَﺣْﺴَﻨْﺖَ، ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﺣْﺴَﻨْﺖَ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺳَﻤِﻌْﺘَﻬُﻢْ ﻳَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ : ﻗَﺪْ ﺃَﺳَﺄْﺕَ، ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﺳَﺄْﺕَ‏»
“যখন তুমি তোমার প্রতিবেশীদেরকে বলতে শুনবে যে, তারা তোমার সম্পর্কে বলাবলি করছে, ‘তুমি ভালো আচরণ করে থাক’
তখন বুঝবে, তুমি নিশ্চয় ভালো আচরণ করছ। আর যখন তাদেরকে বলাবলি করতে শুনবে যে, ‘তুমি মন্দ আচরণ করে থাক’, তখন
বুঝবে, তুমি নিশ্চয় মন্দ আচরণ করছ”। [155]
প্রতিবেশীর সঙ্গে মন্দ আচরণ নানাভাবে হতে পারে। যেমন, প্রতিবেশীর সাথে যৌথভাবে নির্মিত বাড়ীর প্রাচীরের
উপর কাঠ কিংবা বাঁশ পুঁততে বাধা দেওয়া, প্রতিবেশীর অনুমতি না নিয়ে তার বাড়ী থেকে নিজ বাড়ীকে উঁচু বা বহুতল
করে তার বাড়ীতে লোকদের সতর দেখতে চেষ্টা করা, বিরক্তিকর শব্দ দ্বারা তাকে কষ্ট দেওয়া, বিশেষ করে ঘুম ও আরামের
সময়ে চেঁচামেচি ও খটখট আওয়াজ করা, প্রতিবেশীর সন্তানদের মারধোর করা কিংবা তার বাড়ীর দরজায় ময়লা-আবর্জনা
ফেলা ইত্যাদি।
তাছাড়া প্রতিবেশীর হকের ওপর চড়াও হলে পাপের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
‏«ﻟَﺄَﻥْ ﻳَﺰْﻧِﻲَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﺑِﻌَﺸْﺮَﺓِ ﻧِﺴْﻮَﺓٍ، ﺃَﻳْﺴَﺮُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻣِﻦْ ﺃَﻥْ ﻳَﺰْﻧِﻲَ ﺑِﺎﻣْﺮَﺃَﺓِ ﺟَﺎﺭِﻩِ " ، ... ﻟَﺄَﻥْ ﻳَﺴْﺮِﻕَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﻣِﻦْ ﻋَﺸْﺮَﺓِ ﺃَﺑْﻴَﺎﺕٍ، ﺃَﻳْﺴَﺮُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻣِﻦْ ﺃَﻥْ ﻳَﺴْﺮِﻕَ ﻣِﻦْ ﺟَﺎﺭِﻩِ ‏»
“কোনো ব্যক্তির পক্ষে অন্য দশজন মহিলার সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া স্বীয় প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচারের
তুলনায় অনেক সহজ। অনুরূপভাবে অন্য দশ বাড়ীতে চুরি করা কোনো ব্যক্তির স্বীয় প্রতিবেশীর বাড়ীতে চুরি করা অপেক্ষা
অনেক সহজ”। [156]
অনেক অসাধূ ব্যক্তি আছে, যারা প্রতিবেশীর অনুপস্থিতির সুযোগে রাতে তাদের গৃহে প্রবেশ করে এবং অপকর্মে লিপ্ত হয়।
এসব লোকের জন্য এক বিভীষিকাময় দিনের শাস্তি অপেক্ষা করছে।
৬৫. অসীয়ত দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত করা
শরী‘আতের একটি অন্যতম নীতি হচ্ছে, ‏« ﻻ ﺿﺮﺭ ﻭﻻ ﺿﺮﺍﺭ‏» ‘নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হব না’ অন্যের ক্ষতি করব না’। [157] এ জাতীয় ক্ষতি
করার একটি উপমা হলো, শরী‘আত স্বীকৃত ওয়ারিসগণের সবাইকে অথবা বিশেষ কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করা। কেউ এমন করলে সে
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদত্ত কঠিন সাবধান বাণীর আওতায় পড়বে। তিনি বলেছেন,
‏« ﻣَﻦْ ﺿَﺎﺭَّ ﺃَﺿَﺮَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻪ ،ِ ﻭَﻣَﻦْ ﺷَﺎﻕَّ ﺷَﺎﻕَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ‏»
“যে কারো ক্ষতি করবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবেন। আর যে শত্রুতা ও কষ্টে ফেলবে আল্লাহ তাকে দুঃখ-
কষ্টে নিপতিত করবেন”। [158]
অসিয়তের মাধ্যমে নানাভাবে ক্ষতি হতে পারে। যেমন, কোনো ওয়ারিসকে তার ন্যায্য অংশ থেকে বঞ্চিত করা অথবা
একজন ওয়ারিসকে শরী‘আত যেটুকু দিয়েছে তার বিপরীতে তার জন্য অসিয়ত করা কিংবা এক তৃতীয়াংশের বেশি অসিয়ত
করা ইত্যাদি।
যে সব দেশে ইসলামী বিচার ব্যবস্থা চালু নেই সেখানে একজন পাওনাদার অনেক ক্ষেত্রেই মানব রচিত বিধানের কারণে
তার শরী‘আত প্রদত্ত অধিকার লাভে সমর্থ হয় না। মানব রচিত বিচার ব্যবস্থা তাকে উকিলের মাধমে লিখিত অন্যায়
অসীয়ত কার্যকর করতে আদেশ দেয় এবং সে তা কার্যকর করতে বাধ্য হয়। সুতরাং বড়ই পরিতাপ তাদের স্বহস্তে রচিত আইনের
জন্য এবং বড়ই পরিতাপ তারা যে পাপ কামাই করছে তার জন্য!
৬৬. দাবা খেলা
লোকসমাজে প্রচলিত অনেক খেলাধুলার সাথেই হারাম জড়িত আছে। দাবা এমনই একটি খেলা। দাবা থেকে আরো অনেক
রকম খেলার প্রতি ঝোঁক সৃষ্টি হয়। যেমন, পাশা খেলা প্রভৃতি। জুয়া ও বাজির দ্বার উন্মোচনকারী এ দাবা সম্পর্কে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন,
‏« ﻣَﻦْ ﻟَﻌِﺐَ ﺑِﺎﻟﻨَّﺮْﺩ ِﺮﻴِﺷَ، ﻓَﻜَﺄَﻧَّﻤَﺎ ﺻَﺒَﻎَ ﻳَﺪَﻩُ ﻓِﻲ ﻟَﺤْﻢِ ﺧِﻨْﺰِﻳﺮٍ ﻭَﺩَﻣِﻪِ ‏»
“যে ব্যক্তি দাবা খেলে সে যেন শুকরের রক্ত-মাংসে স্বীয় হাত রঞ্জিত করে”। [159]
আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻣَﻦْ ﻟَﻌِﺐَ ﺑِﺎﻟﻨَّﺮْﺩِ ﻓَﻘَﺪْ ﻋَﺼَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ ‏»
“যে ব্যক্তি দাবা খেলে, সে আল্লাহ ও তার রাসূলের বিধানকে অমান্য করে”। [160]
সুতরাং দাবা ও তার আনুসঙ্গিক খেলা যেমন তাস, পাশা, ফ্লাশ ইত্যাদি সম্বন্ধে অবশ্যই শরী‘আতের আদেশ মানতে হবে।
৬৭. কোনো মুসলিমকে অভিশাপ দেওয়া এবং যে অভিশাপ পাওয়ার যোগ্য নয় তাকে অভিশাপ দেওয়া
অনেকেই রাগের সময় জিহবাকে সংযত রাখতে পারে না। ফলে বেদিশা হয়ে লা‘নত করে বসে। তাদের লা‘নতের কোনো
ঠিক-ঠিকানা নেই। মানুষ, পশু, জড় পদার্থ, দিন-ক্ষণ এমনকি নিজের সন্তান-সন্ততিদেরও তারা লা‘নত করে বসে। দেখা যায়,
স্বামী স্বীয় স্ত্রীকে লা‘নত করে, আবার স্ত্রীও স্বামীকে লা‘নত করে। এটি একটি মারাত্মক অন্যায়। আবু যায়েদ সাবিত
ইবন দাহহাক আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ﻭَﻣَﻦْ ﻟَﻌَﻦَ ﻣُﺆْﻣِﻨًﺎ ﻓَﻬُﻮَ ﻛَﻘَﺘْﻠِﻪِ، ﻭَﻣَﻦْ ﻗَﺬَﻑَ ﻣُﺆْﻣِﻨًﺎ ﺑِﻜُﻔْﺮٍ ﻓَﻬُﻮَ ﻛَﻘَﺘْﻠِﻪِ ‏»
“যে ব্যক্তি কোনো মুমিনকে লা‘নত করল বা কাফের বলে গালি দিল, সে যেন তাকে হত্যা করল’। [161]
মহিলাদেরকে বেশি বেশি লা‘নত করতে দেখা যায়। এজন্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের
জাহান্নামী হওয়ার নানা কারণের মধ্যে এটি একটি বলে উল্লেখ করেছেন।[162]
এমনিভাবে লা‘নতকারীরা কিয়ামত দিবসে সুপারিশকারীও হতে পারবে না।
সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার এ যে, অন্যায়ভাবে লা‘নত করলে তা লা‘নতকারীর ওপর বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে। তাতে
লা‘নতকারী মূলতঃ নিজকেই আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করার জন্য প্রার্থনাকারী হয়ে দাঁড়ায়।
৬৮. বিলাপ ও মাতম করা
অনেক মহিলা আছে যারা চেঁচিয়ে কাঁদে, মৃতের গুণাবলী উল্লেখ করে মাতম করে, গালে-মুখে থাপ্পড় মারে -এগুলো বড়
অন্যায়। অনুরূপভাবে কাপড় ও পকেট ছিঁড়ে, চুল উপড়িয়ে, বেনী বেঁধে বা জড়িয়ে ধরে বিলাপ করাও মহা অন্যায়। এতে
আল্লাহর ফায়ছালার প্রতি অসন্তোষ ও বিপদে অধৈর্যের পরিচয় মেলে। যে এমন করবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তার প্রতি লা‘নত করেছেন। এ সম্পর্কে আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
‏« ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ‏« ﻟَﻌَﻦَ ﺍﻟْﺨَﺎﻣِﺸَﺔَ ﻭَﺟْﻬَﻬَﺎ، ﻭَﺍﻟﺸَّﺎﻗَّﺔَ ﺟَﻴْﺒَﻬَﺎ، ﻭَﺍﻟﺪَّﺍﻋِﻴَﺔَ ﺑِﺎﻟْﻮَﻳْﻞِ ﻭَﺍﻟﺜُّﺒُﻮﺭ «ِ
“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখমণ্ডল ক্ষত-বিক্ষতকারিণী, পকেট বিদীর্ণকারী এবং দুর্ভোগ ও ধ্বংস
প্রার্থনাকারিণীর ওপর লা‘নত করেছেন”। [163]
ইবন মাস’উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন,
‏« ﻟَﻴْﺲَ ﻣِﻨَّﺎ ﻣَﻦْ ﻟَﻄَﻢَ ﺍﻟﺨُﺪُﻭﺩ،َ ﻭَﺷَﻖَّ ﺍﻟﺠُﻴُﻮﺏَ، ﻭَﺩَﻋَﺎ ﺑِﺪَﻋْﻮَﻯ ﺍﻟﺠَﺎﻫِﻠِﻴَّﺔِ‏»
“যে গালে থাপ্পড় মারে, পকেট ছিঁড়ে ফেলে ও জাহেলিয়াতের রীতি-নীতির প্রতি আহ্বান জানায় সে আমাদের দলভুক্ত
নয়”। [164]
তিনি আরো বলেছেন,
‏«ﺍﻟﻨَّﺎﺋِﺤَﺔُ ﺇِﺫَﺍ ﻟَﻢْ ﺗَﺘُﺐْ ﻗَﺒْﻞَ ﻣَﻮْﺗِﻬَﺎ، ﺗُﻘَﺎﻡُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻭَﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﺳِﺮْﺑَﺎﻝٌ ﻣِﻦْ ﻗَﻄِﺮَﺍﻥٍ، ﻭَﺩِﺭْﻉٌ ﻣِﻦْ ﺟَﺮَﺏٍ ‏»
“মাতমকারিণী মৃত্যুর পূর্বে তাওবা না করলে কিয়ামত দিবসে তাকে আলকাতরার পাজামা ও খোস-পেঁচড়াযুক্ত বর্ম
পরিহিতা অবস্থায় তোলা হবে”। [165]
সুতরাং কারো মৃত্যু বা বিপদে বিলাপ-মাতম ও আহাজারী করা বড়ই অন্যায়।
৬৯. মুখমণ্ডলে আঘাত করা ও দাগ দেওয়া
জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
‏« ﻧَﻬَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻋَﻦِ ﺍﻟﻀَّﺮْﺏِ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻮَﺟْﻪِ، ﻭَﻋَﻦِ ﺍﻟْﻮَﺳْﻢِ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻮَﺟْﻪ «ِ
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখমণ্ডলে আঘাত করতে এবং মুখমণ্ডলে দাগ দিতে নিষেধ করেছেন”। [166]
মুখমণ্ডলে আঘাতের বিষয়টি কিছু মাতা-পিতা ও শিক্ষকদের থেকে বেশি প্রত্যক্ষ করা যায়। তারা সন্তানদের বা
ছাত্রদের শাসন করার জন্য হাত কিংবা অন্য কিছু দ্বারা মুখমণ্ডলে মেরে থাকে। অনেকে বাড়ীর চাকরদের সাথে এরূপ করে
থাকে। এতে আল্লাহ তা”আলা যে চেহারার বদৌলতে মানুষকে সম্মানিত করেছেন তাকে অমর্যাদা করার সাথে সাথে
অনেক সময় মুখমণ্ডলের কোনো একটি ইন্দ্রিয় অকেজো হয়ে পড়তে পারে। ফলে অনুশোচনা ছাড়াও ক্ষেত্রবিশেষে কিসাস
দেওয়া লাগতে পারে।
পশুর মুখমণ্ডলে দাগ দেওয়া কাজটি পশু মালিকদের সাথে জড়িত। তারা স্ব স্ব পশু চেনা ও হারিয়ে গেলে ফিরে পাওয়ার
জন্য পশুগুলোর মুখে দাগ দিয়ে থাকে। এটা হারাম। এতে পশুর চেহারা ক্ষত করা ছাড়াও তাকে কষ্ট দেওয়া হয়। কেউ যদি
দাবী করে যে, এরূপ দাগ দেওয়া তাদের গোত্রের একটি রীতি এবং গোত্রের বিশেষ চিহ্ন, তাহলে এটুকু করার অবকাশ
থাকতে পারে যে শরীরের অন্য কোথাও দাগ বা কোনো চিহ্ন দিবে; মুখমণ্ডলে নয়।
৭০. শর‘ঈ কারণ ব্যতীত তিন দিনের ঊর্ধ্বে কোনো মুসলিমের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করা
মুসলিমে মুসলিমে সম্পর্কে বিনষ্ট করা শয়তানের অন্যতম চক্রান্ত। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসারী অনেকেই শর‘ঈ কোনো কারণ
ছাড়াই মুসলিম ভাইদের সাথে সম্পর্কে ছিন্ন করে। নিহায়েত বস্তুগত কারণে কিংবা দুর্বল কোনো বিষয়ের ওপর ভিত্তি
করে ছিন্ন সম্পর্ক যুগ যুগ ধরে চলতে থাকে। তারা কেউ একে অপরের সঙ্গে কথা না বলার শপথ করে, তার বাড়ীতে প্রবেশ না
করার সিদ্ধান্ত নেয়। রাস্তায় দেখা হলে পাশ কেটে চলে যায়। মজলিসে হাযির হলে তার আগে-পিছের লোকদের সঙ্গে
করমর্দন করে কিন্তু তাকে এড়িয়ে যায়। ইসলামী সমাজে দুর্বলতা অনুপ্রবেশের এটি অন্যতম কারণ। এর শর‘ঈ হুকুম চূড়ান্ত ও
পরকালীন শাস্তি কঠোর। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
‏« ﻟَﺎ ﻳَﺤِﻞُّ ﻟِﻤُﺴْﻠِﻢٍ ﺃَﻥْ ﻳَﻬْﺠُﺮَ ﺃَﺧَﺎﻩُ ﻓَﻮْﻕَ ﺛَﻠَﺎﺙٍ، ﻓَﻤَﻦْ ﻫَﺠَﺮَ ﻓَﻮْﻕَ ﺛَﻠَﺎﺙٍ ﻓَﻤَﺎﺕَ ﺩَﺧَﻞَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭَ ‏»
“কোনো মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের সাথে তিন দিনের ঊর্ধ্বে সম্পর্ক ছিন্ন করে থাকা বৈধ নয়। যে মুসলিম তিন দিনের
ঊর্ধ্বে সম্পর্ক ছেদ করে থাকা অবস্থায় মারা যায় সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে”। [167]
অন্যত্র তিনি বলেন,
‏« ﻣَﻦْ ﻫَﺠَﺮَ ﺃَﺧَﺎﻩُ ﺳَﻨَﺔً ﻓَﻬُﻮَ ﻛَﺴَﻔْﻚِ ﺩَﻣِﻪ «ِ
“যে ব্যক্তি তার ভাইকে এক বৎসর অবধি পরিত্যাগ করে থাকে সে তার রক্তপাতকারী সমতুল্য’। [168]
মুসলিমদের পারস্পরিক সম্পরিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পরিণাম এত মারাত্মক যে, এর ফলে আল্লাহর ক্ষমা থেকে বঞ্চিত হতে
হয়। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নিম্নোক্ত হাদীসটি বর্ণনা
করেছেন,
‏«ﺗُﻌْﺮَﺽُ ﺃَﻋْﻤَﺎﻝُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻓِﻲ ﻛُﻞِّ ﺟُﻤُﻌَﺔٍ ﻣَﺮَّﺗَﻴْﻦِ، ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟِﺎﺛْﻨَﻴْﻦِ ﻭَﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﺨَﻤِﻴﺲِ، ﻓَﻴُﻐْﻔَﺮُ ﻟِﻜُﻞِّ ﻋَﺒْﺪٍ ﻣُﺆْﻣِﻦٍ، ﺇِﻟَّﺎ ﻋَﺒْﺪًﺍ ﺑَﻴْﻨَﻪُ ﻭَﺑَﻴْﻦَ ﺃَﺧِﻴﻪِ ﺷَﺤْﻨَﺎﺀ،ُ ﻓَﻴُﻘَﺎﻝُ : ﺍﺗْﺮُﻛُﻮﺍ، ﺃَﻭِ ﺍﺭْﻛُﻮﺍ، ﻫَﺬَﻳْﻦِ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻔِﻴﺌَﺎ ‏»
“প্রতি সপ্তাহে বান্দার আমল আল্লাহর সমীপে দু’বার করে পেশ করা হয়। সোমবারে একবার ও বৃহস্পতিবারে একবার। তখন
সকল ঈমানদার বান্দাকেই ক্ষমা করা হয়; কেবল সেই লোককে ক্ষমা করা হয় না, যার সাথে তার ভাইয়ের শত্রুতা আছে।
তাদের দু’জন সম্পর্কে বলা হয়, ‘এ দু’জনকে বাদ রাখ কিংবা অবকাশ দাও, যে পর্যন্ত না তারা দু’জন ফিরে আসে”। [169]
(অর্থাৎ শত্রুতা পরিহার না করা পর্যন্ত তাদের ক্ষমা করা নিষিদ্ধ।)
বিবাদকারীদ্বয়ের মধ্যে যে তওবা করবে, তাকে তার সঙ্গীর নিকটে গিয়ে সাক্ষাত করা ও সালাম প্রদান করা জরুরি। যদি
সে তা করে কিন্তু তার সঙ্গী সাক্ষাত না দেয় কিংবা সালামের জবাব না দেয় তবে সে দোষমুক্ত হয়ে যাবে এবং দণ্ড যা
কিছু তা অস্বীকারকারীর উপরে পতিত হবে।
আবু আইয়ূব আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,
‏«ﻻَ ﻳَﺤِﻞُّ ﻟِﺮَﺟُﻞٍ ﺃَﻥْ ﻳَﻬْﺠُﺮَ ﺃَﺧَﺎﻩُ ﻓَﻮْﻕَ ﺛَﻼَﺙِ ﻟَﻴَﺎﻝٍ، ﻳَﻠْﺘَﻘِﻴَﺎﻥِ : ﻓَﻴُﻌْﺮِﺽُ ﻫَﺬَﺍ ﻭَﻳُﻌْﺮِﺽُ ﻫَﺬَﺍ، ﻭَﺧَﻴْﺮُﻫُﻤَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳَﺒْﺪَﺃُ ﺑِﺎﻟﺴَّﻼَﻡ «ِ
“কোনো ব্যক্তির জন্য তার ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছেদ করে থাকা বৈধ নয়। (সম্পর্কছেদের চিহ্নস্বরূপ)
তাদের দু’জনের সাক্ষাত হলে দু’জনই মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাদের দু’জনের মধ্যে সে-ই উত্তম হবে, যে প্রথমে তার সঙ্গীকে
সালাম দিবে”। [170]
হাঁ, যদি সম্পর্কছেদ করার শর‘ঈ কোনো কারণ পাওয়া যায়। যেমন, সে সালাত আদায় করে না কিংবা বেপরোয়াভাবে
অন্যায়-অশ্লীল কাজ করে করে চলে তাহলে লক্ষ্য করতে হবে, তখন প্রশ্ন হবে, এমতাবস্থায় সম্পর্কচ্ছেদই তার জন্য মঙ্গলজনক
না সম্পর্ক রক্ষাই মঙ্গলজনক? এর উত্তরে বলা হবে যে, যদি সম্পর্কচ্ছেদে তার মঙ্গল হয় এবং সে সৎ পথে ফিরে আসে তাহলে
সম্পর্কছেদ করা ফরয হয়ে দাঁড়াবে। আর যদি মঙ্গলজনক না হয়ে বরং আরো বিগড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়, তার মধ্যে
হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি ও পাপ প্রবণতা বেড়ে যায় তাহলে সম্পর্ক ছিন্ন করা ঠিক হবে না। কেননা তাতে সংশোধন না
হয়ে বরং বিশৃঙ্খলা আরো বেড়ে যাবে। সুতরাং তার সঙ্গে সংস্রব বজায় রেখে যথাসাধ্য নসীহত করে যেতে হবে।
ﺳﺒﺤﺎﻧﻚ ﺍﻟﻠﻬﻢ ﻭﺑﺤﻤﺪﻙ ﺃﺷﻬﺪ ﺃﻥ ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺃﻧﺖ ﺃﺳﺘﻐﻔﺮﻙ ﻭﺃﺗﻮﺏ ﺇﻟﻴﻚ .
ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺍﻏﻔﺮ ﻟﻲ ﻭﻟﻮﺍﻟﺪﻱ ﻭﻟﻠﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﻳﻮﻡ ﻳﻘﻮﻡ ﺍﻟﺤﺴﺎﺏ.
[1] হাকেম, দারাকুতনী; সিলসিলা সহীহাহ, হাদীস নং ২২৫৬।
[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৩৭ ‘ফাযায়েল’ অধ্যায়।
[3] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৪৮৬, সনদ সহীহ।
[4] দারাকুতনী; ইবন হিব্বান হাদীস নং ৪৯৩৮, সনদ সহীহ।
[5] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৭৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৭।
[6] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৪৯৭।
[7] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৭৮; মিশকাত, হাদীস নং ৪০৭০।
[8] তিরমিযী, হাদীস নং ৩০৯৫, সনদ হাসান।
[9] মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৯৫৩২; সিলসিলা সহীহাহ, হাদীস নং ৩৩৮৭।
[10] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৩০; মিশকাত, হাদীস নং ৪৫৯৫।
[11] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৪৬; মিশকাত, হাদীস নং ৪৫৯৬।
[12] মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১৭৪৫৮; সিলসিলা সহীহাহ, হাদীস নং ৪৯২।
[13] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪৯৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৮৬; মিশকাত, হাদীস নং ৫৩১৬।
[14] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৮৫, মিশকাত, হাদীস নং ৫৩১৫।
[15] সুনান আবু দাউদ; তিরমিযী; মিশকাত, হাদীস নং ৪৫৮৪।
[16] ত্বাবরাণী; সিলসিলা সহীহাহ, হাদীস নং ২১৯৫।
[17] মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৭০৪৫; সিলসিলা সহীহাহ, হাদীস নং ১০৬৫।
[18] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৯১০; মিশকাত, হাদীস নং ৪৫৮৪।
[19] সহীহ বুখার; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৩৪০৭।
[20] সুনান আবু দাউদ; তিরমিযী, মিশকাত, হাদীস নং ৩৪১৯।
[21] সুনান আবু দাউদ; মিশকাত, হাদীস নং ৩৪২০।
[22] সহীহ বুখারী; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৩৪০৯।
[23] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬১৮১।
[24] মুসনাদে আহমদ ৫/৩১০; মিশকাত, হাদীস নং ৮৮৫।
[25] সুনান আবু দাউদ; তিরমিযী; মিশকাত, হাদীস নং ৯৭৮।
[26] সহীহ ইবনে খুযায়মা হাদীস নং ৬৬৫; আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নাবী, পৃ: ১৩১।
[27] মুসনাদে আহমদ; সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৯১; ফাতহুল বারী ২/২৭৪ পৃ:।
[28] সহীহ বুখারী; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৭৯০।
[29] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৯৪৬; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ৭৪৫২।
[30] মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৯৮২-৮৩, ‘সালাতে অসিদ্ধ ও সিদ্ধ সমূহ’ অনুচ্ছেদ-১৯।
[31] তিরমিযী; মিশকাত, হাদীস নং ৫০৫৫; সিলসিলা সহীহাহ, হাদীস নং ১৭৯৫।
[32] সহীহ বুখারী; মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ১১৪১।
[33] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩৬; মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১০৯০০৬।
[34] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭৪।
[35] বায়হাকী; সিলসিলা সহীহাহ, হাদীস নং ১৭২৫।
[36] সহীহ বুখারী; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৭৯৯।
[37] সহীহ বুখারী; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৪১৭৯।
[38] কুর্রাছ এক প্রকার গন্ধযুক্ত সব্জি।
[39] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৬৪।
[40] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৬৭।
[41] সহীহ বুখারী; মিশকাত, হাদীস নং ৪৬২১।
[42] সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৫১০৯।
[43] সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ২৯৭১।
[44] তিরমিযী; ইবন মাজাহ; মিশকাত, হাদীস নং ৩৫৭৫।
[45] সহীহ বুখারী; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৩২৪৬।
[46] যাওয়াইদুল বাযযার ২/১৮১ পৃ; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ৫৪৭।
[47] মুসনাদে আহমদ; তিরমিযী; মিশকাত, হাদীস নং ৩২৭৯।
[48] ত্বাবরানী ফিল কাবীর, ১৭/৩৩৯, সহীহুল জামে‘ ১৯৩৪।
[49] সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৫৪৫।
[50] তিরমিযী; মিশকাত, হাদীস নং ৫৫১।
[51] তিরমিযী, হাদীস নং ১২৫; সুনান আবু দাউদ; সুনান নাসাঈ; মিশকাত, হাদীস নং ৫৫৩, সনদ সহীহ।
[52] মুসনাদে আহমদ; সুনান আবু দাউদ; মিশকাত, হাদীস নং ৩১৯৩।
[53] তিরমিযী; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ৫৯১৮।
[54] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ২১৬৪, সনদ হাসান।
[55] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ২১৩৩, সনদ সহীহ।
[56] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১৭৫।
[57] তিরমিযী; মিশকাত, হাদীস নং ৩১১৮।
[58] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১৭৩।
[59] ত্বাবরাণী; সিলসিলা সহীহাহ, হাদীস নং ২২৬।
[60] মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৩৯১২; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ৪১২৬।
[61] মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২৭৫৩; সহীহুল হাদীস, হাদীস নং ২৫০৯।
[62] ত্বাবরাণী; কাবীর, ২৪/৩৪২; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ৭০৫৪।
[63] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৬৬।
[64] মুসনাদে আহমদ; সুনান নাসাঈ; মিশকাত, হাদীস নং ১০৬৫।
[65] মুসনাদে আহমদ ২/৪৪৪; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ২৭০৩।
[66] সহীহ বুখারী; সহীহ মুসলিম; মিশকাত হাদীস নং ২৫১৫ (হজ্জ অধ্যায়)।
[67] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৪০।
[68] সহীহ বুখারী; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৮৬।
[69] মুসনাদে আহমদ; সুনান নাসাঈ; মিশকাত, হাদীস নং ৩৬৫৫।
[70] সহীহ বুখারী; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৩৩১৪।
[71] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ২২৬৩; মিশকাত, হাদীস নং ৩৩১৬, সনদ দুর্বল।
[72] সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ২৮০৭।
[73] মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং ২২৫৯; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ৩৫৩৯।
[74] মুসনাদে আহমদ ৫/২২৫; সহীহ আল-জামে‘ ৩৩৭৫।
[75] মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদীস নং ২২৬২।
[76] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০২; মিশকাত, হাদীস নং ২৮৬০।
[77] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২২৪৬, সনদ সহীহ।
[78] সহীহ বুখারী; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ২৮০২।
[79] সহীহ বুখারী; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৫০২৮।
[80] সিলসিলা সহীহাহ, হাদীস নং ১০৫৭; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ৬৭২৫।
[81] মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১০৬৫।
[82] [কারণ প্রতিযোগিতা তিন প্রকার। এক. শর‘ঈ লক্ষ্য-উদ্দেশ্যপ্রসূত প্রতিযোগিতা। যেমন উট ও ঘোড়দৌড়ের
প্রতিযোগিতা, তীরন্দযী ও নিশানার প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। শর‘ঈ বিদ্যা যেমন কুরআন হিফয প্রতিযোগিতাও
আলিমদের অগ্রাধিকারযোগ্য মতানুসারে এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এ জাতীয় প্রতিযোগিতা পুরস্কার সহ কিংবা
পুরস্কারবিহীন যেভাবেই হোক মুবাহ বা বৈধ হবে। দুই. মূলে মুবাহ এমন সব প্রতিযোগিতা। যেমন, ফুটবল প্রতিযোগিতা,
দৌড় প্রতিযোগিতা। তবে এগুলো হারাম শূণ্য হতে হবে। যেমন, এসব খেলা করতে কিংবা দেখতে গিয়ে সালাত বিনষ্ট
করা কিংবা সতর খোলা হারাম। পুরস্কার ছাড়া এসব প্রতিযোগিতা জায়েয। তিন. মূলে হারাম কিংবা মাধ্যম হারাম
এমন সব প্রতিযোগিতা। যেমন, বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতার নামে নষ্ট প্রতিযোগিতা, রেসলিং বা মুষ্টিযুদ্ধের
প্রতিযোগিতা। মুষ্টিযুদ্ধ প্রতিযোগিতায় মুখমণ্ডলে আঘাত করা হয় অথচ মুখমণ্ডলে আঘাত করা হারাম। (সহীহ বুখারী,
হাদীস নং ২৫৫৯; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৩৪২৫)। সুতরাং মুষ্টিযুদ্ধ হারামের মাধ্যম একটি প্রতিযোগিতা।
অনুরূপভাবে মেষের লড়াই, মোরগের লড়াই, ষাঁড়ের লড়াই ইত্যাদিও এ শ্রেণিভুক্ত।
[83] সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ২৯৪২।
[84] সহীহ বুখারী; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৩৫৯২।
[85] মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৯০১১; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ৫০৯৩।
[86] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৩১৩; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ৫১১৪।
[87] সহীহ বুখারী; মিশকাত, হাদীস নং ২৯৫৮।
[88] মুসনাদে আহমদ; মিশকাত, হাদীস নং ২৯৬০, সনদ সহীহ।
[89] সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৪০৭০।
[90] সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৪৫২৯।
[91] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৩২; সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৫১৩২।
[92] সুনান আবু দাউদ; মিশকাত, হাদীস নং ৩৭৫৭।
[93] . ইবন মুফলিহ, আল-আদাবুশ শার’ঈয়্যাহ ২/১৭৬ পৃ:।
[94] .ইবন মাজাহ; মিশকাত, হাদীস নং ২৯৮৭।
[95] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৮১; মিশকাত, হাদীস নং ৫১২৭।
[96] সহীহ বুখারী; মিশকাত, হাদীস নং ২৯৮৪।
[97] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬২৩; মিশকাত, হাদীস নং ৩০৯০।
[98] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৩৭৫; আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৫৪২।
[99] সুনান আবু দাউদ; মিশকাত, হাদীস নং ১৮৪৮।
[100] সুনান আবু দাউদ; মিশকাত, হাদীস নং ১৮৪৭।
[101] সহীহ বুখারী; মিশকাত, হাদীস নং ২৯১০।
[102] সুনান নাসাঈ, হাদীস নং ৪৬৮৪; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ৩৬০০।
[103] মুসনাদে আহমদ; তিরমিযী, হাদীস নং ২৭৭২।
[104] তিরমিযী; মিশকাত, হাদীস নং ৫১৯৭।
[105] সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৩৬৩৯।
[106] মুসনাদে আহমদ; মিশকাত, হাদীস নং ৩৬৫৬, সনদ হাসান।
[107] সুনান আবু দাউদ; ইবন মাজাহ; মিশকাত, হাদীস নং ৪২৯২।
[108] সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৩৬৩৮।
[109] সুনান আবু দাউদ; মিশকাত, হাদীস নং ৩৬৪৫।
[110] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৩৭৭; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ৬৩১৩।
[111] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২০৬৫।
[112] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৫৪, ৫৯৭৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৭।
[113] তাফসীরে ইবন কাছীর ৬/৩৩৩ পৃ:।
[114] সহীহ বুখারী; মিশকাত, হাদীস নং ৫৩৪৩।
[115] তিরমিযী, হাদীস নং ২১৮৫; সিলসিলা সহীহাহ, হাদীস নং ২২০৩।
[116] বায়হাক্বী; মিশকাত, হাদীস নং ৪৫০৩; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ১৭৪৭-৪৮।
[117] তিরমিযী, হাদীস নং ১০০৫; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ৫১৯৪।
[118] সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৪৮২৮।
[119] ত্বাবরাণী; সিলসিলা সহীহুল হাদীস নং ১৮৭১।
[120] মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২৭৫৮৩; তিরমিযী, হাদীস নং ১৯৩১।
[121] সহীহ বুখারী; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৪৮২৩।
[122] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০৫৫; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৬০৭৫।
[123] সহীহ বুখারী; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৩৫১৫।
[124] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১৫৮।
[125] সুনান নাসাঈ, হাদীস নং ৪৮৬০, সনদ সহীহ।
[126] সহীহ বুখারী; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৪৯৬৫।
[127] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৬; মিশকাত, হাদীস নং ২৭৯৫।
[128] সুনান নাসাঈ, হাদীস নং ৫৩৩০; মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২০১৮০।
[129] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৬৬৫; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৪৩১১।
[130] সুনান আবু দাউদ; সুনান নাসাঈ; মিশকাত, হাদীস নং ৪৩৩২।
[131] সুনান নাসাঈ, হাদীস নং ৫২৬৫, সনদ সহীহ।
[132] সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৪৩৮৫।
[133] সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৩৫২৪।
[134] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১২২।
[135] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১২৬।
[136] সহীহ বুখারী; মিশকাত, হাদীস নং ৪৪২৯।
[137] সহীহ বুখারী; মিশকাত, হাদীস নং ৪৪২৮।
[138] সুনান আবু দাউদ; মিশকাত, হাদীস নং ৪৪৬৯।
[139] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৪২১২; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ৮১৫৩।
[140] সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৪৪২৪।
[141] সহীহ বুখারী; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৪৪২৯।
[142] সহীহ বুখারী; সহীহ মুসলিম; মিশকাত হাদীস নং ৪৪৯৬।
[143] সহীহ বুখারী; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৪৪৯৮।
[144] সহীহ বুখারী; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৪৪৮৯।
[145] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৫০৯।
[146] সহীহ বুখারী; মিশকাত, হাদীস নং ৪৪৯৯।
[147] সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ১৬৯৯।
[148] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৫৭৬, সনদ সহীহ।
[149] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৫৬৭; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ৫০৩৮।
[150] সহীহ বুখারী; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৬০৭৫।
[151] মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৮৩১৩; সহীহ তারগীব, হাদীস নং ১৫৮।
[152] সহীহ বুখারী; মিশকাত, হাদীস নং ৪৪৯৯।
[153] সহীহ বুখারী; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৪৮২৩।
[154] সহীহ বুখারী; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৪৯৬২।
[155] ইবন মাজাহ; মিশকাত, হাদীস নং ৪৯৮৮।
[156] মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২৩৯০৫; সিলসিলা সহীহাহ, হাদীস নং ৬৫।
[157] সুনান আবু দাউদ, ইবন মাজাহ; মিশকাত, হাদীস নং ৫০৪২।
[158] সুনান আবু দাউদ, ইবন মাজাহ; মিশকাত, হাদীস নং ৫০৪২।
[159] সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৪৫০০।
[160] মুসনাদে আহমদ; সুনান আবু দাউদ; মিশকাত, হাদীস নং ৪৫০৫।
[161] সহীহ বুখারী; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৩৪১০।
[162] সহীহ বুখারী; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ১৯।
[163] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৫৮৫। সনদ সহীহ।
[164] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৯৪।
[165] সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ১৭২৭।
[166] সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৪০৭৭।
[167] মুসনাদে আহমদ; সুনান আবু দাউদ; মিশকাত, হাদীস নং ৫০৩৫।
[168] সুনান আবু দাউদ; মিশকাত, হাদীস নং ৫০৩৬; সনদ সহীহ।
[169] সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৫০৩০।
[170] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০৭৭।
_________________________________________________________________________________
লেখক: শাইখ মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
অনুবাদক: মু. সাইফুল ইসলাম
সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
উৎস: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব







0 বিস্তারিত আরও দেখুন:

Post a Comment

Copyright @ 2013 নবীদের কাহিনী.