Sunday 8 November 2015

Filled Under:

যে সকল হারামকে মানুুষ তুচ্ছ মনে করে ১ম পব

ক্রম বিষয়
1. ভূমিকা
2. শির্ক
3. কবরপূজা
4. গায়রুল্লাহর নামে যবেহ করা
5. হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল মনে করা
6. জাদু ও ভাগ্যগণনা
7. রাশিফল ও মানব জীবনের ওপর গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব সম্পর্কিত বিশ্বাস
8. স্রষ্টা যেসব বস্তুতে যে কল্যাণ রাখে নি তাতে সে কল্যাণ থাকার আকীদা পোষণ করা
9. লোক দেখানো ইবাদত
10. কুলক্ষণ
11. আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কসম করা
12. খাতির জমানোর জন্য মুনাফিক ও ফাসিকদের সঙ্গে উঠাবসা করা
13. সালাতে ধীরস্থিরতা পরিহার করা
14. সালাতে অনর্থক কাজ ও বেশি বেশি নড়াচড়া করা
15. সালাতে ইচ্ছাপূর্বক ইমামের আগে মুক্তাদীর গমন
16. পেঁয়াজ-রসুন কিংবা দুর্গন্ধযুক্ত বস্তু খেয়ে মসজিদে গমন
17. ব্যভিচার
18. পুংমৈথুন বা সমকামিতা







19. শর‘ঈ ওযর ব্যতীত স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর শয্যা গ্রহণ অস্বীকার করা
20. শর‘ঈ কারণ ব্যতীত স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর নিকট তালাক প্রার্থনা করা
21. যিহার
22. মাসিকের সময় স্ত্রী সহবাস করা
23. পশ্চাৎদ্বার দিয়ে স্ত্রীগমন
24. স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রক্ষা না করা
25. গায়ের মাহরাম মহিলার সাথে নির্জনে অবস্থান
26. বিবাহ বৈধ এমন মহিলার সাথে করমর্দন
27. পুরুষের মাঝে সুগন্ধি মেখে নারীর গমনাগমন
28. মাহরাম আত্মীয় ছাড়া স্ত্রীলোকের সফর
29. গায়ের মাহরাম মহিলার প্রতি ইচ্ছাপূর্বক দৃষ্টিপাত করা
30. দাইয়ূছী
31. পালক সন্তান গ্রহণ ও নিজ সন্তানের পিতৃত্ব অস্বীকার করা
32. সূদ খাওয়া
33. বিক্রিত পণ্যের দোষ গোপন করা
34. দালালী করা
35. জুমু‘আর সালাতের আযানের পরে কেনা-বেচা করা
36. জুয়া
37. চুরি করা
38. জমি আত্মসাৎ করা
39. ঘুষ
40. সুপারিশের বিনিময়ে উপহার গ্রহণ
41. শ্রমিক থেকে ষোলআনা শ্রম আদায় করে পুরো মজুরী না দেওয়া
42. সন্তানদের উপহার প্রদানে সমতা রক্ষা না করা
43. ভিক্ষাবৃত্তি
44. ঋণ পরিশোধে অনীহা প্রকাশ করা
45. হারাম ভক্ষণ
46. মদ্যপান
47. সোনা-রূপার পাত্র ব্যবহার ও তাতে পানাহার করা
48. মিথ্যা সাক্ষ্যদান
49. বাদ্যযন্ত্র ও গান
50. গীবত বা পরনিন্দা
51. চোগলখুরী করা
52. অনুমতি ব্যতীত অন্যের বাড়ীতে উকি দেওয়া ও প্রবেশ করা
53. তৃতীয় জনকে বাদ দিয়ে দু’জনে শলাপরামর্শ করা
54. টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা
55. পুরুষদের স্বর্ণালংকার ব্যবহার করা
56. মহিলাদের খাটো, পাতলা ও আঁটসাঁট পোষাক পরিধান করা
57. পরচুলা ব্যবহার করা
58. পোশাক-পরিচ্ছদ ও কথা-বার্তায় নারী-পুরুষ পরস্পরের বেশ ধারণ
59. সাদা চুলে কালো খেযাব ব্যবহার করা
60. ক্যানভাস, প্রাচীর গাত্র, কাগজ ইত্যাদিতে প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা
61. মিথ্যা স্বপ্ন বলা
62. কবরের উপর বসা, কবর পদদলিত করা ও কবরস্থানে মল-মূত্র ত্যাগ করা
63. পেশাবের পর পবিত্র না হওয়া
64. লোকদের অনীহা সত্ত্বেও গোপনে তাদের আলাপ শ্রবণ করা
65. প্রতিবেশীর সাথে অসদাচরণ করা
66. অসীয়ত দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত করা
67. দাবা খেলা
68. কোনো মুসলিমকে অভিশাপ দেওয়া এবং যে অভিশাপ পাওয়ার যোগ্য নয় তাকে অভিশাপ দেওয়া
69. বিলাপ ও মাতম করা
70. মুখমণ্ডলে আঘাত করা ও দাগ দেওয়া
71. শর‘ঈ কারণ ব্যতীত তিন দিনের ঊর্ধ্বে কোনো মুসলিমের সাথে সম্পর্কেছেদ করা
ভূমিকা
আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দাদের ওপর কিছু জিনিস ফরয করেছেন, যা পরিত্যাগ করা জায়েয নয়, কিছু সীমা বেঁধে
দিয়েছেন, যা অতিক্রম করা বৈধ নয় এবং কিছু জিনিস হারাম করেছেন, যার ধারে কাছে যাওয়াও ঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏« ﻣَﺎ ﺃَﺣَﻞَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓِﻲ ﻛِﺘَﺎﺑِﻪِ ﻓَﻬُﻮَ ﺣَﻠَﺎﻝٌ، ﻭَﻣَﺎ ﺣَﺮَّﻡَ ﻓَﻬُﻮَ ﺣَﺮَﺍﻡٌ، ﻭَﻣَﺎ ﺳَﻜَﺖَ ﻋَﻨْﻪُ ﻓَﻬُﻮَ ﻋَﺎﻓِﻴَﺔٌ، ﻓَﺎﻗْﺒَﻠُﻮﺍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟْﻌَﺎﻓِﻴَﺔَ، ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦْ ﻧَﺴِﻴًّﺎ‏» ﺛُﻢَّ ﺗَﻠَﺎ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟْﺂﻳَﺔَ ﴿ﻭَﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺑُّﻚَ ﻧَﺴِﻴّٗﺎ﴾ ‏[ ﻣﺮﻳﻢ : ٦٤‏]
‘‘আল্লাহ তা‘আলা তার কিতাবে যা হালাল করেছেন তা হালাল, যা হারাম করেছেন তা হারাম, আর যে বিষয়ে তিনি
নীরব থেকেছেন তা ক্ষমা। সুতরাং তোমরা আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমাকে গ্রহণ কর। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বিস্মৃত হন না।
তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করেন, ‘তোমার রব বিস্মৃত হন না”। [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৬] [1]
আর এ হারামসমূহই আল্লাহ তা‘আলার সীমারেখা। আল্লাহ বলেন,
﴿ﺗِﻠۡﻚَ ﺣُﺪُﻭﺩُ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﻘۡﺮَﺑُﻮﻫَﺎۗ﴾ ‏[ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ١٨٧ ‏]
“এসব আল্লাহর সীমারেখা। সুতরাং তোমরা এগুলোর নিকটেও যেয়ো না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৭]
আল্লাহর নির্ধারিত সীমালঙ্ঘনকারী ও হারাম অবলম্বনকারীদেরকে আল্লাহ তা‘আলা ভীতিপ্রদর্শন করেছেন। তিনি
বলেছেন,
﴿ﻭَﻣَﻦ ﻳَﻌۡﺺِ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُۥ ﻭَﻳَﺘَﻌَﺪَّ ﺣُﺪُﻭﺩَﻩُۥ ﻳُﺪۡﺧِﻠۡﻪُ ﻧَﺎﺭًﺍ ﺧَٰﻠِﺪٗﺍ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻭَﻟَﻪُۥ ﻋَﺬَﺍﺏٞ ﻣُّﻬِﻴﻦٞ ١٤﴾ ‏[ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ١٤ ‏]
“যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশের অবাধ্যতা করে এবং তাঁর সীমারেখাসমূহ লংঘন করে আল্লাহ তাকে আগুনে প্রবেশ
করাবেন। সেখানে সে চিরস্থায়ী হবে। আর তার জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৪]
এ জন্যেই হারাম থেকে বিরত থাকা ফরয। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏« ﻣَﺎ ﻧَﻬَﻴْﺘُﻜُﻢْ ﻋَﻨْﻪُ، ﻓَﺎﺟْﺘَﻨِﺒُﻮﻩُ ﻭَﻣَﺎ ﺃَﻣَﺮْﺗُﻜُﻢْ ﺑِﻪِ ﻓَﺎﻓْﻌَﻠُﻮﺍ ﻣِﻨْﻪُ ﻣَﺎ ﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺘُﻢْ‏»
‘‘আমি তোমাদেরকে যা কিছু নিষেধ করি তোমরা সেসব থেকে বিরত থাক। আর যা কিছু আদেশ করি তা যথাসাধ্য পালন
কর”। [2]
লক্ষ্যণীয় যে, প্রবৃত্তিপূজারী, দুর্বলমনা ও স্বল্প জ্ঞানের অধিকারী কিছু লোক যখন এক সঙ্গে কিছু হারামের কথা শুনতে
পায় তখন আঁতকে ওঠে এবং বিরক্তির সুরে বলে, ‘সবই তো হারাম হয়ে গেল। তোমরা তো দেখছি আমাদের জন্য হারাম ছাড়া
কিছুই বাকী রাখলে না। তোমরা আমাদের জীবনটাকে সংকীর্ণ করে ফেললে, মনটাকে বিষিয়ে দিলে! জীবনটা একেবারে
মাটি হযে গেল। কোনো কিছুর সাধ আহ্লাদই আমরা ভোগ করতে পারলাম না। শুধু হারাম হারাম ফতওয়া দেওয়া ছাড়া
তোমাদের দেখছি আর কোনো কাজ নেই। অথচ আল্লাহর দীন সহজ-সরল। তিনি নিজেও ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর
শরী‘আতের গণ্ডিও ব্যাপকতর। সুতরাং হারাম এত সংখ্যক হতে পারে না।’
এদের জবাবে আমরা বলব, ‘আল্লাহ তা‘আলা যা ইচ্ছা আদেশ করতে পারেন। তাঁর আদেশকে খণ্ডন করার কেউ নেই। তিনি
প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ। সুতরাং তিনি যা ইচ্ছা হালাল করেছেন এবং যা ইচ্ছা হারাম করেছেন। তিনি পবিত্র। আল্লাহর দাস
হিসেবে আমাদের নীতি হবে তাঁর আদেশের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা এবং সর্বান্তকরণে তা মেনে নেওয়া। কেননা তাঁর দেওয়া
বিধানাবলী জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও ইনছাফ মোতাবেকই প্রকাশ পেয়েছে। সেগুলো নিরর্থক ও খেলনার বস্তু নয়। যেমন, তিনি
বলেছেন,
﴿ﻭَﺗَﻤَّﺖۡ ﻛَﻠِﻤَﺖُ ﺭَﺑِّﻚَ ﺻِﺪۡﻗٗﺎ ﻭَﻋَﺪۡﻟٗﺎۚ ﻟَّﺎ ﻣُﺒَﺪِّﻝَ ﻟِﻜَﻠِﻤَٰﺘِﻪِۦۚ ﻭَﻫُﻮَ ﭐﻟﺴَّﻤِﻴﻊُ ﭐﻟۡﻌَﻠِﻴﻢُ ١١٥﴾ ‏[ ﺍﻻﻧﻌﺎﻡ : ١١٥‏]
“তোমার রবের বাণী সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়ে পরিপূর্ণ হলো। তাঁর বাণীসমূহকে পরিবর্তনকারী কেউ নেই। তিনি
সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১১৫]
যে নিয়মের ভিত্তিতে হালাল-হারাম নির্ণিত হয়েছে আল্লাহ তা‘আলা তাও আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি
বলেছেন,
﴿ﻭَﻳُﺤِﻞُّ ﻟَﻬُﻢُ ﭐﻟﻄَّﻴِّﺒَٰﺖِ ﻭَﻳُﺤَﺮِّﻡُ ﻋَﻠَﻴۡﻬِﻢُ ﭐﻟۡﺨَﺒَٰٓﺌِﺚَ﴾ ‏[ ﺍﻻﻋﺮﺍﻑ : ١٥٧‏]
“তিনি পবিত্র বস্তুকে তাদের জন্য হালাল এবং অপবিত্র বস্তুকে হারাম করেন।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৭]
সুতরাং যা পবিত্র তা হালাল এবং যা অপবিত্র তা হারাম। কোনো কিছু হালাল ও হারাম করার অধিকার একমাত্র
আল্লাহরই। কোনো মানুষ নিজের জন্য তা দাবী করলে কিংবা কেউ তা অন্যের জন্য সাব্যস্ত করলে সে হবে একজন বড়
কাফির ও মুসলিম উম্মাহ বহির্ভূত ব্যক্তি। আল্লাহ বলেন,
﴿ﺃَﻡۡ ﻟَﻬُﻢۡ ﺷُﺮَﻛَٰٓﺆُﺍْ ﺷَﺮَﻋُﻮﺍْ ﻟَﻬُﻢ ﻣِّﻦَ ﭐﻟﺪِّﻳﻦِ ﻣَﺎ ﻟَﻢۡ ﻳَﺄۡﺫَﻥۢ ﺑِﻪِ ﭐﻟﻠَّﻪُۚ﴾ ‏[ ﺍﻟﺸﻮﺭﻯ : ٢١‏]
“তবে কি তাদের এমন সব উপাস্য রয়েছে, যারা তাদের জন্য দীনের এমন সব বিধান দিয়েছে যার অনুমতি আল্লাহ দেন
নি?” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ২১]
কুরআন-হাদীসে পারদর্শী আলেমগণ ব্যতীত হালাল-হারাম সম্পর্কে কথা বলার অধিকার অন্য কারো নেই। যে ব্যক্তি না
জেনে হালাল-হারাম সম্পর্কে কথা বলে আল-কুরআনে তার সম্পর্কে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে। আল্লাহ বলেন:
﴿ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘُﻮﻟُﻮﺍْ ﻟِﻤَﺎ ﺗَﺼِﻒُ ﺃَﻟۡﺴِﻨَﺘُﻜُﻢُ ﭐﻟۡﻜَﺬِﺏَ ﻫَٰﺬَﺍ ﺣَﻠَٰﻞٞ ﻭَﻫَٰﺬَﺍ ﺣَﺮَﺍﻡٞ ﻟِّﺘَﻔۡﺘَﺮُﻭﺍْ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﭐﻟۡﻜَﺬِﺏَۚ﴾ ‏[ﺍﻟﻨﺤﻞ : ١١٦ ‏]
“তোমাদের জিহ্বায় মিথ্যা উচ্চারিত হয় বলে তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপের মানসে যেন না বলো যে, এটা
হালাল, ওটা হারাম”। [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ১১৬]
যেসব বস্তু অকাট্যভাবে হারাম তা কুরআন ও হাদীসে উল্লেখ আছে। যেমন, আল্লাহ বলেছেন:
﴿ﻗُﻞۡ ﺗَﻌَﺎﻟَﻮۡﺍْ ﺃَﺗۡﻞُ ﻣَﺎ ﺣَﺮَّﻡَ ﺭَﺑُّﻜُﻢۡ ﻋَﻠَﻴۡﻜُﻢۡۖ ﺃَﻟَّﺎ ﺗُﺸۡﺮِﻛُﻮﺍْ ﺑِﻪِۦ ﺷَﻴۡٔٗﺎۖ ﻭَﺑِﭑﻟۡﻮَٰﻟِﺪَﻳۡﻦِ ﺇِﺣۡﺴَٰﻨٗﺎۖ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘۡﺘُﻠُﻮٓﺍْ ﺃَﻭۡﻟَٰﺪَﻛُﻢ ﻣِّﻦۡ ﺇِﻣۡﻠَٰﻖٖ﴾ ‏[ ﺍﻻﻧﻌﺎﻡ : ١٥١‏]
“আপনি বলুন, এসো, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের ওপর যা হারাম করেছেন তা পড়ে শুনাই। তোমরা তার সঙ্গে কাউকে
শরীক করো না, মাতা-পিতার সাথে সদাচরণ করবে আর দারিদ্র্যের কারণে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না”। [সূরা
আল-আন‘আম ১৫১]
অনুরূপভাবে হাদীসেও বহু হারাম জিনিসের বিবরণ এসেছে। যেমন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏« ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ ﺣَﺮَّﻡَ ﺑَﻴْﻊَ ﺍﻟﺨَﻤْﺮِ، ﻭَﺍﻟﻤَﻴْﺘَﺔِ ﻭَﺍﻟﺨِﻨْﺰِﻳﺮِ ﻭَﺍﻷَﺻْﻨَﺎﻡِ ‏»
“আল্লাহ তা‘আলা মদ, মৃত প্রাণী, শূকর ও মূর্তি কেনা-বেচা হারাম করেছেন”। [3]
অপর হাদীসে এসেছে,
‏« ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺇِﺫَﺍ ﺣَﺮَّﻡَ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﺣَﺮَّﻡَ ﺛَﻤَﻨَﻪُ ‏»
“আল্লাহ যখন কোনো কিছু হারাম করেন তখন তার মূল্য তথা কেনা-বেচাও হারাম করে দেন”। [4]
কোনো কোনো আয়াতে কখনো একটি বিশেষ শ্রেণির হারামের আলোচনা দেখতে পাওয়া যায়। যেমন, হারাম খাদ্যদ্রব্য
প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেছেন:
﴿ﺣُﺮِّﻣَﺖۡ ﻋَﻠَﻴۡﻜُﻢُ ﭐﻟۡﻤَﻴۡﺘَﺔُ ﻭَﭐﻟﺪَّﻡُ ﻭَﻟَﺤۡﻢُ ﭐﻟۡﺨِﻨﺰِﻳﺮِ ﻭَﻣَﺎٓ ﺃُﻫِﻞَّ ﻟِﻐَﻴۡﺮِ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﺑِﻪِۦ ﻭَﭐﻟۡﻤُﻨۡﺨَﻨِﻘَﺔُ ﻭَﭐﻟۡﻤَﻮۡﻗُﻮﺫَﺓُ ﻭَﭐﻟۡﻤُﺘَﺮَﺩِّﻳَﺔُ ﻭَﭐﻟﻨَّﻄِﻴﺤَﺔُ ﻭَﻣَﺎٓ ﺃَﻛَﻞَ ﭐﻟﺴَّﺒُﻊُ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﺎ ﺫَﻛَّﻴۡﺘُﻢۡ ﻭَﻣَﺎ ﺫُﺑِﺢَ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟﻨُّﺼُﺐِ ﻭَﺃَﻥ ﺗَﺴۡﺘَﻘۡﺴِﻤُﻮﺍْ ﺑِﭑﻟۡﺄَﺯۡﻟَٰﻢِۚ ﴾ ‏[ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ٣‏]
“তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত প্রাণী, রক্ত, শূকরের গোশত, আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে যবেহকৃত প্রাণী, গলা
টিপে হত্যাকৃত প্রাণী, পাথরের আঘাতে নিহত প্রাণী, উপর থেকে নিচে পড়ে গিয়ে মৃত প্রাণী, শিং এর আঘাতে মৃত
প্রাণী, হিংস্র প্রাণীর ভক্ষিত প্রাণী। অবশ্য (উল্লিখিত ক্ষেত্রগুলোতে যে সব হালাল প্রাণীকে) তোমরা যবেহ করতে
সক্ষম হও সেগুলো হারাম হবে না। আর (তোমাদের জন্য হারাম) সেইসব প্রাণীও যেগুলো পূজার বেদীমূলে যবেহ করা হয় এবং
ভাগ্য নির্ণায়ক তীরের সাহায্যে যে গোশত তোমরা বন্টন কর”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩]
হারাম বিবাহ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,
﴿ﺣُﺮِّﻣَﺖۡ ﻋَﻠَﻴۡﻜُﻢۡ ﺃُﻣَّﻬَٰﺘُﻜُﻢۡ ﻭَﺑَﻨَﺎﺗُﻜُﻢۡ ﻭَﺃَﺧَﻮَٰﺗُﻜُﻢۡ ﻭَﻋَﻤَّٰﺘُﻜُﻢۡ ﻭَﺧَٰﻠَٰﺘُﻜُﻢۡ ﻭَﺑَﻨَﺎﺕُ ﭐﻟۡﺄَﺥِ ﻭَﺑَﻨَﺎﺕُ ﭐﻟۡﺄُﺧۡﺖِ ﻭَﺃُﻣَّﻬَٰﺘُﻜُﻢُ ﭐﻟَّٰﺘِﻲٓ ﺃَﺭۡﺿَﻌۡﻨَﻜُﻢۡ ﻭَﺃَﺧَﻮَٰﺗُﻜُﻢ ﻣِّﻦَ ﭐﻟﺮَّﺿَٰﻌَﺔِ ﻭَﺃُﻣَّﻬَٰﺖُ ﻧِﺴَﺎٓﺋِﻜُﻢۡ﴾ ‏[ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٢٣ ‏]
“তোমাদের ওপর হারাম করা হয়েছে তামাদের মাতৃকুল, কন্যাকুল, ভগ্নিকুল, ফুফুকুল, খালাকুল, ভ্রাতুষ্পুত্রীকুল, ভগ্নিকন্যাকুল,
স্তন্যদাত্রী মাতৃকুল, স্তন্যপান সম্পর্কিত ভগ্নীকুল ও শাশুড়ীদেরকে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৩]
উপার্জন বিষয়ক হারাম সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন:
﴿ﻭَﺃَﺣَﻞَّ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﭐﻟۡﺒَﻴۡﻊَ ﻭَﺣَﺮَّﻡَ ﭐﻟﺮِّﺑَﻮٰﺍْۚ﴾ ‏[ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ٢٧٥‏]
“আল্লাহ তা‘আলা কেনা-বেচা হালাল করেছেন এবং সূদকে হারাম করেছেন’। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৫]
বস্তুতঃ মানুষের প্রতি পরম দয়ালু আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জন্য সংখ্যা ও শ্রেণিগতভাবে এত পবিত্র জিনিস হালাল
করেছেন যে, তা গননা করে শেষ করা সম্ভব নয়। এ কারণেই তিনি হালাল জিনিসগুলোর বিস্তারিত বিবরণ দেন নি। কিন্তু
হারামের সংখ্যা যেহেতু সীমিত এবং সেগুলো জানার পর মানুষ যেন তা থেকে বিরত থাকতে পারে সেজন্য তিনি তার
বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেছেন। আল্লাহ বলেন,
﴿ﻭَﻗَﺪۡ ﻓَﺼَّﻞَ ﻟَﻜُﻢ ﻣَّﺎ ﺣَﺮَّﻡَ ﻋَﻠَﻴۡﻜُﻢۡ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﺎ ﭐﺿۡﻄُﺮِﺭۡﺗُﻢۡ ﺇِﻟَﻴۡﻪِۗ ﴾ ‏[ ﺍﻻﻧﻌﺎﻡ : ١١٩‏]
“তিনি তোমাদের ওপর যা হারাম করেছেন তার বিস্তারিত বিবরণ তোমাদেরকে দান করেছেন। তবে তোমরা যে হারামটা
বাধ্য হয়ে বা ঠেকায় পড়ে করে ফেল তা ক্ষমার্হ”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১১৯]
হারামকে এভাবে বিস্তারিত পেশের কথা বললেও হালালকে কিন্তু সংক্ষেপে সাধারণভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ
বলেন,
﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟﻨَّﺎﺱُ ﻛُﻠُﻮﺍْ ﻣِﻤَّﺎ ﻓِﻲ ﭐﻟۡﺄَﺭۡﺽِ ﺣَﻠَٰﻠٗﺎ ﻃَﻴِّﺒٗﺎ﴾ ‏[ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ١٦٨‏]
“হে মানবকুল! তোমরা যমীনের বুকে যা কিছু হালাল ও উৎকৃষ্ট সেগুলো খাও।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৬৮]
হারামের দলীল সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত সব জিনিসের মূল হুকুম হালাল হাওয়াটা মহান আল্লাহর পরম করুণা। এটা মহান
আল্লাহর অনুগ্রহ এবং তাঁর বান্দাদের ওপর সহজীকরণের নিদর্শনস্বরূপ। সুতরাং তাঁর আনুগত্য প্রকাশ, প্রশংসা ও শুকরিয়া
জ্ঞাপন করা আমাদের অপরিহার্য কর্তব্য।
কিন্তু পূর্বোল্লিখিত ঐসব লোক যখন তাদের সামনে হারামগুলো বিস্তারিত দেখতে পায় তখন শরী‘আতের বিধি বিধানের
ব্যাপারে তাদের মন সংকীর্ণতায় ভোগে। এটা তাদের ঈমানী দুর্বলতা ও শরী‘আত সম্পর্কে জ্ঞানের স্বল্পতার ফসল।
আসলে তারা কি চায় যে, হালালের শ্রেণিবিভাগগুলোও তাদের সামনে এক এক করে গণনা করা হোক; যাতে তারা দীন যে
একটা সহজ বিষয় তা জেনে আত্মতৃপ্ত হতে পারে?
তারা কি চায় যে, নানা শ্রেণির পবিত্র জিনিসগুলো তাদের এক এক করে তুলে ধরা হোক, যাতে তারা নিশ্চিত হতে পারে
যে, শরী‘আত তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে দেয় নি? তারা কি চায় যে এভাবে বলা হোক?
- উট, গরু, ছাগল, খরগোশ, হরিণ, পাহাড়ী ছাগল, মুরগী, কবুতর, হাঁস, রাজহাঁস, উটপাখি ইত্যাকার যবেহ করার মত যবেহকৃত
প্রাণীর গোশত হালাল।
- মৃত পঙ্গপাল ও মাছ হালাল।
-শাক-সবজি, ফলমূল, সকল দানাশস্য ও উপকারী ফল-ফুল হালাল। পানি, দুধ, মধু তেল ও শিরকা হালাল। লবণ, মরিচ ও মসলা
হালাল।
-লোহা, বালু, খোয়া, প্লাস্টিক, কাঁচ ও রাবার ইত্যাদি ব্যবহার হালাল।
-খাট, চেয়ার, টেবিল, সোফা, তৈজসপত্র, আসবাবপত্র ইত্যাদি ব্যবহার হালাল।
-জীবজন্তু, মোটরগাড়ী, রেলগাড়ী, নৌকা, জাহাজ ও বিমানে আরোহণ হালাল।
-এয়ারকন্ডিশন, রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন, পানি শুকানোর যন্ত্র, পেষণ যন্ত্র, আটা খামির করার যন্ত্র, কিমা
তৈরীর যন্ত্র, নির্মাণ বিষয়ক যন্ত্রপাতি, হিসাব রক্ষণ, পর্যবেক্ষণ যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার এবং পানি, পেট্রোল, খনিজদ্রব্য
উত্তোলন ও শোধন, মুদ্রণ যন্ত্রপাতি ইত্যাদি হালাল।
-সূতী, কাতান, পশম, নাইলন, পলেস্টার ও বৈধ চামড়ার তৈরি বস্ত্র হালাল।
-বিবাহ, বেচা-কেনা, যিম্মাদারী, চেক, ড্রাফট, মনিঅর্ডার, ইজারা বা ভাড়া প্রদান হালাল।
-বিভিন্ন পেশা যেমন কাঠমিস্ত্রীগিরি, কর্মকারগিরি, যন্ত্রপাতি মেরামত, ছাগলপালের রাখালী ইত্যাদি হালাল।
এভাবে গুনলে আর বর্ণনা করলে পাঠকের কি মনে হয় আমরা হালালের ফিরিস্তি দিয়ে শেষ করতে পারব? তাহলে এসব
লোকের কি হলো যে, তারা কোনো কথাই বুঝতে চায় না?
দীন যে সহজ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবুও একথা বলে যারা সব কিছুই হালাল প্রমাণ করতে চায়, তাদের কথা সত্য হলেও
কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য খারাপ। কেননা দীনের মধ্যে কোনো কিছু মানুষের মর্যি মাফিক সহজ হয় না। তা কেবল শরী‘আতে
যেভাবে বর্ণিত হয়েছে সেভাবেই নির্ধারিত হবে। অপর দিকে ‘দীন সহজ’ এরূপ দলীল দিয়ে হারাম কাজ করা আর
শরী‘আতের অবকাশমূলক দিক গ্রহণ করার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। অবকাশমূলক কাজের উদাহরণ হলো সফরে দু’ওয়াক্তের
সালাত একত্রে পড়া, কসর করা, সফরে সিয়াম ভঙ্গ করা, মুকীমের জন্য একদিন এক রাত এবং মুসাফিরের জন্য তিনদিন তিন
রাত মোজার উপর মাসেহ করা, পানি ব্যবহারের অসুবিধা থাকলে তায়াম্মুম করা, অসুস্থ হলে কিংবা বৃষ্টি নামলে
দু’ওয়াক্তের সালাত একত্রে পড়া, বিবাহের প্রস্তাবদাতার জন্য গায়ের মাহরাম মহিলাকে দেখা, শপথের কাফফারায় দাস
মুক্তি, আহার করানো, বস্ত্র দান, ছিয়াম পালনের যে কোনো একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৮৯],
নিরূপায় হলে মৃত প্রাণীর গোশত ভক্ষণ করা ইত্যাদি।
মোটকথা, শরী‘আতে যখন হারাম আছে তখন সকল মুসলিমের জন্যই তার মধ্যে যে গূঢ় রহস্য বা তত্ত্ব লুকিয়ে আছে তা জানা
দরকার। যেমন,
(১) আল্লাহ তা‘আলা হারাম দ্বারা তার বান্দাদের পরীক্ষা করেন। তারা এ সম্পর্কে কেমন আচরণ করে তা তিনি লক্ষ্য
করেন।
(২) কে জান্নাতবাসী হবে আর কে জাহান্নামবাসী হবে হারামের মাধ্যমে তা নির্ণয় করা চলে। যারা জাহান্নামী তারা
সর্বদা প্রবৃত্তির পূজায় মগ্ন থাকে, যা দিয়ে জাহান্নামকে ঘিরে রাখা হয়েছে। আর যারা জান্নাতী তারা দুঃখ-কষ্টে
ধৈর্য ধারণ করে, যে, দুঃখ-কষ্ট দিয়ে জান্নাতকে বেষ্টন করে রাখা হয়েছে। এ পরীক্ষা না থাকলে বাধ্য থেকে অবাধ্যকে
পৃথক করা যেত না।
(৩) যারা ঈমানদার তারা হারাম ত্যাগজনিত কষ্ট সহ্য করাকে সাক্ষাৎ পূণ্য এবং আল্লাহ তা‘আলার যে কোনো নির্দেশ
পালনকে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উপায় বলে মনে করে। ফলে কষ্ট স্বীকার করা তাদের জন্য সহজ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে যারা
কপট ও মুনাফিক্ব তারা কষ্ট সহ্য করাকে যন্ত্রণা, বেদনা ও বঞ্চনা বলে মনে করে। ফলে ইসলামের পথে চলা তাদের জন্য
কঠিন এবং সৎ কাজ সম্পাদন ও আনুগত্য স্বীকার করা ততধিক কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।
(৪) একজন সৎ লোক আল্লাহর সস্তুষ্টি অর্জনার্থে হারাম পরিহার করলে বিনিময়ে তার চেয়ে যে উত্তম কিছু পাওয়া যায় তা
ভালোমত অনুধাবন করতে পারে। এভাবে সে তার মনোরাজ্যে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে।
আলোচ্য পুস্তকের মধ্যে সম্মানিত পাঠক শরী‘আতে হারাম বলে গণ্য এমন কিছু সংখ্যক নিষিদ্ধ বিষয়ের বিবরণ পাবেন
কুরআন-সুন্নাহ থেকে সেগুলো হারাম হওয়ার দলীলসহ। এসব হারাম এমনই যা আমাদের সমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে
এবং বহুসংখ্যক মুসলিম নির্দ্বিধায় তা হরহামেশা করে চলেছে। আমরা কেবল মানুষের কল্যাণ কামনার্থে তাদের সামনে
এগুলো তুলে ধরেছি অতি সংক্ষেপে।
১- শির্ক
আল্লাহর সঙ্গে শির্ক করা যে কোনো বিচারে সবচেয়ে বড় হারাম ও মহাপাপ। আবু বাকরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
‏« ﺃَﻻَ ﺃُﻧَﺒِّﺌُﻜُﻢْ ﺏِﺃَﻛْﺒَﺮِ ﺍﻟﻜَﺒَﺎﺋِﺮ؟ِ ‏» ﺛَﻼَﺛًﺎ، ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﺑَﻠَﻰ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﺍﻹِﺷْﺮَﺍﻙُ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ... ‏»
“আমি কি তোমাদেরকে বৃহত্তম কবীরা গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না (তিনবার)? সাহাবীগণ বললেন, অবশ্যই বলবেন, হে
আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে শির্ক করা .....”। [5]
শির্ক ব্যতীত প্রত্যেক পাপের ক্ষেত্রেই আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমা প্রাপ্তির একটি সম্ভাবনা আছে। তাওবাই শির্কের
একমাত্র প্রতিকার। আল্লাহ বলেছেন,
﴿ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻟَﺎ ﻳَﻐۡﻔِﺮُ ﺃَﻥ ﻳُﺸۡﺮَﻙَ ﺑِﻪِۦ ﻭَﻳَﻐۡﻔِﺮُ ﻣَﺎ ﺩُﻭﻥَ ﺫَٰﻟِﻚَ ﻟِﻤَﻦ ﻳَﺸَﺎٓﺀُۚ﴾ ‏[ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٤٨‏]
“নিশ্চয় আল্লাহ তার সঙ্গে কৃত শির্ককে ক্ষমা করবেন না। তাছাড়া যত গুনাহ আছে তা তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন”।
[সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৮]
এমন বড় শির্ক রয়েছে যা দীন ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এরূপ শির্ককারী ব্যক্তি যদি ঐ অবস্থায়
মারা যায় তাহলে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, অনেক মুসলিম দেশেই আজ শির্কের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ছে।
২. কবরপূজা
মৃত ওলী-আউলিয়া মানুষের অভাব পূরণ করেন, বিপদাপদ দূর করেন, তাঁদের অসীলায় সাহায্য প্রার্থনা ও ফরিয়াদ করা যাবে
ইত্যাকার কথা বিশ্বাস করা শির্ক। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ﻭَﻗَﻀَﻰٰ ﺭَﺑُّﻚَ ﺃَﻟَّﺎ ﺗَﻌۡﺒُﺪُﻭٓﺍْ ﺇِﻟَّﺎٓ ﺇِﻳَّﺎﻩُ﴾ ‏[ﺍﻻﺳﺮﺍﺀ : ٢٣ ‏]
“তোমার রব চুড়ান্ত ফয়সালা দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করবে না”। [সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত:
২৩]
অনুরূপভাবে শাফা‘আতের নিমিত্তে কিংবা বালা-মুসীবত থেকে মুক্তির লক্ষ্যে মৃত-নবী-ওলী প্রমুখের নিকট দো‘আ করাও
শির্ক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ﺃَﻣَّﻦ ﻳُﺠِﻴﺐُ ﭐﻟۡﻤُﻀۡﻄَﺮَّ ﺇِﺫَﺍ ﺩَﻋَﺎﻩُ ﻭَﻳَﻜۡﺸِﻒُ ﭐﻟﺴُّﻮٓﺀَ ﻭَﻳَﺠۡﻌَﻠُﻜُﻢۡ ﺧُﻠَﻔَﺎٓﺀَ ﭐﻟۡﺄَﺭۡﺽِۗ ﺃَﺀِﻟَٰﻪٞ ﻣَّﻊَ ﭐﻟﻠَّﻪِۚ﴾ ‏[ﺍﻟﻨﻤﻞ : ٦٢ ‏]
“বল তো কে নিঃসহায়ের আহ্বানে সাড়া দেন যখন সে তাঁকে আহ্বান জানায় এবং দুঃখ-কষ্ট দূর করেন আর পৃথিবীতে
তোমাদেরকে পূর্ববর্তীদের স্থলাভিষিক্ত করেন? আল্লাহর সঙ্গে কি অন্য কোনো ইলাহ আছে? [সূরা আন-নামল, আয়াত: ৬২]
অনেকেই উঠতে, বসতে বিপদাপদে পীর মুরশিদ, ওলী-আউলিয়া, নবী-রাসূল ইত্যাকার মহাজনদের নাম নেওয়া অভ্যাসে
পরিণত করে নিয়েছে। যখনই তারা কোনো বিপদে বা কষ্টে বা সংকটে পড়ে তখনই বলে ইয়া মুহাম্মাদ, ইয়া আলী, ইয়া
হুসাইন, ইয়া বাদাভী, ইয়া জীলানী, ইয়া শাযেলী, ইয়া রিফা‘ঈ। কেউ যদি ডাকে ‘আইদারূসকে তো অন্যজন ডাকে মা
যায়নাবকে, আরেকজন ডাকে ইবন উলওয়ানকে। অথচ আল্লাহ বলেন,
﴿ ﺇِﻥَّ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺗَﺪۡﻋُﻮﻥَ ﻣِﻦ ﺩُﻭﻥِ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻋِﺒَﺎﺩٌ ﺃَﻣۡﺜَﺎﻟُﻜُﻢۡۖ﴾ ‏[ ﺍﻻﻋﺮﺍﻑ : ١٩٤‏]
“আল্লাহ ব্যতীত আর যাদেরকে তোমরা ডাক তারা তোমাদেরই মত দাস”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৯৪]
কিছু কবরপূজারী আছে যারা কবরকে তাওয়াফ করে, কবরগাত্র চুম্বন করে, কবরে হাত বুলায়, লাল শালুতে মাথা ঠেকিয়ে পড়ে
থাকে, কবরের মাটি তাদের গা-গতরে মাখে, কবরকে সাজদাহ করে, তার সামনে মিনতিভরে দাঁড়ায়, নিজের উদ্দেশ্য ও
অভাবের কথা তুলে ধরে। সুস্থতা কামনা করে, সন্তান চায় অথবা প্রয়োজনাদি পূরণ কামনা করে। অনেক সময় কবরে শায়িত
ব্যক্তিকে ডেকে বলে, ‘বাবা হুযুর, আমি আপনার হুযূরে অনেক দূর থেকে হাযির হয়েছি। কাজেই আপনি আমাকে নিরাশ
করবেন না’। অথচ আল্লাহ বলেন,
﴿ﻭَﻣَﻦۡ ﺃَﺿَﻞُّ ﻣِﻤَّﻦ ﻳَﺪۡﻋُﻮﺍْ ﻣِﻦ ﺩُﻭﻥِ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻣَﻦ ﻟَّﺎ ﻳَﺴۡﺘَﺠِﻴﺐُ ﻟَﻪُۥٓ ﺇِﻟَﻰٰ ﻳَﻮۡﻡِ ﭐﻟۡﻘِﻴَٰﻤَﺔِ ﻭَﻫُﻢۡ ﻋَﻦ ﺩُﻋَﺎٓﺋِﻬِﻢۡ ﻏَٰﻔِﻠُﻮﻥَ ٥ ﴾ ‏[ﺍﻻﺣﻘﺎﻑ : ٥‏]
“তাদের থেকে অধিকতর দিক ভ্রান্ত আর কে আছে, যারা আল্লাহ ব্যতীত এমন সব উপাস্যকে ডাকে যারা কিয়ামত পর্যন্তও
তাদের ডাকে সাড়া দেবে না। অধিকন্তু তারা ওদের ডাকাডাকি সম্বন্ধে কোনো খবর রাখে না।” [সূরা আল-আহক্বাফ,
আয়াত: ৫]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻣَﻦْ ﻣَﺎﺕَ ﻭَﻫْﻮَ ﻳَﺪْﻋُﻮ ﻣِﻦْ ﺩُﻭﻥِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻧِﺪًّﺍ ﺩَﺧَﻞَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭَ ‏»
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে তার সমকক্ষ বা অংশীদার মনে করে তাকে আহ্বান করে, আর ঐ অবস্থায় (ঐ কাজ থেকে
তাওবা না করে) মারা যায় তাহলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে”। [6]
কবর পূজারীরা অনেকেই কবরের পাশে মাথা মূণ্ডন করে। তারা অনেকে ‘মাযার যিয়ারতের নিয়মাবলী’ নামের বই সাথে
রাখে। এসব মাযার বলতে তারা ওলী আউলিয়া বা সাধু-সন্তানদের কবরকে বুঝে থাকে। অনেকের আবার বিশ্বাস, ওলী
আউলিয়াগণ সৃষ্টিজগতের ওপর প্রভাব খাটিয়ে থাকেন, তাঁরা ক্ষতিও করেন; উপকারও করেন। অথচ আল্লাহ বলেন,
﴿ﻭَﺇِﻥ ﻳَﻤۡﺴَﺴۡﻚَ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻀُﺮّٖ ﻓَﻠَﺎ ﻛَﺎﺷِﻒَ ﻟَﻪُۥٓ ﺇِﻟَّﺎ ﻫُﻮَۖ ﻭَﺇِﻥ ﻳُﺮِﺩۡﻙَ ﺑِﺨَﻴۡﺮٖ ﻓَﻠَﺎ ﺭَﺍٓﺩَّ ﻟِﻔَﻀۡﻠِﻪِۦۚ﴾ ‏[ ﻳﻮﻧﺲ : ١٠٧‏]
‘‘আর যদি আপনার রব্ব আপনাকে কোনো অমঙ্গলের স্পর্শে আনেন, তবে তিনি ব্যতীত অন্য কেউ সেটার বিমোচনকারী নেই।
আর যদি তিনি আপনার কোনো মঙ্গল করতে চান, তাহলে তাঁর অনুগ্রহকে তিনি ব্যতীত রূখবারও কেউ নেই”। [সূরা ইউনুস,
আয়াত: ১০৭]
একইভাবে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে মান্নত করাও শির্ক। মাযার ও দরগার নামে মোমবাতি, আগরবাতি মান্নত করে
অনেকেই এরূপ শির্কে জড়িয়ে পড়েন।
৩. গায়রুল্লাহর নামে যবেহ করা
আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে পশু যবেহ ও বলি দেওয়া শির্কে আকবর বা বড় শির্ক-এর অন্যতম। আল্লাহ বলেন,
﴿ﻓَﺼَﻞِّ ﻟِﺮَﺑِّﻚَ ﻭَﭐﻧۡﺤَﺮۡ ٢ ﴾ ‏[ ﺍﻟﻜﻮﺛﺮ : ٢‏]
“আপনার প্রভূর উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করুন এবং যবেহ করুন” [সূলা আল-কাওসার, আয়াত: ২]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
‏« ﻟَﻌَﻦَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻣَﻦْ ﺫَﺑَﺢَ ﻟِﻐَﻴْﺮِ ﺍﻟﻠﻪِ ‏»
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে যবেহ করে তার ওপর আল্লাহর লা‘নত”। [7]
যবেহ-এর সঙ্গে জড়িত হারাম দু’প্রকার। যথা:
১. আল্লাহ ছাড়া অন্যের উদ্দেশ্যে যবেহ করা। যেমন, দেবতার কৃপা লাভের জন্য।
২. আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নাম নিয়ে যবেহ করা। উভয় প্রকার যবেহকৃত পশুর গোশত খাওয়া হরাম।
জাহেলী আরবে জিনের উদ্দেশ্যে প্রাণী যবেহ-এর রেওয়াজ ছিল, যা আজও বিভিন্ন আঙ্গিকে কোনো কোনো মুসলিম দেশে
চালু আছে। সে সময়ে কেউ বাড়ী ক্রয় করলে কিংবা তৈরি করলে অথবা কূপ খনন করলে তাদের ওপর জিন্নের উপদ্রব হতে
পারে ভেবে পূর্বাহ্নেই তারা সেখানে বা দরজার চৌকাঠের উপরে প্রাণী যবেহ করত। এরূপ যবেহ সম্পূর্ণরূপে হারাম।
৪. হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল মনে করা
কোনো কিছু হালাল কিংবা হারাম করার একচ্ছত্র মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। কোনো মানুষ আল্লাহর দেওয়া
হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল করার অধিকার রাখে না। তবুও অনধিকার চর্চা বশে মানুষ কর্তৃক আল্লাহকৃত হালালকে
হারাম ও হারামকে হালালকরণের বহু দৃষ্টান্ত দেখা যায়। নিঃসন্দেহে এটি একটি হারাম কাজ। আর আল্লাহ ছাড়া অন্য
কারো হালাল হারাম করার অধিকার আছে বলে বিশ্বাস করাও শির্ক। জাহেলী তথা অনৈসলামী আইন-কানূন দ্বারা
পরিচালিত বিচারালয়ের নিকট সন্তুষ্টচিত্তে, স্বেচ্ছায় ও বৈধ জ্ঞানে বিচার প্রার্থনা করা এবং এরূপ বিচার প্রার্থনার
বৈধতা আছে বলে আকীদা পোষণ করা বড় শির্কের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে এ মারাত্মক শির্ক প্রসঙ্গে
বলেন,
﴿ﭐﺗَّﺨَﺬُﻭٓﺍْ ﺃَﺣۡﺒَﺎﺭَﻫُﻢۡ ﻭَﺭُﻫۡﺒَٰﻨَﻬُﻢۡ ﺃَﺭۡﺑَﺎﺑٗﺎ ﻣِّﻦ ﺩُﻭﻥِ ﭐﻟﻠَّﻪِ﴾ ‏[ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ : ٣١‏]
“আল্লাহর পরিবর্তে তারা তাদের আলেম ও সাধু-দরবেশদেরকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে”। [সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৩১]
আদী ইবন হাতেম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আল্লাহর নবীকে এ আয়াত পাঠ করতে শুনে বলেছিলেন, “ওরা তো তাদের ইবাদত করে
না’। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন,
‏«ﺃَﻣَﺎ ﺇِﻧَّﻬُﻢْ ﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻮﻧُﻮﺍ ﻳَﻌْﺒُﺪُﻭﻧَﻬُﻢْ، ﻭَﻟَﻜِﻨَّﻬُﻢْ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﺇِﺫَﺍ ﺃَﺣَﻠُّﻮﺍ ﻟَﻬُﻢْ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﺍﺳْﺘَﺤَﻠُّﻮﻩُ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺣَﺮَّﻣُﻮﺍ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﺣَﺮَّﻣُﻮﻩُ ‏»
‘তা বটে। কিন্তু আল্লাহ যা হারাম করেছেন তারা ওদেরকে তা হালাল করে দিলে ওরা তা হালালই মনে করে। একইভাবে
আল্লাহ যা হালাল করেছেন তারা ওদেরকে তা হারাম করে দিলে ওরা তা হারামই মনে করে।”[8]
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে মুশরিকদের আচরণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
﴿ﻭَﻟَﺎ ﻳُﺤَﺮِّﻣُﻮﻥَ ﻣَﺎ ﺣَﺮَّﻡَ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟُﻪُۥ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺪِﻳﻨُﻮﻥَ ﺩِﻳﻦَ ﭐﻟۡﺤَﻖّ﴾ ‏[ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ : ٢٩‏]
“আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তারা তাকে হারাম গণ্য করে না এবং সত্য দ্বীনকে তাদের দীন হিসাবে গ্রহণ
করে না”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ২৯]
অন্যত্র তিনি বলেন,
﴿ﻗُﻞۡ ﺃَﺭَﺀَﻳۡﺘُﻢ ﻣَّﺎٓ ﺃَﻧﺰَﻝَ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻜُﻢ ﻣِّﻦ ﺭِّﺯۡﻕٖ ﻓَﺠَﻌَﻠۡﺘُﻢ ﻣِّﻨۡﻪُ ﺣَﺮَﺍﻣٗﺎ ﻭَﺣَﻠَٰﻠٗﺎ ﻗُﻞۡ ﺀَﺍٓﻟﻠَّﻪُ ﺃَﺫِﻥَ ﻟَﻜُﻢۡۖ ﺃَﻡۡ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﺗَﻔۡﺘَﺮُﻭﻥَ ٥٩﴾ ‏[ ﻳﻮﻧﺲ : ٥٩ ‏]
“আপনি বলুন, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে যে রূযী দান করেছেন, তন্মধ্যে তোমরা যে সেগুলোর কতক হারাম ও কতক
হালাল করে নিয়েছ, তা কি তোমরা ভেবে দেখেছ? আপনি বলুন, আল্লাহ কি তোমাদেরকে এতদ্বিষয়ে অনুমতি দিয়েছেন,
নাকি তোমরা আল্লাহর নামে মনগড়া কথা বলছ?” [সূরা ইউনুস, আয়াত ৫৯]
৫. জাদু ও ভাগ্যগণনা
জাদু ও ভাগ্যগণনা কুফর ও শির্কের পর্যায়ভুক্ত হারাম। জাদু তো পরিষ্কার কুফর এবং সাতটি ধ্বংসাত্মক কবীরা গুনাহের
অন্যতম। জাদু শুধু ক্ষতিই করে, কোনো উপকার করে না। জাদু শিক্ষা করা প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,
﴿ﻭَﻳَﺘَﻌَﻠَّﻤُﻮﻥَ ﻣَﺎ ﻳَﻀُﺮُّﻫُﻢۡ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻨﻔَﻌُﻬُﻢۡۚ﴾ ‏[ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ١٠٢‏]
“তারা এমন জিনিস (জাদু) শিক্ষা করে, যা তাদের অপকারই করে, কোনো উপকার করে না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১০২]
তিনি আরো বলেন,
﴿ﻭَﻟَﺎ ﻳُﻔۡﻠِﺢُ ﭐﻟﺴَّﺎﺣِﺮُ ﺣَﻴۡﺚُ ﺃَﺗَﻰٰ ٦٩﴾ ‏[ ﻃﻪ : ٦٩ ‏]
“জাদুকর যেভাবেই আসুক না কেন সে সফল হবে না”। [সূরা ত্বোয়াহা, আয়াত: ৬৯]
জাদু চর্চাকারী কাফের। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ﻭَﻣَﺎ ﻛَﻔَﺮَ ﺳُﻠَﻴۡﻤَٰﻦُ ﻭَﻟَٰﻜِﻦَّ ﭐﻟﺸَّﻴَٰﻄِﻴﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍْ ﻳُﻌَﻠِّﻤُﻮﻥَ ﭐﻟﻨَّﺎﺱَ ﭐﻟﺴِّﺤۡﺮَ ﻭَﻣَﺎٓ ﺃُﻧﺰِﻝَ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟۡﻤَﻠَﻜَﻴۡﻦِ ﺑِﺒَﺎﺑِﻞَ ﻫَٰﺮُﻭﺕَ ﻭَﻣَٰﺮُﻭﺕَۚ ﻭَﻣَﺎ ﻳُﻌَﻠِّﻤَﺎﻥِ ﻣِﻦۡ ﺃَﺣَﺪٍ ﺣَﺘَّﻰٰ ﻳَﻘُﻮﻟَﺎٓ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻧَﺤۡﻦُ ﻓِﺘۡﻨَﺔٞ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﻜۡﻔُﺮۡۖ﴾ ‏[ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ١٠٢‏]
“সুলায়মান কুফুরী করেন নি। কিন্তু কুফুরী করেছে শয়তানেরা। তারা মানুষকে শিক্ষা দেয় জাদু এবং বাবেলে হারূত-মারূত
নামের দু’জন মালাকের ওপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছিল তা। ঐ ফিরিশতাদ্বয় কাউকে একথা না বলে কিছু শিক্ষা দেয় না যে,
আমরা এক মহাপরীক্ষার জন্য। সুতরাং তুমি (জাদু শিখে) কুফুরী করো না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১০২]
ইসলামী বিধানে জাদুকরকে হত্যা করার কথা বলা হয়েছে। জাদুকরের উপর্জন অপবিত্র ও হারাম। জ্ঞানপাপী, অত্যাচারী ও
দুর্বল ঈমানের লোকেরা অন্যের সঙ্গে শত্রুতা ও জিঘাংসা চরিতার্থ করার জন্য জাদুকরদের নিকটে যায়।
অনেকে আবার জাদুর ক্রিয়া দূর করার জন্য জাদুকরের শরণাপন্ন হয়। এজন্যে যাওয়াও হারাম। বরং তাদের উচিত ছিল
আল্লাহর শরণাপন্ন হওয়া এবং আল্লাহর কালাম যেমন সূরা নাস, ফালাক ইত্যাদি দিয়ে আরোগ্য লাভের চেষ্টা করা।
গণক ও ভবিষ্যদ্বক্তা উভয়েই আল্লাহ তা‘আলাকে অস্বীকারকারী কাফিরদের দলভুক্ত। কারণ, তারা উভয়েই গায়েবের কথা
জানার দাবী করে। অথচ আল্লাহ ছাড়া কেউ গায়েব জানে না।
অনেক সময় তারা সরলমনা লোকদের সম্পদ লুটে নেওয়ার জন্য তাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে ফেলে। এজন্য তারা বালুর উপর
আঁকি-বুকি, চটা (বাটি বা থালা) চালান, হাতের তালুতে ফুঁক, চায়ের পেয়ালা, কাঁচের গুলী, আয়না ইত্যাদি উপকরণ ব্যবহার
করে থাকে। এসব লোকের কথা একটা যদি সত্য হয় তো নিরানব্বইটাই হয় মিথ্যা। কিন্তু গাফিলরা এসব ধোঁকাবাজ-
মিথ্যুকদের এক সত্যকেই হাযার সত্য গণ্য করে নিজেদের ভবিষ্যৎ ভাগ্য, বিয়ে-শাদী, ব্যবসা-বাণিজ্যের শুভাশুভ তাদের
নিকট জানতে চায়। তারা হারানো জিনিস কোথায় কীভাবে পাওয়া যাবে তা জানার জন্য তাদের নিকটে ছুটে যায়। যারা
তাদের কাছে গিয়ে তাদের কথা বিশ্বাস করে, তারা কাফের এবং ইসলাম থেকে বহির্ভূত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏« ﻣَﻦْ ﺃَﺗَﻰ ﻛَﺎﻫِﻨًﺎ، ﺃَﻭْ ﻋَﺮَّﺍﻓًﺎ، ﻓَﺼَﺪَّﻗَﻪُ ﺑِﻤَﺎ ﻳَﻘُﻮﻝُ، ﻓَﻘَﺪْ ﻛَﻔَﺮَ ﺑِﻤَﺎ ﺃُﻧْﺰِﻝَ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ‏»
“যে ব্যক্তি গণক কিংবা ভবিষ্যদ্বক্তার নিকটে যায় এবং সে যা বলে তা বিশ্বাস করে, সে নিশ্চিতভাবেই মুহাম্মাদের
ওপর যা নাযিল হয়েছে তা অস্বীকার করে।” [9]
যে ব্যক্তি তারা গায়েব জানে না বলে বিশ্বাস করে কিন্তু অভিজ্ঞতা কিংবা অনুরূপ কিছু অর্জনের জন্য তাদের নিকটে
যায় সে কাফির হবে না বটে, তবে তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল হবে না। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
‏« ﻣَﻦْ ﺃَﺗَﻰ ﻋَﺮَّﺍﻓًﺎ ﻓَﺴَﺄَﻟَﻪُ ﻋَﻦْ ﺷَﻲْﺀٍ، ﻟَﻢْ ﺗُﻘْﺒَﻞْ ﻟَﻪُ ﺻَﻠَﺎﺓٌ ﺃَﺭْﺑَﻌِﻴﻦَ ﻟَﻴْﻠَﺔً ‏»
“যে ব্যক্তি কোনো ভবিষ্যদ্বক্তার নিকটে যায় এবং তাকে কিছু জিজ্ঞেস করে, তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল হবে না”।
[10] তবে তাকে সালাত অবশ্যই আদায় করতে হবে এবং বিশেষভাবে তওবা করতে হবে।
৬. রাশিফল ও মানব জীবনের ওপর গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব সম্পর্কিত বিশ্বাস
যায়েদ ইবন খালিদ আল-জুহানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, হুদায়বিয়াতে এক রাতে আকাশ থেকে বৃষ্টি নাযিল হয়।
সেদিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজর সালাত শেষে লোকদের দিকে ফিরে বসেন এবং বলেন,
‘তোমাদের রব কী বলেছেন তা কি তোমরা জান? তারা বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি বললেন, ‘আমার
কিছু বান্দা আমার ওপর বিশ্বাসী হয়ে এবং কিছু বান্দা অবিশ্বাসী হয়ে ভোরে উপনীত হয়েছে। যারা বলে, আল্লাহর দয়া
ও অনুগ্রহে বৃষ্টি হয়েছে তারা আমার প্রতি বিশ্বাসী ও গ্রহ-নক্ষত্রে অবিশ্বাসী। আর যারা বলে, অমুক অমুক গ্রহের
প্রভাবে বৃষ্টি হয়েছে তারা আমার প্রতি অবিশ্বাসী ও গ্রহ-নক্ষত্রে বিশ্বাসী।” [11]
গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাবে বৃষ্টি হওয়ার কথা বিশ্বাস করা যেমন কুফুরী, তেমনি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত রাশিফলের আশ্রয়
নেওয়াও কুফুরী। যে ব্যক্তি রাশিফলের ওপর গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাবের কথা বিশ্বাস করবে, সে সরাসরি মুশরিক হয়ে যাবে।
পত্র-পত্রিকা ও বই-পুস্তকে রাশিফলের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে সেগুলো পাঠ করা শির্ক। তবে বিশ্বাস না করে কেবল
মানসিক সান্তনা অর্জনের জন্য পড়লে তাতে শির্ক হবে না বটে; কিন্তু সে গোনাহগার হবে। কেননা শির্কী কোনো কিছু
পাঠ করে সান্ত্বনা লাভ করা বৈধ নয়। তাছাড়া শয়তান কর্তৃক তার মনে উক্ত বিশ্বাস জন্মিয়ে দিতে কতক্ষণ? তখন এ পড়াই
তার শির্কের মাধ্যম হয়ে দাঁড়াবে।
৭. স্রষ্টা যেসব বস্তুতে যে কল্যাণ রাখেন নি তাতে সে কল্যাণ থাকার আকীদা পোষণ করা
আল্লাহ তা‘আলা এ বিশ্ব ও তার মধ্যস্থিত যাবতীয় বস্তু সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু তিনি যে কল্যাণ যে বস্তুর মধ্যে রাখেন নি,
ঐ বস্তু সেই উপকারই করতে পারে বলে অনেকে বিশ্বাস করে। এরূপ বিশ্বাস শির্কের পর্যায়ভুক্ত। যেমন, বহু লোক তাবীয-
তুমার, শির্কী ঝাড়-ফুঁক, বিভিন্ন প্রকার তাগা ও খনিজ পাথর ব্যবহার করে থাকে। তাদের বিশ্বাস, এতে রোগ-বালাই
কাছে ভিড়তে পারে না। আর যদি রোগ হয়েই থাকে তবে এগুলো ব্যবহারে সুস্থতা ফিরে আসে। এগুলো ব্যবহারের পিছনে
গণক, জাদুকর প্রমুখ শ্রেণির পরামর্শ অথবা যুগ পরস্পরায় চলে আসা বিশ্বাস কাজ করে।
অনেকে বদ নযর এড়ানোর জন্য বাচ্চা ও বড়দের গলায় এসব ঝুলিয়ে দেয়, শরীরের অন্যত্রও বেঁধে রাখে (যেমন গলা, হাত ও
কোমরে)। গাড়ী-বাড়ীতেও তাবীয ও দো‘আ-কালাম লিখিত কাগজ ঝুলিয়ে রাখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এতে গাড়ী-
বাড়ী দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে যায় বলে তাদের বিশ্বাস।
অনেকে আবার রোগের হাত থেকে উদ্ধার পেতে কিংবা রোগ যাতে হতে না পারে সে জন্য কয়েক প্রকার ধাতু নির্মিত
আংটি পরে থাকে (যেমন অষ্টধাতুর আংটি প্রভৃতি)। এর ফলে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বা নির্ভরতা হ্রাস পায় এবং হারাম
জিনিস দ্বারা চিকিৎসার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। এসব তাবীযের অনেকগুলোতেই স্পষ্ট শির্কী কথা, জিনের নিকট
ফরিয়াদ, সূক্ষ্ম নকশা ও অবোধ্য কথা লেখা থাকে। অনেক জ্ঞানপাপী শির্কী মন্ত্রের সাথে কুরআনের আয়াত মিশিয়ে
দেয়। কেউ কেউ নাপাক দ্রব্য, ঋতুস্রাবের রক্ত ইত্যাদি দিয়েও তাবীয লেখে। এ ধরনের তাবীয, তাগা, আংটি ঝুলানো
কিংবা বাঁধা স্পষ্ট হারাম। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻣَﻦْ ﻋَﻠَّﻖَ ﺗَﻤِﻴﻤَﺔً ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﺷْﺮَﻙَ ‏»
“যে ব্যক্তি তাবীযের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে নিলো সে নিশ্চয় শির্ক করল”। [12]
তাবীয ব্যবহারকারী যদি বিশ্বাস করে যে, এসব জিনিস আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়াই উপকার কিংবা অপকার করে, তাহলে সে বড়
শির্ক করার দোষে দুষ্ট হবে। আর যদি সে বিশ্বাস করে যে, এগুলো উপকার-অপকারের একটি উপকরণ মাত্র। অথচ আল্লাহ
তা‘আলা এগুলোকে রোগ বিনাশ সংক্রান্ত কোনো উপকার বা অপকারের উপকরণ করেন নি, সেক্ষেত্রে সে ছোট শির্কের
গুনাহ করার দোষে দুষ্ট হবে। আর তখন এটি ‘কারণ উদ্ভূত’ শির্কের পর্যায়ভুক্ত হবে।
৮. লোক দেখানো ইবাদত
আল্লাহ তা‘আলার নিকটে আমল কবুল হওয়ার জন্য রিয়া বা লৌকিকতামুক্ত এবং কুরআন-সু্ন্নাহ নির্দেশিত নিয়মে হওয়া
অপরিহার্য। যে ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্য ইবাদত করবে, সে ছোট শির্ক করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হবে এবং তার আমল
বরবাদ হয়ে যাবে। যেমন লোক দেখানো সালাত। আল্লাহ তা‘আলা এ সম্পর্কে বলেন,
﴿ﺇِﻥَّ ﭐﻟۡﻤُﻨَٰﻔِﻘِﻴﻦَ ﻳُﺨَٰﺪِﻋُﻮﻥَ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﻫُﻮَ ﺧَٰﺪِﻋُﻬُﻢۡ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻗَﺎﻣُﻮٓﺍْ ﺇِﻟَﻰ ﭐﻟﺼَّﻠَﻮٰﺓِ ﻗَﺎﻣُﻮﺍْ ﻛُﺴَﺎﻟَﻰٰ ﻳُﺮَﺍٓﺀُﻭﻥَ ﭐﻟﻨَّﺎﺱَ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺬۡﻛُﺮُﻭﻥَ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﻗَﻠِﻴﻠٗﺎ ١٤٢﴾ ‏[ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ١٤٢ ‏]
“নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে প্রতারণা করে। আর তিনি তাদের সাথে (সেটার জবাবে) কৌশল অবলম্বনকারী। আর
যখন তারা সালাতে দাঁড়ায় তখন আলস্যভরে দাঁড়ায়। তারা লোকদের দেখায় যে তারা সালাত আদায় করছে; কিন্তু
আল্লাহকে তারা কমই স্মরণ করে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৪২]
স্বীয় কাজের কথা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ুক এবং লোকেরা শুনে বাহবা দিক এ নিয়তে যে কাজ করবে সে শির্কে নিপতিত
হবে। এরূপ বাসনাকারী সম্পর্কে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏« ﻣَﻦْ ﺳَﻤَّﻊَ ﺳَﻤَّﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻪِ ﻭَﻣَﻦْ ﻳُﺮَﺍﺋِﻲ ﻳُﺮَﺍﺋِﻲ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻪِ ‏»
“যে ব্যক্তি মানুষকে শুনানোর জন্য কাজ করে আল্লাহ তার বদলে তাকে (কিয়ামতের দিন) শুনিয়ে দিবেন। আর যে লোক
দেখানোর জন্য কাজ করে আল্লাহ তার বদলে তাকে (কিয়ামতের দিন) দেখিয়ে দিবেন।” [13]
অর্থাৎ তিনি এসব লোককে কিয়ামতের দিন মানুষের সামনে অপমানিত করবেন এবং কঠোর শাস্তি দিবেন।
যে আল্লাহ ও মানুষ উভয়ের সন্তুষ্টিকল্পে ইবাদত করবে তার আমল বরবাদ হয়ে যাবে। হাদীসে কুদসীতে এসেছে, মহান
আল্লাহ বলেন,
‏«ﺃَﻧَﺎ ﺃَﻏْﻨَﻰ ﺍﻟﺸُّﺮَﻛَﺎﺀِ ﻋَﻦِ ﺍﻟﺸِّﺮْﻙِ، ﻣَﻦْ ﻋَﻤِﻞَ ﻋَﻤَﻠًﺎ ﺃَﺷْﺮَﻙَ ﻓِﻴﻪِ ﻣَﻌِﻲ ﻏَﻴْﺮِﻱ، ﺗَﺮَﻛْﺘُﻪُ ﻭَﺷِﺮْﻛَﻪُ ‏»
“আমি অংশীবাদিতা (শির্ক) থেকে সকল অংশীদারের তুলনায় বেশি মুখাপেক্ষীহীন। যে কেউ কোনো আমল করে এবং
তাতে অন্যকে আমার সাথে শরীক করে, আমি তাকে ও তার আমল উভয়কেই বর্জন করি”। [14] তবে কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির
নিমিত্তে কোনো আমল শুরু করার পর যদি তার মধ্যে লোক দেখানো ভাব জাগ্রত হয় এবং সে তা ঘৃণা করে ও তা থেকে সরে
আসতে চেষ্টা করে, তাহলে তার ঐ আমল শুদ্ধ হবে। কিন্তু যদি সে তা না করে; বরং লোক দেখানো ভাব মনে উদয় হওয়ার জন্য
প্রশান্তি ও আনন্দ অনুভব করে, তাহলে অধিকাংশ আলেমের মতে তার ঐ আমল বাতিল হয়ে যাবে।
৯. কুলক্ষণ গ্রহণ
কুলক্ষণ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺟَﺎٓﺀَﺗۡﻬُﻢُ ﭐﻟۡﺤَﺴَﻨَﺔُ ﻗَﺎﻟُﻮﺍْ ﻟَﻨَﺎ ﻫَٰﺬِﻩِۦۖ ﻭَﺇِﻥ ﺗُﺼِﺒۡﻬُﻢۡ ﺳَﻴِّﺌَﺔٞ ﻳَﻄَّﻴَّﺮُﻭﺍْ ﺑِﻤُﻮﺳَﻰٰ ﻭَﻣَﻦ ﻣَّﻌَﻪُۥٓۗ﴾ ‏[ ﺍﻻﻋﺮﺍﻑ : ١٣١‏]
“যখন তাদের (ফির‘আউন ও তার প্রজাদের) কোনো কল্যাণ দেখা দিত তখন তারা বলত, এটা আমাদের জন্য হয়েছে। আর যদি
কোনো অকল্যাণ হতো, তারা তখন মূসা ও তার সাথীদের অলুক্ষণে বলে গণ্য করত”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৩১]
আরবরা যাত্রা ইত্যাদি কাজের প্রাক্কালে পাখি উড়িয়ে দিয়ে তার শুভাশুভ নির্ণয় করত। পাখি ডান দিকে গেলে শুভ
মনে করে সে কাজে নেমে পড়ত। আর বাম দিকে গেলে অশুভ মনে করে তা থেকে বিরত থাকত। এভাবে শুভাশুভ নির্ণয়ের
বিধান প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏« ﺍﻟﻄِّﻴَﺮَﺓُ ﺷِﺮْﻙٌ ‏»
“কুলক্ষণে বিশ্বাস করা শির্ক”। [15]
মাস, দিন, সংখ্যা, নাম ইত্যাদিকে দুর্ভাগ্য বা অশুভ প্রতীক হিসাবে চিহ্নিত করাও তাওহীদ পরিপন্থ হারাম আক্বীদার
অন্তর্ভুক্ত। যেমন অনেক দেশে হিজরী সনের ছফর মাসে বিবাহ করা থেকে বিরত থাকা হয় ও প্রতি মাসের শেষ বুধবারকে
চিরস্থায়ী কুলক্ষণ মনে করা হয়। বিশ্বজুড়ে আজ ১৩ সংখ্যাকে ‘অলুক্ষণে তের’ unlucky thirteen বলা হয়। কেউ যদি তের
ক্রমিকে একবার পড়ে যায় তাহলে তার আর দুশ্চিন্তার সীমা থাকে না। অনেকে কানা-খোঁড়া, পাগল ইত্যাকার
প্রতিবন্ধীদের কাজের শুরুতে দেখলে মাথায় হাত দিয়ে বসে। দোকান খুলতে গিয়ে পথে এমনিতর কোনো কানা-খোঁড়াকে
দেখতে পেলে তার আর দোকান খোলা হয় না। অশুভ মনে করে সে ফিরে আসে। অথচ এ জাতীয় আকীদা পোষণ করা হারাম ও
শির্ক। এজন্য যারা কুলক্ষণে বিশ্বাসী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে তাঁর উম্মতের অন্তর্ভুক্ত গণ্য
করেন নি। ইমরান ইবন হুছাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻟَﻴْﺲَ ﻣِﻨَّﺎ ﻣَﻦْ ﺗَﻄَﻴَّﺮَ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﻄُﻴِّﺮَ ﻟَﻪُ، ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻜَﻬَّﻦَ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﻜُﻬِّﻦَ ﻟَﻪُ‏» ﺃَﻇُﻨُّﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﺃَﻭْ ﺳَﺤَﺮَ ﺃَﻭْ ﺳُﺤِﺮَ ﻟَﻪُ‏»
“যে ব্যক্তি নিজে কুলক্ষণে বিশ্বাস করে ও যার কারণে অন্যের মাঝে কুলক্ষণের প্রতি বিশ্বাসের প্রবণতা সৃষ্টি হয় এবং যে
ব্যক্তি ভাগ্য গণনা করে ও যার জন্য ভাগ্য গণনা করা হয় (বর্ণনাকারী মনে করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এ সম্পর্কেও বলেছিলেন) এবং যে জাদু করে ও যার কারণে জাদু করা হয় সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়”। [16]
কেউ কোনো বিষয়ে কুলক্ষণে নিপতিত হলে তাকে এজন্য কাফ্ফারা দিতে হবে। কাফ্ফারা এখানে কোনো অর্থ কিংবা
ইবাদত নয়; বরং পাপ বিমোচক একটি দোআ, যা আব্দুল্লাহ ইবন আমর বর্ণিত হাদীসে এসেছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা বললেন, কুলক্ষণ যে ব্যক্তিকে কোনো কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে, নিশ্চয় সে
শির্ক করে। সাহাবীগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলুলাল্লাহ! তার কাফফারা কী হবে? তিনি বললেন, ঐ ব্যক্তি বলবে:
‏«ﺍﻟﻠﻬُﻢَّ ﻟَﺎ ﺧَﻴْﺮَ ﺇِﻟَّﺎ ﺧَﻴْﺮُﻙَ، ﻭَﻟَﺎ ﻃَﻴْﺮَ ﺇِﻟَّﺎ ﻃَﻴْﺮُﻙَ، ﻭَﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﻏَﻴْﺮُﻙَ ‏»
উচ্ছারণ: আল্লা-হুম্মা লা খায়রা ইল্লা খায়রুকা, ওয়ালা ত্বায়রা ইল্লা ত্বায়রুকা, ওয়ালা ইলা-হা গায়রুকা।
“হে আল্লাহ! আপনার কল্যাণ ছাড়া কোনো কল্যাণ নেই। আপনার সৃষ্ট কুলক্ষণ ছাড়া কোনো কুলক্ষণ নেই। আর আপনি ছাড়া
কোনো (হক) মা‘বুদও নেই”। [17]
তবে সুলক্ষণ-কুলক্ষণের ধারণা মনে জন্ম নেওয়া স্বভাবগত ব্যাপার, যা সময়ে বাড়ে ও কমে। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা
আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বা নির্ভর করা। যেমন, ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন,
‏« ﻭَﻣَﺎ ﻣِﻨَّﺎ ﺇِﻟَّﺎ ﻭَﻟَﻜِﻦَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻳُﺬْﻫِﺒُﻪُ ﺑِﺎﻟﺘَّﻮَﻛُّﻞ «ِ
“আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে, মনে কুলক্ষণ সংক্রান্ত কিছুই উঁকি দেয় না। কিন্তু তাওয়াক্কুল (আল্লাহর ওপর নির্ভরতা)
দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তা দূর করে দেন”। [18]
১০. আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কসম করা
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টির মধ্য থেকে যার নামে ইচ্ছা কসম করতে পারেন। কিন্তু সৃষ্টির জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো
নামে কসম করা জায়েয নেই। তা সত্ত্বেও অনেক মানুষের মুখেই নির্বিবাদে গায়রুল্লাহর নামে কসম উচ্চারিত হয়। কসম
মূলতঃ এক প্রকার সম্মান, যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ পাওয়ার যোগ্য নয়। ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﺃَﻻَ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻳَﻨْﻬَﺎﻛُﻢْ ﺃَﻥْ ﺗَﺤْﻠِﻔُﻮﺍ ﺑِﺂﺑَﺎﺋِﻜُﻢ ،ْ ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﺣَﺎﻟِﻔًﺎ ﻓَﻠْﻴَﺤْﻠِﻒْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻭْ ﻟِﻴَﺼْﻤُﺖْ ‏»
“সাবধান! নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তোমাদের পিতৃপুরুষের নামে শপথ করতে নিষেধ করেছেন। কারো যদি শপথ
করতেই হয়, তবে সে যেন আল্লাহর নামে শপথ করে অথবা চুপ থাকে”। [19]
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত আরেকটি হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻣَﻦْ ﺣَﻠَﻒَ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﺷْﺮَﻙَ‏»
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কসম করল, সে শির্ক করল”। [20]
অপর এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻣَﻦْ ﺣَﻠَﻒَ ﺑِﺎﻟْﺄَﻣَﺎﻧَﺔِ ﻓَﻠَﻴْﺲَ ﻣِﻨَّﺎ ‏»
“যে আমানত (আনুগত্য, ইবাদত, সম্পদ, গচ্ছিত দ্রব্য ইত্যাদি) এর নামে কসম করে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়”। [21]
সুতরাং কা‘বা, আমানত, মর্যাদা, সাহায্য, অমুকের বরকত, অমুকের জীবন, নবীর মর্যাদা, অলীর মর্যাদা, পিতা-মাতা ও
সন্তানের মাথা ইত্যাদি দিয়ে কসম খাওয়া নিষিদ্ধ।
কেউ যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম করে তবে তার কাফ্ফারা হলো ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ পাঠ করা। যেমন,
সহীহ হাদীসে এসেছে:
‏« ﻣَﻦْ ﺣَﻠَﻒَ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻓِﻲ ﺣَﻠِﻔِﻪِ : ﻭَﺍﻟﻠَّﺎﺕِ ﻭَﺍﻟﻌُﺰَّﻯ، ﻓَﻠْﻴَﻘُﻞْ : ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ‏»
“যে ব্যক্তি শপথ করতে গিয়ে লাত ও উয্যার নামে শপথ করে বসে, সে যেন বলে, ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ”। [22]
উল্লিখিত অবৈধ শপথের ধাঁচে কিছু শির্কী ও হারাম কথা কতিপয় মুসলিমের মুখে উচ্চারিত হতে শোনা যায়। যেমন, বলা হয়
‘আমি আল্লাহ ও আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি’। ‘আল্লাহ আর আপনার ওপরই ভরসা’। ‘এটা আল্লাহ ও তোমার পক্ষ থেকে
হয়েছে’। ‘আল্লাহ ও আপনি ছাড়া আমার আর কেউ নেই’। ‘আমার জন্য উপরে আল্লাহ আর নিচে আপনি আছেন’। ‘আল্লাহ ও
অমুক যদি না থাকত’। ‘‘আমি ইসলাম থেকে মুক্ত বা ইসলামের ধার ধারি না’। ‘হায় কালের চক্র, আমার সব শেষ করে দিল’।
‘এখন আমার দুঃসময় চলছে’। ‘এ সময়টা অলক্ষণে’। ‘সময় বিশ্বাসঘাতকতা করেছে’ ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, সময়কে গালি দিলে সময়ের স্রষ্টা আল্লাহকেই গালি দেওয়া হয় বলে হাদীসে কুদসীতে এসেছে। [23] সুতরাং
সময়কে গালি দেওয়া নিষিদ্ধ।
অনুরূপভাবে প্রকৃতি যা চেয়েছে বলাও একই পর্যায়ভুক্ত।
অনুরূপভাবে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের সাথে দাসত্ব বা দাস অর্থবোধক শব্দ ব্যবহারও এ পর্যায়ে পড়ে। যেমন আব্দুল মসীহ, আবদুর
রাসূল, আবদুন নবী, আবদুল হুসাইন ইত্যাদি।
আধুনিক কিছু শব্দ ও পরিভাষাও রয়েছে যা তাওহীদের পরিপন্থী। যেমন, ইসলামী সমাজতন্ত্র, ইসলামী গণতন্ত্র, জনগণের
ইচ্ছাই আল্লাহর ইচ্ছা, দীন আল্লাহর আর দেশ সকল মানুষের, আরব্য জাতীয়তাবাদের নামে শপথ, বিপ্লবের নামে শপথ করে
বলছি ইত্যাদি।
কোনো রাজা-বাদশাহকে ‘শাহানশাহ’ বা ‘রাজাধিরাজ’ বলাও হারাম। একইভাবে কোনো মানুষকে ‘কাযীউল কুযাত’ বা
‘বিচারকদের উপরস্থ বিচারক’ বলা যাবে না।
অনুরূপভাবে কোনো কাফির বা মুনাফিকের ক্ষেত্রে সম্মানসূচক ‘সাইয়িদ’ তথা ‘জনাব’ বা অন্য ভাষার অনুরূপ কোনো শব্দ
ব্যবহার করাও সিদ্ধ নয়।
আফসোস, অনুশোচনা ও বিরাগ প্রকাশের জন্য ‘যদি’ ব্যবহার করে বলা (যেমন এটা বলা যে, ‘যদি এটা করতাম তাহলে ওটা হত
না’), কারণ, এমন কথা বললে শয়তানের খপ্পরে পড়ে যেতে হয়।
অনুরূপ ‘হে আল্লাহ! তুমি চাইলে আমাকে ক্ষমা করো’ এ জাতীয় কথা বলাও বৈধ নয়। [বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, মু‘জামুল
মানাহিল লাফযিয়্যাহ, শাইখ বকর আবদুল্লাহ আবু যায়েদ]
১১. খাতির জমানোর জন্য মুনাফিক ও ফাসিকদের সঙ্গে উঠাবসা করা
দুর্বল ঈমানের অনেক মানুষই পাপাচারী ও দুষ্কৃতিকারীদের সঙ্গে স্বেচ্ছায় উঠাবসা করে। এমনকি আল্লাহর দীন ও তার
অনুসারীদের প্রতি যারা অহরহ ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে, তাদের সঙ্গেও তারা দহরম-মহরম সম্পর্কে রেখে চলে, তাদের মোসাহেবী
করে। অথচ এ কাজ যে হারাম তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺭَﺃَﻳۡﺖَ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺨُﻮﺿُﻮﻥَ ﻓِﻲٓ ﺀَﺍﻳَٰﺘِﻨَﺎ ﻓَﺄَﻋۡﺮِﺽۡ ﻋَﻨۡﻬُﻢۡ ﺣَﺘَّﻰٰ ﻳَﺨُﻮﺿُﻮﺍْ ﻓِﻲ ﺣَﺪِﻳﺚٍ ﻏَﻴۡﺮِﻩِۦۚ ﻭَﺇِﻣَّﺎ ﻳُﻨﺴِﻴَﻨَّﻚَ ﭐﻟﺸَّﻴۡﻄَٰﻦُ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﻘۡﻌُﺪۡ ﺑَﻌۡﺪَ ﭐﻟﺬِّﻛۡﺮَﻯٰ ﻣَﻊَ ﭐﻟۡﻘَﻮۡﻡِ ﭐﻟﻈَّٰﻠِﻤِﻴﻦَ ٦٨ ﴾ ‏[ ﺍﻻﻧﻌﺎﻡ : ٦٨‏]
“যখন আপনি তাদেরকে আমার কোনো আয়াত বা বিধান সম্পর্কে উপহাসমূলক আলোচনায় মগ্ন দেখতে পান তখন আপনি তাদের
থেকে সরে থাকুন, যে পর্যন্ত না তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত হয়। আর যদি শয়তান আপনাকে ভূলিয়ে দেয়, তাহলে স্মরণে আসার
পর যালিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে আপনি আর বসবেন না”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৬৮]
সুতরাং ফাসিক-মুনাফিকদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক যত গভীরই হউক কিংবা তাদের সাথে সমাজ-সামাজিকতায় যতই
মজা লাগুক এবং তাদের কণ্ঠ যতই মধুর হউক তাদের সঙ্গে উঠাবসা করা বৈধ নয়।
হ্যাঁ, যে ব্যক্তি তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত প্রদান করে, তাদের বাতিল আকীদার প্রতিবাদ করে কিংবা তাদেরকে
অন্যায় থেকে নিষেধ করার জন্য তাদের নিকট গমনাগমন করে সে উক্ত নির্দেশের আওতাভুক্ত হবে না। স্বেচ্ছায়, খুশীমনে ও
কোনো কিছু না বলে নীরবে তাদের সাথে তাল মিলিয়ে রাখাতেই সব সমস্যা। অন্যত্র আল্লাহতা‘আলা বলেন,
﴿ﻓَﺈِﻥ ﺗَﺮۡﺿَﻮۡﺍْ ﻋَﻨۡﻬُﻢۡ ﻓَﺈِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻟَﺎ ﻳَﺮۡﺿَﻰٰ ﻋَﻦِ ﭐﻟۡﻘَﻮۡﻡِ ﭐﻟۡﻔَٰﺴِﻘِﻴﻦَ ٩٦﴾ ‏[ ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ : ٩٦‏]
“যদি তোমরা তাদের প্রতি সন্তুষ্টও থাক, তবে (জেনে রেখ) আল্লাহ ফাসিক বা দৃষ্কৃতিকারী সম্প্রদায়ের প্রতি সন্তুষ্ট নন”।
[সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৯৬]
১২. সালাতে ধীরস্থিরতা পরিহার করা
সবচেয়ে বড় চুরি হচ্ছে সালাতে চুরি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏«ﺃَﺳْﻮَﺃُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺳَﺮِﻗَﺔً ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳَﺴْﺮِﻕُ ﻣِﻦْ ﺻَﻠَﺎﺗِﻪِ‏» ." ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﻭَﻛَﻴْﻒَ ﻳَﺴْﺮِﻕُ ﻣِﻦْ ﺻَﻠَﺎﺗِﻪِ؟ ﻗَﺎﻝَ : " ‏« ﻟَﺎ ﻳُﺘِﻢُّ ﺭُﻛُﻮﻋَﻬَﺎ ﻭَﻟَﺎ ﺳُﺠُﻮﺩَﻫَﺎ‏» " ﺃَﻭْ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﻟَﺎ ﻳُﻘِﻴﻢُ ﺻُﻠْﺒَﻪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺮُّﻛُﻮﻉِ ﻭَﺍﻟﺴُّﺠُﻮﺩِ‏» .
“সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর সেই ব্যক্তি যে সালাতে চুরি করে। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! সে কীভাবে সালাতে চুরি
করে? তিনি বললেন, সে রুকু-সাজদাহ পরিপূর্ণভাবে করে না’। [24]
আজকাল অধিকাংশ মুসল্লীকে দেখা যায় যে তারা সালাতে ধীরস্থির ভাব বজায় রাখে না। ধীরে-সুস্থে রূকু-সাজদাহ করে
না। রুকু থেকে যখন মাথা তোলে তখন পিঠ সোজা করে দাঁড়ায় না এবং দু’সাজদাহর মাঝে পিঠ টান করে বসে না। খুব কম
মসজিদই এমন পাওয়া যাবে যেখানে এ জাতীয় দু’চারজন পাওয়া যাবে না। অথচ সালাতে ধীরস্থিরতা বজায় রাখা
সালাতের অন্যতম রুকন। স্বেচ্ছায় তা পরিহার করলে কোনো মতেই সালাত শুদ্ধ হবে না। সুতরাং বিষয়টি বেশ গুরুতর।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻟَﺎ ﺗُﺠْﺰِﺉُ ﺻَﻠَﺎﺓُ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞِ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﻘِﻴﻢَ ﻇَﻬْﺮَﻩُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺮُّﻛُﻮﻉِ ﻭَﺍﻟﺴُّﺠُﻮﺩِ ‏»
“কোনো ব্যক্তি যে পর্যন্ত না রুকু-সাজদায় তার পৃষ্ঠদেশ সোজা করবে, সে পর্যন্ত তার সালাত যথার্থ হবে না”। [25]
কাজটি যে অবৈধ এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। যে মুসল্লী এরূপ করে সে ভৎর্সনার যোগ্য। আবু আব্দুল্লাহ আশ‘আরী
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা সাহাবীগণের সাথে সালাত
আদায়ের পর তাদের একটি দলের সাথে বসা অবস্থায় ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে সালাতে দাঁড়ালো। সে ঠোকর মেরে
রুকু-সাজদা করছিল। তা দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমরা কি এ লোকটিকে লক্ষ্য করেছ?
এভাবে চালাত আদায় করে কেউ যদি মারা যায়, তবে সে মুহাম্মাদের মিল্লাত ছাড়া অন্য মিল্লাতে মারা যাবে। কাক
যেমন রক্তে ঠোকর মারে সে তেমনি করে তার সালাতে ঠোকর মারছে। যে ব্যক্তি রুকু করে আর সাজদায় গিয়ে ঠোকর মারে
তার দৃষ্টান্ত সেই ক্ষুধার্ত লোকের ন্যায়, যে একটি দু’টির বেশি খেজুর খেতে পায় না। দু’টি খেজুরে তার কতটুকু ক্ষুধা
মিটাতে পারে?” [26]
যায়েদ ইবন ওয়াহাব থেকে বর্ণিত, একবার হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জনৈক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন যে, সে রুকু-
সাজদাহ পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় করছে না। তিনি তাকে বললেন, ‘তুমি সালাত আদায় কর নি। আর এ আবস্থায় যদি তুমি মারা
যাও, তাহলে যে দীনসহ আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাঠিয়েছিলেন তুমি তার
বাইরে মারা যাবে”। [27]
যে ব্যক্তি সালাতে ধীরস্থিরতা বজায় রাখে না, সে যখন তার বিধান জানতে পারবে তখনকার ওয়াক্তের ফরয সালাত
তাকে আবার পড়তে হবে। আর অতীতে যা ভুল হয়ে গেছে সেজন্য তওবা করবে, সেগুলো আর পুনরায় পড়তে হবে না। যেমন,
হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন জনৈক দ্রুত সালাত আদায়কারীকে লক্ষ্য করে
বললেন,
‏« ﺍﺭْﺟِﻊْ ﻓَﺼَﻞِّ، ﻓَﺈِﻧَّﻚَ ﻟَﻢْ ﺗُﺼَﻞ «ِّ
“যাও, সালাত আদায় কর। কেননা তুমি তো সালাত আদায় কর নি”। [28] এখানে অতীত সালাত কাযা করার কথা বলা হয় নি।
১৩. সালাতে অনর্থক কাজ ও বেশি বেশি নড়াচড়া করা
সালাতে অনর্থক কাজ ও বেশি বেশি নড়াচড়া করা এমন এক আপদ, যা থেকে অনেক মুসল্লীই বাঁচতে পারে না। কারণ তারা
আল্লাহর নিম্নোক্ত আদেশ প্রতিপালন করে না:
﴿ﻭَﻗُﻮﻣُﻮﺍْ ﻟِﻠَّﻪِ ﻗَٰﻨِﺘِﻴﻦَ ٢٣٨﴾ ‏[ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ٢٣٨‏]
“তোমরা আল্লাহর জন্য অনুগত হয়ে দাঁড়াও”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৩৮]
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ﻗَﺪۡ ﺃَﻓۡﻠَﺢَ ﭐﻟۡﻤُﺆۡﻣِﻨُﻮﻥَ ١ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫُﻢۡ ﻓِﻲ ﺻَﻠَﺎﺗِﻬِﻢۡ ﺧَٰﺸِﻌُﻮﻥَ ٢﴾ ‏[ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻮﻥ : ١، ٢ ‏]
“নিশ্চয় সেই সকল মুমিন সফলকাম, যারা নিজেদের সালাতে বিনীত থাকে”। [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ১-২]
কিন্তু উক্ত লোকেরা আল্লাহর এ বাণীর মর্মার্থ বুঝে না। তাই সালাতে আদবের পরিপন্থী অনেক কিছুই তারা করে থাকে।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাজদার মধ্যে মাটি সমান করা যাবে কি-না জিজ্ঞেস করা হলে তিনি
বলেছিলেন, সালাত অবস্থায় তুমি কিছু মুছতে পারবে না,
‏« ﺇِﻥْ ﻛُﻨْﺖَ ﻓَﺎﻋِﻠًﺎ ﻓَﻮَﺍﺣِﺪَﺓ«ً
“একান্তই যদি করতে হয় তাহলে কংকরাদি একবার সমান করতে পারবে’’। [29]
আলেমগণ বলেছেন, সালাতে নিষ্প্রয়োজনে বেশি মাত্রায় লাগাতারভাবে নড়াচড়া করলে সালাত বাতিল হয়ে যাবে।
সুতরাং যারা সালাতে নিরর্থক খেলায় লিপ্ত হয় তাদের অবস্থা কেমন হতে পারে? তাদের তো দেখা যায়, তারা আল্লাহর
সামনে দাঁড়িয়েছে। অথচ ঘড়ির সময় নিরীক্ষণ করছে কিংবা কাপড় সোজা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অথবা আঙ্গুল দিয়ে
নাক পরিষ্কার করছে। চোখ দিয়ে ডানে-বামে তাকাচ্ছে। আবার আকাশের দিকেও তাকাচ্ছে, অথচ উপরের দিকে
তাকানোর কারণে তাদের চোখ যে উপড়ে ফেলা হতে পারে কিংবা শয়তান যে তাদের সালাতের কিছু অংশ ছিনিয়ে
নিচ্ছে এ ব্যাপারে তাদের মনে কোনোই উদ্বেগ নেই। [30]
১৪. সালাতে ইচ্ছাপূর্বক ইমামের আগে মুক্তাদীর গমন
যে কোনো কাজে তাড়াহুড়া করা মানুষের জন্মগত স্বভাব। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,
﴿ﻭَﻛَﺎﻥَ ﭐﻟۡﺈِﻧﺴَٰﻦُ ﻋَﺠُﻮﻟٗﺎ ١١﴾ ‏[ ﺍﻻﺳﺮﺍﺀ : ١١‏]
“মানুষ খুব দ্রুততা প্রিয়।” [বনী ইসরাঈল, আয়াত: ১১]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﺍﻷَﻧَﺎﺓُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟﻌَﺠَﻠَﺔُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥِ ‏»
“ধীরস্থিরতা আল্লাহর পক্ষ থেকে আর তাড়াহুড়া শয়তানের পক্ষ থেকে”। [31]
জামা‘আতের মধ্যে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, ডানে-বামে অনেক মুসল্লী ইমামের রুকু-সাজদায় যাওয়ার আগেই রুকু-সাজদায়
চলে যাচ্ছে। এমনকি লক্ষ্য করলে নিজের মধ্যেও এ প্রবণতা দেখা যায়। উঠা-বসার তাকবীরগুলোতে তো এটা হরহামেশাই
হতে দেখা যায়। এমনকি অনেকে ইমামের আগে সালামও ফিরিয়ে ফেলে। বিষয়টি অনেকের নিকটই গুরুত্ব পায় না। অথচ নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এজন্য কঠোর শাস্তির হুমকি শুনিয়েছেন। তিনি বলেন,
‏«ﺃَﻣَﺎ ﻳَﺨْﺸَﻰ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ - ﺃَﻭْ : ﻻَ ﻳَﺨْﺸَﻰ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ - ﺇِﺫَﺍ ﺭَﻓَﻊَ ﺭَﺃْﺳَﻪُ ﻗَﺒْﻞَ ﺍﻹِﻣَﺎﻡِ، ﺃَﻥْ ﻳَﺠْﻌَﻞَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺭَﺃْﺳَﻪُ ﺭَﺃْﺱَ ﺣِﻤَﺎﺭ،ٍ ﺃَﻭْ ﻳَﺠْﻌَﻞَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺻُﻮﺭَﺗَﻪُ ﺻُﻮﺭَﺓَ ﺣِﻤَﺎﺭٍ ‏»
“সাবধান! যে ব্যক্তি ইমামের আগে মাথা তোলে তার কি ভয় হয় না যে, আল্লাহ তার মাথাটা গাধার মাথায় রূপান্তরিত
করতে পারেন”? [32]
একজন মুসল্লীকে যখন ধীরে সুস্থে সালাতে উপস্থিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে এবং তাড়াতাড়ি বা দ্রুত পায়ে নিষেধ করা
হয়েছে [33] , তখন স্বীয় সালাত যে ধীরে-সুস্থে আদায় করতে হবে তাতে আর সন্দেহ কি? আবার কিছু লোকের নিকট ইমামের
আগে গমন ও পিছনে পড়ে থাকার বিষয়টি তালগোল পাকিয়ে যায়। তাই মুজতাহিদগণ এজন্য একটি সুন্দর নিয়ম উল্লেখ
করেছেন। তা হলো, ইমাম যখন তাকবীর শেষ করবেন মুক্তাদী তখন নড়াচড়া শুরু করবে। ইমাম ‘আল্লাহু আকবার’ এর ‘র’ বর্ণ
উচ্চারণ করা মাত্রই মুক্তাদী রুকু-সাজদাহয় যাওয়ার জন্য মাথা নীচু করা শুরু করবে। অনুরূপভাবে রুকু থেকে মাথা তোলার
সময় ইমামের ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ’-এর ‘হ’ বর্ণ উচ্চারণ শেষ হলে মুক্তাদী মাথা তুলবে। এর আগেও করবে না,
পরেও না। এভাবে সমস্যাটা দূর হয়ে যাবে।
সাহাবীগণ যাতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগে চলে না যান সে বিষয়ে খুব সতর্ক ও সচেষ্ট
থাকতেন। বারা ইবন আযিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
‏« ﻳُﺼَﻠُّﻮﻥَ ﺧَﻠْﻒَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺭَﻓَﻊَ ﺭَﺃْﺳَﻪُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮُّﻛُﻮﻉِ ﻟَﻢْ ﺃَﺭَ ﺃَﺣَﺪًﺍ ﻳَﺤْﻨِﻲ ﻇَﻬْﺮَﻩُ، ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻀَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺟَﺒْﻬَﺘَﻪُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ، ﺛُﻢَّ ﻳَﺨِﺮُّ ﻣَﻦْ ﻭَﺭَﺍﺀَﻩُ ﺳُﺠَّﺪًﺍ ‏»
“সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে সালাত আদায় করতেন। যখন তিনি রুকু থেকে মাথা
তুলতেন তখন আমি এমন একজনকেও দেখি নি যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কপাল মাটিতে রাখার
আগে তার পিঠ বাঁকা করেছে। তিনি সাজদায় গিয়ে সারলে তারা তখন সাজদায় লুটিয়ে পড়তেন”। [34]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন একটু বুড়িয়ে যান এবং তাঁর নড়াচড়ায় মন্থরতা দেখা দেয়, তখন তিনি তাঁর
পিছনের মুক্তাদীদের এ বলে সতর্ক করে দেন যে,
‏«ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ، ﺇِﻧِّﻲ ﻗَﺪْ ﺑَﺪَّﻧْﺖُ ﺃَﻭْ ﺑَﺪَّﻧْﺖُ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﺴْﺒِﻘُﻮﻧِﻲ ﺑِﺎﻟﺮُّﻛُﻮﻉِ ﻭَﺍﻟﺴُّﺠُﻮﺩِ ... ‏»
‘হে লোকেরা! আমার দেহ ভারী হয়ে গেছে। সুতরাং তোমরা রুকু-সাজদায় আমার আগে চলে যেও না’’। [35]
অপরদিকে ইমামকেও সালাতের তাকবীরে সুন্নাত মোতাবেক আমল করা জরুরি। এ সম্পর্কে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে,
" ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺇِﺫَﺍ ﻗَﺎﻡَ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﻳُﻜَﺒِّﺮُ ﺣِﻴﻦَ ﻳَﻘُﻮﻡُ، ﺛُﻢَّ ﻳُﻜَﺒِّﺮُ ﺣِﻴﻦَ ﻳَﺮْﻛَﻊُ، ﺛُﻢَّ ﻳَﻘُﻮﻝُ : ﺳَﻤِﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟِﻤَﻦْ ﺣَﻤِﺪَﻩُ، ﺣِﻴﻦَ ﻳَﺮْﻓَﻊُ ﺻُﻠْﺒَﻪُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮَّﻛْﻌَﺔِ، ﺛُﻢَّ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻭَﻫُﻮَ ﻗَﺎﺋِﻢٌ : ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻟَﻚَ ﺍﻟﺤَﻤْﺪُ " ﻗَﺎﻝَ ﻋَﺒْﺪُ
ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦُ ﺻَﺎﻟِﺢٍ، ﻋَﻦِ ﺍﻟﻠَّﻴْﺚِ : ‏« ﻭَﻟَﻚَ ﺍﻟﺤَﻤْﺪُ، ﺛُﻢَّ ﻳُﻜَﺒِّﺮُ ﺣِﻴﻦَ ﻳَﻬْﻮِﻱ، ﺛُﻢَّ ﻳُﻜَﺒِّﺮُ ﺣِﻴﻦَ ﻳَﺮْﻓَﻊُ ﺭَﺃْﺳَﻪُ، ﺛُﻢَّ ﻳُﻜَﺒِّﺮُ ﺣِﻴﻦَ ﻳَﺴْﺠُﺪُ، ﺛُﻢَّ ﻳُﻜَﺒِّﺮُ ﺣِﻴﻦَ ﻳَﺮْﻓَﻊُ ﺭَﺃْﺳَﻪُ، ﺛُﻢَّ ﻳَﻔْﻌَﻞُ ﺫَﻟِﻚَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﻛُﻠِّﻬَﺎ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻘْﻀِﻴَﻬَﺎ، ﻭَﻳُﻜَﺒِّﺮُ ﺣِﻴﻦَ ﻳَﻘُﻮﻡُ ﻣِﻦَ
ﺍﻟﺜِّﻨْﺘَﻴْﻦِ ﺑَﻌْﺪَ ﺍﻟﺠُﻠُﻮﺱِ‏»
‘রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে দাঁড়াতেন তখন শুরুতে তাকবীর বলতেন। তারপর যখন রুকুতে
যেতেন তখন তাকবীর বলতেন। তারপর বলতেন, ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ যখন রুকু থেকে পিঠ সোজা করতেন। তারপর
দাঁড়ানো অবস্থায় বলতেন, ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ বর্ণনাকারী আবদুল্লাহ ইবন সালেহ তার উস্তাদ লাইস থেকে বর্ণনা
করেন, ‘ওয়ালাকাল হামদ’। অতঃপর যখন সাজদায় যেতেন তখন তাকবীর বলতেন। অতঃপর যখন সাজদাহ থেকে মাথা উঠাতেন
তখন তাকবীর বলতেন, তারপর যখন (দ্বিতীয়) সাজদাহ-য় যেতেন তখন তাকবীর বলতেন, সাজদাহ থেকে মাথা তুলতে তাকবীর
বলতেন। এভাবে সালাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকবীর বলতেন। আর দ্বিতীয় রাকাতে বৈঠক শেষে দাঁড়ানোর সময়ও তাকবীর
বলতেন”। [36]
সুতরাং এভাবে ইমাম যখন সালাতে উঠা-বসার সঙ্গে তার তাকবীরকে সমন্বিত করে একই সাথে আদায় করবেন এবং
মুক্তাদীগণও উল্লিখিত নিয়ম মেনে চলবে তখন সবারই জামা‘আতের বিধান ঠিক হয়ে যাবে।
১৫. পেঁয়াজ-রসুন কিংবা দুর্গন্ধযুক্ত বস্তু খেয়ে মসজিদে গমন
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ﻳَٰﺒَﻨِﻲٓ ﺀَﺍﺩَﻡَ ﺧُﺬُﻭﺍْ ﺯِﻳﻨَﺘَﻜُﻢۡ ﻋِﻨﺪَ ﻛُﻞِّ ﻣَﺴۡﺠِﺪٖ﴾ ‏[ ﺍﻻﻋﺮﺍﻑ : ٣١‏]
“হে বনু আদম! তোমরা প্রতি সালাতের সময় তোমাদের সৌন্দর্যকে ধারণ কর” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩১] [অর্থাৎ তোমরা
পোশাক পরিধান কর ও শালীন পরিবেশ বজায় রাখ। কিন্তু দুর্গন্ধ পরিবেশকে কলুষিত করে তোলে।]
জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻣَﻦ ﺃَﻛﻞَ ﺛﻮﻣﺎً ﺃﻭ ﺑﺼَﻼً ﻓﻠﻴﻌﺘَﺰِﻟْﻨﺎ، ﺃﻭ ﻗﺎﻝَ : ﻓﻠﻴَﻌﺘﺰﻝْ ﻣﺴﺠﺪَﻧﺎ، ﻭﻟﻴﻘﻌُﺪْ ﻓﻲ ﺑﻴﺘﻪِ، ﻭﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔٍ : ﻓﻼ ﻳَﻐﺸﺎﻧﺎ ﻓﻲ ﻣﺴﺎﺟﺪِﻧﺎ‏» .
“যে ব্যক্তি রসুন কিংবা পেঁয়াজ খাবে, সে যেন আমাদের থেকে দূরে থাকে। অথবা তিনি বলেছেন, সে যেন আমাদের
মসজিদ থেকে দূরে থাকে এবং নিজ বাড়ীতে বসে থাকে”। [37]
সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে,
‏« ﻣَﻦْ ﺃَﻛَﻞَ ﻣِﻦْ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟْﺒَﻘْﻠَﺔِ، ﺍﻟﺜُّﻮﻡِ - ﻭﻗَﺎﻝَ ﻣَﺮَّﺓً : ﻣَﻦْ ﺃَﻛَﻞَ ﺍﻟْﺒَﺼَﻞَ ﻭَﺍﻟﺜُّﻮﻡَ ﻭَﺍﻟْﻜُﺮَّﺍﺙَ ﻓَﻠَﺎ ﻳَﻘْﺮَﺑَﻦَّ ﻣَﺴْﺠِﺪَﻧَﺎ، ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟْﻤَﻠَﺎﺋِﻜَﺔَ ﺗَﺘَﺄَﺫَّﻯ ﻣِﻤَّﺎ ﻳَﺘَﺄَﺫَّﻯ ﻣِﻨْﻪُ ﺑَﻨُﻮ ﺁﺩَﻡَ ‏»
“যে ব্যক্তি পেঁয়াজ, রসুন ও কুর্রাছ [38] খাবে, সে যেন কখনই আমাদের মসজিদ পানে না আসে। কেননা বনী আদম যাতে কষ্ট
পায় ফিরিশতারাও তাতে কষ্ট পায়”। [39]
উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু একদা জুমু‘আর খুৎবায় বলেছিলেন, হে লোক সকল! তোমরা দু’টি গাছ খেয়ে থাক। আমি ঐ দু’টিকে
কদর্য ছাড়া অন্য কিছু মনে করি না। সে দু’টি হচ্ছে পেঁয়াজ ও রসুন। কেননা আমি রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে দেখেছি,
‏« ﺇِﺫَﺍ ﻭَﺟَﺪَ ﺭِﻳﺤَﻬُﻤَﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞِ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ، ﺃَﻣَﺮَ ﺑِﻪِ ﻓَﺄُﺧْﺮِﺝَ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺒَﻘِﻴﻊِ، ﻓَﻤَﻦْ ﺃَﻛَﻠَﻬُﻤَﺎ ﻓَﻠْﻴُﻤِﺘْﻬُﻤَﺎ ﻃَﺒْﺨًﺎ‏»
“কারো মুখ থেকে তিনি এ দু’টির গন্ধ পেলে তাকে মসজিদ থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দিতেন। ফলে তাকে বাক্বী‘
গোরস্থানের দিকে বের করে দেওয়া হতো। সুতরাং কাউকে তা খেতে হলে সে যেন পাকিয়ে খায়”। [40]
অনেকেই কাজ-কর্ম শেষে হাত-মুখ ধোয়ার আগেই মসজিদে ঢুকে পড়ে। এদিকে ঘামের জন্য তার বগল ও মোজা দিয়ে বিশ্রী
রকমের গন্ধ বের হতে থাকে। এ ধরনের লোকও উক্ত বিধানের আওতায় পড়বে।
আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট হল ধূমপায়ীরা। তারা হারাম ধূমপান করতে করতে মুখে চরম দুর্গন্ধ জন্মিয়ে নেয়। এ অবস্থায় মসজিদে
ঢুকে তারা আল্লাহর মুসল্লী বান্দা ও ফিরিশতাদের কষ্ট দেয়।
১৬. ব্যভিচার
বংশ, ইযযত ও সম্ভ্রম রক্ষা করা ইসলামী শরী‘আতের অন্যতম লক্ষ্য। এজন্য ইসলাম ব্যভিচারকে হারাম করেছে। আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
﴿ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘۡﺮَﺑُﻮﺍْ ﭐﻟﺰِّﻧَﻰٰٓۖ ﺇِﻧَّﻪُۥ ﻛَﺎﻥَ ﻓَٰﺤِﺸَﺔٗ ﻭَﺳَﺎٓﺀَ ﺳَﺒِﻴﻠٗﺎ ٣٢﴾ ‏[ﺍﻻﺳﺮﺍﺀ : ٣٢‏]
“তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। নিশ্চয় তা একটি অশ্লীল কাজ ও খারাপ পন্থা”। [সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত: ৩২]
শরী‘আত পর্দা ফরয করেছে, নারী-পুরুষ উভয়কে দৃষ্টি সংযত রাখতে বলেছে এবং গায়ের মাহরাম স্ত্রীলোকদের সঙ্গে
নির্জনে মিলিত হওয়াকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। এভাবে ব্যভিচারের সকল উপায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও
কেউ ব্যভিচার করে বসলে তাকে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
বিবাহিত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীকে না মরা পর্যন্ত পাথর নিক্ষেপ করতে হবে। এভাবে সে তার কাজের উপযুক্ত
পরিণাম ভোগ করবে এবং হারাম কাজে তার প্রতিটি অঙ্গ যেমন করে মজা উপভোগ করেছিল এখন তেমনি করে যন্ত্রণা
উপভোগ করবে।
আর অবিবাহিত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীদেরকে একশত বেত্রাঘাত করতে হবে। বেত্রাঘাতের ক্ষেত্রে এটাই শরী‘আতের
সর্বোচ্চ শাস্তি। একদল মুমিনের সামনে অর্থাৎ জনতার সামনে খোলা ময়দানে এ শাস্তি কার্যকর করতে হবে, যাতে সে
অপমানের চূড়ান্ত হয়। একই সঙ্গে তাকে এক বৎসরের জন্য অপরাধ সংঘটিত এলাকা থেকে বহিষ্কার করতে হবে। এরূপ ব্যবস্থা
চালু হলে ব্যভিচারের মাত্রা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে বলে আশা করা যায়।
ব্যভিচারী নর-নারী বারাযাখ তথা কবরের জীবনেও তাকে কঠিন শাস্তি পোহাবে। তারা এমন একটি অগ্নিকুণ্ডে থাকবে
যার ঊর্ধ্বাংশ হবে সংকীর্ণ; কিন্তু নিম্নাংশ হবে প্রশস্ত। তার নিচ থেকে আগুন জ্বালানো হবে। সেই আগুনে তারা উলঙ্গ,
বিবস্ত্র অবস্থায় থাকবে আর যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকবে। ঐ আগুন এতই উত্তপ্ত হবে যে, তার তোড়ে তারা উপরের দিকে
উঠে আসবে। এমনকি তারা প্রায় বেরিয়ে আসার উপক্রম করবে। যখনই এমন হবে তখনই আগুন নিভিয়ে দেওয়া হবে। ফলে তারা
আবার অগ্নিকুণ্ডের তলদেশে ফিরে যাবে। কিয়ামত পর্যন্ত তাদের জন্য এ ব্যবস্থা চলতে থাকবে। [41]
ব্যভিচারের বিষয়টি আরও কদর্য ও ঘৃণিত হয়ে দাঁড়ায় তখন, যখন কোনো ব্যক্তি বয়সে ভারী ও এক পা কবরে চলে যাওয়ার পরও
হরদম ব্যভিচার করে যায় আর আল্লাহও তাকে ছাড় দিয়ে যান। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত
আছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﺛَﻠَﺎﺛَﺔٌ ﻟَﺎ ﻳُﻜَﻠِّﻤُﻬُﻢُ ﺍﻟﻠﻪُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﺰَﻛِّﻴﻬِﻢْ - ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ : ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻨْﻈُﺮُ ﺇِﻟَﻴْﻬِﻢْ - ﻭَﻟَﻬُﻢْ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﺃَﻟِﻴﻢٌ : ﺷَﻴْﺦٌ ﺯَﺍﻥٍ، ﻭَﻣَﻠِﻚٌ ﻛَﺬَّﺍﺏٌ، ﻭَﻋَﺎﺋِﻞٌ ﻣُﺴْﺘَﻜْﺒِﺮٌ ‏»
“কিয়ামত দিবসে তিন ব্যক্তির সঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না, তাদের দিকে
তাকাবেন না; বরং তাদের জন্য থাকবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তারা হলো বয়োবৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী রাষ্ট্রনায়ক ও
অহংকারী দরিদ্র”। [42]
অনেকে ব্যভিচার বা পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করে। অথচ পতিতাবৃত্তি থেকে অর্জিত আয় নিকৃষ্ট
উপার্জনাদিরই একটি। যে পতিতা তার ইজ্জত বেচে খায় সে মধ্যরাতে যখন দো‘আ কবুলের জন্য আকাশের দরজা উন্মোচিত হয়
তখন দো‘আ কবুল হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। [43] অভাব ও দারিদ্র্য আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করার জন্য কোনো শর‘ঈ ওযর হতে পারে
না। বলা হয়ে থাকে স্বাধীনা নারী ক্ষুধার্ত থাকতে পারে কিন্তু সে তার স্তন বিক্রি করে খেতে পারে না, যদি স্তনের
ব্যাপারে তা হয় তাহলে লজ্জাস্থানের ব্যাপার কী দাঁড়াতে পারে তা বলাই বাহুল্য।
আমাদের যুগে তো অশ্লীলতার সকল দুয়ার খুলে দেওয়া হয়েছে। শয়তান ও তার দোসরদের চক্রান্তে অশ্লীলতার পথ ও
পন্থাগুলো সহজলভ্য হয়ে গেছে। পাপী ব্যভিচারীরা এখন খোলাখুলি শয়তানের অনুসরণ করছে। মেয়েরা দ্বিধাহীনচিত্তে
ব্যাপকভাবে বাইরে পর্দাহীনভাবে যাতায়াত করে তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়াচ্ছে। মোড়ে মোড়ে বখাটে
ছেলেদের বক্র চাহনি ও হা করে মেয়েদের পানে তাকিয়ে থাকা তো নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবাধ মেলা-
মেশা, পর্ণোগ্রাফি ও ব্লু ফ্লিমে দেশ ভরে গেছে। ফ্রি সেক্সের দেশগুলোতে মানুষের ভ্রমণের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। কে
কত বেশি খোলামেলা হতে পারে যেন তার প্রতিযোগিতা চলছে। ধর্ষণ ও বলাৎকারে দেশ ছেয়ে যাচ্ছে। জারজ সন্তানের
সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। ক্লিনিকে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে অবৈধ গর্ভপাতের মাধ্যমে মানব সন্তানদের হত্যা করা
হচ্ছে।
হে আল্লাহ! আমরা তোমার নিকট দয়া, অনুগ্রহ ও গোপনীয়তা প্রার্থনা করছি এবং এমন সম্ভ্রম কামনা করছি যার বদৌলতে
তুমি আমাদেরকে সকল অশ্লীলতা থেকে রক্ষা করবে। আমরা তোমার নিকট আমাদের মনের পবিত্রতা ও ইযযতের হেফাযত
প্রার্থনা করছি। দয়া করে তুমি আমাদের মাঝে ও হারামের মাঝে একটি সুদৃঢ় অন্তরাল তৈরি করে দাও। আমীন!
১৭. পূংমৈথুন বা সমকামিতা
অতীতে লূত আলাইহিস সালাম-এর জাতি পুংমৈথুনে অভ্যস্ত ছিল। তাদের প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ﻭَﻟُﻮﻃًﺎ ﺇِﺫۡ ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻘَﻮۡﻣِﻪِۦٓ ﺇِﻧَّﻜُﻢۡ ﻟَﺘَﺄۡﺗُﻮﻥَ ﭐﻟۡﻔَٰﺤِﺸَﺔَ ﻣَﺎ ﺳَﺒَﻘَﻜُﻢ ﺑِﻬَﺎ ﻣِﻦۡ ﺃَﺣَﺪٖ ﻣِّﻦَ ﭐﻟۡﻌَٰﻠَﻤِﻴﻦَ ٢٨ ﺃَﺋِﻨَّﻜُﻢۡ ﻟَﺘَﺄۡﺗُﻮﻥَ ﭐﻟﺮِّﺟَﺎﻝَ ﻭَﺗَﻘۡﻄَﻌُﻮﻥَ ﭐﻟﺴَّﺒِﻴﻞَ ﻭَﺗَﺄۡﺗُﻮﻥَ ﻓِﻲ ﻧَﺎﺩِﻳﻜُﻢُ ﭐﻟۡﻤُﻨﻜَﺮَۖ ﴾ ‏[ ﺍﻟﻌﻨﻜﺒﻮﺕ : ٢٨، ٢٩ ‏]
“লূতের কথা স্মরণ করুন! যখন তিনি তাঁর কওমকে বললেন, তোমরা নিশ্চয় এমন অশ্লীল কাজ করছ যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে
আর কেউ করে নি, তোমরাই তো পুরুষে উপগত হচ্ছ, তোমরাই তো রাহাজানি করছ, তোমরাই তো ভরা মজলিসে অন্যায় কাজ
করছ”। [সূরা আল-‘আনকাবুত, আয়াত: ২৮-২৯]
যেহেতু এ অপরাধ ছিল জঘন্য, অত্যন্ত মারাত্মক ও কদর্যপূর্ণ তাই আল্লাহ তা‘আলা লূত আলাইহিস সালামের জাতিকে
একবারেই চার প্রকার শাস্তি দিয়েছিলেন। এ জাতীয় এতগুলো শাস্তি একবারে অন্য কোনো জাতিকে ভোগ করতে হয় নি। ঐ
শাস্তিগুলো ছিল- তাদের চক্ষু উৎপাটন, উঁচু জনপদকে নিচু করে দেওয়া, অবিরাম কঙ্করপাত ও হঠাৎ নিনাদের ধ্বনি আগমন।
পুংমৈথূনের শাস্তি হিসেবে ইসলামী শরী‘আতের পণ্ডিতগণের অগ্রাধিকার প্রাপ্ত মত হলো, স্বেচ্ছায় যদি কেউ পুংমৈথুন
করে তাহলে পুংমৈথুনকারী ও মৈথুনকৃত ব্যক্তি উভয়কেই তরবারীর আঘাতে শিরচ্ছেদ করতে হবে। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু মারফূ সূত্রে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন,
‏« ﻣَﻦْ ﻭَﺟَﺪْﺗُﻤُﻮﻩُ ﻳَﻌْﻤَﻞُ ﻋَﻤَﻞَ ﻗَﻮْﻡِ ﻟُﻮﻁٍ، ﻓَﺎﻗْﺘُﻠُﻮﺍ ﺍﻟْﻔَﺎﻋِﻞَ، ﻭَﺍﻟْﻤَﻔْﻌُﻮﻝَ ﺑِﻪِ ‏»
“তোমরা লূতের সম্প্রদায়ের ন্যায় পুংমৈথুনের কাজ কাউকে করতে দেখলে মৈথুনকারী ও মৈথুনকৃত উভয়কেই হত্যা করবে”। [44]
মৈথুন বা সমকামিতার প্রাকৃতিক কুফলও কম নয়। এসব নির্লজ্জ বেহায়াপনার কারণেই আমাদের কালে এমন কিছু রোগ-ব্যাধি
মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে যা পূর্বকালে ছিল না। বর্তমান পৃথিবীর মহাত্রাস ঘাতক ব্যাধি এইডস যার জ্বলন্ত
উদাহরণ। এইডসই প্রমাণ করে যে, সমকামিতা রোধে ইসলামের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ যথার্থ হয়েছে।
১৮. শর‘ঈ ওযর ব্যতীত স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর শয্যা গ্রহণ অস্বীকার করা
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﺇِﺫَﺍ ﺩَﻋَﺎ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﺍﻣْﺮَﺃَﺗَﻪُ ﺇِﻟَﻰ ﻓِﺮَﺍﺷِﻪِ ﻓَﺄَﺑَﺖْ ﻓَﺒَﺎﺕَ ﻏَﻀْﺒَﺎﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﻟَﻌَﻨَﺘْﻬَﺎ ﺍﻟﻤَﻼَﺋِﻜَﺔُ ﺣَﺘَّﻰ ﺗُﺼْﺒِﺢَ ‏»
“যখন কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে স্বীয় শয্যা গ্রহণ বা দৈহিক মিলনের জন্য আহবান জানায়, কিন্তু স্ত্রী তা অস্বীকার
করায় স্বামী তার ওপর ক্রুদ্ধ হয়ে রাত কাটায়, তখন ফিরিশতাগণ সকাল পর্যন্ত ঐ স্ত্রীর ওপর অভিশাপ দিতে থাকে”। [45]
অনেক মহিলাকেই দেখা যায় স্বামী-স্ত্রীতে একটু খুনসুটি হলেই স্বামীকে শাস্তি দেওয়ার মানসে তার সঙ্গে দৈহিক
মেলামেশা বন্ধ করে বসে। এতে অনেক রকম ক্ষতি দেখা দেয়। পারিবারিক অশান্তির সৃষ্টি হয়। স্বামী দৈহিক তৃপ্তির জন্য
অবৈধ পথও বেছে নেয়, অন্য স্ত্রী গ্রহণের চিন্তাও তাকে পেয়ে বসে। এভাবে বিষয়টি হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সুতরাং স্ত্রীর কর্তব্য হবে স্বামী ডাকামাত্রই তার ডাকে সাড়া দেওয়া। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
‏« ﺇﺫﺍ ﺩﻋﺎ ﺍﻟﺮﺟﻞُ ﺍﻣﺮﺃﺗَﻪ ﺇﻟﻰ ﻓﺮﺍﺷِﻪِ ﻓﻠﺘُﺠِﺐْ ﻭﺇﻥ ﻛﺎﻧﺖْ ﻋﻠﻰ ﻇﻬﺮِ ﻗَﺘَﺐٍ ‏»
‘যখন কোনো পুরুষ তার স্ত্রীকে তার সঙ্গে দৈহিক মিলনের জন্য ডাকবে, তখনই যেন সে তার ডাকে সাড়া দেয়। এমনকি সে
যদি ক্বাতবের পিঠেও থাকে।’ [46] ‘ক্বাতব’ হচ্ছে, উঠের পিঠে রাখা গদি যা সওয়ারের সময় ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
স্বামীরও কর্তব্য হবে, স্ত্রী রোগাক্রান্ত্র, গর্ভবতী কিংবা অন্য কোনো অসুবিধায় পতিত হলে তার অবস্থা বিবেচনা করা।
এতে করে তাদের মধ্যে সৌহার্দ্য বজায় থাকবে এবং মনোমালিন্য সৃষ্টি হবে না।
১৯. শর‘ঈ কারণ ব্যতীত স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর নিকট তালাক প্রার্থনা করা
এমন অনেক স্ত্রীলোক আছে যারা স্বামীর সঙ্গে একটু ঝগড়া-বিবাদ হলেই কিংবা তার চাওয়া-পাওয়ার একটু ব্যত্যয় ঘটলেই
তার নিকট তালাক দাবী করে। অনেক সময় স্ত্রী তার কোনো নিকট আত্মীয় কিংবা অসৎ প্রতিবেশী কর্তৃক এরূপ অনিষ্টকর
কাজে প্ররোচিত হয়। কখনো সে স্বামীকে লক্ষ্য করে তার জাত্যভিমান উষ্কে দেওয়ার মত শব্দ উচ্চারণ করে। যেমন সে বলে,
‘যদি তুমি পুরুষ হয়ে থাক তাহলে আমাকে তালাক দাও’। কিন্তু তালাকের যে কি বিষময় ফল তা সবার জানা আছে।
তালাকের কারণে একটি পরিবারে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়। সন্তানরা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এজন্য অনেক সময় স্ত্রীর মনে
অনুশোচনা জাগতে পারে। কিন্তু তখন তো আর করার কিছুই থাকে না। এসব কারণে শরী‘আত কথায় কথায় তালাক
প্রার্থনাকে হারাম করে সমাজের যে উপকার করেছে তা সহজেই অনুমেয়। সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﺃَﻳُّﻤَﺎ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٍ ﺳَﺄَﻟَﺖْ ﺯَﻭْﺟَﻬَﺎ ﻃَﻠَﺎﻗًﺎ ﻓِﻲ ﻏَﻴْﺮِ ﻣَﺎ ﺑَﺄْﺱٍ، ﻓَﺤَﺮَﺍﻡٌ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﺭَﺍﺋِﺤَﺔُ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔ «ِ
“কোনো মহিলা যদি বিনা দোষে স্বামীর নিকট তালাক প্রার্থনা করে, তাহলে জান্নাতের সুগন্ধি তার জন্য হারাম হয়ে
যাবে”। [47]
উক্ববা ইবন আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,
‏«ﺍﻟْﻤُﻨْﺘَﺰِﻋَﺎﺕُ ﻭَﺍﻟْﻤُﺨْﺘَﻠِﻌَﺎﺕُ ﻫُﻦَّ ﺍﻟْﻤُﻨَﺎﻓِﻘَﺎﺕ «ُ
“সম্পর্কছিন্নকারিণী ও খোলাকারিণী নারীগণ মুনাফিক”’। [48]
হ্যাঁ যদি কোনো শর‘ঈ ওযর থাকে যেমন-স্বামী সালাত আদায় করে না, অনবরত নেশা করে কিংবা স্ত্রীকে হারাম কাজের
আদেশ দেয়, অন্যায়ভাবে মারধর করে, স্ত্রীর শর‘ঈ অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করে। কিন্তু স্বামীকে নছীহত করেও
ফেরানো যাচ্ছে না এবং সংশোধনেরও কোনো উপায় নেই সেক্ষেত্রে তালাক দাবী করায় স্ত্রীর কোনো দোষ হবে না।
বরং দীন ও জীবন রক্ষার্থে তখন সে তালাক প্রার্থনা করতে পারে।
২০. যিহার
জাহেলী যুগ থেকে চলে আসা যা কিছু এ উম্মতের মধ্যে প্রবিষ্ট হয়েছে ‘যিহার’ তার একটি। যেসব শব্দে যিহার হয় তার
কতগুলো নিম্নরূপ:
স্বামী স্ত্রীকে বলবে, ‘তুমি আমার জন্য আমার মায়ের পৃষ্ঠতুল্য’। ‘আমার বোন যেমন আমার জন্য হারাম, তুমিও তেমনি
আমার জন্য হারাম’। ‘তোমার এক চতুর্থাংশ আমার জন্য আমার ধাত্রীমায়ের মতো হারাম’ ইত্যাদি। যিহারের ফলে
নারীরা ভীষণভাবে অত্যাচারিত হয়। যিহার একটি অমানবিক কাজ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﻈَٰﻬِﺮُﻭﻥَ ﻣِﻨﻜُﻢ ﻣِّﻦ ﻧِّﺴَﺎٓﺋِﻬِﻢ ﻣَّﺎ ﻫُﻦَّ ﺃُﻣَّﻬَٰﺘِﻬِﻢۡۖ ﺇِﻥۡ ﺃُﻣَّﻬَٰﺘُﻬُﻢۡ ﺇِﻟَّﺎ ﭐﻟَّٰٓـِٔﻲ ﻭَﻟَﺪۡﻧَﻬُﻢۡۚ ﻭَﺇِﻧَّﻬُﻢۡ ﻟَﻴَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ ﻣُﻨﻜَﺮٗﺍ ﻣِّﻦَ ﭐﻟۡﻘَﻮۡﻝِ ﻭَﺯُﻭﺭٗﺍۚ ﻭَﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻟَﻌَﻔُﻮٌّ ﻏَﻔُﻮﺭٞ ٢﴾ ‏[ﺍﻟﻤﺠﺎﺩﻟﺔ : ٢ ‏]
“তোমাদের মধ্যে যারা নিজেদের স্ত্রীদের সঙ্গে যিহার করে তারা যেন জেনে রাখে যে, তারা তাদের মা নয়। তাদের
মা তো তারাই যারা তাদের প্রসব করেছে। তারা তো কেবল অসঙ্গত ও মিথ্যা কথা বলে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও
মার্জনাকারী”। [সূরা আল-মুজাদালাহ, আয়াত: ২]
ইসলাম রমযান মাসে দিনের বেলায় স্বেচ্ছায় সহবাসে সিয়াম ভঙ্গের কাফ্ফারা, ভুলক্রমে হত্যার কাফ্ফারা যেভাবে
দিতে বলেছে, যিহারের জন্যও ঠিক একইভাবে কাফ্ফারা দিতে বলেছে। কাফ্ফারা পরিশোধ না করা পর্যন্ত যিহারকারী
স্ত্রীকে স্পর্শ করতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ﻭَﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﻈَٰﻬِﺮُﻭﻥَ ﻣِﻦ ﻧِّﺴَﺎٓﺋِﻬِﻢۡ ﺛُﻢَّ ﻳَﻌُﻮﺩُﻭﻥَ ﻟِﻤَﺎ ﻗَﺎﻟُﻮﺍْ ﻓَﺘَﺤۡﺮِﻳﺮُ ﺭَﻗَﺒَﺔٖ ﻣِّﻦ ﻗَﺒۡﻞِ ﺃَﻥ ﻳَﺘَﻤَﺎٓﺳَّﺎۚ ﺫَٰﻟِﻜُﻢۡ ﺗُﻮﻋَﻈُﻮﻥَ ﺑِﻪِۦۚ ﻭَﭐﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻤَﺎ ﺗَﻌۡﻤَﻠُﻮﻥَ ﺧَﺒِﻴﺮٞ ٣ ﻓَﻤَﻦ ﻟَّﻢۡ ﻳَﺠِﺪۡ ﻓَﺼِﻴَﺎﻡُ ﺷَﻬۡﺮَﻳۡﻦِ ﻣُﺘَﺘَﺎﺑِﻌَﻴۡﻦِ ﻣِﻦ ﻗَﺒۡﻞِ ﺃَﻥ ﻳَﺘَﻤَﺎٓﺳَّﺎۖ ﻓَﻤَﻦ ﻟَّﻢۡ ﻳَﺴۡﺘَﻄِﻊۡ
ﻓَﺈِﻃۡﻌَﺎﻡُ ﺳِﺘِّﻴﻦَ ﻣِﺴۡﻜِﻴﻨٗﺎۚ ﺫَٰﻟِﻚَ ﻟِﺘُﺆۡﻣِﻨُﻮﺍْ ﺑِﭑﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟِﻪِۦۚ ﻭَﺗِﻠۡﻚَ ﺣُﺪُﻭﺩُ ﭐﻟﻠَّﻪِۗ ﻭَﻟِﻠۡﻜَٰﻔِﺮِﻳﻦَ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﺃَﻟِﻴﻢٌ ٤﴾ ‏[ﺍﻟﻤﺠﺎﺩﻟﺔ : ٣، ٤‏]
“যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে যিহার করে, তারপর তাদের উক্তি প্রত্যাহার করে নেয়, তাদের জন্য পারস্পরিক স্পর্শের
পূর্বে একজন দাস মুক্তির বিধান দেওয়া হল। এটা তোমাদের জন্য নির্দেশ। আর তোমরা যা কিছু কর তৎসম্পর্কে আল্লাহ সম্যক
অবহিত। অতঃপর যে সেটার সামর্থ্য রাখে না তাকে পারস্পরিক স্পর্শের পূর্বে একটানা দু’মাস ছিয়াম রাখতে হবে। যে
তারও সামর্থ্য রাখে না তাকে ষাটজন মিসকীনকে খাওয়াতে হবে। এ বিধান এজন্য যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপরে
তোমরা যেন ঈমান রাখ। এটা আল্লাহর সীমারেখা। আর কাফিরদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি”। [সূরা আল-
মুজাদালাহ, আয়াত: ৩-৪]
২১. মাসিকের সময় স্ত্রী সহবাস
মাসিকের সময় স্ত্রী সহবাস কুরআন-হাদীস উভয়ের আলোকেই নিষিদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ﻭَﻳَﺴَۡٔﻠُﻮﻧَﻚَ ﻋَﻦِ ﭐﻟۡﻤَﺤِﻴﺾِۖ ﻗُﻞۡ ﻫُﻮَ ﺃَﺫٗﻯ ﻓَﭑﻋۡﺘَﺰِﻟُﻮﺍْ ﭐﻟﻨِّﺴَﺎٓﺀَ ﻓِﻲ ﭐﻟۡﻤَﺤِﻴﺾِ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘۡﺮَﺑُﻮﻫُﻦَّ ﺣَﺘَّﻰٰ ﻳَﻄۡﻬُﺮۡﻥَۖ﴾ ‏[ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ٢٢٢‏]
“তারা আপনাকে মাসিক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলুন, উহা অশুচি। সুতরাং মাসিকের সময় তোমরা স্ত্রীদের থেকে
দূরে থাক এবং তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটে যেও না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২২]
পবিত্রতা লাভের পর তারা গোসল না করা পর্যন্ত তাদের নিকটে যাওয়া বৈধ নয়। কেননা একই সাথে আল্লাহ তা‘আলা আরও
বলেছেন,
﴿ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺗَﻄَﻬَّﺮۡﻥَ ﻓَﺄۡﺗُﻮﻫُﻦَّ ﻣِﻦۡ ﺣَﻴۡﺚُ ﺃَﻣَﺮَﻛُﻢُ ﭐﻟﻠَّﻪُۚ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻳُﺤِﺐُّ ﭐﻟﺘَّﻮَّٰﺑِﻴﻦَ ﻭَﻳُﺤِﺐُّ ﭐﻟۡﻤُﺘَﻄَﻬِّﺮِﻳﻦَ ٢٢٢﴾ ‏[ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ٢٢٢ ‏]
“যখন তারা ভালোমত পাক-পবিত্র হয়ে যাবে তখন তোমরা তাদের নিকটে আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক গমন কর”। [সূরা আল-
বাকারা, আয়াত: ২২২]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﺍﺻْﻨَﻌُﻮﺍ ﻛُﻞَّ ﺷَﻲْﺀٍ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻨِّﻜَﺎﺡَ ‏»
‘সহবাস ব্যতীত তোমরা তাদের সাথে সব কিছুই কর”। [49]
মাসিকের সময় সহবাস যে কঠিন পাপ তা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিম্নোক্ত বাণী থেকে
প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন,
‏« ﻣَﻦْ ﺃَﺗَﻰ ﺣَﺎﺋِﻀًﺎ، ﺃَﻭِ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓً ﻓِﻲ ﺩُﺑُﺮِﻫَﺎ، ﺃَﻭْ ﻛَﺎﻫِﻨًﺎ، ﻓَﻘَﺪْ ﻛَﻔَﺮَ ﺑِﻤَﺎ ﺃُﻧْﺰِﻝَ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ‏»
“যে ব্যক্তি কোনো ঋতুবতীর সাথে মিলিত হয় কিংবা কোনো মহিলার পশ্চাৎদ্বারে সঙ্গম করে অথবা কোনো গণকের
নিকটে যায়, নিশ্চয় সে মুহাম্মাদের ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তার সাথে কুফরী করে”। [50]
অজ্ঞতাবশতঃ যদি কোনো ব্যক্তি মাসিকের সময় স্ত্রী সহবাস করে তাহলে তাকে এজন্য কোনো কাফ্ফারা দিতে হবে না।
কিন্তু জেনেশুনে যারা এ কাজ করবে তাদেরকে নির্ধারিত এক দীনার বা অর্ধ দীনার কাফ্ফারা দিতে হবে। এ সম্বন্ধে
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণিত আছে। [51] এখানে এক দীনার বা অর্ধ দীনার দু’টি
সুযোগের যে কোনো একটি নেওয়া যাবে বলে কেউ কেউ মত প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ বলেন, যদি মাসিকের শুরুতে যখন
প্রথম রক্ত বেশি আকারে বের হতে থাকে তখন কেউ সহবাস করে তবে এক দীনার আর যদি মাসিকের শেষে যখন রক্ত কম বের
হয়, অথবা তার গোসলের আগে সহবাস করা হয় তবে অর্ধ দীনার সদকা করতে হবে। আর এক দীনার এর পরিমাণ হচ্ছে, ২৫,৪ গ্রাম
স্বর্ণ। অথবা সমপরিমাণ মূল্যের কাগজের মুদ্রা।
২২. পশ্চাৎদ্বার দিয়ে স্ত্রীগমন
দুর্বল ঈমানের কিছু লোক তাদের স্ত্রীদের সাথে পশ্চাৎদ্বার (পায়খানার রাস্তা) দিয়ে মেলামেশা করতে দ্বিধা করে
না। অথচ এটা কবীরা গোনাহ। যারা এ কাজ করে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ওপর অভিসম্পাত
করেছেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏«ﻣَﻠْﻌُﻮﻥٌ ﻣَﻦْ ﺃَﺗَﻰ ﺍﻣْﺮَﺃَﺗَﻪُ ﻓِﻲ ﺩُﺑُﺮِﻫَﺎ ‏»
“যে পশ্চাৎদ্বার দিয়ে স্ত্রীগমন করে সে অভিশপ্ত”। [52]
পূর্বেও উল্লিখিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ঋতুবর্তী নারীর সাথে মিলিত হয় কিংবা পশ্চাৎদ্বারে
সঙ্গম করে অথবা কোনো গণকের নিকটে যায়, নিশ্চয় সে মুহাম্মাদের ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে, তার সাথে কুফরীকারী।’ [53]
অবশ্য কিছু পবিত্রা স্ত্রী তাদের তাদের স্বামীদেরকে এ কাজে বাধা দিয়ে থাকে। কিন্তু অনেক স্বামীই তাদের কথা না
মানলে তালাকের হুমকি দেয়। আবার যে সকল স্ত্রী আলেমদেরকে জিজ্ঞেস করতে লজ্জাবোধ করে তাদেরকে
প্রতারণাচ্ছলে ধারণা দেয় যে, এ জাতীয় কাজ বৈধ। কারণ আল্লাহ বলেন,
﴿ ﻧِﺴَﺎٓﺅُﻛُﻢۡ ﺣَﺮۡﺙٞ ﻟَّﻜُﻢۡ ﻓَﺄۡﺗُﻮﺍْ ﺣَﺮۡﺛَﻜُﻢۡ ﺃَﻧَّﻰٰ ﺷِﺌۡﺘُﻢۡۖ﴾ ‏[ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ٢٢٣‏]
“তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য ক্ষেতস্বরূপ। সুতরাং তোমরা তোমাদের ক্ষেতে যে পন্থায় ইচ্ছা গমন করো”। [সূরা আল-
বাক্বারাহ ২২৩]
অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘স্বামী স্ত্রীর সামনে দিয়ে, পিছন দিয়ে,
যে কোনো ভাবে যেতে পারবে, যতক্ষণ তা সন্তান প্রসবের দ্বারের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকবে’। [54]
আর এটা অবিদিত নয় যে, পশ্চাৎদ্বার (পায়খানার রাস্তা) দিয়ে সন্তান প্রসব হয় না। সুতরাং আয়াতে সঙ্গমের বিভিন্ন
ক্ষেত্রের কথা বলা হয় নি; বরং একই ক্ষেত্রে বিভিন্ন কৌশল বা পদ্ধতির মধ্যে যেটা ইচ্ছা সেটা অবলম্বনের কথা বলা
হয়েছে। এসব অপরাধের মূলে রয়েছে বিবিাহিত শালীন জীবনের পাশাপাশি গণিকাগমনের জাহেলী প্রথা, সমকামিতা
এবং যত্রতত্র প্রদর্শিত অশ্লীল নীল ছবি। নিঃসন্দেহে এ জাতীয় কাজ হারাম। উভয়পক্ষ রাযী থাকলেও তা হারাম হবে।
কেননা পারস্পরিক সম্মতিতে কোনো হারাম কাজ হালাল হয়ে যায় না।
২৩. স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রক্ষা না করা
আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে পুরুষদেরকে স্ত্রীদের মধ্যে সমতা বিধানের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,
﴿ﻭَﻟَﻦ ﺗَﺴۡﺘَﻄِﻴﻌُﻮٓﺍْ ﺃَﻥ ﺗَﻌۡﺪِﻟُﻮﺍْ ﺑَﻴۡﻦَ ﭐﻟﻨِّﺴَﺎٓﺀِ ﻭَﻟَﻮۡ ﺣَﺮَﺻۡﺘُﻢۡۖ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﻤِﻴﻠُﻮﺍْ ﻛُﻞَّ ﭐﻟۡﻤَﻴۡﻞِ ﻓَﺘَﺬَﺭُﻭﻫَﺎ ﻛَﭑﻟۡﻤُﻌَﻠَّﻘَﺔِۚ ﻭَﺇِﻥ ﺗُﺼۡﻠِﺤُﻮﺍْ ﻭَﺗَﺘَّﻘُﻮﺍْ ﻓَﺈِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﻏَﻔُﻮﺭٗﺍ ﺭَّﺣِﻴﻤٗﺎ ١٢٩﴾ ‏[ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ١٢٩ ‏]
“তোমরা যতই আগ্রহ পোষণ কর না কেন তোমরা কখনো স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করতে পারবে না। তবে তোমরা কোনো
একজনের দিকে সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড় না ও অপরকে ঝুলন্ত অবস্থায় রেখ না। যদি তোমরা নিজেদেরকে সংশোধন কর ও সাবধান
হও তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১২৯]
এখানে কাম্য হলো, রাত্রি যাপনে স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রক্ষা করা, পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকের নিকট এক রাত করে যাপন করা
এবং প্রত্যেকের থাকা, খাওয়া ও পরার যথোপযুক্ত বন্দোবস্ত করা। অন্তরের ভালোবাসা সবার জন্য সমান হতে হবে এমন
বিধান শরী‘আত দেয় নি। কেননা তা মানুষের ইখতিয়ার বহির্ভূত।
কিছু মানুষ আছে, যারা তাদের একাধিক স্ত্রীর একজনকে নিয়ে পড়ে থাকে, অন্যজনের দিকে ভ্রুক্ষেপও করে না; একজনের
নিকট বেশি বেশি রাত কাটায় কিংবা বেশি খরচ করে, অন্যজনের কোনো খোঁজই নেয় না। নিঃসন্দেহে এরূপ একপেশে
আচরণ হারাম। কিয়ামত দিবসে তাদের যে অবস্থা দাঁড়াবে তার একটি চিত্র আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত
নিম্নোক্ত হাদীসে আমরা পাই। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻟَﻪُ ﺍﻣْﺮَﺃَﺗَﺎﻥِ ﻓَﻤَﺎﻝَ ﺇِﻟَﻰ ﺇِﺣْﺪَﺍﻫُﻤَﺎ، ﺟَﺎﺀَ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻭَﺷِﻘُّﻪُ ﻣَﺎﺋِﻞ«ٌ
‘যার দু’জন স্ত্রী আছে, কিন্তু সে তাদের একজনের প্রতি ঝুঁকে পড়ে, কিয়ামত দিবসে সে এক অংশ অবস অবস্থায় উঠবে”। [55]
২৪. গায়ের মাহরাম মহিলার সাথে নির্জনে অবস্থান
মানুষের মধ্যে ফিতনা ও অশান্তি সৃষ্টি করতে শয়তান সদা তৎপর। কি করে তাদের দ্বারা হারাম কাজ করানো যায় এ
চিন্তা তার অহর্নিশ। তাই আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সতর্ক করতে গিয়ে বলেন,
﴿ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻟَﺎ ﺗَﺘَّﺒِﻌُﻮﺍْ ﺧُﻄُﻮَٰﺕِ ﭐﻟﺸَّﻴۡﻄَٰﻦِۚ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﺘَّﺒِﻊۡ ﺧُﻄُﻮَٰﺕِ ﭐﻟﺸَّﻴۡﻄَٰﻦِ ﻓَﺈِﻧَّﻪُۥ ﻳَﺄۡﻣُﺮُ ﺑِﭑﻟۡﻔَﺤۡﺸَﺎٓﺀِ ﻭَﭐﻟۡﻤُﻨﻜَﺮِۚ ﴾ ‏[ ﺍﻟﻨﻮﺭ : ٢١ ‏]
‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না। যে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাকে তো সে অশ্লীল ও
অন্যায় কাজেরই হুকুম দেয়”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ২১]
শয়তান মানুষের শিরা-উপশিরায় চলাচল করে।[56] কোনো গায়ের মাহরাম মহিলার সাথে একাকী অবস্থানের সুযোগ সৃষ্টির
মাধ্যমে অশ্লীল কাজে লিপ্ত করা শয়তানেরই একটি চক্রান্ত। এজন্যই শরী‘আত উক্ত রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻟَﺎ ﻳَﺨْﻠُﻮَﻥَّ ﺭَﺟُﻞٌ ﺑِﺎﻣْﺮَﺃَﺓٍ ﺇِﻟَّﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺛَﺎﻟِﺜَﻬُﻤَﺎ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥُ‏»
“কোনো পুরুষ একজন মহিলার সাথে নির্জনের মিলিত হলে তাদের তৃতীয় সঙ্গী হয় শয়তান”। [57]
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻟَﺎ ﻳَﺪْﺧُﻠَﻦَّ ﺭَﺟُﻞٌ، ﺑَﻌْﺪَ ﻳَﻮْﻣِﻲ ﻫَﺬَﺍ، ﻋَﻠَﻰ ﻣُﻐِﻴﺒَﺔٍ، ﺇِﻟَّﺎ ﻭَﻣَﻌَﻪُ ﺭَﺟُﻞٌ ﺃَﻭِ ﺍﺛْﻨَﺎﻥِ‏»
“আমার আজকের এ দিন থেকে কোনো পুরুষ একজন কিংবা দু’জন পুরুষকে সঙ্গে করে ব্যতীত কোনো স্বামী থেকে দূরে থাকা
মহিলার সাথে নির্জনে দেখা করতে পারবে না”। [58]
সুতরাং ঘর হোক কিংবা স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়েই হোক, আর বাড়ীর কক্ষেই হোক, কিংবা মোটর গাড়ীতেই হোক,
কোথাও কোনো পুরুষ লোক বিবাহ বৈধ এমন কোনো মহিলার সাথে একাকী থাকতে পারবে না। নিজের ভাবী, পরিচারিকা,
রুগিনী ইত্যাকার কারও সাথেই নির্জনবাস বৈধ নয়।
অনেক মানুষ আছে যারা আত্মবিশ্বাসের বলে হোক কিংবা দ্বিতীয় পক্ষের ওপর নির্ভর করেই হোক উপরোক্ত মহিলাদের
সাথে একাকী অবস্থানে খুবই উদার মনোভাব পোষণ করে। তারা এভাবে মেলামেশাকে খারাপ কিছুই মনে করে না। অথচ
এরই মধ্য দিয়ে ব্যভিচারের সূত্রপাত হয়, সমাজ দেহ কলুষিত হয় এবং সমাজে অবৈধ সন্তানদের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়।
২৫. বিবাহ বৈধ এমন মহিলার সাথে করমর্দন
আজকের সমাজে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা অবারিতভাবে চলছে। ফলে অনেক নারী-পুরুষই নিজেকে আধুনিক হিসাবে
যাহির করার জন্য শরী‘আতের সীমালংঘন করে পরস্পরে মুসাফাহা করছে। তাদের ভাষায় এটা হ্যান্ডশেক বা করমর্দন।
আল্লাহর নিষেধকে থোড়াই কেয়ার করে বিকৃত রূচি ও নগ্ন সভ্যতার অন্ধ অনুকরণে তারা এ কাজ করছে এবং নিজেদেরকে
প্রগতিবাদী বলে যাহির করছে। আপনি তাদেরকে যতই বুঝান না কেন বা দলীল-প্রমাণ যতই দেখান না কেন তারা তা কখনই
মানবে না। উল্টো আপনাকে প্রতিক্রিয়াশীল, সন্দেহবাদী, মোহাচ্ছন্ন, আত্মীয়তাছিন্নকারী ইত্যাদি বিশেষণে
আখ্যায়িত করবে।
চাচাত বোন, ফুফাত বোন, মামাত বোন, খালাত বোন, ভাবী, চাচী, মামী প্রমুখ আত্মীয়ের সঙ্গে মুসাফাহা করা তো এসব
লোকদের নিকট পানি পানের চেয়েও সহজ কাজ। শরী‘আতের দৃষ্টিতে কাজটি কত ভয়াবহ তা যদি তারা দূরদৃষ্টি দিয়ে দেখত
তাহলে কখনই তারা এ কাজ করত না। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﻟَﺄَﻥْ ﻳُﻄْﻌَﻦَ ﻓِﻲ ﺭَﺃْﺱِ ﺃَﺣَﺪِﻛُﻢْ ﺑِﻤِﺨْﻴَﻂٍ ﻣِﻦْ ﺣَﺪِﻳﺪٍ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻪُ ﻣِﻦْ ﺃَﻥْ ﻳَﻤَﺲَّ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓً ﻟَﺎ ﺗَﺤِﻞُّ ﻟَﻪُ‏»
“নিশ্চয় তোমাদের কারো মাথায় লোহার পেরেক ঠুকে দেওয়া ঐ মহিলাকে স্পর্শ করা থেকে অনেক শ্রেয়, যে তার জন্য
হালাল নয়”। [59]
নিঃসন্দেহে এটা হাতের যিনা। যেমন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﺍﻟْﻌَﻴْﻨَﺎﻥِ ﺗَﺰْﻧِﻴَﺎﻥِ، ﻭَﺍﻟْﻴَﺪَﺍﻥِ ﺗَﺰْﻧِﻴَﺎﻥِ، ﻭَﺍﻟﺮِّﺟْﻠَﺎﻥِ ﺗَﺰْﻧِﻴَﺎﻥِ، ﻭَﺍﻟْﻔَﺮْﺝُ ﻳَﺰْﻧِﻲ ‏»
“দু’চোখ যিনা করে, দু’হাত যিনা করে, দু’পা যিনা করে এবং লজ্জাস্থানও যিনা করে”। [60]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অধিক পবিত্র মনের মানুষ আর কে আছে? অথচ তিনি বলেছেন,
‏«ﺇِﻧِّﻲ ﻟَﺎ ﺃُﺻَﺎﻓِﺢُ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀ ‏»
“আমি নারীদের সাথে মুসাফাহা করি না”। [61]
তিনি আরও বলেছেন,
‏«ﻻ ﺃﻣﺲ ﺃﻳﺪﻯ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ‏»
“আমি নারীদের হাত স্পর্শ করি না”। [62]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেছেন,
‏«ﻻَ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪِ ﻣَﺎ ﻣَﺴَّﺖْ ﻳَﺪُ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﺪَ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٍ ﻗَﻂُّ، ﻏَﻴْﺮَ ﺃَﻧَّﻪُ ﺑَﺎﻳَﻌَﻬُﻦَّ ﺑِﺎﻟﻜَﻼَﻡِ ‏»
“আল্লাহর শপথ, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাত কখনই কোনো বেগানা নারীর হাত স্পর্শ করে নি।
তিনি মৌখিক বাক্যের মাধ্যমে তাদের বায়‘আত নিতেন”। [63]
সুতরাং আধুনিক সাজতে গিয়ে যারা নিজেদের বন্ধুদের সাথে মুসাফাহা না করলে স্ত্রীদের তালাক দেওয়ার হুমকি দেয়
তারা যেন হুঁশিয়ার হয়। জানা আবশ্যক যে, মুসাফাহা কোনো আবরণের সাহায্যে হোক বা আবরণ ছাড়া হোক উভয়
অবস্থাতেই হারাম।
২৬. পুরুষের মাঝে সুগন্ধি মেখে নারীর গমনাগমন
আজকাল আতর, সেন্ট ইত্যাদি নানা প্রকার সুগন্ধি মেখে নারীরা ঘরে-বাইরে পুরুষদের মাঝে চলাফেরা করছে। অথচ
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে কঠোর সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন,
‏«ﺃَﻳُّﻤَﺎ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٍ ﺍﺳْﺘَﻌْﻄَﺮَﺕْ ﻓَﻤَﺮَّﺕْ ﻋَﻠَﻰ ﻗَﻮْﻡٍ ﻟِﻴَﺠِﺪُﻭﺍ ﻣِﻦْ ﺭِﻳﺤِﻬَﺎ ﻓَﻬِﻲَ ﺯَﺍﻧِﻴَﺔ«ٌ
“পুরুষরা গন্ধ পাবে এমন উদ্দেশ্যে আতর মেখে কোনো মহিলা যদি পুরুষদের মাঝে গমন করে তাহলে সে একজন ব্যভিচারিণী
বলে গণ্য হবে”। [64]
অনেক মহিলা তো এ ব্যাপারে একেবারে উদাসীন কিংবা তারা বিষয়টিকে লঘুভাবে গ্রহণ করছে। তারা সেজেগুজে সুগন্ধি
মেখে ড্রাইভারের সাথে গাড়ীতে উঠছে, দোকানে যাচ্ছে, স্কুল-কলেজে যাচ্ছে; কিন্তু শরী‘আতের নিষেধাজ্ঞার দিকে
বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করছে না। নারীদের বাইরে গমনকালে শরী‘আত এমন কঠোরতা আরোপ করেছে যে, তারা সুগন্ধি মেখে
থাকলে নাপাকী হেতু ফরয গোসলের ন্যায় গোসল করতে হবে। এমনকি যদি মসজিদে যায় তবুও। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﻻ ﺗُﻘﺒﻞُ ﺻَﻼﺓٌ ﻻﻣْﺮَﺃﺓِ ﺗﻄﻴَّﺒﺖ ﻟﻬﺬﺍ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪِ ﺣﺘﻰ ﺗﺮﺟﻊ ﻓﺘﻐﺘَﺴِﻞَ ﻏُﺴْﻠَﻬﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺠﻨﺎﺑﺔِ ‏»
“যে মহিলা গায়ে সুগন্ধি মেখে মসজিদের দিকে বের হয় এজন্য যে, তার সুবাস পাওয়া যাবে, তাহলে তার সালাত তদবধি
গৃহীত হবে না যে পর্যন্ত না সে নাপাকীর নিমিত্ত ফরয গোসলের ন্যায় গোসল করে”। [65]
বিয়ে-শাদীর অনুষ্ঠানে, হাটে-বাজারে, যানবাহনাদিতে, নানা ধরনের মানুষের সমাবেশে, এমনকি রমযানের রাতে
মসজিদে আসার সময় তথা সর্বত্র মহিলারা যে সুগন্ধিযুক্ত প্রসাধনী আতর, সেন্ট, আগর, ধূনা, চন্দনকাঠ ইত্যাদি নিয়ে
যাতায়াত করছে তার বিরুদ্ধে একমাত্র আল্লাহর কাছেই সকল অভিযোগ। অথচ শরী‘আত তো শুধু মহিলাদের জন্য সে আতরের
অনুমোদন দিয়েছে যার রঙ হবে প্রকাশিত পক্ষান্তরে গন্ধ হবে অপ্রকাশিত। আল্লাহর নিকট আমাদের প্রার্থনা, তিনি যেন
আমাদের ওপর ক্রুদ্ধ না হন। অপগণ্ড নর-নারীর কাজের জন্য সৎ লোকদের পাকড়াও না করেন এবং সবাইকে সিরাতুল
মুস্তাকীমে পরিচালিত করেন। আমীন!
২৭. মাহরাম আত্মীয় ছাড়া স্ত্রীলোকের সফর
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏«ﻻَ ﺗُﺴَﺎﻓِﺮِ ﺍﻟﻤَﺮْﺃَﺓُ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﻊَ ﺫِﻱ ﻣَﺤْﺮَﻡٍ‏»
“কোনো মহিলা স্থায়ীভাবে বিবাহ হারাম এমন কোনো আত্মীয়কে সাথে না নিয়ে যেন ভ্রমণ না করে”। [66]
[এ নির্দেশ সকল প্রকার সফরের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য; এমনকি হজের সফরের ক্ষেত্রেও।] মাহরাম কোনো পুরুষ তাদের সাথে
না থাকলে দুশ্চরিত্রের লোকদের মনে তাদের প্রতি কুচিন্তা জাগ্রত হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। এভাবে তারা তাদের পিছু
নিতে পারে। আর নারীরা তো প্রকৃতিগত ভাবেই দুর্বল। তারা তাদের মান, ইযযত, আব্রু নিয়ে সামান্যতেই বিব্রত বোধ করে।
এমতাবস্থায় দুষ্টলোকেরা তাদের পিছু নিলে বাধা দেওয়া বা আত্মরক্ষামূলক কিছু করা তাদের জন্য কষ্টকর তো বটেই।
অনেক মহিলাকে বিমান কিংবা অন্য যানবাহনে উঠার সময় বিদায় জানাতে দু’একজন মাহরাম নিকটজন হাযির থাকে,
আবার তাকে স্বাগত জানাতেও এমন দু’একজন হাযির থাকে। কিন্তু পুরো সফরে তার পাশে থাকে কে? যদি বিমানে কোনো
ত্রুটি দেখা দেয় এবং তা অন্য কোনো বিমানবন্দরে অবতরণে বাধ্য হয় কিংবা নির্দিষ্ট বিমানবন্দরে অবতরণে বিলম্ব ঘটে
বা উড্ডয়নের সময়সূচী পরিবর্তন হয়, তাহলে তখন অবস্থা কি দাঁড়াবে? [ট্রেন, বাস, স্টীমার প্রভৃতি সফরেও এরূপ ঘটনা হর-
হামেশা ঘটে। তখন কী যে অবস্থায় সৃষ্টি হয় তা ভুক্তভোগী ছাড়া বুঝিয়ে বলা কষ্টকর। সুতরাং সাথে একজন মাহরাম পুরুষ
থাকা একান্ত দরকার, যে তার পাশে বসবে এবং আপদে-বিপদে ও উঠা-নামায় সাহায্য করবে।]
মাহরাম হওয়ার জন্য চারটি শর্ত রয়েছে। যথা-মুসলিম হওয়া, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন হওয়া ও পুরুষ হওয়া।
যেমন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻟَﺎ ﻳَﺤِﻞُّ ﻟِﺎﻣْﺮَﺃَﺓٍ ﺗُﺆْﻣِﻦُ ﺑِﺎﻟﻠﻪِ ﻭَﺍﻟْﻴَﻮْﻡِ ﺍﻟْﺂﺧِﺮِ، ﺃَﻥْ ﺗُﺴَﺎﻓِﺮَ ﺳَﻔَﺮًﺍ ﻳَﻜُﻮﻥُ ﺛَﻠَﺎﺛَﺔَ ﺃَﻳَّﺎﻡٍ ﻓَﺼَﺎﻋِﺪًﺍ، ﺇِﻟَّﺎ ﻭَﻣَﻌَﻬَﺎ ﺃَﺑُﻮﻫَﺎ، ﺃَﻭِ ﺍﺑْﻨُﻬَﺎ، ﺃَﻭْ ﺯَﻭْﺟُﻬَﺎ، ﺃَﻭْ ﺃَﺧُﻮﻫَﺎ، ﺃَﻭْ ﺫُﻭ ﻣَﺤْﺮَﻡٍ ﻣِﻨْﻬَﺎ ‏»
“কোনো মহিলা যে আল্লাহ ও শেষ দিবসের ওপর ঈমান রাখে তার জন্য তিন দিন বা ততোধিক সফর করা বৈধ নয়; যদি না
তার সাথে থাকে তার পিতা, তার পুত্র, তার স্বামী, তার ভাই অথবা তার কোনো মাহরাম পুরুষ”। [67]
২৮. গায়ের মাহরাম মহিলার প্রতি ইচ্ছাপূর্বক দৃষ্টিপাত করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ﻗُﻞ ﻟِّﻠۡﻤُﺆۡﻣِﻨِﻴﻦَ ﻳَﻐُﻀُّﻮﺍْ ﻣِﻦۡ ﺃَﺑۡﺼَٰﺮِﻫِﻢۡ ﻭَﻳَﺤۡﻔَﻈُﻮﺍْ ﻓُﺮُﻭﺟَﻬُﻢۡۚ ﺫَٰﻟِﻚَ ﺃَﺯۡﻛَﻰٰ ﻟَﻬُﻢۡۚ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﺧَﺒِﻴﺮُۢ ﺑِﻤَﺎ ﻳَﺼۡﻨَﻌُﻮﻥَ ٣٠﴾ ‏[ ﺍﻟﻨﻮﺭ : ٣٠‏]
“হে নবী! আপনি মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নিচু করে রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে। এ
ব্যবস্থা তাদের জন্য পবিত্রতম। নিশ্চয় তারা যা করবে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত আছেন”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩০]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﻑَ ﺯِﻧَﺎ ﺍﻟﻌَﻴْﻦِ ﺍﻟﻨَّﻈَﺮ ‏»
“চোখের যিনা দৃষ্টিপাত”। [68]
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা যে সব স্ত্রীলোককে দেখা হারাম করে দিয়েছেন তাদেরকে দেখা হল চোখের যিনা। তবে শর‘ঈ
অনুমোদন রয়েছে এমন সব প্রয়োজনে তাদের প্রতি তাকানো যাবে এবং যতটুকু দেখা দরকার তা দেখা যাবে। যেমন,
বিবাহের জন্য কনে দেখা ও ডাক্তার কর্তৃক রুগিনীকে দেখা নিষিদ্ধ নয়।
পুরুষদের ন্যায় মহিলারাও বেগানা পুরুষের পানে কুমতলবে তাকাতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ﻭَﻗُﻞ ﻟِّﻠۡﻤُﺆۡﻣِﻨَٰﺖِ ﻳَﻐۡﻀُﻀۡﻦَ ﻣِﻦۡ ﺃَﺑۡﺼَٰﺮِﻫِﻦَّ ﻭَﻳَﺤۡﻔَﻈۡﻦَ ﻓُﺮُﻭﺟَﻬُﻦَّ﴾ ‏[ ﺍﻟﻨﻮﺭ : ٣١‏]
“হে নবী! আপনি বিশ্বাসী নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নীচু রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান হিফাযত করে”।
[সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১]
অনুরূপভাবে দাঁড়ি-গোফ বিহীন সুন্দর ও সুশ্রী বালকদের দিকে কুমতলবে তাকানোও হারাম।
তদ্রূপ পুরুষের সতর পুরুষের দেখা এবং নারীর সতর নারী কর্তৃক দেখাও হারাম। আর যে সতর দেখা জায়েয নেই তা স্পর্শ করাও
জায়েয নেই। এমনকি কোনো আবরণ যোগে হলেও জায়েয নেই।
কিছু লোক শয়তানী ফেরেবে পড়ে পত্র-পত্রিকা ও সিনেমার ছবি দেখে থাকে। তাদের দাবী, ‘এসব ছবির কোনো বাস্তবতা
নেই। সুতরাং এগুলো দেখলে দোষ হবে না’। অথচ এগুলোর ক্ষতিকর এবং যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী প্রভাব খুবই স্পষ্ট।
২৯. দাইয়ূছী
যে নারী বা পুরুষ পর্দা মানে না তাকে দাইয়ূছী বলা হয়। ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏«ﺛَﻠَﺎﺛَﺔٌ ﻗَﺪْ ﺣَﺮَّﻡَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢُ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ : ﻣُﺪْﻣِﻦُ ﺍﻟْﺨَﻤْﺮِ، ﻭَﺍﻟْﻌَﺎﻕُّ، ﻭَﺍﻟﺪَّﻳُّﻮﺙُ " ، ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳُﻘِﺮُّ ﻓِﻲ ﺃَﻫْﻠِﻪِ ﺍﻟْﺨَﺒَﺚَ ‏»
“তিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করেছেন। লাগাতার শরাব পানকারী, মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান এবং
দাইয়ূছী, যে নিজ পরিবারের মধ্যে বেহায়াপনাকে জিইয়ে রাখে’। [69]
আমাদের যুগে পর্দাহীনতার নিত্যনতুন সংস্করণ বের হচ্ছে। বাড়ীতে কন্যা কিংবা স্ত্রীকে একজন বেগানা পুরুষের পাশে
বসে আলাপ করতে দেখেও বাড়ীর কর্তা পুরুষটি কিছুই বলেন না। বরং তিনি যেন এরূপ একাকী আলাপে খুশীই হন। মহিলাদের
কোনো বেগানা পুরুষের সাথে একাকী বাইরে যাওয়াও দাইয়ূছী। ড্রাইভারের সাথে অনেক স্ত্রীলোককে এভাবে একাকী
বাইরে যেতে দেখা যায়। বিনা পর্দায় তাদেরকে বাইরে যেতে দেওয়াটাই দাইয়ূছী। এভাবে বাইরে বের হলে পুরুষের লোলুপ
দৃষ্টি তাদের প্রতি পড়ে।
আবার ফিল্ম কিংবা যে সকল পত্রিকা পরিবেশকে কলুষিত করে ও অশ্লীলতার বিস্তার ঘটায় সেগুলো আমদানী করা এবং
বাড়ীতে স্থান দেওয়াও দাইয়ূছী। সুতরাং এসব হারাম থেকে আমাদের অবশ্যই বেঁচে থাকতে হবে।
৩০. পালক সন্তান গ্রহণ ও নিজ সন্তানের পিতৃত্ব অস্বীকার করা
কোনো মুসলিমের জন্য স্বীয় পিতা ব্যতীত অন্যকে পিতা বলে পরিচয় দেওয়া শরী‘আতে বৈধ নয়। অনুরূপভাবে এক গোত্রের
লোক হয়ে নিজেকে অন্য গোত্রের লোক বলে দাবী করাও জায়েয নয়। বস্তুগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য অনেকে এভাবে
অপরকে নিজের পিতা হিসাবে পরিচয় দিয়ে থাকে। সরকারী তালিকায় তাদের মিথ্যা বংশ পরিচয় তুলে ধরে। শৈশবে যে
পিতা তাকে ত্যাগ করেছে তার প্রতি বিদ্বেষবশতঃ অনেকে লালন-পালনকারীকে পিতা বলে ডাকে। কিন্তু এসবই হারাম।
এর ফলে নানাক্ষেত্রে বিশৃংখলা দেখা দেয়। যেমন মাহরাম পুরুষ, মীরাছ, বিয়ে, শাদী ইত্যাদির বিধানে অনিশ্চয়তার
সৃষ্টি হয়। সা‘দ ও আবু বাকরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,
‏« ﻣَﻦِ ﺍﺩَّﻋَﻰ ﺇِﻟَﻰ ﻏَﻴْﺮِ ﺃَﺑِﻴﻪِ، ﻭَﻫُﻮَ ﻳَﻌْﻠَﻢُ ﻓَﺎﻟْﺠَﻨَّﺔُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺣَﺮَﺍﻡ «ٌ
“জেনে শুনে যে নিজ পিতা ব্যতীত অন্যকে পিতা বলে পরিচয় দেয়, তার ওপর জান্নাত হারাম”। [70]
যে সকল নিয়ম ও কাজ বংশ নিয়ে অসারতা তৈরী করে তোলে কিংবা মিথ্যা সাব্যস্ত করে শরী‘আতে এগুলো সবই হারাম।
কেউ আছে, স্ত্রীর সাথে ঝগড়া বাঁধলে একেবারে দিশাহীন হয়ে তার বিরুদ্ধে যিনার অপবাদ আনয়ন করে এবং কোনো
প্রমাণ ছাড়াই নিজ সন্তানের পরিচয় অস্বীকার করে; অথচ সে ভালোমতই জানে যে, সন্তানটি তারই ঔরসে জন্ম নিয়েছে।
আবার অনেক মহিলা আছে, যারা স্বামীর আমানতের খেয়ানত করে অন্যের দ্বারা গর্ভবর্তী হয় এবং সেই জারজকে স্বামীর
বৈধ সন্তান হিসাবে তার বংশভুক্ত করে দেয়। এসবই হারাম। এ বিষয়ে কঠোর তিরস্কার উচ্চারিত হয়েছে। লি‘আনের আয়াত
অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏«ﺃَﻳُّﻤَﺎ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٍ ﺃَﺩْﺧَﻠَﺖْ ﻋَﻠَﻰ ﻗَﻮْﻡٍ ﻣَﻦْ ﻟَﻴْﺲَ ﻣِﻨْﻬُﻢْ، ﻓَﻠَﻴْﺴَﺖْ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓِﻲ ﺷَﻲْﺀٍ، ﻭَﻟَﻦْ ﻳُﺪْﺧِﻠَﻬَﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺟَﻨَّﺘَﻪُ، ﻭَﺃَﻳُّﻤَﺎ ﺭَﺟُﻞٍ ﺟَﺤَﺪَ ﻭَﻟَﺪَﻩُ، ﻭَﻫُﻮَ ﻳَﻨْﻈُﺮُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ، ﺍﺣْﺘَﺠَﺐَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻨْﻪُ، ﻭَﻓَﻀَﺤَﻪُ ﻋَﻠَﻰ ﺭُﺀُﻭﺱِ ﺍﻟْﺄَﻭَّﻟِﻴﻦَ ﻭَﺍﻟْﺂﺧِﺮِﻳﻦَ ‏»
“যে মহিলা কোনো সন্তানকে এমন কোনো গোত্রভুক্ত করে দেয় যে আসলে ঐ গোত্রভুক্ত নয়, আল্লাহর নিকট তার কোনোই মূল্য
নেই এবং আল্লাহ তাকে কখনই তার জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। আর যে পুরুষ নিজ সন্তানের পিতৃত্ব অস্বীকার করবে
এমতাবস্থায় যে সে তার দিকে তাকিয় আছে আল্লাহ তার থেকে পর্দা করে নিবেন এবং পূর্ববর্তী-পরবর্তী সকল লোকের
সামনে তাকে অপদস্থ করবেন”। [71]
লেখক: শাইখ মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
অনুবাদক: মু. সাইফুল ইসলাম
সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
উৎস: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব



0 বিস্তারিত আরও দেখুন:

Post a Comment

Copyright @ 2013 নবীদের কাহিনী.