Sunday, 8 November 2015

যে সকল হরামকে মানুষ তুচ্ছ মনে করে ২য় পব

৩১. সুদ খাওয়া
আল্লাহ তা‘আলা সূদখোর ব্যতীত আর কারো বিরুদ্ধে স্বয়ং যুদ্ধের ঘোষণা দেননি। তিনি বলেন,
﴿ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﭐﺗَّﻘُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺫَﺭُﻭﺍْ ﻣَﺎ ﺑَﻘِﻲَ ﻣِﻦَ ﭐﻟﺮِّﺑَﻮٰٓﺍْ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢ ﻣُّﺆۡﻣِﻨِﻴﻦَ ٢٧٨ ﻓَﺈِﻥ ﻟَّﻢۡ ﺗَﻔۡﻌَﻠُﻮﺍْ ﻓَﺄۡﺫَﻧُﻮﺍْ ﺑِﺤَﺮۡﺏٖ ﻣِّﻦَ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟِﻪِۦۖ ﻭَﺇِﻥ ﺗُﺒۡﺘُﻢۡ ﻓَﻠَﻜُﻢۡ ﺭُﺀُﻭﺱُ ﺃَﻣۡﻮَٰﻟِﻜُﻢۡ ﻟَﺎ ﺗَﻈۡﻠِﻤُﻮﻥَ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﻈۡﻠَﻤُﻮﻥَ ٢٧٩﴾ ‏[ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ٢٧٨،
٢٧٩ ‏]
“হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর তাকাওয়া অবলম্বন কর এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ কর যদি তোমরা
ঈমানদার হও। আর যদি তোমরা তা না কর, তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শোন” [সূরা আল-
বাকারা, আয়াত: ২৭৮-২৭৯]
আল্লাহর নিকট সূদ খাওয়া যে কত মারাত্মক অপরাধ তা অনুধাবনের জন্য উক্ত আয়াতদ্বয়ই যথেষ্ট। সূদবৃত্তি দারিদ্র্য, মন্দা ঋণ
পরিশোধে অক্ষমতা, অর্থনৈতিক স্থবিরতা, বেকারত্ব বৃদ্ধি, বহু কোম্পানী ও প্রতিষ্ঠানের দেউলিয়াত্ব ইত্যাদির ন্যায় কত
যে জঘন্য ক্ষতি ও ধ্বংসের দিকে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে ঠেলে দিচ্ছে তা পর্যবেক্ষক মাত্রই অনুধাবন করতে সক্ষম।
প্রতিদিনের ঘাম ঝরানো শ্রমের বিনিময়ে যা অর্জিত হয়, সূদের অতলগহ্বর পূরণেই তা নিঃশেষ হয়ে যায়। সূদের ফলে
সমাজে একটি বিশেষ শ্রেণির উদ্ভব হয়। মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে ব্যাপক সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়ে পড়ে। সম্ভবতঃ এসব
কারণেই আল্লাহ তা‘আলা সূদীকারবারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
সূদী কারবারে মূল দু’পক্ষ, মধ্যস্থতাকারী, সহযোগিতাকারী ইত্যাকার যারাই এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তারা সবাই মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যবানীতে অভিশপ্ত। জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
‏« ﻟَﻌَﻦَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺁﻛِﻞَ ﺍﻟﺮِّﺑَﺎ، ﻭَﻣُﻮﻛِﻠَﻪ ،ُ ﻭَﺷَﺎﻫِﺪَﻳْﻪِ، ﻭَﻛَﺎﺗِﺒَﻪُ، ﻭﻗﺎﻝ : ﻫﻢ ﺳﻮﺍﺀ ‏»
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূদ গ্রহীতা, সূদ দাতা, সূদের লেখক এবং তার সাক্ষীদ্বয়কে অভিসম্পাত

যে সকল হারামকে মানুুষ তুচ্ছ মনে করে ১ম পব

ক্রম বিষয়
1. ভূমিকা
2. শির্ক
3. কবরপূজা
4. গায়রুল্লাহর নামে যবেহ করা
5. হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল মনে করা
6. জাদু ও ভাগ্যগণনা
7. রাশিফল ও মানব জীবনের ওপর গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব সম্পর্কিত বিশ্বাস
8. স্রষ্টা যেসব বস্তুতে যে কল্যাণ রাখে নি তাতে সে কল্যাণ থাকার আকীদা পোষণ করা
9. লোক দেখানো ইবাদত
10. কুলক্ষণ
11. আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কসম করা
12. খাতির জমানোর জন্য মুনাফিক ও ফাসিকদের সঙ্গে উঠাবসা করা
13. সালাতে ধীরস্থিরতা পরিহার করা
14. সালাতে অনর্থক কাজ ও বেশি বেশি নড়াচড়া করা
15. সালাতে ইচ্ছাপূর্বক ইমামের আগে মুক্তাদীর গমন
16. পেঁয়াজ-রসুন কিংবা দুর্গন্ধযুক্ত বস্তু খেয়ে মসজিদে গমন
17. ব্যভিচার
18. পুংমৈথুন বা সমকামিতা


Tuesday, 20 October 2015

হযরত মুসা ও হারুন আঃ

হযরত মূসা ও হারূণ (আলাইহিমাস সালাম)সূচীপত্রফেরাঊনের পরিচয়বনু ইস্রাঈলের
পূর্ব ইতিহাসমূসা (আঃ)-এর পরিচয়মূসা ও ফেরাঊনের কাহিনীমূসা নদীতে
নিক্ষিপ্ত হ’লেনযৌবনে মূসাযুবক মূসা খুনী হ’লেনমূসার পরীক্ষা সমূহনবুঅত-পূর্ব ১ম
পরীক্ষা : হত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া২য় পরীক্ষা : মাদিয়ানে হিজরতমাদিয়ানের
জীবন : বিবাহ ও সংসারপালন৩য় পরীক্ষা: মিসর অভিমুখে যাত্রা ও পথিমধ্যে
নবুঅত লাভনয়টি নিদর্শনসিনাই হ’তে মিসরমূসার পাঁচটি দো‘আমূসা হ’লেন
কালীমুল্লাহমূসা (আঃ)-এর মিসরে প্রত্যাবর্তনফেরাঊনের নিকটে মূসা (আঃ)-এর
see more

Friday, 7 August 2015

দোয়া

প্রাত্যহিক দোয়াসমূহ
ঘুমাতে যাওয়ার সময় দোয়া
ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺑﺴﻤﻚ ﺃﻣﻮﺕ ﻭﺃﺣﻴﺎ )
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমূতু ওয়া-আহ'ইয়া
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমারই নামে মৃত্যুবরন করি,আবার তোমারই
নামে জীবন ধারন করি।
ঘুম থেকে উঠার পরের দোয়া

Friday, 31 July 2015

বিএ নামায

বিত্র নামায
বিত্র নামায সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। এ নামায আদায় করতে মহানবী (সাঃ) উম্মতকে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করতেন। হযরত আলী
(রাঃ) বলেন, ‘বিত্র ফরয নামাযের মত অবশ্যপালনীয় নয়; তবে আল্লাহর রসূল (সাঃ) তাকে সুন্নতের রুপদান করেছেন; তিনি
বলেছেন, “অবশ্যই আল্লাহ বিত্র (জোড়হীন), তিনি বিত্র (জোড়শূন্যতা বা বেজোড়) পছন্দ করেন। সুতরাং তোমরা বিত্র
(বিজোড়) নামায পড়, হে আহলে কুরআন!” (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্,
সহীহ, সহিহ তারগিব ৫৮৮নং)

Thursday, 30 July 2015

কবীরা গুনাহ কি

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর । আমরা শুধু তারই প্রশংসা করি এবং তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি ও তার নিকট ক্ষমা চাই। আল্লাহ যাকে হেদায়েত দিবেন কেউ তাকে গোমরাহ করতে পারবে না। আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন তাকে কেউ পথ দেখাতে পারে না এবং আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেই। তিনি একক, তার কোন শরীক নেই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।
ইরশাদ হচ্ছে-


সালাতে বুকে হাত বাধা ও নাভীর নিচে হাত বাধা

>>>> সালাতে বুকে হাত বাঁধা এবং নাভীর নীচে হাত বাঁধার
যঈফ দলীলসমূহ প্রমানসহ নিচে উপস্থাপন করা হলো <<<<

দুই হাতের আংগুল সমূহ ক্বিবলামুখী খাড়াভাবে কাঁধ অথবা কান
পর্যন্ত উঠিয়ে দুনিয়াবী সবকিছুকে হারাম করে দিয়ে স্বীয় প্রভুর
মহত্ত্ব ঘোষণা করে বলবে ‘আল্লা-হু আকবার’ (আল্লাহ সবার
চেয়ে বড়)। তারপর বাম হাতের উপরে ডান হাত, বুকের
উপরে বেঁধে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সম্মুখে নিবেদিত চিত্তে সিজদার
স্থান বরাবর দৃষ্টি রেখে দাড়াতে হবে।
মহানআল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা আল্লাহর জন্য
নিবিষ্টচিত্তে দাঁড়িয়ে যাও’। বাকারাহ- ২/২৩৮
হাত বাঁধার সময় দুই কানের লতি বরাবর দুই হাতের
বৃদ্ধাঙ্গুলী উঠানোর হাদীস যঈফ। আবু দাউদ-৭৩৭
# ইবনে হুজাইফা(রাঃ) মুরসাল হাদীসে বলেন, “নবীজি(সঃ) সালাতের
সময় বুকের উপর হাত বাধতেন”।-নাসিরউদ্দিন আলবানী। জাকির
নায়েক বক্তৃতা সামগ্রী - ৫ম খন্ড - পৃষ্ঠা- ৮৫


Saturday, 4 July 2015

হযরত ইউসুফ আঃ

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ইউসুফ (আঃ) সম্পর্কে বলেন, الكريمُ بنُ الكريمِ بنِ الكريمِ بنِ الكريمِ يوسفُ بنُ يعقوبَ بنِ اسحاقَ بنِ ابراهيمَ عليهمُ السلامُ- ‘নিশ্চয়ই মর্যাদাবানের পুত্র মর্যাদাবান, তাঁর পুত্র মর্যাদাবান, তাঁর পুত্র মর্যাদাবান। তাঁরা হলেন ইবরাহীমের পুত্র ইসহাক, তাঁর পুত্র ইয়াকূব ও তাঁর পুত্র ইউসুফ ‘আলাইহিমুস সালাম’ (তাঁদের উপর শান্তি বর্ষিত হৌক!)।[1]

নবীগণের মধ্যে হযরত ইউসুফ (আঃ) হ’লেন একমাত্র নবী, যাঁর পুরা কাহিনী একটি মাত্র সূরায় ধারাবাহিকভাবে বর্ণিত হয়েছে। সূরা ইউসুফ-এর ১১১টি আয়াতের মধ্যে ৩ থেকে ১০১ আয়াত পর্যন্ত ৯৯টি আয়াতে ইউসুফের কাহিনী বিবৃত হয়েছে। এ ছাড়া অন্যত্র কেবল সূরা আন‘আম ৮৪ এবং সূরা মুমিন ৩৪ আয়াতে তাঁর নাম এসেছে।


রোজাবস্থায় বীর্যপাত ও স্বপ্নদোস

রোযাবস্থায় বীর্যপাত এবং স্বপ্নদোষের বিধান
আলহামদুলিল্লাহ্ ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু
আলা রাসূলিল্লাহ, আম্মাবাদঃ
রামাযান মাসে সাউম পালনকারী ভাইদের পক্ষ
থেকে উপরোক্ত বিষয়ে প্রায় প্রায় প্রশ্ন করা হয়।
এ সম্পর্কে শরীয়ার সঠিক বিধান না জানা থাকার
কারণে অনেকে অনেক রকমের ধারণা করে। কেউ
মনে করে তার রোযা নষ্ট হয়ে গেছে, কেউ বলে
রোযা মাকরূহ হয়ে গেছে, কেউ ভাবে তার দ্বারা
গুনাহ হয়ে গেছে আর কেউ সংশয়ে থাকে। তাই
সংক্ষিপ্তাকারে বিষয়টির শারঈ সমাধান উল্লেখ
করার নিয়ত করেছি। আল্লাহই তাওফীকদাতা।
প্রথমতঃ আমাদের মনে রাখা উচিৎ যে, রোযা/


সূরা কাহাফে লুকানো রহস্য ও দাজ্জাল

সূরা কাহাফে লুকানো রহস্য ও দাজ্জাল
By: sharif khan
সূরা কাহাফে লুকানো রহস্য ও
দাজ্জাল
কখনো ভেবে দেখেছেন কি কেন আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের
প্রতি জুমু’আর দিন সূরা কাহাফ পাঠ করতে
বলেছেন? আসুন জানার চেষ্টা করি,
এই সূরাটিতে মোট চারটি শিক্ষণীয় ঘটনা আছে,
প্রতিটি ঘটনাতেই আছে বুদ্ধিমান লোকদের জন্য
উপদেশ। আসুন সেই ঘটনাগুলো ও তার শিক্ষাগুলো
কি জানার চেষ্টা করিঃ

কবরের আযাব

কবরের আযাব
By: sharif khan
হযরত সামুরা বিন জুনদুব(রা) বলেন, রাসুল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রায়ই তার
সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করতেন যে, তোমাদের
মাঝে কেউ কি কোনো স্বপ্ন দেখেছ ?একদিন
সকালে তিনি নিজেই বলতে লাগলেন যে, আজ
রাতে আমার নিকট দুজন লোক এল এবং বায়তুল
মুকাদ্দাসের দিকে নিয়ে গেল।যাওয়ার পথে আমরা
শায়িত একটি লোকের নিকট দিয়ে অতিক্রম

Monday, 6 April 2015

হযরত দাউদ আঃ

বিপুল শক্তি ও রাষ্ট্রক্ষমতার অধিকারী নবী ছিলেন মাত্র দু’জন। তাঁরা হ’লেন পিতা ও পুত্র দাঊদ ও সুলায়মান (আঃ)। বর্তমান ফিলিস্তীন সহ সমগ্র ইরাক ও শাম (সিরিয়া) এলাকায় তাঁদের রাজত্ব ছিল। পৃথিবীর অতুলনীয় ক্ষমতার অধিকারী হয়েও তাঁরা ছিলেন সর্বদা আল্লাহর প্রতি অনুগত ও সদা কৃতজ্ঞ। সেকারণ আল্লাহ তার শেষনবীকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, واصْبِرْ عَلَى مَا يَقُولُونَ وَاذْكُرْ عَبْدَنَا دَاوُودَ ذَا الْأَيْدِ إِنَّهُ أَوَّابٌ-(ص ১৭)- ‘তারা যেসব কথা বলে তাতে তুমি ছবর কর এবং আমার শক্তিশালী বান্দা দাঊদকে স্মরণ কর। সে ছিল আমার প্রতি সদা প্রত্যাবর্তনশীল’ (ছোয়াদ ৩৮/১৭)। দাঊদ হলেন আল্লাহর একমাত্র বান্দা, যাকে খুশী হয়ে পিতা আদম স্বীয় বয়স থেকে ৪০ বছর কেটে তাকে দান করার জন্য আল্লাহর নিকটে সুফারিশ করেছিলেন এবং সেমতে দাঊদের বয়স ৬০ হ’তে ১০০ বছরে বৃদ্ধি পায়[1]

হযরত সোলায়মান আঃ

হযরত দাঊদ (আঃ)-এর মৃত্যুর পর সুযোগ্য পুত্র সুলায়মান তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আবির্ভাবের ন্যূনাধিক দেড় হাযার বছর পূর্বে তিনি নবী হন। সুলায়মান ছিলেন পিতার ১৯জন পুত্রের অন্যতম। আল্লাহ পাক তাকে জ্ঞানে, প্রজ্ঞায় ও নবুঅতের সম্পদে সমৃদ্ধ করেন। এছাড়াও তাঁকে এমন কিছু নে‘মত দান করেন, যা অন্য কোন নবীকে দান করেননি। ইমাম বাগাভী ইতিহাসবিদগণের বরাতে বলেন, সুলায়মান (আঃ)-এর মোট বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। তের বছর বয়সে রাজকার্য হাতে নেন এবং শাসনের চতুর্থ বছরে বায়তুল মুক্বাদ্দাসের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তিনি ৪০ বছর কাল রাজত্ব করেন (মাযহারী, কুরতুবী)। তবে তিনি কত বছর বয়সে নবী হয়েছিলেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায় না। শাম ও ইরাক অঞ্চলে পিতার রেখে যাওয়া রাজ্যের তিনি বাদশাহ ছিলেন। তাঁর রাজ্য তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে সুখী ও শক্তিশালী রাজ্য ছিল। কুরআনে তাঁর সম্পর্কে ৭টি সূরায় ৫১টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।[1] আমরা সেগুলিকে একত্রিত করে কাহিনীরূপে পেশ করার চেষ্টা পাব ইনশাআল্লাহ।

হযরত ইউনূছ আঃ

হযরত ইউনুস বিন মাত্তা (আঃ)-এর কথা পবিত্র কুরআনের মোট ৬টি সূরার ১৮টি আয়াতে[1] বর্ণিত হয়েছে। সূরা ইউনুস ৯৮ আয়াতে তাঁর নাম ইউনুস, সূরা আম্বিয়া ৮৭ আয়াতে ‘যুন-নূন’ (ذو النون) এবং সূরা ক্বলম ৪৮ আয়াতে তাঁকে ‘ছাহেবুল হূত’ (صاحب الحوت) বলা হয়েছে। ‘নূন’ ও ‘হূত’ উভয়ের অর্থ মাছ। যুন-নূন ও ছাহেবুল হূত অর্থ মাছওয়ালা। একটি বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি উক্ত নামে পরিচিত হন। সামনে তা বিবৃত হবে।
ইউনুস (আঃ)-এর কওম :
ইউনুস (আঃ) বর্তমান ইরাকের মূছেল নগরীর নিকটবর্তী ‘নীনাওয়া’ (نينوى) জনপদের অধিবাসীদের প্রতি প্রেরিত হন। তিনি তাদেরকে তাওহীদের দাওয়াত দেন এবং ঈমান ও সৎকর্মের প্রতি আহবান জানান। কিন্তু তারা তাঁর প্রতি অবাধ্যতা প্রদর্শন করে। বারবার দাওয়াত দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হ’লে আল্লাহর হুকুমে তিনি এলাকা ত্যাগ করে চলে যান। ইতিমধ্যে তার কওমের উপরে আযাব নাযিল হওয়ার পূর্বাভাস দেখা দিল। জনপদ ত্যাগ করার সময় তিনি বলে গিয়েছিলেন যে, তিনদিন পর সেখানে গযব নাযিল হ’তে পারে। তারা ভাবল, নবী কখনো মিথ্যা বলেন না। ফলে ইউনুসের কওম ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে দ্রুত কুফর ও শিরক হ’তে তওবা করে এবং জনপদের সকল আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা এবং গবাদিপশু সব নিয়ে জঙ্গলে পালিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে তারা বাচ্চাদের ও গবাদিপশু গুলিকে পৃথক করে দেয় এবং নিজেরা আল্লাহর দরবারে কায়মনোচিত্তে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। তারা সর্বান্ত:করণে তওবা করে এবং আসন্ন গযব হ’তে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে। ফলে আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করেন এবং তাদের উপর থেকে আযাব উঠিয়ে নেন। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন,

হযরত শোআয়েব আঃ

আল্লাহর গযবে ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রধান ৬টি প্রাচীন জাতির মধ্যে পঞ্চম জাতি হ’ল ‘আহলে মাদইয়ান’। ‘মাদইয়ান’ হ’ল লূত সাগরের নিকটবর্তী সিরিয়া ও হিজাযের সীমান্তবর্তী একটি জনপদের নাম। যা অদ্যাবধি পূর্ব জর্ডনের সামুদ্রিক বন্দর ‘মো‘আন’ (معان )-এর অদূরে বিদ্যমান রয়েছে। কুফরী করা ছাড়াও এই জনপদের লোকেরা ব্যবসায়ের ওযন ও মাপে কম দিত, রাহাজানি ও লুটপাট করত। অন্যায় পথে জনগণের মাল-সম্পদ ভক্ষণ করত।[1] ইয়াকূত হামাভী (মৃঃ ৬২৬/১২২৮খৃঃ) বলেন, ইবরাহীম-পুত্র মাদইয়ানের নামে জনপদটি পরিচিত হয়েছে।[2] হযরত শো‘আয়েব (আঃ) এদের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন। ইনি হযরত মূসা (আঃ)-এর শ্বশুর ছিলেন। কওমে লূত-এর ধ্বংসের অনতিকাল পরে কওমে মাদইয়ানের প্রতি তিনি প্রেরিত হন (হূদ ১১/৮৯)। 

হযরত আইয়ূব (আঃ)

হযরত আইয়ূব (আঃ) ছবরকারী নবীগণের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় এবং অনন্য দৃষ্টান্ত ছিলেন। ইবনু কাছীরের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি ইসহাক (আঃ)-এর দুই যমজ পুত্র ঈছ ও ইয়াকূবের মধ্যেকার প্রথম পুত্র ঈছ-এর প্রপৌত্র ছিলেন। আর তাঁর স্ত্রী ছিলেন ইয়াকূব-পুত্র ইউসুফ (আঃ)-এর পৌত্রী ‘লাইয়া’ বিনতে ইফরাঈম বিন ইউসুফ। কেউ বলেছেন, ‘রাহমাহ’। তিনি ছিলেন স্বামী ভক্তি ও পতিপরায়ণতায় বিশ্বের এক অতুলনীয় দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশে তিনি ‘বিবি রহীমা’ নামে পরিচিত। তাঁর পতিভক্তি বিষয়ে উক্ত নামে জনপ্রিয় উপন্যাস সমূহ বাজারে চালু রয়েছে। অথচ এ নামটির উৎপত্তি কাহিনী নিতান্তই হাস্যকর। পবিত্র কুরআনে সূরা আম্বিয়া ৮৪ আয়াতে رَحْمَةً مِّنْ عِنْدِنَا (‘আমরা আইয়ূবকে.... আরও দিলাম আমার পক্ষ হ’তে দয়া পরবশে’) বাক্যাংশের ‘রাহমাতান’ বা ‘রাহ্মাহ’ (رَحْمَةً) শব্দটিকে ‘রহীমা’ করে এটিকে আইয়ূবের স্ত্রীর নাম হিসাবে একদল লোক সমাজে চালু করে দিয়েছে। ইহুদী-নাছারাগণ যেমন তাদের ধর্মগ্রন্থের শাব্দিক পরিবর্তন ঘটাতো, এখানেও ঠিক ঐরূপ করা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ যেন বলছেন যে, আইয়ূবের স্ত্রী রহীমা তার স্বামীকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। পরে আমরা তাকে আইয়ূবের কাছে ফিরিয়ে দিলাম’। বস্ত্ততঃ এটি একটি উদ্ভট ব্যাখ্যা বৈ কিছু নয়। মূলতঃ আইয়ূবের স্ত্রীর নাম কি ছিল, সে বিষয়ে সঠিক তথ্য কুরআন বা হাদীছে নেই। এ বিষয়ের ভিত্তি হ’ল ইহুদী ধর্মনেতাদের রচিত কাহিনী সমূহ। যার উপরে পুরোপুরি বিশ্বাস স্থাপন করাটা নিতান্তই ভুল। তাফসীরবিদ ও ঐতিহাসিকগণ আইয়ূবের জনপদের নাম বলেছেন ‘হূরান’ অঞ্চলের ‘বাছানিয়াহ’ এলাকা। যা ফিলিস্তীনের দক্ষিণ সীমান্ত বরাবর দামেষ্ক ও আযরূ‘আত-এর মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থিত।[1]
পবিত্র কুরআনে ৪টি সূরার ৮টি আয়াতে আইয়ূব (আঃ)-এর কথা এসেছে। যথা- নিসা ১৬৩, আন‘আম ৮৪, আম্বিয়া ৮৩-৮৪ এবং ছোয়াদ ৪১-৪৪।

হযরত ইয়াকুব আঃ

ইসহাক্ব (আঃ)-এর দুই যমজ পুত্র ঈছ ও ইয়াকূব-এর মধ্যে ছোট ছেলে ইয়াকূব নবী হন। ইয়াকূবের অপর নাম ছিল ‘ইস্রাঈল’।[1] যার অর্থ আল্লাহর দাস। নবীগণের মধ্যে কেবল ইয়াকূব ও মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর দু’টি করে নাম ছিল। মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর অপর নাম ছিল ‘আহমাদ’ (ছফ ৬১/৬)। ইয়াকূব তার মামুর বাড়ী ইরাকের হারান (حران) যাবার পথে রাত হয়ে গেলে কেন‘আনের অদূরে একস্থানে একটি পাথরের উপরে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। সে অবস্থায় স্বপ্ন দেখেন যে, একদল ফেরেশতা সেখান থেকে আসমানে উঠানামা করছে। এরি মধ্যে আল্লাহ তাকে উদ্দেশ্য করে বলছেন,

হযরত ইসহাক আঃ

হযরত ইসহাক ছিলেন ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রথমা স্ত্রী সারাহ-এর গর্ভজাত একমাত্র পুত্র। তিনি ছিলেন হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর চৌদ্দ বছরের ছোট। এই সময় সারাহর বয়স ছিল ৯০ এবং ইবরাহীমের বয়স ছিল ১০০। অতি বার্ধ্যক্যের হতাশ বয়সে বন্ধ্যা নারী সারাহ্-কে ইসহাক জন্মের সুসংবাদ নিয়ে ফেরেশতা আগমনের ঘটনা আমরা ইতিপূর্বে বিবৃত করেছি। পবিত্র কুরআনে আকর্ষণীয় ভঙ্গীতে এ বিষয়ে আলোচিত হয়েছে সূরা হূদ ৭১-৭৩ আয়াতে, হিজর ৫১-৫৬ আয়াতে এবং যারিয়াত ২৪-৩০ আয়াতে- যা আমরা ইবরাহীমের জীবনীতে বর্ণনা করেছি। আল্লাহ ইসমাঈলকে দিয়ে যেমন মক্কার জনপদকে তাওহীদের আলোকে উদ্ভাসিত করেছিলেন, তেমনি ইসহাক্বকে নবুঅত দান করে তার মাধ্যমে শাম-এর বিস্তীর্ণ এলাকা আবাদ করেছিলেন।

হযরত ইসমাইল আঃ

আল্লাহ বলেন,
وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ إِسْمَاعِيلَ إِنَّهُ كَانَ صَادِقَ الْوَعْدِ وَكَانَ رَسُولاً نَّبِياًّ- وَكَانَ يَأْمُرُ أَهْلَهُ بِالصَّلاَةِ وَالزَّكَاةِ وَكَانَ عِندَ رَبِّهِ مَرْضِيًّا-
‘এই কিতাবে আপনি ইসমাঈলের কথা বর্ণনা করুন। তিনি ছিলেন ওয়াদা রক্ষায় সত্যাশ্রয়ী এবং তিনি ছিলেন রাসূল ও নবী’। ‘তিনি তাঁর পরিবারবর্গকে ছালাত ও যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিতেন এবং তিনি স্বীয় পালনকর্তার নিকট পসন্দনীয় ছিলেন’ (মারিয়াম ১৯/৫৪-৫৫)।
হযরত ইসমাঈল (আঃ) ছিলেন পিতা ইবরাহীম (আঃ)-এর জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং মা হাজেরার গর্ভজাত একমাত্র সন্তান। ঐ সময়ে ইবরাহীমের বয়স ছিল ৮৬ বছর।[1] শিশু বয়সে তাঁকে ও তাঁর মাকে পিতা ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে মক্কার বিজন ভূমিতে রেখে আসেন। সেখানে ইবরাহীমের দো‘আর বরকতে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে যমযম কূপের সৃষ্টি হয়। অতঃপর ইয়ামনের ব্যবসায়ী কাফেলা বনু জুরহুম গোত্র কর্তৃক মা হাজেরার আবেদনক্রমে সেখানে আবাদী শুরু হয়। ১৪ বছর বয়সে আল্লাহর হুকুমে মক্কার অনতিদূরে মিনা প্রান্তরে সংঘটিত 

হযরত লূত আঃ

হযরত লূত (আঃ) ছিলেন হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর ভাতিজা। চাচার সাথে তিনিও জন্মভূমি ‘বাবেল’ শহর থেকে হিজরত করে বায়তুল মুক্বাদ্দাসের অদূরে কেন‘আনে চলে আসেন। আল্লাহ লূত (আঃ)-কে নবুঅত দান করেন এবং কেন‘আন থেকে অল্প দূরে জর্ডান ও বায়তুল মুক্বাদ্দাসের মধ্যবর্তী ‘সাদূম’ অঞ্চলের অধিবাসীদের পথ প্রদর্শনের জন্য প্রেরণ করেন। এ এলাকায় সাদূম, আমূরা, দূমা, ছা‘বাহ ও ছা‘ওয়াহ [1] নামে বড় বড় পাঁচটি শহর ছিল। কুরআন মজীদ বিভিন্ন স্থানে এদের সমষ্টিকে ‘মু’তাফেকাহ’ (নাজম ৫৩/৫৩) বা ‘মু’তাফেকাত’ (তওবাহ ৯/৭০, হাক্বক্বাহ ৬৯/৯) শব্দে বর্ণনা করেছে। যার অর্থ ‘জনপদ উল্টানো শহরগুলি’। এ পাঁচটি শহরের মধ্যে সাদূম (سدوم) ছিল সবচেয়ে বড় এবং সাদূমকেই রাজধানী মনে করা হ’ত। হযরত লূত (আঃ) এখানেই অবস্থান করতেন। এখানকার ভূমি ছিল উর্বর ও শস্য-শ্যামল। এখানে সর্বপ্রকার শস্য ও ফলের প্রাচুর্য ছিল। এসব ঐতিহাসিক তথ্য বিভিন্ন তাফসীর গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। ‘সাদূম’ সম্পর্কে সকলে একমত। বাকী শহরগুলির নাম কি, সেগুলির সংখ্যা তিনটি, চারটি না ছয়টি, সেগুলিতে বসবাসকারী লোকজনের সংখ্যা কয়শত, কয় হাযার বা কয় লাখ ছিল, সেসব বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। এগুলি ইস্রাঈলী বর্ণনা, যা কেবল ইতিহাসের বস্ত্ত হিসাবে গ্রহণ করা যায়। কুরআন ও হাদীছে শুধু মূল বিষয়বস্ত্তর বর্ণনা এসেছে, যা মানবজাতির জন্য শিক্ষণীয়।
উল্লেখ্য যে, লূত (আঃ) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের ১৫টি সূরায় ৮৭টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।[2]
লূত (আঃ)-এর দাওয়াত :
লূত (আঃ)-এর কওম আল্লাহর ইবাদত ছেড়ে শিরক ও কুফরীতে লিপ্ত হয়েছিল। দুনিয়াবী উন্নতির চরম শিখরে উন্নীত হওয়ার কারণে তারা সীমা লঙ্ঘনকারী জাতিতে পরিণত হয়েছিল। পূর্বেকার ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিগুলির ন্যায় তারা চূড়ান্ত বিলাস-ব্যসনে গা ভাসিয়ে দিয়েছিল। অন্যায়-অনাচার ও নানাবিধ দুষ্কর্ম তাদের মজ্জাগত অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। এমনকি পুংমৈথুন বা সমকামিতার মত নোংরামিতে তারা লিপ্ত হয়েছিল, যা ইতিপূর্বেকার কোন জাতির মধ্যে পরিদৃষ্ট হয়নি। জন্তু-জানোয়ারের চেয়ে নিকৃষ্ট ও হঠকারী এই কওমের হেদায়াতের জন্য আল্লাহ লূত (আঃ)-কে প্রেরণ করলেন। কুরআনে লূতকে ‘তাদের ভাই’ (শো‘আরা ২৬/১৬১) বলা হ’লেও তিনি ছিলেন সেখানে মুহাজির। নবী ও উম্মতের সম্পর্কের কারণে তাঁকে ‘তাদের ভাই’ বলা হয়েছে। তিনি এসে পূর্বেকার নবীগণের ন্যায় প্রথমে তাদেরকে তাওহীদের দাওয়াত দিয়ে বললেন,

Sunday, 5 April 2015

হযরত ইব্রাহীম আঃ

ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) ছিলেন হযরত নূহ (আঃ)-এর সম্ভবত: এগারোতম অধঃস্তন পুরুষ। নূহ থেকে ইবরাহীম পর্যন্ত প্রায় ২০০০ বছরের ব্যবধান ছিল। হযরত ছালেহ (আঃ)-এর প্রায় ২০০ বছর পরে ইবরাহীমের আগমন ঘটে। ঈসা থেকে ব্যবধান ছিল ১৭০০ বছর অথবা প্রায় ২০০০ বছরের। তিনি ছিলেন ‘আবুল আম্বিয়া’ বা নবীগণের পিতা এবং তাঁর স্ত্রী ‘সারা’ ছিলেন ‘উম্মুল আম্বিয়া’ বা নবীগণের মাতা। তাঁর স্ত্রী সারার পুত্র হযরত ইসহাক্ব-এর পুত্র ইয়াকূব (আঃ)-এর বংশধর ‘বনু ইসরাঈল’ নামে পরিচিত এবং অপর স্ত্রী হাজেরার পুত্র হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশে জন্ম নেন বিশ্বনবী ও শেষনবী হযরত মুহাম্মাদ(ছাল্লাল্লা-হু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)। যাঁর অনুসারীগণ ‘উম্মতে মুহাম্মাদী’ বা ‘মুসলিম উম্মাহ’ বলে পরিচিত।
বাবেল হ’তে তিনি কেন‘আনে (ফিলিস্তীন) হিজরত করেন। সেখান থেকে বিবি সারা-র বংশজাত নবীগণের মাধ্যমে আশপাশে সর্বত্র তাওহীদের দাওয়াত বিস্তার লাভ করে। অপর স্ত্রী হাজেরার পুত্র ইসমাঈলের মাধ্যমে বায়তুল্লাহ ও তার আশপাশ এলাকায় তাওহীদের প্রচার ও প্রসার হয় এবং অবশেষে এখানেই সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আগমন ঘটে। এভাবে ইবরাহীমের দুই স্ত্রীর বংশজাত নবীগণ বিশ্বকে তাওহীদের আলোয় আলোকিত করেন। শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর দেহসৌষ্ঠব ও চেহারা মুবারক পিতা ইবরাহীম (আঃ)-এর ন্যায় ছিল। যা তিনি মে‘রাজ থেকে ফিরে এসে উম্মতকে খবর দেন।[1]

হযরত ছালেহ আঃ

‘আদ জাতির ধ্বংসের প্রায় ৫০০ বছর পরে হযরত ছালেহ (আঃ) কওমে ছামূদ-এর প্রতি নবী হিসাবে প্রেরিত হন।[1] কওমে ‘আদ ও কওমে ছামূদ একই দাদা ‘ইরাম’-এর দু’টি বংশধারার নাম। এদের বংশ পরিচয় ইতিপূর্বে হূদ (আঃ)-এর আলোচনায় বিধৃত হয়েছে। কওমে ছামূদ আরবের উত্তর-পশ্চিম এলাকায় বসবাস করত। তাদের প্রধান শহরের নাম ছিল ‘হিজ্র’ যা শামদেশ অর্থাৎ সিরিয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে একে সাধারণভাবে ‘মাদায়েনে ছালেহ’ বলা হয়ে থাকে। ‘আদ জাতির ধ্বংসের পর ছামূদ জাতি তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়। তারাও ‘আদ জাতির মত শক্তিশালী ও বীরের জাতি ছিল। তারা প্রস্তর খোদাই ও স্থাপত্য বিদ্যায় খুবই পারদর্শী ছিল। সমতল ভূমিতে বিশালকায় অট্টালিকা নির্মাণ ছাড়াও পর্বতগাত্র খোদাই করে তারা নানা রূপ প্রকোষ্ঠ নির্মাণ করত। তাদের স্থাপত্যের নিদর্শনাবলী আজও বিদ্যমান রয়েছে। এগুলোর গায়ে ইরামী ও ছামূদী বর্ণমালার শিলালিপি খোদিত রয়েছে। অভিশপ্ত অঞ্চল হওয়ার কারণে এলাকাটি আজও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। কেউ সেখানে বসবাস করে না। ৯ম হিজরীতে তাবূক যুদ্ধে যাওয়ার পথে মুসলিম বাহিনী হিজ্রে অবতরণ করলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদেরকে সেখানে প্রবেশ করতে নিষেধ করে বলেন,
لاَ تَدْخُلُوا مَسَاكِنَ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ إِلاَّ أَنْ تَكُونُوا بَاكِيْنَ أَنْ يُصِيبَكُمْ مَا أَصَابَهُمْ-
‘তোমরা ঐসব অভিশপ্তদের এলাকায় প্রবেশ করো না ক্রন্দনরত অবস্থায় ব্যতীত। যদি ক্রন্দন করতে না পার, তাহ’লে প্রবেশ করো না। তাহ’লে তোমাদের উপর ঐ গযব আসতে পারে, যা তাদের উপর এসেছিল’।[2] রাসূলের এই বক্তব্যের মধ্যে সুক্ষ্ম তাৎপর্য এই যে, এগুলি দেখে যদি মানুষ আল্লাহর গযবে ভীত না হয়, তাহ’লে তাদের অন্তর শক্ত হয়ে যাবে এবং ঐসব অভিশপ্তদের মত অহংকারী ও হঠকারী আচরণ করবে। ফলে তাদের উপর অনুরূপ গযব নেমে আসবে, যেরূপ ইতিপূর্বে ঐসব অভিশপ্তদের উপর নেমে এসেছিল।
পার্থিব বিত্ত-বৈভব ও ধনৈশ্বর্যের পরিণতি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অশুভ হয়ে থাকে। বিত্তশালীরা আল্লাহ ও আখেরাতকে ভুলে গিয়ে ভ্রান্ত পথে পা বাড়ায়। ছামূদ জাতির বেলায়ও তাই হয়েছিল। অথচ কওমে নূহের কঠিন শাস্তির ঘটনাবলী তখনও লোকমুখে আলোচিত হ’ত। আর কওমে ‘আদ-এর নিশ্চিহ্ন হওয়ার ঘটনা তো তাদের কাছে একপ্রকার টাটকা ঘটনাই ছিল। অথচ তাদের ভাইদের ধ্বংসস্ত্তপের উপরে বড় বড় বিলাসবহুল অট্টালিকা নির্মাণ করে ও বিত্ত বৈভবের মালিক হয়ে তারা পিছনের কথা ভুলে গেল। এমনকি তারা ‘আদ জাতির মত অহংকারী কার্যকলাপ শুরু করে দিল। তারা শিরক ও মূর্তিপূজায় লিপ্ত হ’ল। এমতাবস্থায় তাদের হেদায়াতের জন্য তাদেরই বংশের মধ্য হ’তে ছালেহ (আঃ)-কে আল্লাহ নবী মনোনীত করে পাঠালেন।
কওমে ছামূদ-এর প্রতি হযরত ছালেহ (আঃ)-এর দাওয়াত :
পথভোলা জাতিকে হযরত ছালেহ (আঃ) সর্বপ্রথম তাওহীদের দাওয়াত দিলেন। তিনি তাদেরকে মূর্তিপূজাসহ যাবতীয় শিরক ও কুসংস্কার ত্যাগ করে এক আললাহর ইবাদত ও তাঁর প্রেরিত বিধান সমূহের প্রতি আনুগত্যের আহবান জানালেন। তিনি যৌবনকালে নবুঅতপ্রাপ্ত হন। তখন থেকে বার্ধক্যকাল অবধি তিনি স্বীয় কওমকে নিরন্তর দাওয়াত দিতে থাকেন। কওমের দুর্বল শ্রেণীর লোকেরা তাঁর উপরে ঈমান আনলেও শক্তিশালী ও নেতৃস্থানীয় লোকেরা তাঁকে অস্বীকার করে। ছালেহ (আঃ)-এর দাওয়াত সম্পর্কে সূরা আ‘রাফের ৭৩-৭৯ আয়াতে আল্লাহ বলেন,"

হযরত হূদ আঃ

হযরত হূদ (আঃ) দুর্ধর্ষ ও শক্তিশালী ‘আদ জাতির প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন। আল্লাহর গযবে ধ্বংসপ্রাপ্ত বিশ্বের প্রধান ছয়টি জাতির মধ্যে কওমে নূহ-এর পরে কওমে ‘আদ ছিল দ্বিতীয় জাতি। হূদ (আঃ) ছিলেন এদেরই বংশধর। ‘আদ ও ছামূদ ছিল নূহ (আঃ)-এর পুত্র সামের বংশধর এবং নূহের পঞ্চম অথবা অষ্টম অধঃস্তন পুরুষ। ইরামপুত্র ‘আদ-এর বংশধরগণ ‘আদ ঊলা’ বা প্রথম ‘আদ এবং অপর পুত্রের সন্তান ছামূদ-এর বংশধরগণ ‘আদ ছানী বা দ্বিতীয় ‘আদ বলে খ্যাত।[1] ‘আদ ও ছামূদ উভয় গোত্রই ইরাম-এর দু’টি শাখা। সেকারণ ‘ইরাম’ কথাটি ‘আদ ও ছামূদ উভয় গোত্রের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। এজন্য কুররআনে কোথাও ‘আদ ঊলা’ (নাজম ৫০) এবং কোথাও ‘ইরাম যাতিল ‘ইমাদ’ (ফজর ৭) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে।


হযরত ইদরীস আঃ

আল্লাহ বলেন, وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ إِدْرِيْسَ إِنَّهُ كَانَ صِدِّيقًا نَّبِيًّا، وَرَفَعْنَاهُ مَكَاناً عَلِيّاً- ‘তুমি এই কিতাবে ইদরীসের কথা আলোচনা কর। নিশ্চয়ই তিনি ছিলেন সত্যবাদী ও নবী’। ‘আমরা তাকে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছিলাম’ (মারিয়াম ১৯/৫৬-৫৭)।
ইদরীস (আঃ)-এর পরিচয়: তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত নবী। তাঁর নামে বহু উপকথা তাফসীরের কিতাবসমূহে বর্ণিত হয়েছে। যে কারণে জনসাধারণ্যে তাঁর ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। হযরত ইদরীস (আঃ) হযরত নূহ (আঃ)-এর পূর্বের নবী ছিলেন, না পরের নবী ছিলেন এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে অধিকাংশ ছাহাবীর মতে তিনি নূহ (আঃ)-এর পরের নবী ছিলেন।[1]
সূরা মারিয়ামে হযরত ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক্ব, ইয়াকূব, হারূণ, মূসা, যাকারিয়া, ইয়াহ্ইয়া, ঈসা ইবনে মারিয়াম ও ইদরীস (আঃ)-এর আলোচনা শেষে আল্লাহ বলেন,
أُوْلَئِكَ الَّذِيْنَ أَنْعَمَ الله ُعَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّينَ مِن ذُرِّيَّةِ آدَمَ وَمِمَّنْ حَمَلْنَا مَعَ نُوحٍ وَمِن ذُرِّيَّةِ إِبْرَاهِيْمَ وَإِسْرَائِيلَ وَمِمَّنْ هَدَيْنَا وَاجْتَبَيْنَا إِذَا تُتْلَى عَلَيْهِمْ آيَاتُ الرَّحْمَن خَرُّوْا سُجَّداً وَبُكِيّاً-

হযরত নূহ্ আঃ

আদম (আঃ) থেকে নূহ (আঃ) পর্যন্ত দশ শতাব্দীর ব্যবধান ছিল। যার শেষদিকে ক্রমবর্ধমান মানবকুলে শিরক ও কুসংস্কারের আবির্ভাব ঘটে এবং তা বিস্তৃতি লাভ করে। ফলে তাদের সংশোধনের জন্য আল্লাহ নূহ (আঃ)-কে নবী ও রাসূল করে পাঠান। তিনি সাড়ে নয়শত বছরের দীর্ঘ বয়স লাভ করেছিলেন এবং সারা জীবন পথভোলা মানুষকে পথে আনার জন্য দাওয়াতে অতিবাহিত করেন। কিন্তু তাঁর কওম তাঁকে প্রত্যাখ্যান করে। ফলে আল্লাহর গযবে তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এরপরে আরও কয়েকটি কওম আল্লাহর অবাধ্যতার কারণে পরপর ধ্বংস হয়। এভাবে পৃথিবীতে আদি যুগে ধ্বংসপ্রাপ্ত ৬টি জাতির ঘটনা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত হয়েছে এবং কুরআনের মাধ্যমেই জগদ্বাসী তাদের খবর জানতে পেরেছে। যাতে মুসলিম উম্মাহ ও পৃথিবীবাসী তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। উক্ত ৬টি জাতি হ’ল- কওমে নূহ, ‘আদ, ছামূদ, কওমে লূত, মাদইয়ান ও কওমে ফেরাঊন। অবশ্য কুরআনে এ তালিকায় কওমে ইবরাহীমের কথাও এসেছে (তওবাহ ৯/৭০)। যদিও তারা একত্রে ধ্বংস হয়নি। তবে ইবরাহীমের ভাতিজা লূত-এর কওম একত্রে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হয়েছিল। আমরা এখানে প্রথমে নূহ (আঃ) ও তাঁর কওম সম্পর্কে আলোচনা করব।

হযরত যাকারিয়া ও ইয়াহইয়া আঃ

যাকারিয়া ও ইয়াহইয়া সুলায়মান পরবর্তী দুই নবী পরস্পরে পিতা-পুত্র ছিলেন এবং বায়তুল মুক্বাদ্দাসের অধিবাসী ছিলেন। ইয়াহইয়া ছিলেন পরবর্তী নবী ঈসা (আঃ)-এর আপন খালাতো ভাই এবং বয়সে ছয় মাসের বড়। তিনি ঈসার ছয় মাস পূর্বেই দাওয়াতের কাজ শুরু করেন।[1] হযরত যাকারিয়া ও ইয়াহ্ইয়া (আঃ) সম্পর্কে ৪টি সূরার ২২টি আয়াতে[2] বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে সূরা আন‘আমে কেবল ১৮জন নবীর নামের তালিকায় তাঁদের নাম উল্লেখিত হয়েছে। বাকী অন্য সূরাগুলিতে খুবই সংক্ষেপে কেবল ইয়াহ্ইয়ার জন্ম বৃত্তান্ত সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে।


হযরত আদম আঃ

বিশ্ব ইতিহাসে প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী হিসাবে আল্লাহ পাক আদম (আলাইহিস সালাম)-কে নিজ দু’হাত দ্বারা সরাসরি সৃষ্টি করেন (ছোয়াদ ৩৮/৭৫)। মাটির সকল উপাদানের সার-নির্যাস একত্রিত করে আঠালো ও পোড়ামাটির ন্যায় শুষ্ক মাটির তৈরী সুন্দরতম অবয়বে রূহ ফুঁকে দিয়ে আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করেছেন।[1]
অতঃপর আদমের পাঁজর থেকে তাঁর স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করেন।[2] আর এ কারণেই স্ত্রী জাতি স্বভাবগত ভাবেই পুরুষ জাতির অনুগামী ও পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট। অতঃপর স্বামী-স্ত্রীর মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে একই নিয়মে মানববংশ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। কুরআন-এর বর্ণনা অনুযায়ী প্রথম দিন থেকেই মানুষ পূর্ণ চেতনা ও জ্ঞান সম্পন্ন সভ্য মানুষ হিসাবেই যাত্রারম্ভ করেছে এবং আজও সেভাবেই তা অব্যাহত রয়েছে। অতএব গুহামানব, বন্যমানব, আদিম মানব ইত্যাদি বলে অসভ্য যুগ থেকে সভ্য যুগে মানুষের উত্তরণ ঘটেছে বলে কিছু কিছু ঐতিহাসিক যেসব কথা শুনিয়ে থাকেন, তা অলীক কল্পনা ব্যতীত কিছুই নয়। সূচনা থেকে এযাবত এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় মানুষ কখনোই মানুষ ব্যতীত অন্য কিছু ছিল না। মানুষ বানর বা উল্লুকের উদ্বর্তিত রূপ বলে ঊনবিংশ শতাব্দীতে এসে চার্লস ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২) যে ‘বিবর্তনবাদ’ (Theory of Evolution) পেশ করেছেন, তা বর্তমানে একটি মৃত মতবাদ মাত্র এবং তা প্রায় সকল বিজ্ঞানী কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
প্রথম মানুষ আদি পিতা আদম (আঃ)-কে


Sunday, 25 January 2015


Saturday, 24 January 2015

Muslim sharif

১। আবূ খায়সামা যুহায়র ইবনুূু হারব (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনুূু ইয়া’মার (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি (ইয়াহইয়া ইবনুূু ইয়া’মার) বলেন, সর্বপ্রথম তাকদীর’ সম্পর্কে বসরা শহরে মাবাদ আল জুহানী কথা তোলেন। আমি (ইয়াহইয়া ইবনুূু ইয়া’মার) এবং হুমায়দ ইবনুূু আব্দুর রহমান আল হিমায়রী হাজ্জ (হজ্জ) অথবা উমরা আদায়ের জন্য মক্কা মু’আযযামায় আসলাম। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলাম যে, যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কোন সাহাবীর সাক্ষাৎ পাই তাহলে তাঁর কাছে এসব লোক তাকদীর সম্পর্কে যা বলে বেড়াচ্ছে, সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করতাম। সৌভাগ্যক্রমে মসজিদে নববীতে আমরা আবদুল্লাহ ইবনুূু উমর ইবনুূু খাত্তাব (রাঃ)-এর দেখা পাই। আমরা তাঁর কাছে গিয়ে একজন তাঁর ডানপাশে এবং আর একজন বামপাশে বসলাম। আমার মনে হলো, আমার সাথী চান যে, আমিই কথা বলি। আমি আরয করলাম, হে আবূ আবদুর রহমান! আবদুল্লাহ ইবনুূু উমর (রাঃ)-এর কুনিয়াত ছিল আবূ আবদুর রহমান। আমার দেশে এমন কতিপয় লোকের আবির্ভাব হয়েছে যারা কুরআন পাঠ করে এবং ইল্‌মে দ্বীন সম্পর্কে গবেষণা করে। তিনি তাদের অবস্হা সম্পর্কে আরো কিছু উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, তারা মনে করে তাকদীর- বলতে কিছু নেই। সবকিছু তাৎক্ষনিকভাবে ঘটে। আবদুল্লাহ ইবনুূু উমর (রাঃ) বললেন, তাদের সাথে তোমাদের দেখা হলে বলে দিও যে, তাদের সাথে আমার কোন সস্পর্ক নেই এবং আমার সঙ্গে তাদেরও কোন সম্পর্ক নেই। আল্লাহর কসম! যদি এদের কেউ উহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনার মালিক হয় এবং তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে, তাকদীরের প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত আল্লাহ তা কবুল করবেন না। তারপর তিনি বললেন, আমাকে আমার পিতা উমর ইবনুূু খাত্তাব (রাঃ) হাদীস শুনিয়েছেন যে, একদা আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খিদমতে ছিলাম। এমন সময় একজন লোক আমাদের কাছে এসে হাযির হলেন। তাঁর পরিধানের কাপড় ছিল সা’দা ধবধবে, মাথার কেশ ছিল কাল কুচকুচে। তাঁর মধ্যে সফরের কোন চিহ্ন ছিল না। আমরা কেউ তাঁকে চিনি না। তিনি নিজের দুই হাঁটু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দুই হাঁটুর সাথে লাগিয়ে বসে পড়লেন আর তার দুই হাত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দুই উরুর উপর রাখলেন। তারপর তিনি বললেন, হে মুহাম্মদ! আমাকে ইসলাম সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইসলাম হল, তুমি এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল, সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, রামাযানের রোযা পালন করবে এবং বায়তুল্লাহ পৌছার সামর্থ্য থাকলে হাজ্জ (হজ্জ) পালন করবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। তার কথা শুনে আমরা বিষ্মিত হলাম যে, তিনিই প্রশ্ন করেছেন আর তিনিই-তা সত্যায়িত করছেন। আগন্তুক বললেন, আমাকে ঈমান সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসুল বললেনঃ ঈমান হল আল্লাহর প্রতি, তার ফেরেশতাদের প্রতি, তার কিতাবসমূহের প্রতি, তার রাসুলগণের প্রতি এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান আনবে, আর তাকদিরের ভালমন্দের প্রতি ঈমান রাখবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। তারপর বললেন, আমাকে ইহসান সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসুল বললেনঃ ইহসান হলো, এমনভাবে ইবাদত-বন্দেগী করবে যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ, যদি তুমি তাকে নাও দেখ, তাহলে ভাববে তিনি তোমাকে দেখছেন। আগন্তুক বললেন, আমাকে কিয়ামত সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসুল বললেনঃ এ বিষয়ে প্রশ্নকারীর চাইতে যাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে তিনি অধিক অবহিত নন। আগন্তুক বললেন, আমাকে এর আলামত সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসুল বললেনঃ তা হলো এই যে, দাসী তার প্রভুর জননী হবে; আর নগ্নপদ, বিবস্ত্রদেহ দরিদ্র মেষপালকদের বিরাট বিরাট অট্টালিকার প্রতিযোগিতায় গর্বিত দেখতে পাবে। উমর ইবনুূু খাত্তাব (রাঃ) বললেন যে, পরে আগন্তুক প্রস্হান করলেন। আমি বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। তারপর রাসুল আমাকে বললেন, হে উমর! তুমি জানো, এই প্রশ্নকারী কে? আমি আরয করলাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই সম্যক জ্ঞাত আছেন। রাসুল বললেনঃ তিনি জিবরাঈল। তোমাদের তিনি দ্বীন শিক্ষা দিতে এসেছিলেন।

Copyright @ 2013 নবীদের কাহিনী.